জি.কে.নাথ


 


যা তোমার বোধগম্য নয়! 



হাঁটা পায়ের অন্ধকার মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে 
  ভুলে যাওয়া একই কবিতার বই বারবার কিনে পড়ে ফেলার মতো যে শোকে কাতর হয়ে গেছে প্রস্তরীভূত প্রেতমুখ,
 তার কাছে বাঁধা হাড়ের সুতোয় 
মাতৃনৌকো

এপারে আর ওপারে জলের পায়ের কাছে শুয়ে সরে যাই ফের নিজের মুখের আড়ে ব্যয়সম্ভবযুবা!

ভাব বয়ে হতশ্রান্ত এইভাবে দৃশ্যমান পথটুকু মাড়িয়ে
 এমন চলে যাই তবে উস্কোখুস্কো, বেসামাল

দেহউনুনে পোড়া ছাই ওড়ে, 
দেহ নদীর ধারা বয়,
ভিতরে শ্বাস পড়েছে ধোঁয়া বোঝা আঙুল ওঠায়

হৃদফসল জমির মুঠোয় ধরি দু 'তিন দল সেনা-দৌড়
আয় কুঁজো ভাঙা জলের মজদুর, 
মাটিজলের ছেলে

আবীর রাঙা মাটির ভাগে ধান্যগন্ধের সাঁঝে প'ড়ে থরেথরে রক্তের ভাঁড় 
বেরিয়ে আসে নাড়ি ছেঁড়া মৃত আঙুলের তর্জনীতে খসা শীত খাটা পেটের গর্ভ থেকে তোলা প্রাণ 

ওই যে ওদেরও দিন , আমারও দিন
গড়ায় ঘাতক , গড়ায় লাশের পাশে জমি
জমির পাশে আগুন পাওয়া হাতের রেখায় শস্যপিছু হবিষ্যিচক্র 

ছত্রখান , দুমড়ে যাওয়া ডাকে
যে যাবে আজ এর আগে
 কথাটির শেষ দিকে এসে যার এক আশ্চর্য পূর্নদিবসে থালাময় তিল পরিবারে মানুষ
অথবা 
এ বৈভব-ব্যাপারী অভ্যস্ত সে হাসিমুখ বন্ধক পারিবারিক!

অনাবিল স্বরে রোদ লাগে ঢেকে রাখা দূরের বিষাদরূপ,
যেন স্পষ্ট করে মহৎ 
খুচরো গুণে অবশিষ্ট স্নেহ --

 বুঝতে পারি , না পারার কষ্ট ধুলোর মতো মেশে ঝলমলে ভেতরে ভেতরে যেভাবে, সম্পূর্ণ মজ্জাময় আমাদের বাঁকাচোরা প্রেমিক মনে

স্নানের পর নদী থেকে উঠে ঘুরে ঘুরে এ পাড়ার অন্ধকার হয়ে আসা থেঁতলানো কালো শরীরের চারপাশে বেড়া দিয়ে তার ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে আগুন জল , আর অপেক্ষা করে ফিরে যায়, যদি -বা তার কথা বলো একটু

আধময়লা আকাশের মৃগশিরায় জ্বলে মুণ্ডু গড়ানো রণরক্তে ঠোকর খাওয়া খয়েরি ক্রোধ 

ভিতু পড়ে আছে শীতের দূরে , বাজাও এমন নিরন্তর !
কার ? এ কথা কি জানো ? কতটুকু সম্পর্কের ওরা ?

সম্পূর্ণে সমস্ত জেগে স্থির নিরণ্ন 
খালিপায়ের কিছু হাওয়া স্ব বর্ণনা মাত্রই সমস্ত সেকথায় জেগে , 
করা জেগে চকিত বাতাস দিতে চাওয়া রাত-আবহাওয়ায় মধ্যবিত্তদল ? 
সবটাই আসলে আমাদের দেখার শৌখিন পণ্যের জঙ্গলে --পরিচয়-চিহ্ন-ছায়ান্ধকার-ছমছমে

অতঃপর কার্পাসময় দিবারাত্র পেরিয়ে
 হোম পড়াই মেধাবী স্বভাবে অভাবী
 শাপলাভাসা শীর্ণ উপহারযোগ্য এক গলায় 
যেখানে দ্রুত ডুবিয়ে নেয় হৃৎঢালু ভূসমুদ্রপ্রান্তর ---

সটান শুয়ে প'ড়ে এত ঘুমন্ত সূর্যের জলে ভিজে অগ্নি টীকায় যাদের
অস্তের দেহ ঘোরে বনবন, মহাজগৎপারাপার ---

ক্রমশ ঝিমিয়ে দোলে এ দেহ থেকে অসাড় হয়ে দেহতীরে, তার ফল শব্দের বীজ ফাটা নিঃশ্বাসে দুঃখিনীর হাওয়ায়
লাশ কাটা পুকুর জলে 
খড়বিছানো মাটির উপর আকাশক্ষেত উপুড় হয়ে গেছে মায়ের পিঠে  

 দেখি ফাটল ধরা আসা-যাওয়ায় চলন্ত মুহূর্তে মানুষকে ছুঁতে ছুঁতে নৈঃশব্দের হতাশ বন চিরে গেছে শোকের ট্রেনে কাটা পড়া প্রয়োগের সম্ভবে প্রাণসমৃদ্ধ চিহ্ন, 
সামান্যই দূরে সরে যায় না পড়া এক বাণিজ্যিক ইতিহাস যেন জলের সমাধি 

এতকাল শেষের প্রথম তাকে ডেকে স্নান রাখতেই আমার কামের প্রহরে বন -বনান্তরে শব্দ পোড়ে, 
সহ্যের বিপুল হাড়ের শুকনোয় নগ্ন এখন শব্দই তো ঋতুমতী একমাত্র বিষয়! 

যুগপৎ কে কিংবা কারা পাপে জয়মাল্য জড়িয়ে পড়ে আছে উড়তে উড়তে সকলের সামনে স্তব রেখে জানি না কিছুই---

ছিন্নশিরায় ছোঁড়া তীরের উল্টো দিক থেকে এসে ডুবে যাওয়া খন্ড খন্ড শ্রুতিশ্রুতর নিক্তিতে নিষিক্ত হয়ে ফেটে পড়ে রাত্রিময় রতিচক্র ,
কিছু না বলেই শুধু বলি দেখা হতেই আবার ঘুরে আসি ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া আমাদের খাঁ খাঁ দেবদারু-মন্ত্রদেহের মৈত্রী যে কোনো সময়ে এই শারীরিক রক্ত!

