গার্গী সেনগুপ্ত


বালিকা বিদ্যালয়




স্কুল বাড়ি


ধরা যাক নদীর শরীর

ঢেউয়ে সোনালী কারুকাজ

জল আসে জল যায়

স্রোতের মতন,

ফিরে আসা নেই।

এ নদীতে

নেই জোয়ার ভাঁটাও

নেই পাড়- ভাঙা কলরব,

শান্ত সারাদিন, শুধু

পাখিগুলো পাড়ে বসে

কাকলিতে তরঙ্গ কাঁপায়।

শৈশব  ঘুমিয়ে থাকে

স্মৃতি হয়ে

নদীর পাথরে ।
*********************




ক্লাসরুম

একটা মৌচাক

মৌমাছি মৌমাছি মধু ভনভন

গুনগুন এ ফুলে ও ফুলে

মধুভান্ড

উপচিয়ে পড়ে।

উড়ে যায় ফেলে রেখে

অন্য ফুলে মধু নেবে বলে

মধু দিয়েছিল মোম দিয়েছিল

এ মৌচাক আজীবন

মাথায় করে রাখা

অনন্ত মাধুরী ঢেলে

জীবন সাজানো।

*****************

ব্ল্যাকবোর্ড

সেই অনার্য মেয়েটি

যার হাতে ফুটে ওঠে

জুঁই, চাঁপা, গন্ধরাজ

সুবাস ছড়ায় মনে

অজানা বন্ধুর মত,

খুলে যেতে থাকে 

ভুবনের বিস্তৃত  জানালাটি।

*************************

চক

উড়ে আসা প্রজাপতি

যেন এখনি বসবে ফুলে, আর

তিরতির কাঁপুনিতে লেখা হবে

হরপ্পা থেকে সিঙ্গুর

আঁকা হবে ফুসফুস থেকে

অক্ষি গোলক।

অনন্তের জীবন সঙ্গীত...

নড়াচড়া বোর্ডে,

গেঁথে থাকা  শিশুদের মনে



******************



ডাস্টার

লেখা হলে মুছে দিও -

দিদিমণি বলে যান।

স্কুলছুট মেয়েটিকে

ফিরিয়ে এনেছেন সঞ্চিতাদি

ওর বাসন মাজা হাতে 

সাবানের গন্ধ লেগে আছে 

টুকতে দেরি হচ্ছে, মুছতে

গিয়ে মনিটার

        থমকে দাঁড়ায়।

এক একাকী মানুষ

সকল গোপন সুখ যার

নিজ হাতে মুছে দিতে হয়।

***********************





টিচার্স রুম


আসলে একটা অরণ্যানী

সারি সারি

নাতিশীতোষ্ণ বৃক্ষ -

ছায়া দেয় ফল দেয়

চন্দনের কাঠ

           সুবাস ছড়ায়

কেউ  কেউ শুশ্রুষায়,

শাসনে তাদের মত

গাছ হয়ে

ওঠার আশ্বাস দেয়।


****************************



দিদিমণি




টানটান শ্রীজিতাদি

প্রসাধনহীন

মেয়েরা আড়ালে ডাকে

দিপিকা পাড়ুকোন।

এই বাঁদর

আদরের সম্বোধন

মেয়েরা জানে।

সামান্য মন্থর ভঙ্গি

সীমাদির

ঠোঁট খুললেই যেন

শিউলি শিশির ঝরে পড়ে।

প্রতিমার মত লাগে

ওরা তো স্কুলের দিদিমণি

কাছে এলে মা মা গন্ধ আসে।


************************


মিড ডে মিল

মা উঠে চলে যায় কাজে

ঘুম থেকে উঠে বই নয়

মেয়েটির রান্না বসাতে হয়

বাবা খাবে ছোট ভাই

তাকে স্কুলে দিয়ে তবে

আসবে নিজের স্কুলে

ভাগ্যিস দুপুরে

সয়াবিন ভাত

খিদে  তো মেটে

সেই ঢের

পড়াশুনো সব শেষে।

**********************


ঘন্টা


সুজাতাদি ক্লাসে এলে

তাড়াতাড়ি পড়ে।

বাংলার ব্যাকরণ ক্লাস

গোমড়ামুখের

দীপালীদি একা পড়ে যান,

পড়তেই ভুলে যায়!

উমাদির সেলাইয়ের ক্লাস

সূচ বিঁধে ফোঁটা ফোঁটা

রক্ত গোপনে গোপনে।

ছুটিতে বাজলে

নিষিদ্ধ উত্তেজনায়

দুরুদুরু বুক,

কেউ অপেক্ষায় আছে নাকি

সাইকেলে

গলিতে ঢোকার মুখে! 
**********************



রবীন্দ্রজয়ন্তী

উড়ে আসে ঝরাপাতা

কার যেন নুপুরের রিনি

সাজো সাজো রব

ক্লাসে মন নেই,

অংকতে ভুল

বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা

নাকি, হৃদয়ে মন্দ্রিল

কোনটা বর্ষার গান

অধিক মানাবে?

লাল পাড় শাদা শাড়ি,

মেয়েদের নয়,

দিদিমণি শুভ্র ফুলে

বেণীটি সাজায়।

*********************


মন্তব্যসমূহ

  1. তোমার কবিতাগুলোকে বুকের মধ্যে এনে আদর করতে ইচ্ছে করছে!

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো লেখাগুলো ৷ সাদা কালির কবিতা ৷

    উত্তরমুছুন
  3. অসাধারণ । প্রতিটি কবিতা

    উত্তরমুছুন
  4. প্রতিটি কবিতা, স্কুলবাড়ি, ক্লাসরুম, ডাস্টার চক মিড ডে মিল রবীন্দ্রজয়ন্তী
    প্রতিটি অনবদ্য। একটা চলমান ছবি যেন কলমের যাদুতে

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য