সজ্জ্বল দত্ত
প্রস্তুতি
..................
আঙুল কেটেছে যত মুখে নিয়ে চুষেছি আমরা ।
মুণ্ডুই খাপখোলা তরোয়াল-ডগায় --
কে চুষবি ? কী চুষবি ? কী করে আরাম পাবি ?
এক পা এক পা পিছে
পেটের ব্লাডার সরু , নিত্য চাপ খেতে খেতে মোটা ।
লালমুখো আমি দাঁতখিঁচোনো বেবুন সেজে --
আমার ভায়রাভাই নয়া বজরংবলী
রামনামে লাফালাফি তীব্রভক্ত গোদা হনুমান !
বৌমাগী শালীমাগী হাড়মাস কালি
তবু বোঝে না অভাব কেন !
ছেলেপিলে ইতিহাসে চিরকেলে আদি সেই
গোল-গোল গল্পের বাঁদর-বাঁদরী খেলা ,
নতুন ক্যালানেকুল ফল ছিঁড়ে ডাল ভেঙে
আপন সেলফি-হাসি
বিষফলে মন খুশ !
ভুল ভেঙে চল দেখি 'আমরা'ও 'ওরা' হই !
লঙ্কাকাণ্ড হোক !
ডাক দিয়ে নিয়ে আয় সমস্ত আত্মীয় !
দ্যাখ্ কেমন লাগে ! আঁচ কোথায় লাগে !
রাবণগুষ্টি পুড়ে ছারখার হোক , --
তবে পষ্ট ফয়সালায় আগে কে কোন্ পক্ষে দেখি !
চেয়ারপক্ষ ( সেজে স্যুটেড-বুটেড হাসি ল্যাজ ঢেকে মুখপোড়া গালকাটা বাচ্চু ) / খেটেখুটে
ঘেমেনেয়ে হনু..
" হঠাৎ দেখা "
............................
( " রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা " )
নিয়ানডার্থাল : ... হয়ত জঙ্গলে গাছের কোটর থেকে অথবা কোথায় কোন্ গুহার ভেতরে সেই কঠিন লড়াইযুগে যাত্রাসূচনা করে হাঁটতে হাঁটতে আজ তুই-আমি একসঙ্গে ...
আধুনিক : কোন্ পথে হাঁটি ! কোন্ অপার সাহারা ! ( চোরা )বালির ওপর দিয়ে আজন্ম-আমৃত্যু পা ... তলিয়ে যেতে যেতেও মিথ্যে স্বপ্নঘোর - হাত ধরি হাত ছাড়ি ...
নিয়ানডার্থাল : নেশা ! নেশা ! বুঁদ হয়ে ডুবে থাকা ! হাঁটার নেশাও যেন তাড়ির নেশার মত ! শরীর চিমসে হোক , রোগা থেকে আরো রোগা , হাঁটার গল্পকথা তবুও একশো পার ... হাজার লক্ষ পার ... কোটি কোটি বছরের হাড়ে দাঁতে পলিমাটি পাললিক শিলা পার ... ! হাঁটতে হাঁটতে কত বর্ষা-বসন্তের ঋতু পরিবর্তন , স্থান কাল বিশ্ব , দেশ পরিবর্তন ! জঙ্গল ইজারায় , পাহাড়ে টানেল , যত আদিম বাসস্থান সাজানো গোছানো গুহা -- নীলবোর্ডে ইতিহাস -- তেপান্তরের মাঠ দেড়শো তলার বাড়ি বুকে নিয়ে নিশ্চুপ !
আধুনিক : পৃথিবী ডুবছে , ঠিক সূর্য ডোবে যেমন ! কথায় কথায় বেলা বিকেল হয়েই গ্যাছে । পশ্চিমে জানলায় চোখ রাখি , চোখ রাখো , সব রোদ শুষে দূরে চরাচর জুড়ে ঘন আলকাতরার পোঁচ ! পূর্বপুরুষ , ওহে আদিম লুপ্ত , এসো মুখোমুখি বসে আজ প্রলয়ের ছবি দেখি , বিনাশকাব্য লিখি , সাধের ভড়ংপ্রিয় সৃষ্টির অস্ত দেখি !
যাকগে , এসব ঘোর ! তুমি বলো কোথা থেকে এলে ? কোথায় লুকিয়ে ছিলে এতদিন টানা এত হাজার বছর ?
নিয়ানডার্থাল : আটলান্টিকে ডুবে । সবচেয়ে নীচে এক শান্ত জলের ফোঁটা , তার গায়ে আশ্রয়ে লেপ্টে লেগেছিলাম , সবুজ প্রবাল ছুঁয়ে নোনাস্বাদ জিভে নিয়ে ছোট্ট এতটুকুন ! ... হঠাৎ কী করে যেন জাদুর ছোঁয়ায় ফের প্রাণ পেয়ে সেজেগুজে বিশ্বভ্রমণে আজ !
তোরা সব ঠিক আছিস ? কোথায় থাকিস ভাই ?
আধুনিক : বাজেটে শোষণমন্ত্রে গ্লোবালি সাপের গর্তে ...
নিয়ানডার্থাল : আয় তবে একসাথে , হাতে এই সুতো বাঁধ । রূপকথা গল্পের দৈত্যপ্রাসাদ ছাদে কড়া মাঞ্জায় এই ধারালো সুতোর শুরু । মাটি জঙ্গল ছেড়ে ইঁটকাঠ কংক্রিট হাইরাইজ মাথা ছুঁয়ে শূন্য পথের রেখা ... সৌর ... মিল্কিওয়ে ... কাগজের ফুলে ফুলে সাজানো রাস্তা ধরে সুতোয় লটকে নড়ি ...