ছায়াআগুনে দু'হাত সংকলন ধরে আমি হাঁটছি ভিড় আদৃত মুখমন্ডল থেকে ছিটকে  

তৃষ্ণা নিয়ে রক্তকাদায় বয়ে যায় 
কোষজলের মধ্যে লেখার উপর লেখায় জমা শবপাহাড় 

এ কোন উপত্যকায় স্বজনের শোকের শরীরের পাশে শরীর খোঁজে , 
এ কোন শরীরের পর শরীর ঠুকরে চাটে 
শকুনপ্রেত
 বিদ্যুৎজিহ্বায়

শোকপৃষ্ঠার নীচে কেন আজ এমন আমার পাতার পাশে গাছের শিরায় পাখিঅস্ত কাজে ওই তোমার একহারা ছায়ার অধিক হারে বেড়েছে কালো ?

খেয়ানিপুণ জন্মজলের ঘর ভ'রে ফোটানো তারার মতো জ্বলজ্বলে পরিপাট্য ঘুম পেরিয়ে যেতেই দাঁড় টেনে অনেক হাতে ডুবে গেছে কথার দেহে নিয়ে বাঁচা নিজ গৃহপ্রাণ

অজানায় ধোঁয়া ওঠা প্রান্তদুপুরের দিকে হেঁটে
 সঙ্গহারা শরীরটুকু আমায় পোড়াতে পারেনি এখনও
             বিক্রেতার জীবন এই সরস জাত !
দেবে না কেউই , দেবে না জলদ ফসলে ছিনিয়ে নেওয়া ক্ষতের গহ্বর
নাও তবে লুকিয়ে পড়ো শব্দরুটির জোট বানিয়ে উঠে আবার প্রতি আক্রমণ করো
দেখো তো তুমি কোন জাতের ছোঁয়ায় ঢুকে পড়েছ অস্ত্র হাতে 

মন্ত্রের উঠোন তৃষ্ণা , তৃষায় এসে দাঁড়ায় চিতাবর্ণ ধারণ 
শেষ না হওয়া ক্ষণে আধমরা শরীরের ভাত ! ভাতের পাশে ক্রমশ বাড়ছে লোক-কঙ্কাল

ধুলোয় মোড়া বিষাদ বয় , ওই হাওয়ায় ওড়ে আলোবেদি যা কিনা আলোর চেয়ে গভীর আলোর অনেক বেশি আলোর বিষাদ  

কী ভয়ানক শান্তিদহনে তোমার কাছে জলের ধারে ফেরা ভাষার স্নান তো এখন আমার ঘরের পাশে শব্দের পাঁজরে !

সম্বলহীন হাতে ঘিরে রাখো বরং যা খুশি এই কয়েক পৃষ্ঠা আত্মভাবলতার মতো রাতজাগার পাশে শিখার নির্জলা ফুল

ভ্রান্ত করা সন্তান বিষয়ে বজ্র খেলবি তো আয় , 
তোমার নামে আমার এই হাওয়া চল শিকড়ে ডুকরে অতি আগুন চরে , 
শব্দ পোড়ে ঠিক পথের সজীব জিভের চেরা

পোড়ে অর্জন-অরণ্যের সব টলানো জলের মতো আমার ভাসায় ইন্দ্রিয়-সীতা!

দেখ তবে কি বাঁচি দক্ষিণ, এখন স্থানচ্যুত এলিয়ে অনেকখানি ভাঙা সবুজের শিকল
 প্রহরায় নিয়ে চল লোকশোক বেঁধে রেখে

যৌগিক পায়ের নীচে জমে জনতাসীমান্তের দিন, 
গম্ভীর থেমে থাকা জঠরের বিশাল এক বাজারশব্দে
 এ মুহূর্ত সত্যে এই খেলা চিরদিন
 এইভাবেই দৃষ্টির প্রয়োগে পাটের শুকনো !

ওড়াই দেখো এই আমি যাত্রা শুরুর জীবন ,
তবে ছায়ায় বেড়ে হাতের নির্জন কে আপন কিংবা কে পর কী আর যায় আসে ঋণের অশেষ !

জীবনযাত্রায় আমার মতো এমন
 সাকারপ্রাপ্ত দেহে চিরধূসর
 গ্রীষ্ম বানাই দু'কামরায় 
দেখো ধরিত্রী গাছে গাছে হাওয়ার হাত মঙ্গল লগ্নের পুরুষচক্র কীভাবে যেন থেকে যায় নৈঃশব্দের উচ্চারণের ভেতর 

আমরা কেউ কি দেখেছি তন্দ্রাহত কিছুটা সহজ হওয়া অন্ধকারে তীব্র নগ্নপদের বিপরীতে নিজের রূপান্তরিত ভঙ্গিমা ?

দিগন্ত নামে এ-ঘর তবু চিরমাটি থেকে আমিই হাত ব্রহ্মান্ড-পাতি ওরা সবাই, কেউ কাছে , কেউ-বা দূরে তুমুল বিদ্যুৎঝড়জলে

কঠিনে পার হওয়া ফাঁকা অল্প কিছু যা কিছু স্নেহ যেন আমার ঝিকিমিকি অন্ত:পুরে ভ্রূণ ঝরে পড়ছে উড়িয়ে নিয়ে ফেলা কুড়িয়ে রাখা মন গোপনের বাড়বাড়ন্ত জনশিল্পউৎসবের সামান্য দূর

কাব্যব্রতের ধূলি আচ্ছন্ন করে আমায় মুকুলিত স্নানপুষ্প সুরে , 
সুরের দূরে মিশে থাকা স্রোতের চাঁদ ভেঙে প্রণয় রঙ ছড়ায় চলাফেরার আলো পথে ,
 বলো এ কোন অঞ্চল ?
বৃষ্টির গাছে গাছে পাঠিয়ে দেই জলের স্বয়ং ছায়াবাহন
খুলে আসে কৃষ্ণপাথরে হাতের তালুঘেরা স্তূপে ধূপের চোখ ভেঙে ছায়াভোলা যত নতুন কবিতা তত ক্ষয় অথৈ

কে তবে তুমি স্তব্ধতায় ওই শিরা মেশা পুকুর ? নিদ্রাহীন সন্তান-সন্ততির শোক ?
না পারার শব্দের জলরং এ অবিকল নৌকো হয়ে ঝাপসা হয়ে গেছ ?

