যুগান্তর মিত্র
চন্দনের গন্ধ
❂❂❂❂❂❂❂❂❂❂❂
একবার
সাইকেল চালাতে চালাতে চন্দনের বাবা ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল, বলতো চান্দু, কোন
পতঙ্গ পা দিয়া স্বাদ গ্রহণ করে? চন্দনকে স্কুল থেকে সাইকেলে বসিয়ে ফিরছিল
সেদিন। চন্দন তখন ক্লাশ ইলেভেনে পড়ে।
বাবার প্রশ্ন
শুনে চন্দন হাঁ হয়ে গিয়েছিল। পা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ! সে জানে তার বাবা খুব
বেশি লেখাপড়া করেনি। মা শিক্ষিতা। প্রাইমারি স্কুলের টিচার। সেই বাবার এমন
আশ্চর্যজনক প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেছিল, কোন পতঙ্গ বাবা?
প্রজাপতি। ওরা পা দিয়া মধুর স্বাদ নেয় জানোস?
চন্দন
চোখ বুজলেই সেই বাবাকে দেখতে পায়। কখনো-কখনো আলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাবা।
একা। ঠিক আল নয়। জমির ধার বরাবর একটানা একটা উঁচু পাড়। বাবার এক হাতে একটা
ছোট্ট লাঠি। অন্য হাত কপালের ওপর এমন ভাবে রাখা, যেন দূরের কোনও জমি দেখছে।
কিংবা কেউ হয়তো আসছে দূর থেকে। দৃষ্টি সেদিকেই। আসলে কেউ আসে না। কোনও
জমির দিকেও বাবার চোখ ছিল না, জানে চন্দন।
উঁচু
পাড়টার একদিকে বিস্তীর্ণ জমি, সরু আল দিয়ে আলাদা আলাদা করা। আর অন্যদিকে
ঢাল নেমে গেছে। তারপর একটা নয়ানজুলি। সারাবছর তাতে জল থাকে না। আসলে
নয়ালজুলি লাগোয়া নাবাল জমি আছে বেশকিছুটা। বর্ষার জল তাতে ছাপিয়ে যায়। তাই
জল ছড়িয়ে পড়ে, শুকিয়েও যায় তাড়াতাড়ি।
চন্দনদের কয়েক
বিঘে জমি ছিল। সেখানে আগে ধানের চাষ করত বাবা। তার ঠাকুরদাও চাষবাসই করত।
চন্দনের বাবা পরের দিকে আর ধানচাষ করত না। চন্দন ছোট থেকেই দেখে এসেছে
ধানের বদলে ঢেঁড়স আর বেগুনের চাষ হয় তাদের। কখনও টম্যাটো চারা লাগাত বাবা।
বা বাঁধাকপি। কিন্তু কিছুতেই ধান বুনত না।
ধান রুইলে
কী হয় তোমার? যত্তসব ভুলভাল কথা! চন্দনের মা একদিন ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেছিল।
আজকালকার দিনে এইসব বস্তাপচা ভাবনাচিন্তা নিয়ে কেউ থাকে না।
বাবা
সেদিন মায়ের কথার কোনও জবাব না-দিয়ে চুপ করে বসেছিল। যেন মায়ের কথা শুনতেই
পায়নি, এমন মুখ করে ছিল অনেকক্ষণ। তারপর উঠে চলে গিয়েছিল কোথাও। হয়তো
জমিতে, কিংবা সেই উঁচু পাড়ের ওপর। লাঠি হাতে। অথবা জমির গাছেদের কাছে।
চন্দন অনেকদিনই দেখেছে, বাবা ঝুঁকে পড়ে গাছের গায়ে হাত দিয়ে কীসব বলে
চলেছে। গাছগুলো কি বাবার কথা শোনে? নাকি বাবা একা একাই নিজের মতো বলে যায়?
