পল্লব গাঙ্গুলি


"অমেয়"
✵✵✵✵✵✵✵✵✵✵
সময়, কেমন তোমার অবয়ব? তোমার  কি শুরু আছে? শেষ? কোন এক মেধাবী বিজ্ঞানী নাকি ছুঁতে চেয়েছিলেন তোমায় বুদ্ধিতে জারিত করে! পেরেছেন ছুঁতে? তুমি কি স্পেসের সঙ্গে ঘর করো? নাকি সে তোমারই সহোদর?  এক নির্জন চরাচর  গড়েছে বুঝি তোমায়  যত্নের লালনে?
 
‌       এক ধূধূ প্রান্তর! অফুরান তার শূন্যতা! কতদূর পর্যন্ত দুদিকে, কেউ জানে না! শুধু দেখা যায় অার দেখা যায়! তারও পরে কিছুদূর! কিছুক্ষণও বলতে পারি। তারপর আর চোখ সয় না! মনেও পড়ে না। এক নিঃসীম অনন্ত বেলাভূমি! কোন প্রাগৈতিহাসিক কিনারা থেকে উঠে এসেছে যেন। তারও অাগে অনেক অাছে। অামি ধরতে পারি না। অামার বোধ ছুঁতে পারে না সেইসব! 

      কী আশ্চর্য, দ্যাখো! বোকার মত আমি দৃষ্টি মাপছি শূন্যতা দিয়ে। আর শূন্যতাকে সময় দিয়ে। এত বাস্তব বাস্তব করো কেন তোমরা? পরাভুবনের অলঙ্কার পরিয়ে দাও কেন এত? অবাস্তবকে এত ব্যঙ্গ কর কেন?  বাস্তব বুঝি শুধু  ধরা দেয় চোখে- নাকে- কানে, গণিতের হিসেবে?  

       আর তুমি? সময়কে ধরবে বুঝি?  তুমি স্বপ্ন দেখতে জান? দেখেছো কোনদিন শৈশবের বন্ধু উঠে এসেছে বড়বেলার ঘরবাড়িতে? মহাকাল পড়ে আছে এক অখণ্ড বহমানতায়। তার কোন খণ্ডসত্তা নেই!  একটা অলস দুপুর, চারশ বছরের কোন রাজত্ব, সাতশ বছরের সভ্যতা কোন দাড়ি কমা তৈরি করে না সেখানে! স্পেসকে এক গভীর আশ্লেষে জড়িয়ে সে নির্বিকার পড়ে থাকে! পড়েই থাকে। এমনভাবে ছুঁয়েছ কখনো?

    দেখেছ কখনো?  জিনস পরে দাঁড়িয়ে অাছে কোন হরপ্পা নারী! দেখেছো? এইমাত্র  মৃগয়া থেকে ফিরে  কোন রাজপুত্র অায়েশ করে চুমুক দিচ্ছেন কফির মগে? হারিয়ে ফেলেছ সময় কখনও এভাবে?  অস্ট্রিয়ার রক্তস্নাত যুদ্ধক্ষেত্রে  অকেজো কামানটার পিছনে তুমি! শেষ বিকেলে সূর্য ঢলে পড়ছে নির্বিকার! আর রবীন্দ্রনাথ আওড়াতে আওড়াতে তোমার জীবনের শেষ মুহূর্তে মনে পড়ে যাচ্ছে ড্যানিয়ুব তীরের বান্ধবীর কথা অার অপেক্ষমাণ মায়ের মুখ! হয়েছে এমনটা? সময় কখনও তোমায় নিঃসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে এমন দিগ্বিদিকশূন্য কোন স্বপ্নের দেশে?

      দালির ছবি দেখেছ?  দ্যাখো, সময় সেখানে কেমন গলে গলে পড়ে!  তার অাশ্রয় রিক্ত এক নিঃসীম রেখায়! সে রেখাওতো  এক মাত্রায় সহজ সরল চলে না! হয়তো তাই আশ্রয়ের  রিক্ততাও তাকে ধরে রাখতে পারে না। তার শিথিলতা গলে পড়ে।  ঝরে পড়ে। সে কারও হয় না শেষপর্যন্ত। না অতীতের, না বর্তমানের। সে গলে চলে; বয়ে চলে। নিরাকার! নিরবয়ব! নিরবচ্ছিন্নতো বটেই!  তার কোন প্রান্তই হয় না। অতীত, বর্তমান সে কারও সঙ্গেই ঘর করে না। ঐ সব অলঙ্কারকে ত্যাগ করে সে অাসলে বিবাগী  এক বাউণ্ডুলে!   প্রাগৈতিহাসিক ও তার পরিচয় নয়; কষ্টকল্পিত দূর ভবিষ্যতও নয় যে!

