সুদীপ্তা সর্বজ্ঞ

 


বত্রিশরকম প্রেম


১।

এসেছ কি নিরুপায়? 
যুদ্ধবেশে পরিযায়ী তুমি, ক্লান্ত রাস্তার পাশে শুয়ে-বসে ভিক্ষাবিনিময়
এই দুর্যোগ নিদারুণ কিছু, কিছুটা পালকবিলাসী
যেমন বলেছি আগেও

আমাদের কথা হয়ে না ওঠার দ্রষ্টব্যে পাখিগানে দ্রিমি দ্রিমি রব-
যুদ্ধাপরাধী, ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঘোরতর বিসম্বাদ
সত্যিই নিরুপায়? 
নন্দনকানন, বিশালাক্ষী মাঠ
যথাসম্ভব পরবর্তী 

পর্বশেষে চলো উঠে যাই,

ট্রামলাইন ও দূর্গ পেরিয়ে


২।

আমি, তুমি কিম্বা সত্যবতী
জেগে থাকে সারারাত
গাছের পর গাছ শূন্য হয়ে যায় শুরু থেকে
বস্ত্রহীন হতে হয় যদি, প্রস্তুতি আখরে আখরে

সে আমার প্রেমিক। তবু আহ্লাদে নয়
কী জানি, না জানিয়ে মহাকাব্যে আমার বুকে চোখ রেখেছিল কেন
সেই থেকে
কাজ সেরে ফিরে এসে জেগে থাকি
আমি, তুমি কিম্বা সত্যবতী 
কখন কী যুদ্ধসাজ, বিনাবেশে মাঠে নেমে পরা 
স্বপ্নদোষে নয়, চাইলেই স্পর্শবিলাস 
সহ্যাদ্রি, আমাদের গাছজন্ম -

বাড়ন্ত জনপদ, 
আয়াসশরীরজুড়ে বলশালী পাথুরে রাস্তা

আমি, তুমি কিম্বা সত্যবতী 

জেগে থাকি সারারাত

তাঁবু এঁটে ঘুমিয়ে শব

শ্বাপদসংকুল চারপাশ


৩।

না বললেই হত এই আমার পীঠস্থান 

শিক্ষাদান কতটা নির্মম, মুদ্রাদোষপূর্ণ 
বুঝেছ অক্ষরে অক্ষরে

তবু
না বললেও হত 
এই রীতি
নিতান্তই ব্যক্তিনির্ভর। 
স্বীকৃতিপ্রধান যাকিছু, সবই বিক্রয়যোগ্য কয়েকখণ্ড হাড়ের বিনিময়ে


৪।

রবীন্দ্র সরণির গা বেয়ে উঠেছে চিত্তাকর্ষক তথ্যাবলি
সেইসব দেখে অটোতে বসে বয়স বেড়ে গেল চক্ররেলের 
স্কুলের লাল মেঝেতে তবু পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ 
আমার জীবনেও- 

লক্ষ্য বুঝে এসেছে সে আজ
বাদামভাজার ঠোঙায় পোষা ভাষা, ব্যবহৃত উক্তি, নতুন বিয়ের গন্ধ মিলেমিশে আতুড়ঘর 
টের পেয়ে জন্মাই, আবার
দেখি ভিজে মাঠে কারা জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে

বুঝতে পারি পাড়ার প্রতিটি অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে তখন কেন উপচে পড়ছে ভিড়


৫।

অভিলাষ?

কৃতকর্ম, অগ্রন্থিত প্রণয়বাসনা - সবই তো বলেছি
বলেছি হাতেহাত, শহরের গায়েচোখেমুখে আহ্লাদ আমাদের দেখে- সব
যে দুফোঁটা প্রতিশ্রুতি অশ্রুত,
যে দূরের রাস্তা ভুল হলে ট্রেনলাইন 
গলা টিপে দিলেই ভীষণ কাছে আসা,  
কাছে আসে যাকিছু পরিত্যাজ্য 
শ্বাসবায়ু
বিগত সরকার 
চাকরি ও খিদে

লিফটের দেওয়ালে জেগে ওঠে হরেন দাশ, সাঁওতাল গ্রাম আর হাঘরে বাসনা

কতদূর যাব আর? 

অভিলাষ? 

সবই তো বলেছি


৬।

বত্রিশরকম প্রেমে উজাড় হবে গ্রাম
পায়ের কাছে বসিয়ে রাখব জ্বরের ঘোরে চোখ বুজে থাকা ফরমায়েশ 
স্কুলে যাবে যাও, কলেজে যাবে যাও- অনুমতি দিলাম
শুধু বলো আমার বত্রিশরকম প্রেমের ফিরিস্তি গিলে নেবে দুবেলা জলেদুধে মিশিয়ে
গল্প বলতে হলে বালিপথে যারা ওড়না উড়িয়ে মন্ত্র পড়ে, বিড়বিড় করে তোমার আমার নাম নেয়, তাদের কথা বোলো
বত্রিশরকম কৌশলে তোমাকে কাছে পেয়েও উচাটন মন,যা নিছক বাতুলতা - সেসব ভুলে যেও
আমার বত্রিশরকম প্রেম, শান্তিচুক্তির বাহানা, বুলেটপ্রুফ গাড়ি, বন্দুকধারী বাহিনী, মন্ত্রণালয়ের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনামাফিক কাজ, দেশেদেশে বৈঠকের খবর, 
গুজব 
সব গুজব
শুধু গুজব
যাকিছু মঙ্গলকামী সব আমার বত্রিশরকম প্রেমের খাতিরে

জাহিদার বাবার লাশ একটা নামহীন দেশ
বত্রিশটা বুলেটের দাগ বিনা দেশের নাগরিকত্বের গল্প

৭।
পরাক্রমশালী তখন অন্যদিকে মুখ, স্থির চোখ
সিম-আলুর ঝোল, একটুকরো পোয়াতি রোদ 
শরীরে সঞ্চারী, আভোগ---
এ'নামে কম্পানি খোলা যায়

আঙুলের ডগায় পেট, পিঠ, শিরদাঁড়া 
শুধু সব নিথর
'তেলাপিয়াটা বড় ভালো ছিল, জ্যান্ত, ছটফট করছিল পুরো'

এখন শান্ত

৮।
ওবেলা ভাতের পাতে এস, থেকে যেও 
উঠোন শুকনো, স্বভাবতই, গাছে গাছে কথা আছে
রটেছেও ঘটনা কিছু
জলে জল চারদিক--- তুমি পরিশ্রম গুছিয়ে ছুটে এসেছিলে, শূন্য গ্লাসে তখনও জল ছিল
ছিল চা-মিষ্টির আয়োজন
আর 
যা ছিল
অনুবাদযোগ্য নয়

বারান্দায় শীতের রোদ এলে
আরেকবার এস, দেখে যেও
কাঁথাজুড়ে
খোলা কোল, বিপর্যস্ত  চুল, ইতস্তত ভাঁজ
 

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য