ভেবে কোনও কূলকিনারা পায়নি চন্দন। মাকে জিজ্ঞাসা করেছিল একদিন। মা মুখ
বেঁকিয়ে বলেছিল, ওসব তোর বাবার ভীমরতি। চিরটাকাল লোকটা হাড়জ্বালানি! কোনও
কম্মের না।
ধানচাষ নিয়ে বাবা কী ভুলভাল কথা বলে জানে
না চন্দন। মায়ের কথা বুঝতে পারেনি সেদিন। এমনকি মাকে জিজ্ঞাসা করেও কোনও
জবাব পায়নি। এসব ফালতু কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করবি না একদম। যা জানার তোর
বাবাকে জিজ্ঞাসা কর। মা মুখ ঝামটে বলেছিল।
চন্দনের
মা বরাবরই রাগী, বিশেষ করে তার বাবার ব্যাপারে। ছোটবেলা থেকেই এমনটা দেখে
এসেছে সে। তবু চন্দনের মনে হয়েছিল, মা ঠিক কথাই বলছে। আমাদেরও ধানচাষ করা
উচিত। রহমান চাচা বা শ্যাম জেঠুরা ধানের চাষ করে অনেক আয় করে। অনেক বড়লোক
ওরা। চন্দনরাও তাহলে বড়লোক হয়ে যেত।
বাবা বেরিয়ে
যাওয়ার পরে মা গজগজ করেছিল খুব, তোর বাবা আজীবন গরিব হয়ে থাকতে চায়। গরিবির
গর্ব আছে ওনার। সবাই যে দয়ার চোখে দেখে, সেদিকে খেয়াল থাকে না! মায়ের রাগ
দেখে চন্দন আর আগবাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পায়নি। অনেক ভেবেও চন্দন
এমন কিছু খুঁজে পায়নি যাতে মনে হয় কেউ তাদের দয়া করছে। তারা এলাকার
কয়েকজনের তুলনায় গরিব ঠিকই, তবে খাওয়াপরায় তেমন অভাব ছিল না। মা যে সংসারে
অনেক টাকা দিত, তেমনটাও নয়। মামারা দিদাকে দেখত না। মা মাঝে মাঝে বাজারহাট
করে দিয়ে আসত দিদাকে। অনেক সময় চন্দনকে দিয়ে কিছু টাকাও পাঠাত। তাদের বাড়ির
বাজার করা, মাছ আনা, অন্যান্য জিনিসপত্র কেনা, সবই বাবা করত। এর জন্য
বাবার হাতে মা টাকাও তুলে দিত না। শুধু চাষ নয়, বাবার হাতের কাজও খুব
সুন্দর ছিল! সেসবও বাবা বিক্রি করে আয় করত কিছু। সারাদিনই লোকটা কিছু না
কিছু কাজ নিয়ে থাকত।
চন্দন যেবার মাধ্যমিক পরীক্ষায়
পাশ করে দূরের স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হল, সেবার স্কুল থেকে ফেরার পথে
একদিন বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ধানচাষ না-করার ব্যাপারে। তখনই জানতে পেরেছে
বাবা কেন ধানচাষ করবে না তাদের জমিতে।
চন্দনকে
স্কুলে যেতে হত সাইকেলে। এতটা পথ হেঁটে যাওয়া সম্ভব ছিল না। প্রায় চার
কিলোমিটার দূর। এদিকে বাস চলত না তখন। সাইকেলই ভরসা ছিল সবার। কিন্তু তাকে
সাইকেল কিনে দিতে চায়নি বাবা।
এখন থাক। কলেজে ওঠ আগে। তখন কিনা দিমু। বাবা বলেছিল। সত্যি সত্যিই কলেজে ওঠার পরে একটা রেসিং সাইকেল কিনে দিয়েছিল বাবা।
তা বলে প্রতিদিন তুমি দিয়ে আসবে আর নিয়ে আসবে?
অসুবিধা কী বাপ? আমার তো ভালোই লাগে দিয়া আসতে, নিয়া আসতে।
এরপর
আর এই প্রসঙ্গে কিছু বলেনি চন্দন। ও জানত, বাবা তাকে সাইকেলে করে পৌঁছে
দিতে ভালোবাসে। যেতে যেতে নানা গল্প করে। এমন অনেক কথা বলত বাবা, তা শুনে
তাক লেগে যেত চন্দনের। প্রজাপতির পা দিয়ে মধুর স্বাদগ্রহণের কথাটা ঠিকই,
পরে জেনেছে সে। পশুপাখিদের সম্পর্কে নতুন নতুন কথা জানতে পারত বাবার থেকে।
চাষবাস সম্পর্কেও অনেক কথা বলত বাবা। গাছাপালা সম্পর্কেও। মা যে বাবাকে এত
কটু কথা বলত, সে প্রসঙ্গে কোনওদিন কিছু বলত না তাকে। এমনকি কারও সম্পর্কেই
বাবাকে অভিযোগ বা অনুযোগ করতে শোনেনি সে।
ছুটির আগেই
বাবা স্কুলের গেটে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। অন্য বন্ধুরা যখন নিজেদের
সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরত, চন্দন তখন বাবার সাইকেলের ক্যারিয়ারে চেপে বসত।
এইরকমই একদিন ফেরার পথে জিজ্ঞাসা করেছিল চন্দন, আমাদের জমিতে ধান চাষ করো না কেন বাবা?