একসঙ্গে : সুতো টানছে-ছাড়ছে দৈত্যরাজ । অনন্ত অভাগা আমরা । যত গ্রন্থি , যত শুকনো পিত্তরস , বিশ্বমাতৃকার যত জারজ সন্তান এই শক্ত সুতোর গিঁটে মমির মিছিলে এসো । রক্তারক্তি জার্নি । লুকোনো ক্ষতচিহ্ন ঢাকা । মোমের পৃথিবী থেকে ছাঁচ তুলে আমাদের চলমান লাল-সাদা মোমের শরীর ...
আর্টিফিসিয়াল .....
.............................. ..........
সাঁকোয় ওঠো ' পদ্মা নদীর মাঝি '
এপার থেকে নকল পাতা সাঁকো
হৃদয় থেকে ঘিলুর দিকে নদী
নদীর বুকে সময়ভেলা আঁকো ।
ওপার কানা , পালিশ করা কালো
হাঁটছে দেহ ঢাকনাখোলা মাথায়
' মানিক ' হাঁটে , ' কুবের ' হাঁটে , ' শশী ' ....
পুতুল নাচে পাপের ইতিকথায় ।
লাভের গুড়ে সাঁকোর জমি ভিজে
' কুবের ' ' শশী ' পিছলে পড়ে মৃত
ভাবের ঘরে চোরের দাপাদাপি
নকল নাকি আলোর মত দ্রুত !
নকল বলে মাংস রাঁধি কাজের --
দাঁড়াও দূরে , সমস্ত দাঁড়কাক ।
ঠাকুর আগে , হাড়ের পুজোপাঠে
এবার বাজো উন্নয়নের ঢাক ।
-- ঢাকের কাঠি বলছি , ওহে কবি ,
ভাবনাখানা কাব্যিতে জমকালো ,
ভুল জেনেছো , খবর নিয়ে দ্যাখো ,
' কুবের ' মাঝি আগের থেকে ভালো । --
তক্কো রাখো বাংলাভাষা বলি
কথার পিঠে কথাই শুধু বাড়ে ।
উন্নয়নের ঢাকের ভাঙা কাঠি ,
চূর্ণী হাসে খেয়ার পারাপারে ।
ছন্দ যদি উল্টোপুরাণ সাঁকোয় !
পুতুল বলে - চরম প্রতিরোধ !
পায়ের নীচে রক্তরঙিন জলের
মগজ ঘুরে হৃদয়মুখো স্রোত ।
আসল দিকে সেদিন থেকে ফেরা
কর্মযোগে পূর্ণ কোরো আশা
নকলঘিলু খামচে তুলে ফেলি --
মানুষ । ... পিছে নকল সর্বনাশা !
পূণ্যকথা
....................
( " হে মোর চিত্ত পূণ্যতীর্থে জাগো রে ধীরে ... " )
মুক্ত করো গো বায়ু !
একমনে ডাকি তাকে ,
ভক্তিমার্গ জমজমাটি পূণ্যকথা ।
আমার শব্দ শুধু ঘুরপাক খেতে থাক
আকাশে পাতালে মর্ত্যে ,
প্রতি অক্ষর হাতে সিন্নি মাখার মতো
চটকে চটকে মেখে ....
হ্যাঁ রে বাবু , সঅঅঅব জানি ,
লম্বা চওড়া বাণী ,
জ্ঞানযোগে হটযোগে চোখে কেটে গ্যাছে ছানি ।
পুরো পদ্ধতি জানি ।
আদানি ব্রহ্ম মানি ।
নেঁচেকুঁদে তাণ্ডবে
নিরীহ একশো কোটি সতীর শরীর
খোলা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে
কৈলাসে আম্বানি --
বাঘছালে ধ্যানস্থ
গলায় কেউটে সাপ ।
ছিবড়ে বুকের খাঁচা ধুয়েমুছে রাখা ব্রেন
একান্ন হাজার কোটি লণ্ডভণ্ড খণ্ড
যেখানে যেখানে খুলে ছিটকে পড়েছে
আজ সেই-সেইখানে পীঠ --
হাতজোড় করি ।
ফুল বেলপাতা ধুপ কপালে সিঁদুর টিপ
পুজোপাঠ শেষ করে বাইরে দাঁড়াই এসে ।
অন্তরীক্ষে জলে শুনশান স্তব্ধতা
যেমন কাকের দল গোটা দিন বুকে নিয়ে
মহা অমাবস্যা রাতে --
শব্দে কাতর স্থল ফুঁপিয়ে শ্মশানকান্না !
ছোট্ট মিষ্টি ভেঙে হাতে হাতে
পুজো শেষে ...
প্রসাদ কণিকামাত্র !
চামর দুলিয়ে শাঁখে প্রদীপে সন্ধ্যারতি
ইভনিং শিফটের ঘটা করে শুরুয়াদ ...
--- শালা , পাকা তারকাটা ! টুকরে টুকরে গ্যাং !
কথার ভাঁজুনি শুধু ,
পেটিকেসে হৃৎকম্প --
বদ্ধঘরে আঁতেলসাজা মাল ! --
রাজনীতি ও কবিতার যুগলবন্দী, ছন্দ ও গদ্যের কথোপকথনে মনে রাখার মত কবিতাগুচ্ছ...
উত্তরমুছুনহঠাৎ দেখা আর পুণ্যকথা বেশি ভালো লাগলো। - রাজদীপ
উত্তরমুছুনপ্রত্যেকটি লেখাই নিজস্বতায় উজ্জ্বল। আপনার সিগনেচার 🌿🌷🌿
উত্তরমুছুন