মাথা রেখে নিঃশব্দে গড়িয়ে চলেছে বাকল শেষে এখন তোমার মাটির চামড়া ঝুলে যাচ্ছে নিশ্চল হয়ে এলে , 
তবে কার কোনদিকে দেবীপায়ের দিকে উড়ে যায় কত নিঃসহায় মানুষ ডানার মতো রোদে ঝলসে , 
তার রুদ্রভানু ঢেউয়ে নির্ভরতা আমার উপর কুড়িয়ে পাওয়া নুড়িছুটের অমল শূন্য
হারানো নীরবতা ভেঙে জলে নৌকো হয়ে ভাসো হরিদ্রাভ কাগজের দিন
 তবে গতি হাতড়ে চলে তার সরে যাওয়া এই অগ্নির চেয়ে প্রিয় পাঠক 
আমাদের কথায় তুচ্ছ করে মাটির টানেই বিপদজনক ঘুরে আসি বৃস্পতিবার
লক্ষী অঙ্গে ঘন হয়ে কালো সমুদ্র-কুয়াশা হয়ে গেছে এবং তার মোহ ঝরে পড়ার শব্দে পদ্ম

আমি একহীন একীভূত দৈব কথায় ভেসে ক্রমশ

কোন পথে কাঁপে এখন শব্দগত আমার ভারে ছন্দময়ূর সত্যের আদি স্রোতবাক্যে মৃত্যুবিনাশ আহুতি ?

জল পাতা রৌদ্রে কন্ঠের কাছে পুণ্য রাখি, 
গা ধোয়া সন্ধের জলে দ্বিধায় লুণ্ঠিত প্রতিবার , ক্ষমার সমস্ত শরীর গরম মেঘের ভেতরে ঢুকে গেছে

আর কীই-বা বলি ? শিকড় সন্ধানে ঘুরি ঘূর্ণি সমেত  পূর্ণকবন্ধবন, তার অক্ষর নির্জনে উঁকি দিতেই খুলি খুলে ফেলে বৃক্ষস্তব্ধশরীর

যার পর কিছু ছায়াভর্তি ভারতীয় মাঠে কী অপরূপ সনাতন শরীর 
   দু'হাত মেলে সংসারসন্ধ্যার দিকে সে তবে অনন্ত ---
তারায় তারায় ছড়ায় সন্ধ্যাপাড়ায় চুল খোলা ওই মেঘের আগুন রেত:মাটি 

এখন পুরানো সব একফালি জোছনাশ্লোকের উপর এসে  
  চুল্লি ভেবে ভুল করা তিল 
যা জীবনের চেয়ে অনেক অঘোর মায়ায়

     এ ওর শরীর তুলোট এলোশিকড়ে ঘুমিয়ে কেন এই নিরন্তর খেলা বুঝতেই পারস্পরিক পলকের প্রতি ওরই আলো ছিটকে আসে আমার হাড়পাঁজরের ঘরে

খুঁজতে খুঁজতে মনে করার দৌড়ে ছুটে ঘাসের দানায় যুদ্ধ ভুলে কার দিকে তাকাবো বলো ? 
তবে কার মুখে বাজ পড়া খোদল জুড়ে উষ্ণ অনন্ত-স্রোত ঢেকেছে ?

এগিয়ে যাই দেখতে দেখতে ফেরৎ আসে এক ঘায়ে তরঙ্গ আরও তারই যাপন ভেঙে কোথায় ক্রম:মনের অবয়বে বিভোর
বাকস্পন্দে ছায়া জ্বলে ভাপ ওঠে ছন্দে , ছাইচাষী হয়ে ডোমনির ঘর নির্মাণ 

গ্রহপ্রমোদ তো আজ অতি সামান্যই আগুন নিয়ে খেলে তোমায় নিয়ে ভাসে রিপুকাঁধে জগৎকথা ফেলে 
এই দেখে আকুল মাটিকালের কোথায় রং রাঙাই , ভুলে যাই এক পথে বদলানো বসন্তের শিব ,
আবাহনে জল গড়িয়ে নিচ্ছে রোদের গায়ের মাটি
 গ্রহণে নাচতে নাচতে ধরি সত্য দাওয়ায় বসে মধুর কী উপায়ে ভিড় সরিয়ে অমন ভাষার কাছে

জৈবিক ভারের বহন শেখা বিস্ময়দেহ বসানো বাসনা টানতে টানতে কোন পলকে খুলে আসে তাঁতচক্রে নদী ছিন্ন গর্ভতন্তু
ছায়ার ডাকের ভেতর না থাকা পথের তুমি কি মুখের সরলে ফোটা এমন জন্মতারার বায়ুতরঙ্গ ?

ক্রমে সকলশূন্য সুদূর বিস্তারের বিষাদকৃষ্ণ ঘাড়ে রাত্রি হয় স্বরস্পর্শ

এ দেহ তো বুঝি ঈষৎ ছায়ায় ভরা , মঠআকাশ জুড়ে হাতপ্রান্তরে ছায়া নেমে গেছে যে জায়গা দখল করা
 
স্বমান রাখি মুখ ফেরায় যাতে এই আলোভূক প্রত্ন ,
 তার কাছে ব্রহ্মতাল মাটি পড়ি 
       বায়ুর আধার দিলাম খুলে সাধারণ ক্রিয়ার পাশে
চোখের অন্ধ বিঘ্নে খসে সমর্পিত কপালপথের সীমানা ভেঙে দিকে দিকে বিভূতিঘোর
তবু দিন পেরিয়ে স্পন্দ জাগে অক্ষশিয়রে হাওয়াবাতাস যে যার জন্য এই সব 

প্রহর অন্নে প্রতিপালিত একমুষ্টি আকাশজলের মতো জলেরই উপর রইলো না ভবিষ্যৎ

ধুলোর শিকল ছিঁড়ে হাত ঘোরাচ্ছি জগৎখেলায়, জ্ঞানহারা সংসারদোষে মুখের উপর ম্লান হয়ে আসে শনির অর্ধ আকাশ , ভঙ্গুর

আলোকসম্ভব অবগাহনে আবার একটু নিচু হয়ে ব্রহ্মজলের দিকে ধুয়ে দেই তোমার জগৎমুখ 
এ মানবজমির চোখে ভেসে ওঠে দূর কোনো সংকেতের দিকে সেই বিরাট পৃথিবী
ডাক শেখাও
 সাঁতার বিলিয়ে জাগরণে কেমন উজ্জ্বল অথচ সাদাসিধে
   এখানে প্রতিদিনের পীড়ন সহ্য করে গণতীর-ঘেঁষা  ঘুমের ভাঙা আলোর খোসায় ওড়ে অলংকার ,
সামান্য কুশল-ইঙ্গিত সজ্জিত আমার কাছে সবার শেষ নদী পেরিয়ে নাম-বাঁধা চেনা গ্রাম্য-সমাপ্তি

গচ্ছিত রেখে তারা খসা সেসব খরস্রোত দিনে ঘর বাঁধা 
 অনেক দূর ফুঁড়ে আমার মুখের মূল প্রশান্তিমুখর প্রস্তরীভূত !

