অভিষেক ঘোষ
একটা দাগ লেগে আছে
✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸✸
(১)
গত
কয়েকটা দিন ধরে একটু একটু করে সদানন্দবাবু প্রিয়জনেদের কাছে
অপ্রিয় হয়ে উঠেছেন । তিনি নিজেও কেমন নিরানন্দ আর খিটখিটে হয়ে
গিয়েছেন । নইলে যে মানুষটা অফিস থেকে ফিরেই টিভি দেখতে বসে
যান, সেই তিনিই কিনা গত কয়েকটা দিন ডিনারে বসার আগে পর্যন্ত,
সারাটা ক্ষণ ঘরের এক কোনে, অন্ধকারে চুপটি করে বসে থাকলেন ! এই
তো গতকাল ক্লাস নাইনে পড়া ছেলেটাকে কি বকাঝকাই না করলেন !
দোষের মধ্যে সে স্কুলের টিফিনে এক্সট্রা সস্ নিতে গিয়ে সাদা
জামাটায় একটু লাগিয়ে ফেলেছিল । বড়ো মেয়েটা কলেজে পড়ছে.. ভয়ংকর
আত্মসম্মান জ্ঞান ! গত পরশু সে কেবল একটিবার বাপ-কে দেখতে না
পেয়ে, অন্ধকার স্টাডি রুমে আলোটা জ্বেলেছিল । তারপর মেয়েটার
মুখের ওপর সশব্দে দরজাটা বন্ধ করে দেন তিনি । মেয়েটার দোষ নেই...
রাত সাড়ে নটার সময় কেউ ঘুটঘুটে অন্ধকারে একা বসে থাকবেই বা
কেন ! ছেলে-মেয়ের প্রিয় বাবা-কে সহসাই অচেনা বোধ হতে থাকে ।
মিথিলা তাঁর পঁচিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে মানুষটাকে কোনোদিন এত
অন্যমনষ্ক দেখেছেন বলে মনে করতে পারেন না । এই তো কাল সকালে
জামা ইন্ না করে আর চপ্পল পায়েই গাড়িতে উঠে পড়েছিলেন, অফিসে
যাবেন বলে । দেরি হয়ে যাবে বলে, তখন মিথিলা স্বামীকে কিছু বলেন
নি । কিন্তু রাতে বিছানায় শুয়ে, মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে
দিতে সতর্ক মিথিলা প্রশ্নটা করেই ফেললেন । কিন্তু, নাহ্ ফল ভালো
হল না । প্রথমে হাত-পা কাঁপতে লাগলো, তারপর ছুটে বাথরুমে ঢুকে
গেলেন । আধঘন্টা পড়ে গম্ভীর মুখ আর লাল চোখ নিয়ে বেরিয়ে এসে
মাথা অব্দি চাদরটা টেনে শুয়ে পড়লেন । তারপর থেকে বাড়ির সবাই ভয়
পেয়ে গেছে, কিন্তু কিছুতেই সমস্যার নাগাল পাচ্ছে না ।
(২)
পুলিশ
এসেছিল, সদানন্দ বাবুকে প্রধান সাক্ষী হিসেবে নিয়ে গিয়েছে ।
জানা গিয়েছে... গত সাতাশ তারিখ রাতে বাড়ি ফেরার সময় একটা বছর
কুড়ির ছেলে দৌড়তে দৌড়তে তাঁর গাড়ির সামনে এসে পড়ে । ঠিক সময়ে
ব্রেক না কষলে ছেলেটা চাপা পড়তো । সদানন্দ বাবু দ্রুত দরজা
খুলে নামেন । ছেলেটা তার রক্তাক্ত দুটো হাতে সদানন্দ বাবুর
প্রিয় ডীপ ব্লু রঙের শার্ট-টার আস্তিন চেপে ধরেছিল, তারপর শুধু
বলেছিল, "বাঁচান.. বাঁচান আমায় !" আরো কিছু বলতে চেয়েছিল
বোধহয়... তার আগেই জনা চারেক গুন্ডা চেহারার লোক এসে তাকে টেনে
হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে দিল । সদানন্দ বাবুর গাড়ির সামনের উজ্জ্বল
আলোয় ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিল ওরা । তারপর তাঁর চোখের ওপর
পড়েছিল টর্চের একটা জোরালো আলো । একটা গলা শাসানির ভঙ্গিতে
বলেছিল, "বলছি, মাম্পি তো এই রাস্তা দিয়েই ফেরে তাই না ?
সাবধান, পুলিশকে জানালে কিন্তু বিপদ হয়ে যাবে ।" তারপর সেই
রক্তাক্ত দেহটাকে তারা ঘষটাতে ঘষটাতে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে
গিয়েছিল ।
(৩)
বাড়ির
লোক এইটুকুই জেনেছিল । জানতে পারে নি, সেদিন বাড়ি ফিরে সাবান
জল দিয়ে অনেক ঘষেও শার্টের ওই দাগটা নির্বিরোধী সদানন্দ বাবু
কিছুতেই তুলতে পারেন নি । শুধু সেই জন্যই অপরাধীরা ধরা পড়লো ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন