ঈশানী রায়চৌধুরী
হলুদদিন
হাহা করছে বাতাস মাঠভর্তি... খঞ্জনি বাজায় ফসলের গোড়া।
পেটেপোয়ে রক্তের কাদাজল লালা মেখে ছানাপোনাগুলো যদ্দিন বুকের ওপর তদ্দিন নড়বার জো নেই । আজ তারা মুখ থোবড়াচ্ছে চাষীর পাটায়, তাহোক এইজন্যেই তো শাঁসেজলে তাদের আগলে রেখেছিল ওরা । দুনিয়ার নিয়মই এই ! বুকের ওমে যারা ফালুক ফুলুক করে বাড়ছিল, নাচছিল, বাতাসে লুটোপুটি দিচ্ছিল কখনও ছাগলেও মোড়াচ্ছিল তারা ধারালো কাস্তের ঘায়ে আজ মহাজনের গোলায়। যাগ্গিয়ে এখন ক'দিন রেহাই । দগদগে পেটটা রোদে বেশ টানটান পড়ে আছে... একটু একটু করে ঘা শুকোবে। সন্ধে হলে আবার ওস পড়বে.... গুঁড়ো গুঁড়ো আরামে টসটস করবে শরীর। রোদের তাত এখন মরে এসেচে , বিকেলটাও ঝপ করে কেমন নিভে যায় । সুয্যিঠাকুর লাল লাল মুখে হেসে বলে যাই, আবার কাল। আমি গড় করি..... তুমিই তো আমার সোয়ামী গো ! জগতটাকে রক্ষে করছ । অমন দাউদাউ আগুনে তোমার বুক পুড়ছে বলেই না আমি জগজ্জননী হয়ে বসে আছি । তোমাকে লোকে পেন্নাম করে , বাপ মানে, তবে তোমার চোখে চোখ রাখার তো সাধ্যি নেই। তাই সব দূরে দূরে! আর আমি জলেথলে ওদের মুখে ভাত দিচ্ছি আগলে আছি বলে ওরা বড্ড ভালবাসে আমায়..... মা বলে ডাকে।
সে যাই হোক এখন কমাস আর ছানাপোনার দামালপনা নেই, তুমি সোজা আমার বুকে নেমে জড়িয়ে ধরতে পা'বে । ভাবলেই গা শিরশির গো ঠাকুর ! কি নরম তাপে আদর মেখে দাও আমায় তা বলে বোঝাই কি করে । সোমবচ্ছরে এই যে আমাদের সুখশয্যা তার পথ চেয়েই তো বসে থাকি! তোমার আশিব্বাদ আমায় কানায় কানায় ভর্তি করে বলেই আস্তে আস্তে আমার পেটে আবার কুঁড়ি ফোটে। তবে আজকাল আর ছাড় দেয়না মানুষ..... একদল নামতেই আবার অন্যচাষ। কি সব সার দেয় বিষ দেয় ! আমার শরীর জ্বালা করে গো ঠাকুর । তবে মা যে ' বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না '।
তোমার সোহাগ মাখতে মাখতে বড় আরামে এত সব নালিশ করছি তোমায়। তুমি কষ্ট পেও না। এইযে আমার নিয়তি গো! তোমাকেই দেখনা ঠান্ডা হতে দেবে কেউ ? যত কষ্টই হোক জ্বলে খাক হয়ে যেতে হবে ! আমার নরমে এখন একটু ঠান্ডা হও ! বুকের মধু মেখে দেব তোমার আংরা শরীরে , দেখবে ভাল লাগবে। তবে খানিক শীত পড়লে আবার নতুন কাজ। শুকনো পাতা ফেলে নতুন পাতা সাজাও , ঝলমলে সব রূপকুমারীদের তোয়াজ করে ফুটিয়ে তোলো , শুকনো লাল মাটিতেও লালের বান ডাকাও। কাজ অনেক গো কত্তা। শাকসবজি ফলাতে হবে.... তা তুমি তো আর সব খবর রাখনা। আমায় দায়িত্ব দিয়েই খালাস !
আর কোন ঝগড়া নয়.... আজ শুধু ভালবাসাবাসি ! কেমন লাগছে বলবে না ! আমার থুতনিটা ধরে টুক করে !
তোমার লেখা না পড়ে পারি না । তাই পড়েই ফেললাম। 👌
উত্তরমুছুনঈশানী দি'র লেখায় ক্রমশ নিজের আঙুলের ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে। সেখানে ইউরোপ নেই কোত্থাও। খাঁটি বাংলার দেশ - গাঁ'এর গন্ধ ম-ম করে। খুব ভালো দিদি। আরও লিখুন এমনই।
উত্তরমুছুন- রাজদীপ ভট্টাচার্য