বাজা অন্ধকার সব ফুলভর্তি গাও 
ছাই সরিয়ে অতলহৃদিনাম মন্ত্র , দধিমন্থধ্বনিভার 

একলা মধুর ছায়ায় ঘোরা দিনে সরে যায় এই শান্তির সংকল্প কিরণ 

ঘুরে বেড়ানো লোকবসতিতে এসে মিশি ক্রমে যার মধ্যে সমস্ত জগৎ 
বিশ্বস্ফুলিঙ্গের উদ্দেশ্যে চলে গেছে তার সৃষ্টি নিয়ে আগের মতোই ঐশ্বরিক তার সমস্ত পৃথিবী শান্ত এমনকি নির্বিকারে ডুবে গিয়ে যন্ত্রণা-ও

মহৎ সংকেতের দিকে রূপধারায় এই কথাটিই অজানা গৃহস্থের---

যৌবন বছর পার করি , কেউ কি দিকহারা এসেছে সকল দিকের বহুবতীগামিনীকে ফেলে ?

রাখা বসতমাটির নীচে শ্বেত-ফুঁ,
আমার অতল রাঙা পা কোনখানে কী সবুজে বিষকাঁটা নিয়ে জড়ায়

কোন লেখায় আগুন জ্বলে ওঠা রাতের আলোয় গণশস্য পেরিয়ে ছাইধুলো নিয়ে সঙ্গে ওড়ে উপায় , 
 তোমার দূরে কয়েক জন্ম আমার ঘরে নিভে গেছে

চতুর্দিকে রোদের শরীর খোঁজা দিন ধরেই খুঁজে যাই ছায়া সারাজীবনের ,
ছায়া ছেয়ে রোদ মেশে মনতীর্থ

সে সব কথায় স্থল পেতে জোছনা ঘুরে যাই পা ফেলে জ্বলা তারাজগৎ সুরধারায় সবই 
মোহ বাঁধা পুকুরে ছিপ হাতে বসে একা সৎ
ছিপে উঠে এসেছে এঁকেবেঁকে অগ্নিক্ষুণ্ণ
         কেবল গৃহস্থ অকল্যাণ !

ভাষাবনের পাশে যাওয়া আসা কেবল সবার হাতে অক্ষরদীপ এই ব্রতকথা লেখা আমার দায়ে , সমুদ্রে কিংবা পর্বতে
উড়ে বেড়ায় কোথাও কি আমার পাঠের ধ্বনি আমারই সহজে স্বাধীন কথার 'পরে 
এক হাত মাত্র বাড়িয়ে দিতেই চর্যায় চর্যায় দেখি ছড়িয়ে কী দারুণ বৃষ্টির ফুল ---

তবু আয়ুপথ কবিতা হয়ে চমকায় মানবমনবর্জ্যের ঢেলা
 পোড়া সাঁঝজলে!

চির ডুব দিয়ে আমার তলায় তলায় স্থির জলআগুনমাটি 

কাঁপতে থাকা নিজস্ব ছায়া ভেসে যায় এই জলেরই রোদে মুখ ধুয়ে

চেনা স্বজনেরা ফোটে একে একে দূরে একে অপরের প্রতি যাওয়ার শ্রুতিখোলা মাঠে 

কার কাছে কী গোপন এসব কেউ কি ঘূর্ণিত আমার তিথি তার সাথে আবারও ঘুরতে থাকে দিক
ঝলসে দিয়ে দিকের দশমুখে ধায় জ্বলন্ত ব্রহ্মান্ডচিতা

অতিকায় দিগন্তের দুই পারাপারের 
রক্তাভ তল ফেটে আগুন পেয়েই
 ঢুকেই পড়ে কী সরল শেষের কন্ঠে 
মাতৃমৃৎপৃথিবী

আছড়ে পড়ি এবার একগুচ্ছ জন্মানো সদ্য ক্রমাগত আমার সামনেই অর্পণ করা দূরত্বে
এই স্বীকৃত অস্তিত্বচিহ্ন 

চলে যাই  ধুলোপথে ফোটা 
       এমন ইরানি বালকের মতো হৃদির পাড়ায় সবুজ অবসর

নিজস্ব সংসার , ঘর-গেরস্থালি

তৎক্ষণাৎ জন্মের ভিতর দিয়ে দেখা কী কথা দিয়ে শুরু হয়েছে 

            আরও বিশদ এমন , একটি কবিতা 

আজও এই ফিরিয়ে আনা সন্তান বীজ উড়িয়ে

শেষ দুটি শব্দে এটুকুই

 বোকার মতো একান্ত 
                আয়োজনহীন উৎসব 

হাড়ের কড়িকাঠে ঝুলে যায় মেঘকালো আমিষদষ্টমুখ সিক্ত  !
             

                   কাঁটাবিহীন সূর্যের স্বাদে 
               চলতে চলতে দেখতে দেখতে 
          পথে-দেখা মানুষজনের দিকে তাকিয়ে 
পড়শি ডেকে 
 কুড়িয়ে নেই 
     ভোরের জল থেকে উঠে জলেই
 দু তিনটি 
    কথার শরৎ 

চির-বন্ধ পাঁজর জড়িয়ে
        ডুবিয়ে দিচ্ছে 
রৌদ্রহত
 এই শেষ সুঠাম লাবণ্যাভাময় অনন্ত-বিক্রেতার
            ফুরুৎসুত পাওয়া মাত্রই ...

ঘুমিয়ে থাকা সংবরণে জনতার দেহ ভেবে চতুর্দশপদী আমার অস্থায়ী পুরুষ মাথাটি লুটিয়ে,
পাশাপাশি নির্ধারিত নিখুঁত ভাবে
 আলাদা হয়ে ফের
   ঘর করা অথৈ খোলা বুকে স্মৃতিবিদ্যুৎ দগ্ধ আশ্রমমাটি ! 

পরস্পরের দিকে এগিয়ে বোধের নিঃশব্দে দেখা নিঃশব্দেই একটু একটু করে থেকে যাচ্ছে বীজব্রহ্মযাপন, 
          তুমি কবিকে পড়েছ ?