অনেকক্ষণ
নীরবে সাইকেল চালিয়ে গেল বাবা। কোনও কথা নেই মুখে। চন্দন ভেবেছিল,
প্রশ্নটায় কি বাবা রেগে গেল? নাকি ঠিকভাবে শুনতেই পায়নি! তাই আবার প্রশ্নটা
ভাসিয়ে দিল, ও বাবা, আমাদের ধান চাষ করতে পারো না?
না রে বাপ, ধান বোনা আমাগো জন্য ভালো না।
কেন বাবা?
আবার খানিকক্ষণ চুপ। তারপর প্রায় বিড়বিড় করে বলেছিল, একবার ধান রুইলাম, বুঝলি! আমার বাবা গত হইছেন। সেবার খুব ধান হইছিল জানোস?
এ তো অ্যাক্সিডেন্ট বাবা, তোমার কি মনে হয় ধানচাষের জন্য ঠাকুরদা মারা গেছেন?
কী
জানি বাপ! এরপরের বার ধান রুইলাম। আমার মা অসুস্থ হয়া পড়ল। অনেকদিন
বিছানায় ছিল। পরে অবশ্য ভালো হয়ে গেছিল। সেই থিকা মনটায় কু গায় বাপ। তাই আর
ঐ পথে হাঁটতে চাই না।
ঠাকুমা তো ভালো হয়ে গেছিলেন বললে। তাহলে? ধানের কোনও দোষ ছিল না বাবা। যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল চন্দন।
তা
জানি না। কিন্ত তার দুই বচ্ছর পরেই যেদিন ধান ঘরে আনলাম প্রথম, সেদিনই মা
চইল্যা গেল। তারপর থিকা আর ধানচাষে মন নাই আমার। তোর মারে এইসব বুঝাইতে
পারি না। আমার বাবা আর মা ছিল আমার আশ্রয়। ধানের জন্যই তাগো হারাইলাম।
হাহাকারের মতো শব্দগুলো চন্দনের কানে ভেসে এসেছিল।
চন্দন অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, এসব হল মনের ভুল বাবা। বয়স হলে একদিন না একদিন সবাইকেই চলে যেতে হয়।
জানি
বাপ। আমিও একসময় চইল্যা যামু। যাইতে তো হইবেই। জগতে কে আর বেশিদিন থাকে!
কিন্তু কী মনে হয় জানোস বাপ? মা লক্ষ্মীর ধান আমার কপালে নাই। বাবারে
হারাইলাম, মায়রেও হারাইলাম ধানচাষ কইর্যা। তুই যদি চাষবাস করোস, তখন ধান
রুইবি। আমার দ্বারা আর হইবে না রে।
বারান্দায় ইজি
চেয়ারে বসে বসে এসবই ভাবছিল চন্দন। মাঝে মাঝেই একা বসে নানা কথা ভাবে। সে
আর চাষের পথে হাঁটেনি। পড়াশোনা শেষ করেই ব্লক অফিসে সরকারি চাকরি পেয়ে
গেছে। জমিজিরেত যা ছিল, সেসব এখন আর নেই। চন্দনের খুব ইচ্ছে ছিল, অল্প হলেও
জমি কিনে তাতে ধান চাষ করাবে লোক লাগিয়ে। সে দেখতে চায় লক্ষ্মী আসেন কিনা
ঘরে! বাবা সুস্থ হয়ে উঠে দেখবে লক্ষ্মীর ঘরে আসা। স্বপ্ন কিছুটা ছুঁতে
পেরেছে ভেবে ভালো লাগছে চন্দনের। সকালেই জমি কেনার কথা পাকা হয়ে গেছে।
শ্রীপতিদাকে বায়নার টাকাও দিয়ে দিয়েছে।
আজ রবিবার,
চন্দনের অফিস ছুটি। কাজের দিদি বাবাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেছে বাড়িতে অনেকক্ষণ
হল। আর একজন আসবে রাতের দিকে। সারারাত সে থাকে। দুপুরের খাওয়ার পরে বাবা
কিছুটা ঘুমিয়ে উঠল একটু আগে। এখন বসে আছে বারান্দার এক কোণে, বেতের মোড়ায়।
চন্দনই বাবাকে বসিয়ে দিয়েছে। সম্ভবত এই জায়গাটা বাবার খুব প্রিয়। দিনের
বেশকিছুটা সময় এখানেই কাটে তার।
অনেক কথা মনে পড়ছে
চন্দনের আজ। মায়ের ছবিতে ঝুলছে রজনীগন্ধার বাসি মালা। সেদিকে তাকিয়ে নানা
ভাবনা তুলোবীজের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। এক শীতের সকালে বাবা বলেছিল, একবার
অনঙ্গরে ডাইক্যা আনিস তো। আমাগো কলটা সারানো লাগব।
তুমি কি পতিত কাকার কথা বলছ? কল সারাই করে?
