দেবাশিস ঘোষ
সব পথ রোমে যায় ।।
ঘরের সঙ্গেই তো পথ। আর সব পথই রোমে যায়। ফিরেও আসে। ডাইভার্শন নেয়। চিন, আমেরিকা, সৌদি, কিংবা রাশিয়া, ইউক্রেন যায়। কী অনায়াসে আমাদের জিভের ডগায় এসে যায় আমেরিকা, রাশিয়া এদের নাম। অথচ অ্যাঙ্গোলা, সুদান, নাইজেরিয়া, বৎসোয়ানা, জাইরে, কঙ্গো, আলজেরিয়া এদের নাম আসেই না। বাড়ির পাশের পথগুলো ঐসব দেশে যায় না! সব পথ আফ্রিকায় যায় না, রোমে যায়। রোমেও যায় না, আমেরিকা রায়। এই তেতো তারকা চিহ্নিত অংশ বিজবিজ করে উঠুক। বিজবিজ করে উঠুক অন্যপথের ভাবনা ও নিশানা।
ঘরবাড়ি, দোকানপাট, অফিস আদালত, সেনাছাউনি, প্রার্থনালয় এরাও পথের অংশ। পথে চলেন যিনি তিনিই পথিক। অবশ্য পথিক বললে গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে পায়ে হেঁটে চলা ধুতি, ফতুয়া পরা একজন নিরীহ মানুষ বোঝাত। এখন পথিক নয় ট্রাভেলার, ট্যুরিস্ট, ভ্রামনিক এমন কত প্রতিশব্দ রয়েছে! পায়ে নয় চাকার হুহুতে চলা। হুহু করে পথ ছুটেছে। সরে যাচ্ছে চেনাজানা ভূগোল, দু'ঘন্টা সিনেমা সফরের মতোই মায়াবী সফরে মুহূর্তে চলে আসছে বিশাল পর্বত, উপত্যকা, নদী, ঝর্ণা, গাছপালা, শহর, গ্রাম, জনপদ। আবার তেমনই হুহু করে সরেও যাচ্ছে সবকিছু।
'এই পথ যদি না শেষ হয় লা লালা লা'! পথ শেষ হয় কখনো! তুমি চলে যাওয়ার পরেও তোমার চলার পথে একজন, তারপর আরেকজন এভাবে চলতেই থাকবে। সরু পথ, আঁকাবাঁকা পথ, চওড়া পথ, চড়াই উৎরাই পথ, সুড়ঙ্গ পথ এমন হাজার কিসিমের পথ আছে। সব পথ সবার জন্য নয়। সেই কোন কালে মঙ্গোলিয়া, উজবেকিস্তান থেকে বাবর, চেঙ্গিস, এরা ভারতে পৌঁছেছে। তখনকার ভারত অবশ্য আজকের দেখা মানচিত্রের কিছুটা ত্রিভুজাকৃতি ভারত নয়। ছোট ছোট রাজ্য। ছোট ছোট রাজা। পৃথ্বীরাজ সিংহ, পুরু এদের নাম সুপরিচিত। প্রান্তিক প্রতিরোধের নায়ক এরাই। ক্রমশঃ এই পথেই সাম্রাজ্য অথবা নৈরাজ্য। নৈরাজ্য মানে শাসনহীনতা নয় অপশাসনেরও অন্য নাম নৈরাজ্য। যদি পায়ে পায়ে দেবতার জন্ম হয়, পথে পথেই পথেরও জন্ম হয়। আমাদের পথজন্ম ছাপা থাক মেঘের মলাটে।
'হাজার বছর আমি পথ হাঁটিতেছি, পৃথিবীর পথে'। হাজার বছরের বিবর্তন কিন্তু কবিতায় নেই। কত রাজার উত্থান পতন, কত ষড়যন্ত্র, হত্যা, যুদ্ধ, নারী ছিনতাই, শিশু বৃদ্ধ নিধন! হাজার বছরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অন্ধকার আর তরোয়ালের ঝলকানি। পাশে পাশে বয়ে গেছে পায়ে হাঁটা সরু মেটে পথ। এপথে পিতা লাঙল বলদ আর সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন মাঠে। এপথে ছোট ছোট দলে পল্লীর মানুষ চলেছে দূরে দূরে তীর্থে। শ্রীকৃষ্ণ জন্মের আগে মথুরা বৃন্দাবনকে কজন চিনত! ঐ মেটে পথেই পল্লী যুবতী গোপনে চলেছে অভিসারে। আবার এই পথেই রে রে করে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে এসেছে দস্যুর দল বা অন্য রাজ্যের সেনা। প্রতিটি ধূলিকণা ইতিহাসের সাক্ষী। ধূলিকনা বলতে পারে না বলে ইতিহাস বুকে জড়িয়ে চুপ হয়ে পায়ের তলায় পড়ে থাকে। এমন যদি হয় যে ধূলিকনা এ যাবৎ যা যা দৃশ্য দেখেছে তার সবকিছু তার স্মৃতিতে ধরা আছে! এবং তা উদ্ধার করার কোনো যন্ত্র আবিষ্কৃত হল! পুরো ইতিহাস ধরা পড়বে তাহলে। ইতিহাসের সব কথাই বদলে যাবে তবে। কে লিখবে সেই ইতিহাস!
পথ যত লম্বা হয় যত বিস্তৃত হয় বেড়ে যায় দৃষ্টিকোন। এখন তো সব পথকে একটি পথে নিয়ে যাওয়ার যাবতীয় চেষ্টা চলছে। এই চেষ্টা গোটা পৃথিবীতে। বরং পথের পাশে চায়ের দোকানে ভিজিয়ে নাও গলা। অন্ধ ভিখিরী পথ চলছেন তাকে অন্য পারে পৌঁছে দাও। হাতে রাখী বাঁধছে যে ছোট্ট মেয়েটি তাকে ফিরিয়ে দাও একটা মিষ্টি হাসি। বসন্তে রঙিন হয়ে ওঠা পথে সবার সঙ্গে চলো। রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই মহাকাশে ছুটে গেছে স্পেসশিপ। ঘরবাড়ি বলে কিছু হয় না। পুরোটাই পথ। মহাবিশ্ব জুড়ে শুধুই পথ আর পথ।
খুব ভালো হয়েছে। অপূর্ব।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনদাদা সুন্দর লিখেছেন
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনঅনেক তো দিন গেল বৃথাই সংশয়ে
উত্তরমুছুনএসো এবার দ্বিধারও বাধা পার হয়ে
... ভালো লাগলো। - রাজদীপ
ধন্যবাদ রাজদীপ। তোমার মন্তব্য পেয়ে আনন্দ পেলাম।
মুছুনগদ্যপথে আপনার সাবলীল চলন আমাকে মুগ্ধ পাঠক করেছে। আগামীর অপেক্ষায় রইলাম।
উত্তরমুছুনআমি জানি আপনি আমার গদ্য পছন্দ করেন। এটা আমার বড় পাওয়া। শুভেচ্ছা নেবেন -- দেবাশিস ঘোষ।
মুছুনখুব ভালো লাগল এই বাঁধনহীন লেখাটি। এই পথে যে একবার বেরোয় অজস্র বন্ধন মাঝেও মুক্তির স্বাদটুকু সে পায়।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ পৃথা ম্যাডাম
মুছুনদেবাশিস ঘোষ