ভাগ্যের রাঙায় ফেটে পড়ে , সম্ভাবনা নয় কিন্তু যেন নিজেরই কথা প্রতিবার তেমন পুরাতনী হয়তো বা নয় একে অপরের

কোনোভাবে অন্তত প্রচন্ড শব্দে
 কালস্রোতান্তর সমগ্র পৃথিবীর মতো হয়ে উঠে দেখা দিলো এক আশ্চর্য 
এইভাবে নিঃস্ব বুকে ধরার সম্পূর্ণে পৌঁছে স্নেহের ঐশ্বর্যে স্লীভলেস প্রতিনিধি যে বাতাস
            কোনো ভাবে কি কখনও ভেবেছ ?

সহসা ক্রমাগত অনেক দূর দূর স্মরণ-সমূহ ভাসিয়ে অনাবৃত অপরিচিতার ঝলকে স্মৃতিধর আমারও কি পড়েনি দৃশ্যে হারানো পোশাকে ফিরিয়ে আনা সেই কবিতা ?

শেষের স্রোত উন্মুক্ত ধাবমান রক্তের জীর্ণ , পরশ্রীমাংস থেকে অন্ধ দৌড়ানো এই যার কোনো দিকে তাকাবার স্রোতের মূল ছিঁড়ে শরীর 

যদি বলি জগৎ পড়তে পড়তে কোথাও দেখা যাচ্ছে না , 
           যা পাওয়া গেছে নরম কালোর চরাচর ছেয়ে সর্বাঙ্গ থরথর ,
 নিজ কাদাজলে ভিজে ওঠা গায়ের গন্ধে অবস্থার ঝলকে মা আর শিশু
         জলে ভাসা ঘাসের আত্মায় জড়াজড়ি হয়ে শুয়ে অনামুখো জীবন স্বরাভাস
দিকচিহ্নহীন জন্মশাসিত ঘন মবিলের অনন্ত দূরে ভেসে ---সময়ের শব !

রোদের মধ্যে ঘোরা আমার অগ্রহন্থিত পায়ে পায়ে
 মাটি খাওয়া খনির রত্ন স্তূপ করার
 সব অচেনা অধোমুখ ভিতরে তাকিয়ে থাকতেই দেখি অন্তর্গত হওয়া যক্ষচোখ ঝলকে উঠে গেছে কোথায় কী মস্তিষ্কের প্রহরায় আমার মধ্যে যেন  সেই অন্তঃপুরের সমস্ত দখল করে 

হাহা-ভরা উল্লসিত তেমনই সূর্যাস্ত ঝরে আয়ু জ্বেলে দেওয়া এক অব্যবহৃত
 ধুলোমানুষের কাছে একটু পাশ দিয়ে এসে ভেঙে নেই সুগন্ধিরূপ কিছু হঠাৎ

প্রবহসন্ধ্যার সংশয়রঞ্জিত জীবনের দিকে তাকাই ---
উপড়ে নিয়ে মাটির গোপন ক্ষয়ের পতন মুখে তার হু হু সময়ের আকাশ ভেসে অন্ধকার শিকড়ে শিকড়ে অন্ধ হয়ে গেছি স্রোত ঢাকা টিলার মাথা ওই 
অস্থি বেঁধে নিয়ে সড়সড় নেমে ডুবতে আসা পাড় নাকি ওই দেহ চলেছে ! 
কার ?

দৃষ্টির মধ্যগত সমস্ত 
জলের কলশব্দে 
মাটি খুঁড়ে গভীরে মৃত্যু, 
শব্দ, সঙ্গী হও তবে
 ঝলসানো জীবনে শরীরময় আগুন ভোগ মেলে রাখা চিরকালীন 
       খোলা ঘরে ঢুকে এসো না এখানে 

এসো ঠেস দিয়ে দাঁড়াও জলের মতো জলের বাইরে এসে , 
আঁকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী
 শান্তিশব্দে শুনি তোমার সাথে সূর্যের অতল ধুলোরোদবৃষ্টিঝড় পাঠ

অথচ অজন্মায় জড়বধির আমারই কোনো জায়গা হয়নি সকল নিয়ে বসে বাজ পড়া মরা দিনের গায়ে নিষ্ফলা শস্যের মাঠ

দূরের আকাশে ঝরানো ঘোলাটে অবহেলায় 
মন্থর দু বাহু মেলে কুড়িয়ে নাও 
পবিত্রতার চেয়ে ঠান্ডা হাওয়ার গান 

পরস্পরকে পড়ি এখন উল্টোদিক ঘুরে বিদ্যুৎ ঝলকে চোখের থেকে বৃষ্টিদগ্ধ অক্ষরে 

পৃথিবীর পাড়ে বেঁচে থাকা স্বপ্নে শুধু
 পূণ্য পাথরের মতো চেপে বসে ফুটফুটে ফাঁপা বুক!

মাঝে মাঝেই ভাবায়...তোমাকে টোকা এমন জাবর কাটা পুরাতন ওই তো এই পিপাসা মুছে 

কপাল ফাটা নৈঃশব্দের ঝড়ে দেখতে পাই প্রণয়শিলা অপরূপ করা সহিংসতায় বজ্র-যোগাযোগ

ফিরে যায় পরিজন সমেত ছিন্ন মন থেকে অন্যত্র এক অগ্নিঝর্ণা ঝোরা বয়স , 
তবে কি এই দু 'চার পংতি শব্দই কি জীবিকা ?

কেউ কি এসেছে শীর্ষে তোমায় নিয়ে বামে ফেলে দিয়ে আমার আঙুলে আঙুলে ছন্দ চিরে ভূমির উপর যেন আমি সংসার পার বাউল-কসাই!

 হিম শূন্যে টাঙানো শরীরে কোথায় থাকে জন্মের দূরত্বে কিশোরবেলার ছেলেটি ?

  

     নিজের মতো উড়তে উড়তে কেউ-বা ঝমঝম বৃষ্টির শরীর থেকে আলো-ছায়ার স্মৃতি নিয়ে শিখর ভেঙে বুকের উপর ধুলো ওড়ে , 
চলে গেছে সেদিনের মতো পৃথিবীর কেয়াবনে ভরন্ত সেই নিঃশব্দ পা  

চোখ বুজে পড়ে থাকা সময় ঠেলে হারানো হলুদ 
পার হয়ে হৃদখালের দুপাশে সারি সারি মাথা তুলে আছে জোনাকি ধূসরে শ্রাবণকৃষির লাঙ্গলে 
  খেলার দিন গড়ানো আঁধার কুহক --- কায়াহীন আমার দেহগ্রাম 

ভুলতে ভুলতে ফের অদূর একলা সংসারহীন পুরাতন কথার ছায়া ভাঙতেই দেখি সমস্ত শরীর মাটিধোয়া রোদের উপর দাঁড়িয়ে আধভাঙা অমৃত চিক চিক সুশ্রুষায়!