পতিত? কী জানি! নামটা ভুইল্যা যাই কেন য্যান।
তাকে ডেকে কী করব? আমাদের কি চাপাকল আছে বাবা? সেই কোনকালে টাইম কল বসানো হয়েছে!
বাবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল চন্দনের দিকে। ও, আমাগো চাপাকল নাই?
প্রথমদিকে
তেমন কিছু মনে হয়নি কারও। কারও বলতে চন্দনের। তার মা বরাবর বলে এসেছে, তোর
বাবা মাঝে মাঝে নাটক করে। উল্টাপাল্টা নাম বলে। জিনিস কিনতে ভুল করে।
টাকার হিসেবে ভুল করে। আসলে অন্যের অ্যাটেনশন চায়। সব বুঝি। চন্দনও সেরকমই
মনে করত। পরে বুঝল, বাবা আসলে ভুলে যাচ্ছে সব। এটা বাবার রোগ। ইচ্ছে করে
করে না।
একটা আম্রপল্লব আনিস তো। আমার আর বাইরাতে ভালো লাগে না। শরীরটা জুতের মনে হইতাছে না।
আম্রপল্লব? কী হবে বাবা?
আইজ বিষ্যুদবার না? লক্ষ্মীবার…
আজ শনিবার বাবা, বৃহস্পতিবার পরশুদিন চলে গেছে।
কী কস? আমি আইজকাল সব ক্যামন য্যান ভুইল্যা যাইতাছি। কী যে হয় আমার! শেষ কথাটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে হাওয়ায় পাক খেতে থাকে।
অ্যাই শোনো, এইসব ভড়ং বন্ধ করো। ভুইল্যা যাই ভুইল্যা যাই করে আমাদের মাথা নষ্ট কোরো না বলে দিলাম!
মায়ের
কথা শুনে বাবা চুপ হয়ে গিয়েছিল। এইভাবে চুপ থাকতে থাকতে বাবাকে একবারে
গুটিয়ে যেতে দেখল চন্দন। আগের মতো কথা বলত না আর, চন্দনকে নানা গল্প বলত
না। জমিতেও যেত না আর। মা দুয়েক আগে সব জমি বিক্রি করে দিয়েছিল। অনেক আগেই
জমিগুলো মায়ের নামে করে নিয়েছিল বাবা। বিক্রির ব্যাপার সব জেনেও বাবা কিছুই
বলেনি। আদৌ বুঝতে পেরেছিল কিনা তা নিয়েই এখন সন্দেহ হয় চন্দনের।
বাবা
কী সুন্দর ঝুড়ি বানাতে পারত! এই নিয়ে খুব গর্ব ছিল চন্দনের। বাঁশের
চ্যাঙারি চিরে চিরে সরু করে নিত আগে। তারপর সেগুলোকে হাতের আঙুলের কায়দায়
ঝুড়ি বানিয়ে ফেলত। নানা ডিজাইন ফুটে উঠত ঝুড়ির গায়ে। কোঅপারটিভের সেলস
কাউন্টারের লোক এসে মাঝে মাঝে নিয়ে যেত। অনেকদিনই বাবা এসবের থেকে নিজেকে
সরিয়ে নিয়েছে। লোক এসে দিন কয়েক ফিরে গেছে। এখন আর কেউ আসে না। আসার
প্রশ্নও নেই। ক্রমশ নিজের একটা বৃত্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল বাবা।
মা
যেদিন মারা গেল, চন্দন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সমস্ত কাজ সারল। তার বাবা তখন
বারান্দার এক কোণে চুপ করে বসে সব দেখে যাচ্ছিল। কোনও ভাবান্তর নেই। চন্দন
একবার গিয়ে বলেছিল, বাবা, এবার মাকে নিয়ে যাচ্ছি। একবার আসবে না বাইরে?
