মৌসুমী রায়
হ্যালো ডাক্তারবাবু
পেশেন্টরা মার্বেলটা নাড়াচাড়া করলে আমার বেজায় ভয় করে। গ্যালো মঙ্গলবার ওটা দিয়েই তো পিচ্চি ছ্যামড়াটা আমার চোখটাকে আলু বানিয়েছিল।
ভয়ে, ওটাকে সরিয়ে রাখলাম। ছেলেটা মার্বেল ছেড়ে প্রায় টেবিলের উপরে উঠে এলো,
"ডাগদার বাবু কখন আসবে?"
"এই তো এলো বলে।নৈহাটি ক্রস করেছেন।"
"এ মা, ঐ ভিতরে গিয়ে বস। ডাগদার আসচে।"
ছেলেটা চেম্বারের দিক আঙুল তুলতেই তাঁর মাজননী গুটিগুটি পায়ে হাঁটা দেয়।
"আরে,আরে করো কি! আগে ডাক্তারবাবু বসবেন।তারপরে পেশেন্টরা যাবে।"
"আমার মাম্মীই তো পহলে যাবে। গিয়েই বসুক। টেইম ভী বাঁচবে। বিমার ঔরৎ!"
"না না, তোমার মা আগে নয়। তিন নম্বরে। ফাস্টে নারান কাকু ,তাপ্পরে ঐ দিদিমণি।"
"বললেই হলো! মাম্মী যে বুললো, পহলে নম্বর।ওর কোই নেহি!"
এতো আচ্ছা জ্বালা! ছেলেটা একটু তেরীয়া টাইপের মনে হচ্ছে। ঢোক গিলে বলি,
"ভাই, ওদের আগে থেকে নাম লেখানো ছিলো"
দুনম্বরী দিদিমণি একটু নড়েচড়ে বসলেন।সরু চোখে মা ব্যাটাকে মাপছেন বলে মনে হলো। মা ভদ্রমহিলা প্রায় তেড়ে গেলেন উনার দিকে,
"এ লেড়কি, তু হামার বাদ মে এলি যে, ম্যায় আপনি আঁখো সে দেখা!"
দিদিমণি মিনমিন করে কিছু বোঝাবার চেষ্টা করছেন ,
"আমি তিনদিন আগে নাম লিখিয়েছিলাম"
"ছোড়ো বো সব বাঁতে। হামি আগে যাবো"
কথাটা শুনে নারান কাকু আর দিদিমণি দুজনেই উঠে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গেল পরপর।মাতাজী ওদের প্রায় ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টায়।
এই কেলো করেছে! মারামারি শুরু করবে নাকি!
"বসুন না, বসুন ,সবাই চেয়ারে বসুন। স্যার আসছেন"
**"""**""""""""*****
চেস্ট ফিজিশিয়ান রবীন বিশ্বাস ডাক্তার ভালো। তবে পেশেন্ট সামলাতে পারেন না। দুটো পেশেন্টেই দুঘন্টা কাবার! আজ অবিশ্যি একটু বেশিই ছড়াচ্ছেন মনে হয়, এত দেরি করছেন। এর পরে সামাল দেওয়া মুস্কিল হবে। উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালাম।
ঐ তো, বাপ্পাদা। স্যারের অ্যাসিসটেন্ট।
বাঁচা গেলো। স্যার ঢুকছেন। সবাই সরে দাঁড়ালো।
এই রে, মা লক্ষ্মী টেলার্সের যোগেনদা খকখক করতে করতে স্যারের পিছন পিছন আমাকে ড্রিবল করে ঢুকে গেল!
হেব্বি পিছলা লোক।
নারান কাকু মরিয়া। আমার দিকে কটমট চেয়ে বলে, " এটা কি হলো ভাই?"
"হে হে।কাকু, আমাকে ভাই বলবেন না। আপনাদের নন্তা আমার সাথেই পড়তো"
নন্তা নারান কাকুর ছেলে।আমার ব্যাচমেট।
"গুলি মারো নন্তাকে। বলি ,কেসটা কি হলো?"
আমি বোকার হাসি দিলাম।
কাকু দরজায় ঠকঠক করতে লাগলেন।
যোগেনদা মুখ বাড়িয়ে বলল,
"এই ইট্টু রিপোর্ট দেব স্যারকে"
"অ"নারান কাকু চেয়ারে ফেরত এলেন।
আমি হাঁপ ছাড়লাম। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট,পনেরো মিনিট। যোগেন দার রিপোর্টিং চলছে!
"ডাক্তারবাবু, বুকটা ঠিক আছে,বুঝলেন। ঐ পেটটা। আইঢাই,আইঢাই। কেমন চাপচাপ ভাব। পাইখানাটাই কষা। এই ধরুন গেলুম। বসেছি। বসেছি। বসেই আছি। বেরোবার নাম নেই কো! শুধু হাওয়া।শুধু ফুস ফাস"
আর সহ্য হলোনা বোধহয়। স্যার গলা খাঁকাড়ি দিয়ে উঠলেন,
"ইয়ে মানে আপনাকে আগেও তো একটা ল্যাক্সেটিভ দিলাম। ওটা আরেক ফাইল খান। আর শাকপাতা খাবেন বেশী করে।
একমাস পরে চেক আপে আসবেন"
"হে হে, সকাল বিকাল সিস্টেম ক্লিয়ার থাকলে মনটা ফুরফুরে লাগে।কেমন কিনা ,ডাক্তার বাবু?" যোগেনদা হেসে একগাল।
"নেক্সট..."