নক্ষত্রের মতো নীরব শরীর জ্বালিয়ে শেষরাতের অদ্ভুত অন্ধকার শালুকের ঝোপে পড়ে আছে তবে কার গোপনে আলুথালু এই শাদা জোছনা কবিতা-বল্কল ? 

লিখিত আকারে মনুর বুকে কার পীড়া থেকে এনেছ দেখি কথার শেষ বিষাদে ছেঁড়া ওই নম্রফুল,

লুকিয়েছি গায়ে অবেলায় মর্মর ছায়া ফেলে রেখে নিচু হয়ে
 সংসারবদ্ধ জলে ডুবে যায় রোজ ক্রমশ ন্যায়ের নিলামে ওঠা দুটি হাত সহ সব না পাওয়া 

আমার কথা ভেবে যা কিছু সব ফিরিয়ে নেবো প্রশ্রয়ের ঘরে ভেঙে ছাদ থেকে জীবন-চাঁদ

এই ছায়ার সাথে জাগা একবিংশতি বছর পরেও গন্ডুষ ভরছে অবিরল 
ছলাৎ ছলাৎ নাভিপদ্মে জাহ্নবী-জল , 
ভিজে একদিন স্বদেশ বাজারে হারিয়ে যাই আমারই মতো বন্ধুর বয়সে 

ঢেউ গাঁথা চোখ কি তবে ছুঁতে পেরেছে সামনে রেখে চলে যাওয়ায় ?

দেহ পেতে ভূমিজল ভেঙে লুপ্ত হও বৈশাখ-মাটি!

সুর উবে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থার উদ্ধারে আলোধুলো ঢেউয়ে ছুটি, গান দেয় গতি, 
তবে সেই প্রাণ ভরা আগুন বনে পুড়ে যাক 

ঝাঁকের পর ঝাঁক যে ভাবে পাঁজর মাঠে শোকের মুখে হত্যাপদ্ধতি সহায় !

পশুশক্তির চেয়ে বেশি কোনো তার পরিপার্শ্ব মন:শক্তি-পদার্থ জানতে চায় মানুষের কোন সরলরৈখিক

সবলের যে কেউ নিতে পারায় খুঁজতে চাও,
 ছিঁড়ে নাও
 সমগ্র যা স্বাভাবিক এর আরও বেশি তীব্র

ক্লেদ 
পাপ
 প্রণয়
 বিচ্যুতি 

সংবেদন পাঠায় প্রকাশহারা মনের মধ্যে কথামানুষের উত্তাল পুঞ্জশক্তি 

ভুবনবুক আঁকড়ে মাথা খুঁজতে গিয়ে তার বাইরের চিহ্নে পাওয়া মাটিতে হাত ঘষে বেঁচে থাকার মুখ চেয়ে আছে আমাদের মাটির সন্তানসন্ততি

বলো কী পাবো আমি ?  জল পেষাই তোমার শিকড়ে এত ভয়ের উপর ভয়ে মাটি ধরে শরীর দিয়ে গেছে সমাধি
তুমি তাকিয়ে , 
তবে ফের কেন উঠে আসি এখনও আবছা নিজেকে নিয়ে নিজের হাতেই শেষ করে

যুগের পর যুগ সারা শরীর চুরি করে তার চূড়ায় শূন্যতা ঢেলে সাত ঘাট ঘুরে পাঁজর মাজা ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির
 দশটি আঙ্গুল খুঁজে বেড়ায় কেবল 
প্রকাশের নতুন লেখার আলাভোলা জন্মলাল 

নিতান্তই জৈবিক, কাছে আসতে নেই 

পুরাতন ভূমিগর্ভের ঘ্রাণে ঘুমানো শ্রমিক-শিশুর রক্তে ঘুরে বেড়ে ওঠে তৃণভূক হাড়গোড়-ঘর-সন্তান-শরীর

ওঠানামার সময় আকাশভরা কপালের কাটা দাগে হাত রাখি , 
হাওয়া পৃথিবীর তুমি কোথায় ?

হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টিমাটিজলে সুবাসিত শব্দে কথামৎস্যের পাল্লা খুলে 
 জলের শীতল নীচে পাতাঝাঁঝির লতায় জড়ায় ক্ষীণ নৌকোশরীর

মৃৎপোড়াচোখ ফেটে গলগল করে জলহীন মণি ছড়িয়ে পড়ে ,

               সহস্র বছর এই নিভন্ত হাতের পাশে ঋণ 

দেখি পচে যাচ্ছে ঝুলন্ত মাংসের শরীর আমারই, বরফের ভেতর শুধু আপাদমস্তক এক অতিকায় 

নিঝুম আগুন মাটি জলের পাড়ায় পাড়ায় রক্ততিলক 
খন্ড 
খন্ড 

মনে পড়ছে তবে একসঙ্গে থাকা দেহ শুইয়ে রাখা ছাদের নীচে, 
হাতে হাত রেখে আয়না সারসার
ভূমির কাগজ পড়ে, চড়ায় জ্বলে এই যত দুর্বহ যেটুকু জোর কোথায় কী শালিখ ঢুকে যায় ঘিলুর গর্তে

            বিতত সূর্যে হাত রেখে রোদের ভস্ম গায়ে
 আগুনের হলুদ নিয়ে মাতৃ হাত ধরে
 শব্দের দিকে শিখর অবধি গড়ায় 

পার হতে হতে হতে হতে
 ভূখণ্ডে পা থেকে মাথা ছাড়িয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে শালপাতায় 

এইভাবে উচ্ছসিত মাটিবীজধারাজল - পুনঃ আদম স্ফুলিঙ্গের হিম!

গোটানো দেহ ছেড়ে স্থির হয়ে গেছে মানুষের বিভ্রম

এত আয়োজন সেরে হঠাৎ
কাঙাল কাঙাল শব্দের সমূহ
ছাই ফেলে
     উপবীত চিনে সন্তানের মুখে থাকার চেয়ে না থাকায় অনন্ত চাঁদ ওঠে চিরপ্রণম্যের

কী ভীষণ আগুনস্রোত! বিষম আগুনস্রোত!

রোমশ বাতাসের গলায় দপদপ দড়ি ! 