বাবা
অনেকক্ষণ চুপ করে তাকিয়েছিল চন্দনের দিকে। যেন কী বলছে কিছুই বুঝতে
পারেনি। চন্দন আবার বলেছিল, মাকে নিয়ে শ্মশানে যাচ্ছি বাবা। একবার শেষ দেখা
দেখবে না?
মান্তুমাসি কাঁদতে কাঁদতে বলল, সাতাশ
বছরের সম্পর্ক জামাইবাবু! আমার দিদি চিরকালের জন্য চলে যাচ্ছে। একবার গিয়ে
দাঁড়ান দিদির মরদেহের কাছে।
একবার মান্তুমাসির দিকে,
একবার চন্দনের দিকে তাকিয়ে দেখেছিল বাবা। তারপর অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে
বসেছিল ঠায়, যেমন আগে ছিল। মান্তুমাসি বলেছিল, লোকটা এতটা পালটে গেল? নিজের
বউয়ের মরামুখটাও দেখল না?
বাবার দিকে নরম দৃষ্টিতে
তাকিয়ে চন্দনের মনে হল, একবার বাগানে নিয়ে গেলে কেমন হয় বাবাকে! সেই ভাবনাই
তাকে যেন ঠেলে তুলে দিল চেয়ার থেকে। বাবার হাত ধরে ধরে নিয়ে গেল বাড়ির
পেছনের একচিলতে বাগানে। বাবা ঝুঁকে পড়ে একটা গাঁদাফুলের গাছের পাশে বসে
পড়ল। বিড়বিড় করে কী সব বলে চলল, সেসব কথা চন্দনের কানে এসে পৌঁছয়নি। চন্দন
একটু বাদে বলল, ঘরে চলো বাবা। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এক পলক তার দিকে তাকিয়ে
রইল। তারপর মুখে ফুটে উঠল হাসি।
গাছটা কী কয় জানোস চান্দু? কয় যে ওর আইজ খুব আনন্দ। কুড়ি ধরছে কিনা!
কতদিন
পরে বাবার মুখে হাসি দেখল চন্দন। কতদিন পরে তাকে চান্দু বলে ডাকল আজ।
মায়ের মৃত্যুর ঠিক একবছর পরে বাবাকে সেই আগের মতো লাগছে। অনেকটা আগের মতো।
বাবার উজ্জ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে চন্দন তার হাত ধরল।
ওঠো বাবা, ঘরে চলো।
চন্দনের হাত ধরে ধীরে ধীরে ঘরের দিকে পা বাড়ায় বাবা। তার সারা গায়ে মৃদু চন্দনের গন্ধ।
চন্দনের গন্ধ এমন সৌরভ ছড়িয়ে গেলো যে অনেকদিন মনে থাকবে এ গল্প
উত্তরমুছুনভালোবাসা সোনালী।
মুছুনচন্দনের গন্ধ এমন সৌরভ ছড়িয়ে গেলো যে অনেকদিন মনে থাকবে এ গল্প
উত্তরমুছুনআপনার গল্পের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যই পাঠককে আকর্ষণ করে।ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনভালোবাসা নবনীতা
মুছুনকি বলি প্রতিবার অবাক হই বিষয়বস্তুর নির্বাচনে।অসাধারণ।
উত্তরমুছুনভালোবাসা সৌমী।
মুছুনসুবাসিত গল্প !
উত্তরমুছুনভালোবাসা এলা।
মুছুনচন্দন সুবাসিত গল্প! পড়লাম যুগান্তর দা।
উত্তরমুছুনমতামত পেয়ে ভালো লাগল উত্তম।
মুছুনভীষণ ভালো
উত্তরমুছুনভালোবাসা ব্রততী।
মুছুননিবিড় গল্প পড়লাম একটা।
উত্তরমুছুনভালোবাসা ইন্দ্রনীল।
মুছুনবরাবরের মত সুন্দর লেখা।
উত্তরমুছুনখুব সুন্দর গল্প
উত্তরমুছুনভীষণ ভালো লাগলো ۔۔শেষ টা দারুন۔۔
উত্তরমুছুন