অরুপ রতন হালদার
Moccasin Flowers
~~~~~~~~~~~~~~~
মোকাসিন ফুলগুলো
--------------------
অনেককিছু, যেমন স্বপ্নের সেইসব খুর
যারা শ্যাওলায় ঢাকা,
দীর্ঘ একটা গাছের তলায় স্পঞ্জের মতো নরম
সেইসব জঞ্জাল।
বসন্ত এলে
মোকাসিন ফুলগুলো সূর্য লেহনের চটপট আওয়াজ আর তার
পুড়ে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যায়। কখনো কখনো ছায়ার ভেতর আমি দেখি আবছায়াময় চোখ, ভেড়ার দু ঠোঁট
যেন এক বিস্মৃতির
যে গভীরভাবে আচ্ছন্ন, আর আমি কল্পনা করি মহাবিশ্বের মধ্যে নতুন এক শূন্যতা, জড়িয়ে যাওয়া পাতারা খুলে যায়,
তারা উন্মোচন করে দেয় সিঁড়ির কালো তক্তাদের।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত – সারা জীবন ধরে – আমি যা সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছি তা হল ফুলেরা কিভাবে খুলে যায় জগতের ভেতর, কিভাবে
তাদের গোলাপি ফুসফুসগুলো পৃথিবীর আগুনের মধ্যে ঢুকে পড়ে, দাঁড়িয়ে থাকে উজ্জ্বল আর সম্মত – তারা আবার অন্ধকার মেঝেয় সেঁধিয়ে যাওয়ার আগে যা করতে পারে তা হল তারা আরও একবার হয়ে গাছ হয়ে উঠতে পারে।
Some Questions You Might Ask
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কিছু প্রশ্ন যা তুমি করতে পারো
----------------------------
আত্মা কি লোহার মতো কঠিন?
অথবা তা নরম, ভঙ্গুর?
একটা পেঁচার ঠোঁটের ভেতর
কোনো মথের ডানার মতো?
আত্মা কার আছে, কারই বা নেই?
আমি আমার চারপাশে খুঁজে বেড়াই।
মুজের মুখ যীশুর মুখের মতো করুণ।
রাজহাঁস তার শাদা ডানা খুলে দেয় ধীরে।
হেমন্তে কালো ভালুকেরা
অন্ধকারে পাতা বয়ে নিয়ে যায়।
একটা প্রশ্ন আর একটা প্রশ্নের দিকে আমাকে এগিয়ে দেয়।
এর কি কোনো নির্দিষ্ট আকার আছে?
যেমন কোনো হিমবাহ?
অথবা একটা হামিংবার্ডের চোখ?
নাকি সাপ বা শামুকের মতো এর একটাই মাত্র ফুসফুস?
একটা পিপীলিকাভুক যে তার বাচ্চাদের ভালবাসে তার বদলে কেন বা আমার এটা থাকতে হবে?
অথবা একটা উট না থেকে এটা আমার থাকতে হবে কেন?
আমি আত্মার কথা ভাবি,
কিন্তু মেপল গাছ সম্বন্ধে কি ভাবি?
গভীর নীল রঙের কনীনিকা সম্বন্ধেই বা কি ভাবি?
গোলাপ বা জামির লেবু? বা তাদের উজ্জ্বল পাতারা?
অথবা ঘাস সম্বন্ধেই বা কি ভেবে উঠতে পারি?
