সঞ্জয় মৌলিক


 


কুইজ ~


- রবিঠাকুর কে?

- রবীন্দ্রসংগীত কি?

প্রাণীসম্পদ মেলার মঞ্চে একজন উপস্থাপক ওই প্রশ্নদুটোই হঠাৎ ভাসিয়ে দিল...
ফলে দর্শকাসন থেকে সমবেত চিৎকার...
আমরা গরু চরাই, হাঁসমুরগি পুষি, ছাগল-ভেড়া-শুয়োর পালন করি...
রবিঠাকুর কে আমরা জানি না।

আমি তখন দৌড়ে গিয়ে বললাম, জানি, জানি।
রবিঠাকুর একটা আলপিন। একটা এলিফ্যান্ট।

বুঝলাম, কেউ বুঝলো না। রাগে, বিরক্তিতে সবুজ মাঠের একটা ঘাসও ছিঁড়ল না কেউ।

পুনরায় দর্শকাসন থেকে চিৎকার...

যে ছেলেটি ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করছিল, এবার সে বলে উঠল, রবীন্দ্রসংগীত ঘুমের বটিকা, কিংবা ভালো ভেষজ মলম।

এই গণজাগরণে সামান্য সাহস হয়। তারপর -

হামাগুড়ি দিয়ে মাইকের কাছে গিয়ে বলতে ইচ্ছে হল, তাঁর গান ঝুলপাঞ্জাবির বোতাম, তাঁর লেখা হঠাৎ হঠাৎ খুঁজে পাওয়া নেলকাটার।
কখনও সে জিভের ক্ষত, কখনও সে চুলের কলপ, কখনও কখনও মৃত্যু সেখানে
পেসমেকারের ব্যাটারির মত গো!

                  __________________


শান্তির জন্য কবিতা ~

ভেবে দেখলাম শান্তির জন্য এ পর্যন্ত কিছু লিখিনি

এহ বাহ্য, শান্তিও তেমন করে কখনও বলেনি,"দাদাবাবু, আমার জন্য দুটো লাইন লিখুন"।

আমি জানি কে চুপিচুপি ঘরে ঢুকে আয়রন করে গুছিয়ে রেখেছে জামা, তুলে দিয়েছে বাসি বিছানাপত্তর। কিংবা বইপত্র, কলম ও সাদা কাগজ হাতের সামনে রেখে দরজাটা আলগোছে ঠেলে গেছে, যেন শুশ্রূষার প্রতিটি পদক্ষেপই শব্দহীন হয়।

আমি নিশ্চিত জানি কে শিয়রের পাশে ধুম হয়ে বসে কপাল টিপতে টিপতে পাকা ধানের শীষের ওপর এক-আধবার বুলিয়ে নিয়েছে হাওয়া।

কোনও কোনও দিন গভীর রাত্রে বসে ডাব ও আম্রপল্লব নিয়ে কোনও দিন ধবলগিরি ও বোধিবৃক্ষ, কোনও দিন ঝুলন্ত বাগান ও মৃত্যু উপত্যকা নিয়ে হাজারবার কাটাকুটি খেলেছি, কিন্তু আজ

ভেবে দেখলাম শুধু শান্তির জন্য এ পর্যন্ত কিছুই লিখিনি।

                  ____________________


কম্পন ~

ধর্মযাজক বললেন, ভক্তগণ, মাটি কাঁপছে
আপনারা প্রভুর কাছে সব দোষ কবুল করুন, ক্ষমা চেয়ে নিন।

বিজ্ঞানী বললেন, না, প্রভুর সঙ্গে ভূকম্পনের কোনো সম্পর্ক নেই..।

যাজক বললেন, গণ-অনশনের মাধ্যমে সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কারণ তিনিই সকলকে বাঁচালেন।

বিজ্ঞানী বললেন, না, এটা অশরীরী আত্মার কলহ নয়। এর ব্যাখ্যা আছে।

যাজক বলে চললেন, তাঁর ইচ্ছে, তাঁর ইচ্ছে, সবই তাঁর ইচ্ছে..।

বিজ্ঞানী তাকালেন প্রৌঢ় দার্শনিকের দিকে।
দার্শনিক বিজ্ঞানীর দিকে। মাথা নাড়লেন দুজনেই।
বুঝলেন, এই পৃথিবীতে আরও শত-শত কম্পন প্রয়োজন!

              __________________________


সার্কাস ~

'নিষিদ্ধ' শব্দটাকে নিয়ে খেলা করছি আজ দুপুরবেলা।
পুরানো চিঠিরা পাখার বাতাস পেয়ে উড়ে যাচ্ছে।
ছেলের বন্দুক নাড়িয়ে-চাড়িয়ে দেখছি।
গুলি নেই, শুধু ব্যাটারির আর্তনাদ।

ইচ্ছে করছে লোফালুফি। ইচ্ছে করছে তারের ওপর দিয়ে হাঁটি। পেটের ওপর ডিঙিয়ে যাক হাতি।

মুখের ভেতর আর ঠান্ডা আগুন ঢোকাতে পারব আজ?
জিপগাড়ি নিয়ে ঝাঁপাতে পারব কোনো বাড়ির উঠোনে?
ময়না পাখির নাচ দেখতে গিয়ে জোকারের ব্যাট ফাটাতে পারব পাছায়?

দেখতে ইচ্ছে করছে সোমাদিকে, স্বপ্নাদিকে,স্নিগ্ধাদিকে। আজ ওদের স্বপ্নে নিয়ে ক্যারাম খেলতে বসব। বলে বলে গুটি ফেলব গর্তে। ইচ্ছে করছে।

পুরানো চিঠির টুকরো পাখার বাতাস পেয়ে উড়ে যাচ্ছে।
'নিষিদ্ধ' শব্দটাকে নিয়ে খেলা করছি আজ দুপুরবেলা। কতদিন পরে মেয়ের ধনুক নাড়িয়ে-চাড়িয়ে দেখছি। তীর নেই।
শুধু ব্যাটারির আর্তনাদ!



মন্তব্যসমূহ

  1. খুব ভালো। প্রতিটি কবিতাই। শেষেরটিতে চোরা যৌনতার গন্ধ খুবই ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য