বর্ণালী মুখোপাধ্যায়
তেষ্টার জল
হাঁচোড়পাঁচোড়
সে আমার ভিতর ঢুকে এলো। উন্মত্ত পাগল! আমি যে এক অনন্ত গহ্বর,কেবল
শূন্যতা জমেছে আপাদমস্তক,লোকটা মানবে না কিছুতেই। সে জিভ দিয়ে, আঙুলের
ডগায়,নখের প্রান্তে যন্ত্রনার আঁচড় কেটে কেবল খোঁজে। কি যে খোঁজে?আমি
বিদীর্ণ হতে হতে বার বার বলি-কেন কষ্ট দাও?কেন কষ্ট পেলে?কি খোঁজ বারবার
!উন্মাদ?
সে আমাকে বিদ্ধ করতে করতে ফিসফিস করে বলেছে-তেষ্টার জল!
কি
যে হাসি পেলো আমার !নিজের শুকনো আঙুল নিজের ই স্তিমিত বিভাজিকায় রেখে
বলেছি,জল খুঁজিস?জল?এই না হলে বোকা বুদ্ধি! ফুটো কলসির মতো আজীবন কেবল
সঞ্চয় গড়িয়ে গড়িয়ে বালির বুকে নদী এঁকেছি,নদীর বুকে ঝুঁকে খুঁজেছি এক
শ্যামল পুরুষ,তার কাঁধের পরিচিত তিল,খুঁজতে খুঁজতে নিজের শরীর ব্যাপী এক
দিগন্ত এঁকেছি,তারপর দিনান্তের চরা জমেছে যখন,তুমি তেষ্টার জল খুঁজতে এলে!!
সে
নাছোড়। কথা বলে না। কেবল খোঁজে। চৈত্রের আকাশে কি স্পষ্ট তারাগুলি
সেদিন। এক দুটো নেমে এসে আমার চুলে জড়িয়ে গেল কেমন। পাগল থরথর করে কেঁপে
উঠেছে- স্বাতী তারা!
অর্বাচীনের চুলগুলি ঘেঁটে দিয়ে বললাম-ওগুলো জুনিপোকা রে। তোর চোখে মায়ার কাজল।
সে বলে -বিরক্ত কোরো না। চুপ করে থাকো। আমাকে খুঁজতে দাও।
সে
আমার চরায় এখানে ওখানে বালি খোঁড়ে। জল পায় না। তবু মরীয়া বসতি বানায়।
কুটিরের গায়ে লাউয়ের বীজ পোঁতে। আর তেষ্টার জলটুকুর জন্য অপেক্ষা করে।
খুব রোদে চরচর করে ভূমি ফাটে,আগের বীজটা মরে গেলে আর একটা যেন কোথ্থেকে এনে
আবার বপন করে----গেরুয়া বিকেলে দিগন্তব্যাপী ধুলোর ঝড় এলে সে আমাকে তীব্র
জড়ায়,উচাটন মণ্ত্র পড়ে মনে মনে বৃষ্টিকে ডাকে।
সে বোঝে না।
আমি বুঝি।
শূন্য গহ্বরে আমার কুলকুল করে একটা জলধারা উৎসারিত হচ্ছে। আমি নাম দিয়েছি উস্রি।
তার তেষ্টার জল!!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন