অয়ন্ত ইমরুল
আমারে উতলা পায় কোন কলকণ্ঠ ধ্বনি
★★
আমারে উতলা পায় কোন কলকণ্ঠ ধ্বনি।
একটু আউলা হই।
আশ্বাসের
মতোন দীঘিবন।মাঝেমাঝে মনে হয়,জলের হৃদয় ছুঁয়ে ভেসে থাকা ঐ সিঁথিহাঁসটিই
আমি।গোপাল খালির বাঁকে পাহাড় পেঁচিয়ে পথ—উত্তরে খুলছে নদী।স্রোত ডিঙিয়ে
উজানমুখী খল্লা মাছের ঝাঁক—তাদের বেগটুকু মনে পাই।নদীতে নাইতে নামা গাঙবালাদের কলসি ভাসা দূর কতটাই বা
চিনি।শুধু শুনি,পরান বাউলের ভেতর দিয়ে একটি একতারা দীর্ঘ যাবে বলে বায়না ধরে।কন্ঠফুঁড়ে গান উঠে।তখন সুরে
ভাইকিংসদের
মনে তুমুল ভাটিয়ালি ।ছইতোলা নৌকা থেকে অচেনা বঁধুটির উঁকি হালকা আলপিনের
মতন বিঁধে,কাঁচা বয়সের বুকে।হয়তো বহু তীর দূরে আজ তার নায়রদিন।বার যেতে
যেতে,ধূলশুরার হাঁটবার।দাদার খালই ভরা বেতরাঙা মাছে কতবার যে চোখ বুলিয়ে
নিয়েছি।নিগুম সন্ধ্যার চৌরাশিয়ায়।এখনো জিভে লেগে আছে শনপাপড়ির স্বাদ।
এভাবেও বিঁধতে পারে ময়নাকাঁটা
ফ্রক পেরিয়ে
যতদূর ত্বকের ঘ্রাণ গলে পড়ে,দুপুরের সিমারে---
এই জারুল
আস্তিকের সুরে ছড়ায় ঝিরিঝিরি
কোথাও সই সয়ে মিতকনে—সাত ডোরা রু রু
বহু তীর দূরে রেখে আসে আনচান উড়াল
যেখানে তিতির অপেরা বেজে,ওড়ায় তিরির হাওয়া
কৃষকের মাথাল—হেম সে হাওয়ায়,বাড়ির দিকে মুখ করা
শ্রীমতী কাউন
দোলায় তার শীষ।
এইখানে,ধুঁদুল পুবের রিলে,কথার ফড়িং সব
আলতো হয়ে শুয়ে
গিনিঘাসে---
ঘোড়ার চিঁহি দ্যাখো ফিরে
ফিরে মহিষের স্রোত
কতদূর মে ফ্লাই
মিলন শেষে ফেলে যায় ঘুমের ডাকাত—
শরীর করা সন্ধ্যায়
চাঁদ চুঁইয়ে রুপায় ঢেউ দেয় মহল নদী
একটা পাতি শ্যামাঘুঘু
বাঁশ ও বাঁশফুলে চেখে নেয় বাড়ির ঘ্রাণ।
ছড়ানো-ছিটানো পাড়া গাঁ।গায়ের মেঠো,রাঙাদির পায়ের আলতায় জেগে থাকে।
দূরে মতিমহরের বিল।বিলের কানাবগির চোখে সরপুঁটির সামান্য মার্জিন।
একটা ইছামতীর হাড় নিয়ে দুপুরের হাওয়া পেরোচ্ছি কিনা,লু—
ডেউয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমি আর কাঠঠোকরা।
ভোকাট্টা ঘুড়ি জুড়ে একটা কৈশোর,বহু রঙ করা মুখ হারানো রক্তের স্মৃতিতে ঝাঁকি দেয়।
আমি
বসে যাই সিঁথিহাঁসের কোলে।রাত্রদিন যেন অপেক্ষা এক পূত
শুক্রবারের।শুক্রবার মসজিদে মিলাদ শেষে বাতাসা বা জিলাপি বিতরণ করা
হতো।বাতাসার প্রতি আলাদা একটা ঝোঁক এখনো টের পাই।তখন সবাই উন্মমুখ হয়ে
থাকতাম সাদা শেষ ঘোড়ায়।
আমরা যেতে যেতে
লুকানো দুপুর—
কিভাবে উড়ে এসে লু হাওয়ায়,
ডানার বিভ্রম আর কাউনের দোল
সাদা শেষ ঘোড়ায়—
তখন সব উন্মুখ ব্যবকলন ভোলা
বেথুলের ছায়ায় ঘুড়ি থেকে ফিরছে থৈথৈ কিশোরেরা।
নিকেল
ধোয়া
জলে
সরপুঁটির সামান্য সে মার্জিন মুছে গেছে আলেয়ার ঢঙে—