নারান কাকা দরজার বাইরেই ওৎ পেতে ছিলেন। হুড়মুড়িয়ে ঢুকতে গিয়ে যোগেন দার পা মাড়িয়ে যাতা কান্ড।
*****"""""******"
"স্যার, পেশেন্টের ফীজ কাটবো?"
যোগেনদা সুরুৎ করে কাটবার তালে প্রায় দিদিমণির ঘাড়েই।
"আরে আমার রিপোর্ট তো!" অমায়িক হাসেন আমার দিকে চেয়ে।
"এত সময় রিপোর্ট হয় না দাদা। প্রেসার প্রেশার সবই তো মাপালেন "
ডাক্তারবাবু ভিতর থেকে জানালেন,
"থাক, ছেড়ে দাও!"
আমার কি , গেলে তোমার ফীজ যাবে!
আর মালিকের কমিশন।আমি তো নিমিত্ত মাত্র। মনে মনে বলি।
ওদিকে নারান দা এতক্ষণে ডাক্তারবাবুকে বাগে পেয়েছেন।
"আজ অনেকক্ষণ ওয়েট করালেন স্যার। কেমন কিনা? "
"হ্যাঁ। আজ একটু ইয়ে...।আপনার কি হয়েছে?"
"সেরম কিছুই না। বাড়ির লোকের বাতিক। আর বলেন কেন"
"তবু ,কি ধরনের উপসর্গ?"
"আজ্ঞে, দু চারদিন ধরে একটু খুকখুক কাশি মত, ঐ আর কি! সব বাড়ির লোকের বাতিক।"
"ঠিক কয়দিন ধরে? দুদিন নাকি চারদিন?"
"ঐ মাসখানেক হলো আরকি!"
"মাসখানেক! জ্বরজ্বর হয়?"
"না না। শুরুতে একটু ঐ জ্বরমত। দুদিন অ্যান্টিবায়োটিক খেলাম। ব্যস ,জ্বর গায়েব।"
"বলেন কি! তা ঐ অ্যান্টিবায়োটিক কেউ প্রেসক্রাইব...?"
"আরে না না। সব ঐ বাড়ির লোকের বাতিক!"
"বুঝলাম। জোরে জোরে শ্বাস নিন। হ্যাঁ, এপাশ ফিরুন। বেশ, জামাটা পড়ুন।
এক কাজ করুন। আপনি একটা চেস্ট এক্সরে করিয়ে আসুন। একটা অ্যান্টি
অ্যালার্জিক আর একটা ইনহেলার দিলাম। দিনে তিনবার পাফ নেবেন। রোটাক্যাপের ব্যবহার আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বাপ্পা..."
"ইনহেলার! আমার কি হাঁপানি হয়েছে?
ডাক্তারবাবু,সত্যি কথা বলুন? স্টেথো তে কি পেলেন? টিবি নাকি? আমার বাড়ির লোক ও এই ভয়টাই পেয়েছিলো! বলে, দিনরাত বিড়ি টানবে..."
"না না ,সেসব কিছু নয়।"
"তবে কি লাঙে কোন ভয়ানক কিছু? ক্যানসার ফ্যানসার নয়তো? আমার বাড়ির লোক মরেই যাবে"
"না না। উদ্বিঘ্ন হবেন না । ইনহেলারের ওষুধটা ডিরেক্ট লাঙ্গসে যায় তো! কাশিটা পুরোনো"
"বলছি ,ইয়ে ডাক্তারবাবু, ইনহেলারে আবার নেশা ফেশা হয়না তো? আমার বাড়ির লোক বলে..."
************
ফ্যাক করে হেসে ফেলি। বাপ্পা চোখের ইশারা করে , দরজা খুলে চেম্বারে ঢোকে।
অগত্যা বাপ্পা এখন প্রায় বাউন্সার। টেনে বার করে আনে নারান কাকুকে।
খানিক বাদে ডাক্তারবাবুর গলা...
নেক্সট...
এদিকে, বাইরে , দিদিমণি আর মায়ে পোয়ে প্রবল ক্যাঁচাল চলছে,
-"রিসেপশন দাদা বলেছে, মাম্মী তিননম্বরী ! একুন তিন ই ঘুসবে না ?"
-"ওসব ফালতু কথা বাদ দাও ভাই। আমার অ্যাপো ছিলো!"
-"তুর মুখ খিচে নিবো। হামার বেটা ফালতু বোকচে!.."
কেস তো পুরো কেলো।
কাকে আগে পাঠাই বলুন তো?
বেশ
উত্তরমুছুনহ্যালো গল্পকার, মজার গল্প। আমাদের চারপাশ থেকে নেওয়া। শুভেচ্ছা। - রাজদীপ ভট্টাচার্য
উত্তরমুছুনভীষণ ভালো লাগলো আমার ।
উত্তরমুছুন