চন্দ্রাণী বসু
গ্রন্থ সমালোচনা
❃❃❃❃❃❃❃
❃❃❃❃❃❃❃
কাব্যগ্রন্থ : নিঃসঙ্গ অন্তরীপ
লেখক : মৌসুমী রায়
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ : সংঘমিত্রা রায় মজুমদার
প্রকাশক : দ্য ক্যাফে টেবিল
মূল্য : ১০০ টাকা।
মৌসুমী
রায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'নিঃসঙ্গ অন্তরীপের' ভূমিকাতে কবি নিজেই লিখেছেন
কবিতা তাঁর কাছে 'খরগ্রীষ্মে শীতলপাটিতে বসে তালপাতার পাখায় সন্তাপ জুড়ানো'
- সমগ্র কাব্যগ্রন্থে সেই সন্তাপ জুড়িয়ে যাওয়ার আবেশ খুঁজে পাই। কবির কলমে
তিপান্নটি কবিতায় সমৃদ্ধ এই কাব্যগ্রন্থ। প্রথমে আসি গ্রন্থের প্রচ্ছদে,
যাকে আমরা গ্রন্থ নামক দেবগৃহের প্রবেশদ্বার মনে করি। সংঘমিত্রা রায়
মজুমদার তাঁর তুলিতে অসাধারণ একটি প্রচ্ছদ নির্মাণ করেছেন যা নিঃসঙ্গতার
প্রতীক হিসেবে ফুটে উঠেছে পাঠক মননে।
কবির প্রথম
কবিতা 'বিজয়া দশমী' এর প্রথম চারটি পংক্তি পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে নেবে
মুহূর্তেই - 'আমার বেহুলার প্রতিদিন বিসর্জন হয় / গাঙুরের জলে/ লখিন্দরের
মৃত বোঝা টেনেও / ক্লান্ত তাঁর মেলে না নিষ্কৃতি।' নারী জীবনের বিভিন্ন
মুহূর্ত কবির কলমে বিভিন্ন কবিতায় খুঁজে পাই পরবর্তীতেও। 'অপেক্ষা' কবিতায় -
' যমুনার তীরে রাই কিশোরী/ অনন্ত মাথুরে/ সীমাবদ্ধ জীবন/ অপেক্ষা অসীম
অথবা 'অনিকেত প্রেম' কবিতায় হাসিটুকু মেখে নিয়ে চোখের তারায়/ মেহগনি চুল
মেয়ে/ সানগ্লাসে ঢেকে নেয় ক্লান্তির কালো। 'অনুর্বর' কবিতাতেও কবি লিখেছেন -
ধুয়ে যায় পৃথিবীর গভীর প্রসব চিহ্ন। বড় দৃঢ় উচ্চারণ কবির কলমে।
এরপর
বিশ্লেষণে আসি কবির প্রেমিকা সত্ত্বার অনবদ্য প্রকাশ - হৃদয়ে রবি ঠাকুরের
বাস। তাঁকে 'চিরসখা' বলেই কবির প্রথম প্রেমের উদযাপন। কবির কাছে রবিঠাকুর
তাঁর 'হৃদয়েশ্বর'। কবির প্রেমিক কবির কলমে কখনো অঙ্গারভুক, কখনো মরিচীকা।
নিখোঁজ কবিতায় কবি খুঁজেছেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাসকে, আবার দোলাচল
কবিতায় কবি বলেছেন - ' তোমার ও চোখে সত্যের ভীষণ তেজ/ ঝলসে ওঠে, পুড়িয়ে দেয়
চোখ।' আবার বিপরীতে এও বলেছেন - ' তুমি না থাকলে গল্প বলাই মিছে'( কবিতা :
দোলাচল )
এই বৈপরীত্যই বৈচিত্র্য এনে দেয় পাঠক মননে।
শুধু নারীর যাপন বা প্রেম নয় - কবির কবিতায় কখনো এসেছে গভীর দর্শন, কখনো প্রতিবাদ, কখনো প্রকৃতির আবেদন।
'শেষ
পারানি' কবিতায় - 'সুখপাখি তুই অলখমায়াই থাক/ দুখের কড়িই এই পাড়ানির শেষ'
অথবা 'নীলকন্ঠ' কবিতায় স্বচ্ছতোয়া আত্মা / দেহের বন্ধনে মুক্ত হয় / উদগ্রীব
যাত্রা শুরু/ বিপ্রতীপ মহাপ্রস্থানে ... অভূতপূর্ব গভীর দর্শন।
সামাজিক
নানা ঘটনা কবির মনে বিবিধ সময়ে যে রেখাপাত করেছে, তাতে কবির কলমে এসেছে
ক্ষোভ, বিপ্লব। আঁধার মুখোশ, উদবাস্তু, জনমদুখিনীর বাড়ি, নেত্রবতী কবিতার
স্তবকে স্তবকে ফুটে উঠেছে সেই প্রতিবাদ।
প্রকৃতি
ছুঁয়ে আছে আগমনী, অভিযান, একটি নদীর জন্ম, ভোরাই প্রভৃতি কবিতার স্তবককে।
গ্রামের মেঠো ইঁদুর থেকে শহুরে কফিশপ প্রকৃতির এই বিস্তৃত বিস্তারে কবির
প্রকৃতির আলাপ।
একদম শেষে
আসি কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতায় - 'নিঃসঙ্গ অন্তরীপ' প্রেম, প্রকৃতি ও
নিঃসঙ্গতার এক অভূতপূর্ব মিশ্রণ চিত্র - এ যেন শব্দের ক্যানভাস। কবি
ভালোবাসার পাসওয়ার্ড খুঁজেছেন অন্য একটি কবিতায় আবার এই কবিতায় তা খুঁজে
পেয়েছেন - ' হৃদি অন্তরীপে/ হোগলার পাতা ছাওয়া ঘর/ নীড়ে ফেরা সাঁঝবাতি পথ/
স্নেহগন্ধী নরম আঁচল/ ভালোবাসার আশ্রয়/ নিঃসঙ্গ অন্তরীপে।
পাঠক মনন ছুঁয়ে যাওয়া কাব্যগ্রন্থ নিঃসন্দেহে মনের আশ্রয় হয়ে উঠবে এটুকু অনস্বীকার্য।
খুব সুন্দর রিভিউ। বইটি যত শীঘ্র সম্ভব পড়তে চাই।
উত্তরমুছুনসুন্দর পর্যালোচনা।হাতে নিয়ে পড়ে দেখবার আগ্রহ রইলো।
উত্তরমুছুনঅত্যন্ত সুন্দর মেদ বিহীন আলোচনা।খুব ভালো লাগলো।বইটি পড়ার অপেক্ষা।
উত্তরমুছুন