সমস্ত খেয়ে সন্তাপে শ্বাস ঝুঁকে পড়ে জন্ম পরবর্তী তুমুল নিংড়ে গ্রহণ করা আগুনে দগ্ধ আকাশগাড়ি 

অবলম্বন পোড়ে তুলোট হৃদয়ের ভেতর
    চন্দন ধুলোর খুব সহজে নির্ভর

ছুটেছে উম্মাদ একচক্ষু! 
গভীর বাঁচার পাশাপাশি ভীরু পাথর পাথরে মাথা কোটা 
ডুবে বিচিত্র ছুটে যাওয়া সহস্রমুখ বিচূর্ণশীল বিচ্ছুরিত বুননের মধ্যে গভীর 
থাকা না থাকায় ছুঁড়ে ছুঁড়ে শরীরখন্ড লুকিয়ে রয়েছে যেন ভেতরকার ছিন্ন প্রত্যঙ্গ পাবে শুধু 

টুকরো টুকরো খান খান রূপান্তরিত ভিতরস্তর একাকার স্রোতের প্রবল পাশে নির্জনে হা হা ভাঙায় হেলে বিমূঢ় স্মৃতিকাঠামো,
 ঠিক যেমন আছে সাদৃশ্য অথবা ক্ষণস্থায়ী যা না দেখা অনুভূতি  সংলগ্ন কোনো কথার অতল থেকে উঠে আসে অকস্মাৎ
 কি যেন ছিলো ঠিক ওই হেমকান্তিময় 

তাহলে সম্পর্কের সব অর্থ না বোঝা শরীরের মধ্যে ফিরে আসবে কি অনিশ্চয়তায় ওড়া দুবাহুর বাঁধন ঘেরা সেই প্রাণ! 
ও তাহলে কী পাখি ?
প্রাণপাখি ?
এ পথে যে আমি গেছি বারবার !

চিরজটিল জল গড়িয়ে নিচ্ছে গম্ভীর চামড়ার ভিতর টান রেখে
স্পর্শ কোনও ছায়া সেও সঙ্গে থেকে যায় ঘরের কোণে একলা 
ছলের নিরালায় ছেড়ে আসি উঠে যাই মাঝে তুমি 
নিজের কথার ভেতর বৃষ্টিপাত শুরু হলে পাঁজর ওপরে তুলে এসো এসো চোখের আলো
আমি চেয়ে দেখি আমার কচি পুষ্ট মুখ!
কবে থেকে এসেছি এমনটা ভাবতেই জলের হাঁসে ভেতর ডেকে ওঠে রক্ত ছোটে রোদের শিরায় 
আম এইবার জন্মপারের দিকে ছুটে গেছি , ছুটবোই

গলা কাটা মুরগীর মতন ছায়া ভাঁজ করে হাঁটুর তলা থেকে চুন, কাঠ, বালি সরিয়ে বের করে আনি সম্মহিতের মতো অভ্যেস থেকে তৈরি নিঃশব্দ চঞ্চল সংকল্প 

তুমিও সে কথা জানো খড়কে কাঠির মতো নিষ্প্রাণ আমি ঘুরি , চমকপ্রদ হৃদলাঠি !

স্বপ্নস্মৃতি জন্মায় মাথার উপর 

সরল অশ্রুবিন্দু থেকে ফোটা চোখের পথিককাল হয়ে বিশাল ছায়া পড়েছে হরিজনদের কন্ঠে

বিড়ালের মতো হাঁ করে প্রাণের প'র প্রভুহাত 

খাদ্য ঢোকেনি পৃথিবীর চিৎকৃত পেটে , তিরিশে, চাকার তলায় গোল নক্ষত্রফুল ভাষা 

সারাটা শুধু সকলের একজনই , 
প্রসারিত তরলে সারল্য লেগে এখানে এসে গেছে টালমাটাল ক্রমশ ফিকে
 কুসুমের শরীর ঢেকেছ আগুনে ?
আয়ুকোটরলিপি ঘোরে সহজযানে ?

চলে যাই ধুলো দিয়ে ভিন্ন দৃশ্যের অধীন  তালিতাপ্পিমারা ঘরবাড়ি উপড়ে  ক্ষুদ্কাতর ছায়া নিয়ে যাপন মগ্ন এই স্বাভাবিক অন্যত্র সারা সন্ধেবিকেল খেলা

নির্বিকার চলে যাওয়ার একান্তে চিবাও তুমি সরল আদুল সন্ন্যাস  চুপিসারে

অযত্নে বেড়ে ওঠা ঝোপঝাড়ে শুয়ে
   জীবন্ত ফেটে পড়ে ছরছর একহাত তেরচা হয়ে মুছে অক্ষরে গৃহস্থ দূরে কাছের ---

ভেসে যাও , ভেসে যাই 

ছায়া বয়ে যায় জলে , 
জলে উঁচু অস্থি-চিমনির কাঁপা কাঁপা ছায়া,
 জীবিকা আর ডাল ভাতের সংসার,
 আটকে গেছে ছাদনাতলায় ছেলেমানুষের মতো
একসঙ্গে গরম তুলে ফেলা যায় !

রক্তমুখীজাত আকাশ উজাড় করে এমন একাকীত্ব নিয়ে থেকে গেছে শোকের আড়ালে সমাপ্তি রেখা
ভেঙে পড়তে চায় স্বজনের দিকে , বন্ধুর দিকে 
কাছে যদি পায়!
কতদূর বলতে পারো গোপন সে একাকীত্ব ?

নিস্পৃহ এমনভাবে পড়েছে সারানোর চেষ্টা করলে খুলে পড়ে গিয়ে অনেকখানি হারাতো ওই স্বভাবের সাথে মিশে লুকিয়ে পড়া মনোহীন জীবন , 
যা কিনা এ-কথা সে-কথায় অবান্তর হয়ে যায়

কতটা বয়স বাড়লো বলো বন্ধুত্বের ?
পথচলতি স্মৃতির লবণাক্ত ভেতর থেকে উঠে আসে ভেঙে বুঝতে , ভুল করতে করতে অসম্ভবের এই প্রার্থনায়
 একটা দুটো শব্দ কিংবা কখনও বা পুরো এক সর্বস্ব খুলে দেয় জীবন 
এমনটাই তো এই শুধু এখানে 
আর কোনো ইচ্ছে নেই 
ঝিকিয়ে ভবিষ্য আর কোনো দিকের দেখায় 

তবে এতদূর কেন যাচ্ছ! নিয়তি ধারণা শান্ত ছায়ার পাশে তার দিকে ধীরে একটি ইঙ্গিত রাখছে অর্থাৎ এই যে স্নিগ্ধ স্নেহ সম্পর্কের অজানা অমঙ্গল-গাছ , তাদের সব মনে ঢুকে পড়ছে 

অন্তত উচারিত হয়ে পূর্ণতা নিয়ে পৌঁছেছে এভাবেও, ক্ষতি কী !

আদিগন্ত ছিন্ন মেঘঝড়ের পাশে একা

নেমে পড়েছ জলে , প্রায় ঝাপসা মনে পড়ে

মানুষের মুখের মতোই একলা ভোর হওয়াটুকু স্তব্ধ 

ভারী অক্ষরে শব্দ টেনে আনতে কি এত সব মনে আসে ? 