এখানে,মতিমহরের বিলে কানাবগীর পালিশ
কারা যেন উগরে দেয়
আঘ্রাণের ডেউয়ায় যত ঠোকর কুটুম পাখিটির।
অনূদিত ভাষায়
কাঁচা বিটকয়েনের টুং নেমে আসে
কণ্ঠিনালায়।
আমরা যেতে যেতে লুকানো দুপুর কিভাবে উড়ে এসে,
লু হাওয়ায়—
কোলের সে সিঁথিহাস—
কেউ তাকে পরিয়ে দেয় ইছামতীর হাড়।
সেখানে আন্ধাকুটিরের পাশে
ঠাণ্ডা হয়ে আছে যেসব খেলারাম—
হো হো থেকে উপচে পড়ছে মায়ের মুখের মিহির।
কিছুটা থেমে দুধসর নদী
সিরাপের শিশুর কাছে ফেলে গেছে সমস্ত প্রোটিন।
তারপর,শান্ত
নিরিখে শর্করা দানার মতো রূপে কখনও থেমে গেছে আনচান বেলুনের রঙ।সে এক
মতিমহরের বনে প্রয়াত রূহের দাস দশায় ফিরে কুড়িয়ে ঝরা পাতার ভাঁপ—পড়েছিল
জয়তুনের একাগুলো।আমরা যেতে যেতে লুকানো দুপুর কিভাবে উড়ে এসে লু হাওয়ায়
শালিক খুঁটে খায় সেইসব হেম ও হেমন্ত।
তার অন্ধকারে আঙুলের ফাঁক দিয়ে পড়ে যায় দীর্ঘ বাতাসার শুক্রবার
সোনার গাভিটির ঘুমে ঈষৎ মেঘের ছায়া,এই শরতের মেঘ।
খুব ছোটবেলায় রাঙাদি জিগ্যে করেছিল—
বল
তো শরতের সৌন্দর্য কী? উত্তর দিতে পারিনি।রাঙাদি হয়তো তখন হুমায়ন ফরিদীর
চন্দ্রগ্রস্ত নাটকটি দেখতো নিয়মিত।আর পূর্ণিমা হলেই রাতের বেলা মাঠে
দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মোনাজাতের আকারে হাত বাড়িয়ে দিয়ে জোৎস্না পান করতে
দেখতাম। তখন
বাড়িতে বাড়িতে ভানাবউ কেঁপে কেঁপে ওঠে।একটা নার্সিংহোম বড় হয় অপত্যের মাঠের দিকে।
আমার আনচান পরানে চিলকায় মেঘরোদ,রোদের সন্নাটা—এইভাবে কাৎ করে আতাবনসুরভি!
আমাকে থামতে হয় সাদা ধূলির দূরত্বে।যেখানে দীর্ঘকালের ভেজা এই ট্রেন-অসুস্থতা।
যেখানে জামরুল বনে দুপুর ঝিম হয়ে থাকে।শিশুরা গাছে উঠতে পারে না বলেই বাবারা সিঁড়ি হয়।
অনেক একার পর ঝিরি ওড়ায় মিনজিরি।ডাক বোনা সাত ভায়লা---
এই যে পালকের পোঁচ থেকে
চিলকায় রোদ।
যেভাবে পেকে যায়
আতাবন,সুরভি—ঘ্রাণেই বাসি করে
সমস্ত কথোপকথন।
পুরনো পেশায় ফিরে
গানের কাসিদা:কণ্ঠ ভাসায়—আমাকেও থামতে হয়
সুরা-শ্রোতার পাশে।
যেদিকে বড় হয়ে নার্সিং হোম—
ওহ্ ব্যাধের পরানে,কি মায়াবি টিউন—
ভলিউমের পর
এতটা কাঁপলো যে মাটি
মুখে মুখে মা মা বোল ফোটে।
ঐ পাল দেয়া নদীর পলিজ্বর হলে,কাস্তের বাঁকা চাঁদ
হেম হেম আব-কার
আর ভাষার বিবিয়ানায়
যখনই হাওয়া দেবে ফসল কাটার ধুম—
মাঠের অপত্য ঢেউ নিয়ে তুমিও ভানাবউ
সূর্যের রঙে যেমন ওড়াও সহস্রাব্দের ঋণ—
গাভিটির ওলানে তোমার শানে নুযুল।
নদী যা চেয়েছিল,বাস্তুভূমি,ফসলি মাঠ।ব্যাপক বনানি—এখন সে পলিসোহাগা পিছুনের মাটি।
বোঝা
যায়,চোখে তার কাতান রঙের ঘুম।চির দূরের ফলো সই।যতদূর ঢেউয়ের রেখা পড়ে
