শুভশ্রী সাহা
আ জার্নি টু দ্য মেট্রো সিটি
সময়
ভাঙছে! দ্রুত হচ্ছে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস আকাশের, রঙ পালটাচ্ছে দিনের আর
রাতের পোশাকের। মেট্রো জীবন ক্ষুদ্র হতে হতে ক্ষুদ্রতম। ঝাঁপ খুলছে
দোকানের, দোকানের উনুনে কয়লা পড়ছে ঝপাঝপ। ক্রমশ আবছা হয়ে উঠছে মুখ! সকালের
দুধের প্যাকেট, বাজারের থলি হাতে পড়তে না পড়তেই অটোর লাইনে ভিড় বেড়ে যায়।
বাসস্ট্যান্ডের বিশ্রামাগারে ভবঘুরেদের আড্ডা,নিরালার খুনশুটি । পাশ থেকে
আড়চোখে পাশ্ববর্তিনীর ভাঁজ পরা পেটে চোখ রাখতে না রাখতেই পেছন থেকে এগিয়ে
যাওয়ার তাড়া দেয়। খোলা কাগজে চোখ রাখতে মনে পরে যায় বিবাহযোগ্যা কন্যার
উৎকন্ঠার ব্রণওঠা মুখ। মেট্রো লাইফে কাঁধে কালো ব্যাগ, ভীতু মুখের বাইক ওলা
কেউ হলেও তো হয়। দিন পারাপারের। গলিগালা ঘুরে এঁদো পুকুরের পারের
স্যাতসেঁতে বাড়িতে বড়জোর সন্ধ্যাবেলা এগরোল টিফিন, চা র সাথে। ক্লিষ্টা
কন্যার হাতের চীনে ফোন গরম হতে থাকে চ্যাটিংের গল্পে।
মেট্রো
শহরের হাতা দিয়ে গলে যাওয়া শহর তলীর রাস্তায় ডিজেল ভ্যান আর চারসিটারি
টোটোর চটুল গান বাজছে। পৌরসভার পিন্ডির শ্রাদ্ধ চালাচ্ছে প্রকাশ্যে দীনু
কাকা আর তাকে ঘিরে বাকি সব রাজা উজির থাবড়ানো ব্যক্তিত্ব! রাস্তায় নটার
ভিড়ে সারি সারি দুই বেনুনী নিয়ে চলেছে নীল সাইকেল! পাশ ফেল হীন বিদ্যালয়ের
গেটে নীলাঞ্জনাদের মুখ--স্কুলের পেরিয়ে শহরতলীর মুখ, এলোমেলো সবুজ গেট
রংচটা বাড়িদের সারি, ভেসে আসা হারমোনিয়ামে আরোহণ আর অবোরোহণের গত।
অনেকটা
ফাঁকা জমির পাশে পাট শাকের ছাড়ানো হচ্ছে। জলে পচচে বাকি শাক! তামাটে জল
থেকে উঠছে আঁশটে গন্ধ। আঁশটে গন্ধ মাঠের পাশে পোঁতা ঝান্ডাতেও।
প্রতিশ্রুতির! ওসব দেখে না রামুরা শ্যামুরা তারা নিশ্চিন্তে ঘুরিয়ে যায়
লোরোউইনের চাকতি। ইকিড় মিকির চামচিকে জীবনের জিন্দাবাদ সন্ধ্যার লোটোর
খরিদ্দার! ভাগ্যের চাকা টা তো ঘুরছেই, ভাগ্যের চাকাটাতো ঘুরবেই।
সকাল
দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলে নিভন্ত দুপুরে ফাঁকা ফাঁকা স্টেশন,খালি খালি
ট্রেনের টুংটাং সুরেলা দরজা খোলার শব্দ হলে উদেশ্যহীন লুকোচুরির পরকীয়া
ভ্রমণ। রবীন্দ্রসদন স্টেশনের গেটে খসখসে বুটিকের শাড়ি আর সিজিন্যাল ফুলের
সাথে সিজিন্যাল শিল্পীদের ভিড়। সুযোগের সাজে মেট্রো জীবনের টুকরো আনন্দ,এক
পলক ঠান্ডা বাতাস, শীতের ওম, সুরঞ্জনাদের কারিগুরি, বেলাদের স্বপ্নভঙ্গ।
সেই ফাঁকে বাড়িতে গিন্নীর নিপুন হাতে টেবিলে সাজছে বেলার রান্না, বিকেলের
জলখাবারের উদ্যোগ! ফিরবে একে একে। পুলকারের চেনা হর্ণে বাইরে বেরিয়ে
বারান্দায় ঝোঁকে মালকিন আর অমনি চোখে পড়ে পাড়ার নিরুত্তাপ নিশ্চিন্ত মোড় আর
চকিতের দেখা অমল ঠাকুরপো। চিনে বাদাম ভাঙছে কর্তা, পাশে বসা অফিসের নীলা
দি। চটকদার নীলাদির বুকে মাথা রেখেসংসারের প্রতি অভক্তির কথা শোনায় সে।
ব্যাগেই কাগজে মোড়া রুপার দেওয়া রুটি তরকারী! পরোটা সহ্য হয় না যে পেট
রোগা সুজনের। নীলাদির দিকে লুকিয়ে সে চোঁয়া ঢেঁকুর তোলে। ঢেঁকুরের সাথে
ওঠে টক জল! অম্ল জল৷ পানসা তেঁতো হয়ে যাওয়া পুরোনো তোষকের তুলোর মত হলদে
হয়ে আসা জীবন! মেট্রো জীবন, স্টেশন আসে যায় কোচ ভর্তি হয় আবার ছুটতে থাকে
অবিরাম-- সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে দোলে পরদা ঘরের, শাঁখে ফুঁ জ্বলে ওঠে
ত্রিফলার আলো। বাসস্টপ ক্রমশ ফাঁকা হয়ে আসে। গলির মুখে নিভু চাঁদের আলোয় বড়
মায়া বসে ক্লিষ্ট জীবনের মুখে।
মারকাটারি লিখেছিস
উত্তরমুছুন