 আয়দিপাউস নাকি অপ্রতিভ নির্লিপ্তের কবিতার মুখ!

যদিও উপায় নেই কোনো , উপায় যে নেই...

ভয়ানক এগিয়ে এসেছে বিপদ পিঠে বাঁধা অল্প একটু ভারী কালো প্লাস্টিকে ইস্পাতহৃদয়ের বাঁ'দিকে
ব্যাটারি বিস্ফোরণের রোদ!
উল্টো দিকে ঘুরে পড়ে আছে শুধু মাতৃসত্তায় একজোড়া!

রীতিমতো ধাতু বিক্রি একেবারে বন্ধ!

 মানুষফসলের নীচে উদ্ধারে তুমি স্থির
 স্বপ্ন -সংকল্প - উদ্যম -নিয়ন্ত্রণ-তালের সেপাই

অথচ নিঃশ্বাসের এই আলোছায়া অলিন্দে অসংখ্য যুবাশস্যের প্রতিমা, 
যেন কুহকের , সামান্য সম্বলের , 
গভীর নাড়ির সঙ্গে
বিপদজনক ভেসে আঙুল টলায়, ওরা, খুবলে ,দাঁত উপড়ে--

নেমে আসি অবেলায় তারও বেশি যাওয়ার সেটুকু নিশ্চই আগামী গ্রীষ্মের---
পায়ের তলায় একমাত্র 
    উপায় - ভরসা- সন্তান- পথ -ঘাতক

তবে সার্চলাইট ফেলে দূরত্ব কোথায় এখানে প্রয়োগের ফলে তীব্রতর চাকার মতো পিষে ?
এখন অচল, রবারের শিকড় খুঁজে আনি সমস্ত নিষ্প্রাণ বৃহৎ ফোকরে

এমনকি এক টুকরো খড়কুটো জলে ভাসিয়ে নিজস্ব ধারণাও, প্রাণ অযথা
যে টেনে রাখবে ...

পৃথিবীর শেষ ধারা বেয়ে বৃষ্টি মাথায় করে সংগ্রহ না করতে পারা এটাই আমার কাজ ,
 মুখোমুখি ভাসমান নিজস্ব সামর্থ্যহীন শাখার দিকে আঁকড়ে শূন্যের প্রথম ভাগ
  ভাঙ্গনের ওঠানামা একাগ্র করে এই সময়ের , এই সভ্যতার
পিশাচ পা দিয়ে ঠেলে উপুড় গেরুয়া-দ্বাদশী সব মাটির ভ্রূণ , 
শব্দে অপরূপ প্রাণ আসে তারই চিহ্নে মুক্তি 
জাগরণে জেগে ওঠে দুগ্ধ আসন্ন রাত্রির গতি অবশ্যসম্ভাবী 
ঘন, নিশ্ছিদ্র অন্ধকার শূন্যের ব্রহ্মান্ডে পরিশুদ্ধ ছড়িয়ে থাকা তারাজগৎ সাঁতরে শিশুর মাথা দেখি রৌদ্রালোকিত !
শুধু অসহায় জেনে

পুতুল পুতুল -অপাংতেয়

নির্বাপিত যুবা শূন্য 

শূন্য যুবক জেনারেটর! 

আমি যে দেখেছি তাকে সেই প্রথম জোনাকি-দিনের মতই মায়াবী ঘন ধ্যানের আংটায়-যা কিনা দুষ্প্রাপ্য

এক উঠোনের দেহে স্তিমিত ছায়ার পিছলে এক রাঙা ধূসর পোড়া চোখের আকুতি 

বুঝি বারুদ পোড়ানো বাউন্ডুলে শব্দময় দেখাটা রয়েছে অবাধ আমাদের , 
সবই কম, লৌহ কিংবা আগুনে নিংড়ে
 আমাদের দেখে নেয় মনে, আরও পর্যন্ত মুখ
ঘুরিয়ে দেখে নেয় আমাদের, অন্যরা তো বটেই, 
আমাদের একসঙ্গে
  থানার দারোগা!
            যে দেখে নেয় এইখানে অনাত্মীয় , কেবল
তোমার গারোদ প্রয়োজনের ভাঙা মশলা খসা প্রাচীনতা , 
স্তব্ধ হয়ে গেছে ছুঁয়ে ছুঁতে যকৃৎহীন বাসি
শরীরের 'পর শরীর দেওয়ালে যেমন সত্যিকারের আঠার জোড় 
সংগত এই
সাবধানে কলার খোসার মতো শূন্যময় প্রতিদিনের, নিজেদের আমরা 
একটু একটু করে , মায়াহীন , নীরক্ত
মনে হয়
এ তো স্বাভাবিক সবারই জানা !

প্রাণহারা নিঃশব্দে অদৃশ্য স্পর্শের মতো
    যার মুখে তাকাবে সেই ঠান্ডা মিশ্র করোটি-জড়-কঠিন !
খুলে নেবে?

অব্যর্থ রঙের এক ঝলক আপাত সামান্য একটু শ্বাসরোধী ভঙ্গি শুধু...
ধরে যা রেখেছ 
নিগড় বেঁধে রাখা আজীবনের
সহজ তো নয় !
লক্ষীপট, এরও কি কোনো মানে আছে ?
ওটুকু তুলতে হবে তা কি জানো ?

দিব্য আলো পড়ে কোমল সুন্দর জাঁতা ঘোরানো মেশিনে বাস্তুগ্রহস্বভাবদোষে, 
শব্দ ওঠে চাড় দিয়ে শরীর পেষাই
জন্ম জন্ম নেওয়া তার কাছে 
ভূমি খুলে চলে যাই, একা
আমি কি কোথাও গেছি ? একবার বিলিয়ে দেহের অন্নপাত্র!

তেলচুলে সুবাসিত গেরস্থালীর 
কড়িবরগা খুলে মস্ত ডানা মেলা
 বিকেল নেমেছে নিষ্পন্ন শিয়রে ক্রমে

      ক্রমাগত আজ অবধি আলসের থেকেই 
              পেরোতে না পেরোতে দেখি 
                            ছায়াচক্রে
                    তন্ডুল জড়ায় জীবন্ত..!


মন্তব্যসমূহ

  1. অসাধারণ♥️♥️

    উত্তরমুছুন
  2. পবিত্র বাবু, অরুণাংশু দা'র মতো জি কে দীর্ঘকবিতার ধারাকে পুষ্ট করে চলেছে। শুভেচ্ছা।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য