দেবাশিস ঘোষ
পাঁচটি কবিতা দেবাশিস ঘোষ
গোলাপী বিষাদ ।।
------------------------------ --
গোলাপ বিষণ্ণ হয়! হতে জানে!
পরতে পরতে যার রাগ রাগিনীরা বিদ্যুৎ
মেলে রাখে, ছাদের রোদ্দুরে শুকোতে দেওয়া টকটকে ব্রা
গোলাপ ভ্রমণস্থান, আধুনিকতার দোষে ট্যুরিস্ট স্পটের মতো
মানচিত্রের চকচকে বিন্দু
গোলাপ বিষণ্ণ হয়, হয়ে থাকে, রোজ রাতে, চলাচল থেমে গেলে
দেয়া নেয়া শেষ হলে, পড়ে থাকা সিগারেট-অবশেষ
ছায়া ফুরিয়ে আসে, আবার উজ্জ্বল
ধারালো হয়ে ওঠা আর হয়ে ওঠেনা
রক্ত রঙের নীচে ব্যথার কালশিটে রঙ ফুটে ওঠে
গোলাপ নিস্তেজ হয়, নতুন পতঙ্গ এসে
বিষাদের মুখে তার রঙ ঢেলে দ্যায়
************
একাকী বাবলাগাছ ।।
------------------------------ --
পুকুরপাড়ের নরম মাটি আর মাঠজুড়ে হাওয়ার দুপুর
এক কোনে বাবলা গাছ কেমন একাকীত্ব পোহাত দিনরাত
আমাদের পকেটে কোনো চাঁদ ছিল না, কাদা লাগা শিমূল ফুল
আকাশের গায়ে কখনো হাত দিয়ে দেখেছি স্কুলের স্লেটের মতো মসৃণ
রাত্তিরে লাশগুম, পাড়ায় পাড়ায় বোমাবাজি
ভূতে পাওয়া গরমের দুপুরে মাঝরাত্তির থমথম
রাতদুপুরে ক্ষীণ আলো সাথে করে চলে যেত ভৌতিক ট্রেন
কত কম আলো ছিল সেইসব দিনে
কত কম খিদে ছিল আমাদের ছোটো ছোটো পেটে
তারপর কংক্রিটের কামড়ে কামড়ে উধাও
বিকেলের সব্বার গোল হয়ে বসা
মোহন বাগান, ইষ্ট বেঙ্গল, আর হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে বল করছেন
শীতের লাল সোয়েটার আমার ছিল না,
আমার জন্য মাঠ ভরা বাতাস, পুকুরের টলটলে জল
আয় আয় চৈ চৈ, বাতিল ঠোঙার মতো পড়ে থাকা
আর সেই একা একা বাবলাগাছ
যে চেয়েছে অন্তত ভূতই বসুক তার ক্ষয়াটে ছায়ায়
*************
ঝড়ের গল্প ।।
------------------------------ ------------------------------ --
ছিল তো অনেক ঝড়, ছিলই তো তীব্র ঝাপট
সেসব এখন আজ পোড়া-রঙ পুরোনো ছাতার
ছিল তো সবুজ খুব, ছোটো এক বসন্ত সময়
নদীতেও স্রোত ছিল, রাতের আকাশ ভরা তারা
এসব সবারই থাকে, একদিন গতস্য শোচনা
নাস্তি জেনে ও বুঝে চাউমিনে খেয়ে নিই আজিনা মটো
আমার স্বপ্ন রীতি ডালে ডালে ফলে থাকা মেঘ
নেমে এসে হাত থেকে বিস্কুট খেয়ে যাবে ছোট্ট উঠোনে
তারাদের খেলা দেখবো, রঙ পেন্সিল কিনে দেবো
অসতর্ক মুহূর্তে চশমা নামিয়ে রেখে
ঝরিয়ে নেবো দু'পশলা বসন্ত
***************
লতানো কথন।।
------------------------------ ---------
একটা ঠান্ডা ব্যথা আমাকে ঘুমোতে দ্যায় না বহুদিন
আমি মেঘের পর মেঘ তুলছিলাম কর্ণিকে
মেয়েদের কষ্টগুলো স্পঞ্জের ছিদ্রে ভরেছি
অন্যরকম একটা শার্টের চুলকে ওঠা
লক্ষ করতে করতে জ্বলে উঠতে গিয়েও থেমে গেছি
শুধু আজ মনখারাপ মনখারাপ বলে ডেকে ওঠা শ্যাওলা
ঝুলিয়ে দিল ব্যালান্স শিট
সব ডটপেন ও কাগজের রাতের আলাপে কতটা সম্মতি ছিল
জেনে বুঝে নিয়ে
ফের বিস্বাদ শুষে নিই পাঁজরের ভাঁজে
নকশা করা লোহার দুর্গের ভিতরে জমাট বিচ্ছিন্নতা
সকালের রোদ্দুরের মতোই ভাঁজ খাওয়া লৌহ যবনিকা
আমার গানের গায়ে বাস্পের আস্তরণ
আর উঠোনে লতিয়ে ওঠা বিলাস
ভয়ের অন্যপিঠে জ্বলে ওঠা আলোর রাঙানি
এইসব বৃত্ত বোধ খুলে ফেলছি নদীটির পাশে
ঘেমে ওঠা বিস্ময় নিয়ে আমি শহরের গলি ঘুঁজিতে
ছড়িয়ে দিচ্ছি রাত্রির নিষেধ
তোমার ছায়া জ্বলা বুকে অবাক বিস্ফোরণে
আমি মরতে গিয়েও ফের উঠে দাঁড়াই সম্রাটের মতো
রোজ রোজ অবসন্নতার বাদামী দাগে
লেবুরস রেখে দিই, গাছের ছাউনি রেখে দিই
আমাকে আরেকবার নীল দেরিদার দাড়ি অবধি
পৌঁছতে হবে ভেবে দরজায় জ্বেলে রাখি চাঁদ, তারা
মশালের নিষ্ঠুর দর্শণ
আমি তো তোমার মতো নই রোদে রোদে ভেসে যাব
টলটলে পুকুরের গোপন বিলাসে!