The Buddha's Last Instruction
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বুদ্ধের শেষ নির্দেশ
------------------
"তুমি নিজে আলো হয়ে ওঠো"
মৃত্যুর আগে
একথা বলে গিয়েছিলেন বুদ্ধ।
পুব দিক জেগে ওঠার আগে
আমার প্রতিদিন সকালে এ কথা মনে হয়
অন্ধকারের সমস্ত মেঘ ছিঁড়ে
প্রথম সংকেত পাঠানোর জন্য – একটা শাদা পাখনায়
গোলাপি, বেগুনি, এমনকি সবুজ রঙের ছিটে
জ্বলজ্বল করছে।
একজন বৃদ্ধ মানুষ
দুটি শালগাছের মাঝখানে শায়িত,
এবং তিনি হয়তো তাঁর অন্তিম সময় উপস্থিত জেনে
কিছু বলার চেষ্টা করেছিলেন।
আলোর শিখা ঊর্ধ্বগামী,
তা শস্যক্ষেতের মধ্যে ক্রমশ আরও ঘন হয়ে আসে
যেন তার ভেতরেই বাসা বাঁধে।
তাঁর চারপাশে মানুষ ক্রমে ভরে উঠল
এবং ঝুঁকে পড়ল
তাঁর কথা শোনার জন্য।
সূর্য আলগা হয়ে নীলরঙা বাতাসের ভেতর
ভেসে থাকার অনেক আগেই
আমাকে স্পর্শ করেছিল
তার হলুদ ঢেউয়ের সমুদ্র।
কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি তাঁর কঠিন জীবনের
সব ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভাবছিলেন।
এরপরেই আমার মনে হল
দূরের পাহাড়ের উপর অযুত ফুলের আগুনের মতো
সূর্য জ্বলছে – স্পষ্টতই এখানে আমার
আর কোনো প্রয়োজন নেই।
এতদসত্বেও আমার মনে হল আমি নিজেকে একজন
আশ্চর্য অর্থময় কোনো কিছুতে পাল্টে ফেলছি।
ধীরে ধীরে গাছের শাখার নিচে তিনি
তাঁর মাথা তুললেন।
তিনি সেই ভয়ার্ত
ভিড়ের মুখের দিকে তাকালেন।
Spring
~~~~~~
বসন্ত
------
কোথাও
একটা কালো ভালুক
সবে ঘুম ভেঙে জেগে উঠেছে, এবং
সে পাহাড় থেকে নিচের দিকে তাকায়
সারারাত
বসন্তের শুরুর তাড়াহুড়োয় ঘনিয়ে ওঠা, অগভীর
একটা অশান্তির মধ্যে আমি তার কথা ভাবি, তার
চার চারটে কালো থাবা
মাটির উপর কাঁকর আঁচড়ে তুলছে, তার জিভ
যেন সেই লাল আগুন যা স্পর্শ করে ঘাস
আর ঠাণ্ডা জলের প্রবাহ।
একটাই মাত্র প্রশ্ন : কীভাবে
আমি এই পৃথিবীকে ভালবাসব।
আমার মনে পড়ে তার উঠে দাঁড়ানো
একটা পাতায় মোড়া, কালো শৈলশিরার মতো
যে গাছের নীরবতায় তার থাবার নখ শাণিয়ে নিচ্ছে।
আমার জীবন সেটাই
যা তার কবিতা, তার গান আর কাচের শহরগুলোর সঙ্গে
জড়িয়ে যায়, আমার জীবন
সেই প্রোজ্জ্বল অন্ধকার যা
পাহাড় থেকে নেমে আসে, শ্বাস নেয়
স্বাদে মত্ত হয়; সারাদিন আমি তার কথা ভাবি
তার ঝকঝকে শাদা দাঁত, তার
অনিকেত সত্তার কথা, তার নিখুঁত ভালবাসার কথা।
The Hermit Crab
~~~~~~~~~~~~~
সন্ন্যাসী কাঁকড়া
---------------
যখন আমি
পেস্ট্রির মতো একটা ভাঁজ করা শামুকের
অন্ধকারের ভেতরে তাকালাম
দেখলাম তার মধ্যে একটা স্বপ্নের মুখ
অথবা মুখের মতো কিছু – অন্যদিকে ঘুরে গেল
একটা পেশিবহুল হাত
হঠাৎ লাফিয়ে উঠল
আমার দৃষ্টি আর আলোর বিপরীতে
তাকে দেখার জন্য আমার হাতে খুব কমই সময় ছিল,
সে জ্বলছিল প্রাচীন ক্যালসিয়ামের
শুদ্ধ শাদা একটা ছাদের নিচে।
তাকে যখন নিচে নামিয়ে নিলাম
সে দ্রুত সমুদ্রের ঢেউয়ের রেখা ধরে চলে গেল,
ঢেউ আছড়ে পড়ছিল শোঁ শোঁ শব্দে
আগামীর দিকে
অতীতের প্রতিটা জোয়ারের দিকে পেছন ফিরে
সে সৈকত এলোমেলো করে ছেড়ে চলে গেল
রেখে গেল মৃত্যুর সমস্ত আভরণ –
মণিমুক্তোময় সব টুকরো যা থেকে
শাদা ফুলের মতো একটা বাড়ি বেছে নিতে হয় –
তার উপর লাফ দিয়ে পড়া আর তাকে বুকের কাছে ধরে রাখা
যেন এক আশ্চর্য দ্রোহ,
সবকিছু জুড়ে নেওয়া, যেমন অতীতকে
ভবিষ্যতের সঙ্গে – অতি অবশ্যই
এক অলৌকিক ব্যাপার – আর তা যেন সমুদ্রের বিরুদ্ধে
পড়ে থাকা একমাত্র যুক্তি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন