রিমলী বিশ্বাস

 


বাসন্তিকা

                                                      

বসন্তকাল এলেই 

অবধারিত ভাবে সবটা এলোমেলো হয়ে যাবে

আবীরে মাখামাখি সোনাঝুরি,

ইচ্ছে করবে একটা ত্রিকোণ প্রেমের

জ্যামিতি আঁকি, যার মীমাংসা হবে

পরিমিতির অঙ্কে!

একটা হ্যান্ডলুমের শাড়ি পরবো

তাতে কতগুলো ভাঁজ থাকবে

প্রশ্নে সেসবও আসবে

কোন সুগন্ধি মেখে যাব

তার ইঙ্গিত দেবে দূরাগত বাতাস

তারপর

আমি একটা মানুষের বুকের কাছে মুখ গুঁজে 

মনে মনে সহস্র কবিতা লিখবো।

বসন্তদিন ছাড়া যাদের কোনো মানে থাকবে না।

 

 

তোমায় ছুঁয়ে 

 

 

পলাশ জানান দেয় শীত চলে গেছে 

পশমিনা শাল পরিপাটি হয়ে 

দেরাজে ঢুকে যায় 

তালাচাবি পড়ে যায় আচমকা নেমে আসা

সূর্যডোবায়, বিকেল এবার থেকে

ভালোলাগা গোছের একটা বাতাস নিয়ে 

রাস্তায় নেমে পড়তে বলে

পায়ে হেঁটে হলে সবচাইতে ভালো 

আরও ভালো হাতে যদি সঙ্গীটির হাত থাকে

সময় পুরুষদের পাঞ্জাবিতে দিব্য দেখায়

নারীরা শাড়িতে সারাবছরই সুন্দর 

মধুমাসে কিঞ্চিৎ বেশি 

গালে ছোট্ট একটা টোলের মতো হাসি

নিয়ে প্রস্তাব আসে 'একটুখানি ছোঁবো?

আজ যে দোল! না ছুঁয়ে কী রঙ দেওয়া যায়!'

জানি অছিলা

তবু এটুকু ছলনা রঙের দিনে নাহয় থাক।

 

 

ঘুড়ি

 

 

বসন্ত এলে একটা বিরহী কোকিল ডাকে 

যে ছেলেটা কার্যত নিজেকে

অপদার্থ বলে দাবী করে 

সে- আনমনা হয়ে কবিতা লিখতে বসে!

আরও বেশ কিছু অকর্মণ্য সময় পার করেও

পৌঁছোতে পারে না কাঙ্ক্ষিত মেয়েটির কাছে

কাগজের হিজিবিজি সুদ্ধ একটা ঘুড়ি বানিয়ে 

অতঃপর উড়িয়ে দেয় অপরাহ্ণে

যতদূর দেখা যায় তাকিয়ে থাকে!

মেয়েটির কাছাকাছি পৌঁছোনোর

আর কোনো রাস্তা তার জানা নেই

 

 

মধুমাসে

 

 

নিঝুম হয়ে আসা প্রকৃতিতে

দোলপূর্ণিমা এসে নতুন পাতা দেয়

ফুল, মঞ্জরি, কত রকমের রঙ!

শরীর তখন আড়মোড়া ভেঙে 

শীতের পোশাক খুলে 

জ্যোৎস্নার নরম বাতাসে দাঁড়ায়। 

একটা অকথিক কথা

বহুদিন বলবো বলবো করেও

যা বলা হয়নি

মন বলে 'এবারে বলেই ফ্যাল'

শরীর বলে 'ডেকে নে কাঙ্ক্ষিত জন কে'

অন্যমনস্ক কে একজন ভেতর থেকে বলে ওঠে...

'নিশ্চিত জানিস জীবনে আর 'টা বসন্ত পাবি?

তবে আর দেরি কেন?'

 

 

খোঁজ 

 

 

আজকাল মনেপ্রাণে চাই কেউ কোত্থাও 

না ডাকুক আমায়

কোনো কবিতার মঞ্চে নয় 

সাহিত্যসভায় নয়

সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে নয়। 

একা থাকার সাথে একরকম সখ্যতা করে নিয়েছি

এই একায় একাকীত্ব আছে 

শূন্যতা নেই। 

আমি সমস্ত জানলা বন্ধ করে দিই

কেননা বসন্ত এসে গেছে

বাতাস যতই আবিষ্ট করুক জানি তা বিপদজনক

একা একা সন্ধ্যে পেরোই এক কাপ চা নিয়ে 

শুধু একটানা একটা শব্দ ভারি বিরক্ত করে 

নাকি বিপন্ন!

জানলা বন্ধ দেখলেই... ঠক্-ঠক্

একটা কাঠঠোকরা

আমার খোঁজ পেল কীভাবে!

 


মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো লাগলো বসন্তকে ঘিরে মনের টানাপোড়েন।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন
  2. গৌতম দে সরকার১৬ জুন, ২০২৩ এ ৯:২১ AM

    সাবলীল কবিতার ভাষ্য।👌

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য