হাত জুড়ে রয়ে থাকা কালো যশ
আর বিরল রোগের সব স্বপ্ন নিদান
ডিসেকশন টেবিল যে কাকে চেনে!
সিগারেট, কফির ঝলক, ভুলে থাকা
আপাত বিস্তার নেওয়া মালকোষ
ছড়িয়ে পড়তে থাকে ঘোর লাগা ছাত্রদের হস্টেলে
***************
বৃষ্টি দিনে
***********
বৃষ্টি ফোঁটার ফাঁকে ফাঁকে হু হু করে
উড়ে আসে সেইসব দিন।
লজঝড়ে সাইকেল, ছায়াঘেরা পুরোনো মন্দির
এখানে ওখানে শ্যাওলা আর এক দুঃখী বিড়াল
এক টুকরো আকাশ ছিল একান্ত নিজের
যেখানে ইচ্ছে মতো দেবতারা নেমে আসত টুপী, জুতো পরে
ছিল এক রাজকন্যেও - ফ্রক পরে ফুল তুলত
দূর থেকে কিউপিড কৃষ্ণচূড়া ছুঁড়ে দিত তীর
দীঘিতে আলোড়ন উঠত ভীষণ
তারপরেই শুরু হত প্রবল বৃষ্টি চল্লিশ দিন ধরে
রাজকুমারীর হাতে চা - বাবার জন্য
এক বৃষ্টি থেকে আরেক বৃষ্টিতে এভাবেই পৌঁছে গেছি
আর বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় ধুয়ে যাচ্ছে গোটা শহর
ভেসে যাচ্ছে চাঁদের নৌকো
ছুটে আসছে মেষ বাহিনী
টুপটাপ খসে পড়ছে গ্রহ ও তারকা
দু চারটে স্কুল পালানো হাফপ্যান্ট ছেলে
প্লাস্টিক ব্যাগে তাদের তুলে নিচ্ছে
রাডারে তখন ধরা পড়ে রাজকুমারীর স্মিত হাসি
পাঁচটি কবিতাই সুন্দর।ভালো লাগলো নির্মাণ-স্টাইল আর শব্দপ্রয়োগ। 'লতানো-কথন'নামকরণটি অন্যরকম লাগলো।
উত্তরমুছুনপাঁচটি কবিতাই সুন্দর।ভালো লাগলো নির্মাণ-স্টাইল আর শব্দপ্রয়োগ। 'লতানো-কথন'নামকরণটি অন্যরকম লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ নবনীতা
মুছুনভালো লাগলো কবি। 'বৃষ্টিদিনে' বেশি ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনভালো লাগলো।নামকরণ গুলিও ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনথ্যাংকস
মুছুনভালো লাগল দেবাশিস। সবকটিই ভালো।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ দাদা
মুছুনসুন্দর কবিতাগুচ্ছ। খুব ভালো লাগল যেমন লাগে সবসময় আপনার লেখা।
উত্তরমুছুন--সমর্পিতা
ধন্যবাদ
মুছুনঝড়ের গল্প এবং বৃষ্টিদিনে খুব টানল পড়ার সময় । পড়া শেষ করে আবার ফিরে পড়তে ভীষণ আগ্রহী হওয়াটা আমার নিজের কাছে নিজের এই টান এর একটা মাপকাঠি ।
উত্তরমুছুনএটা কবিতা বিচারের একটা ভালো মাপকাঠি, দ্বিতীয়, তৃতীয় বার পড়তে ইচ্ছে করাটা।
মুছুনএটা কিন্তু কবিতার বিচারের একটা ভালো মাপকাঠি, দ্বিতীয় তৃতীয় বার পড়তে ইচ্ছে করাটা।
উত্তরমুছুন