"আমরা যাইনি ম’রে আজো— তবু কেবলি ঘোড়া
আমরা যাইনি ম’রে আজো— তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়:
মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে,
প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন— এখনও ঘাসের লোভে চরে
পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর ’পরে।
আস্তাবলের ঘ্রাণ ভেসে আসে এক ভিড় রাত্রির হাওয়ায়;
বিষণ্ণ খড়ের শব্দ ঝ’রে পড়ে ইস্পাতের কলে;
চায়ের পেয়ালা কটা বেড়ালছানার মতে— ঘুমে—ঘেয়ো
কুকুরের অস্পষ্ট কবলে
হিম হ’য়ে ন'ড়ে গেল ও-পাশের পাইস্-রেস্তরাঁতে;
প্যারাফিন-লণ্ঠন নিভে গেল গোল আস্তাবলে
সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে;
এই সব ঘোড়াদের নিওলিথ-স্তব্ধতার জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে।"

   
        ঘাসের লোভ ফুরিয়ে যায় না। জীবনের তৃষ্ণা ফুরিয়ে যেতে নেই। মহীনের ঘোড়াগুলো তাই ঘাস খেয়েই চলেছে। সেই প্রস্তর যুগ থেকে। চলতেই থাকবে এমনটা? কতক্ষণ? 

    কতক্ষণ নয়। বলো, কতদূর? অাবার সময় মাপছ মুহূর্ত দিয়ে? বরং মাপ, শূন্যতা দিয়ে। দ্যাখো নি? জ্যোৎস্নার প্রান্তর কেমন উঠে এল স্বপ্নে স্বপ্নে! শুধু " 'দৃশ্যের জন্ম' কেন, সে-তো মুহূর্তকেও ধরবে বলে। তাই না?  এক নিঃসীম প্রান্তর জুড়ে অাদিঅন্তহীন বহমান সময়!

    ঘোড়াদের বয়স হিসেব করছ? বৃথা চেষ্টা করো না। বরং কান পাতি চলো। এক বিষণ্ণতার অাওয়াজে যেন। যন্ত্রের  নিষ্ঠুরতায়  অমোঘ সে নতুন সময়! খড়েরা সেখানে বিষণ্ণতায় ভিজে যায়। সময়? সে  কিন্ত নির্বিকার!  তরল। নিরবয়ব। তার প্রান্ত নেই।  সীমাও।  কোন যুগেই সে স্থির নেই।  শূন্যতার সঙ্গে তার সহবাস! তবুও সে কারও হয় না যে!

মন্তব্যসমূহ

  1. অদ্ভুত লেখা।প্রতিটি প্রশ্নের সামনে অজান্তেই নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিলাম।তবু ঘাসের লোভ ফুরিয়ে যায় না এটাই জীবন।দারুণ লেখা।

    উত্তরমুছুন
  2. আমোঘ,অনন্য ।
    বরাবরের মতো বিস্মিত এবং মুগ্ধ ।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ। খুব ভালো লাগল। অনিঃশেষ ভালোবাসা।

      মুছুন
  3. উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ দাদা। আপনি পড়লেন। ভালো লাগল।

      মুছুন
  4. সত্যিই অমেয়। একটি অসাধারণ পাঠ-অভিজ্ঞতা।

    উত্তরমুছুন
  5. সত্যকে সকলেরই জেনে রাখা দরকার
    কখনো সখনো প্রয়োজন হলে
    যাতে বলা যেতে পারে কদাচিৎ ❤

    উত্তরমুছুন
  6. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  7. একটি প্রশ্নের মনোলগ আর অন্তরীণ উত্তরপত্র

    উত্তরমুছুন
  8. উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ। ভালোবাসা জানবেন ভাই।

      মুছুন
    2. ধন্যবাদ। ভালোবাসা জানবেন ভ।।

      মুছুন
  9. অসামান্য। সময় ও শূন্যতার এই অমেয়,অজেয় চরিত্র‌ই হয়তো ঈশ্বর সৃষ্টির আরেক আঁতুরঘর। অর্ঘ্য

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ধন্যবাদ। তুমি পড়লে। ভালো লাগল। ভালোবাসা।

      মুছুন
    2. ধন্যবাদ। তুমি পড়লে। ভালো লাগল। ভালোবাসা।

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য