আছে—তন্তুর টাটানো আঙুল রিড ভাবছে।আরো বার্চ ওয়াইন গাইবে বায়ু।আশাবরি চোখে
তিরতির মেরি—ম ম খুলে গেলে যে কোন ক্রব্যাদ---অথই হরিণে কেমন করে যে
মেলোডিয়া ডুকরে ওঠে মনে—এতটাও ভাবেনি দোলদুর্গা টুনটুনি।শুধু
শুধিয়েছিল—দীর্ঘ যে কুসুমিত পথ,দূরবীনে কি করে ছুটলো এত সবুজ ভোঁ!তখন জল আর
সিঁথিহাঁসের মতো নিবিড় সব রাই চাঁদের বিল—অনেকটা শিহরণে।এই যে,অন্ধ
হুতুমের খোয়াব বেড়ে যাওয়া রাত—বহুযুগের ওপার থেকে কুটুম পাখির ডাক ফিরে
ফিরে ফিরে এলে ঐ গাঙ পানসিময়—
ও গাঙবালা
আমারে রাইখো সদাই দিনের মতন কাছে
পরানের মতোন গহীনে
সোনালি খাঁচায় যেমতে থাকে
আদরের সুয়োপাখি
ওক্তমতো যাইয়ো--
যেইখানে তিন মোহনার ঢল
আউলাইয়া দেয় শিথান আর পৈথান
ওক্ত মতো যাইয়ো তুমি
ফাল্গুইনা বাতাসে যদি বুকটায় মোচড় দিয়া ওঠে
আমারে ভাইবো তুমি কোলের সিঁথিহাঁস
শাখা-পলার মুখ
আনচান ঢেউয়ের
নজরানা আমি রাইখা দিছি সন্ধ্যার হরিবটতলায়—
পুতুল নাচের ইতিকথা।কথায় ক্ষুদে জামে রাঙানো ঠোঁট।ঠোঁটে দিকগুলোর যাতনা থাকে।উলের রঙ নিয়ে যে পথ উড়ে—
একটা টমটম ছেড়ে দেই সৌরধূলির সন্ধানে।সেধেছি দিগন্ত ডাঙা,বাকি সব তামসিক মুখের উত্তর গিরি।একটা বড় উদয়ের মধ্য দিয়ে এইসব গৃহস্থালি
এবং এখানে বেতের ঝাড়ে ধীরে শান্ত হয়ে আসা ডাহুকের সন্ধে—
জিকার আঠায় কোন মিল মৃত্যুর ফড়িং
উত্তর স্রোতে ফেরা শজিনা ফুলের সখি—কবে থেকে ত্রিশূলে আছি
চোখের পরে টিয়েটার বিয়ে।ছুঁড়ে তো মারা যায় না আতার বন।কিংবা চঞ্চল লক্ষ্মীর ঝাঁপি
ডুমোমাছি জানে গান ভাঙা দূরে যতটা গলে রেণুর বতর।কখন মনের মেঠোয় বিষাণ সারাদিন
কত আর ফাঁকা হলে উথলে ওঠে কুটুম পাখির ডাক?
নিঝুম ট্রেন থামা ঢঙে এঁকে ফেলি মধুপুর
এদিকটায় ম্লান
ছায়াবুলবুলি ঘুমে,ধীরে ক্ষয়ে গেছে চন্দ্রমল্লিকার শিখা।
ঘ্রাণের ভাঁজে ভাঁজে
যেটুকু সন্ধে তেতো তুমি গাইছ—
আমাদের মুখের দিকে মৃত ঘৃতকুমারী
আলতো নুয়ে আছে।
বহু তীর দূর থেকে কোন পাতাম পোড়া গন্ধ
কোন মৃত শামুকের খোল,
কথা যার ফুটবে না তাকেও ডাকি শব্দমাতা—
সিরাপের পাশে দাও মেহেদির রঙ।
আমাদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে বিশুষ্ক বৌভাত
মধু রঙের পাথরে
তুমি কী ওই একটাই কনুইয়ের পাশবালা?
হেম ও হেমন্তে টুং টাং রূপবান—
চিহ্নের পরে খুলে হিরণ দুয়ার
ডাক পাঠাও
সেই শিমুলে ছদ্মবেশী দাঁড়কাক গেয়ে যায় সবুজ আম্মার তা থৈ।
একটা
দীর্ঘশ্বাস উড়ে যায়।রূপের রিলিপ টপকিয়ে রোয়াইল ঝরার শব্দ।আমি কান পেতে
থাকি।আমারে যে খুঁড়ে খায় ডাহুকের নাত।ওখানে খেলতুতো বোনেরা ডালিমের ঢঙে লাল
হয়ে থাকে।
|
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন