মেঘনা চট্টোপাধ্যায়


ঢিল
✴✴✴✴✴
ভেড়ারা ঘাস খাচ্ছিলো।
খাচ্ছিলো না গিলছিলো?
কার্ণিশে এক চিল ছিলো,
চিলের ঠোঁটে ঢিল ছিলো।


ভেড়া হলেও জন্তুগুলোর
বাঁচার বড় সাধ ছিলো।
অগত্যা সব নামিয়ে মাথা,
খাওয়ারই ভান করছিল।  



পোষ্য
✴✴✴✴✴
কুকুর পোষার আগে জাতিধর্ম  চিনে নিতে হয়।
নীল রক্ত, লাল জিভ, চোখের সবুজরঙা তারা।
কুকুর পোষার আগে বকলেস মেপে নিতে হয়
থাবার ব্যাসার্ধ আর নখের তীক্ষ্ণতা 
প্রভুভক্ত কখন যে প্রভুভক্ষ হয়ে যায়
জ্যোতিষীও ভেবে দিশেহারা।


আখরী
✴✴✴✴✴
মিছিলের শেষ লোক আমি।
শিঙে ফুঁকে জয়গান গাই।
ডালে ডালে পতাকা লাগাই।
নিজেরই ভাঙা দাঁতে বিক্ষত জিভ
চেটে নেয় ফুটিফাটা ঠোঁট।
কন্ঠার নীচে দুটো দাগ পাশাপাশি,
বিষ তুলে নিয়ে গেছে সাপ নিজে এসে।
মিছিলের শেষে তাই পতাকার গুচ্ছ বুকে বেঁধে
মৃত মানুষের মতো অন্ধকার মেখে ভেসে চলি।



শ্যামা মা
✴✴✴✴✴
শ্যামন্তিকার দুই বিনুনী
আসলে একটা ঋজু প্রতিবাদ।
শ্যামন্তিকার কালো ফ্রেমে
সুদূরের অভিসারী লেন্স।
কালো মেয়ে হাজার বছর ধরে
টিউশনি করে ফেরে এর ওর পাড়ায়।
আইবুড়ো ধিঙ্গি তবু 

চাকরীর আপিসে গিয়ে নাম লেখালো না।
কাঁদেও না, হাসেওনা, প্রেমট্রেম কিছুই করেনা।
লিপস্টিক, কাজল, কিম্বা মাথাজোড়া দশ আনা ছ আনা, 

কিছুতেই রুচি নেই,
এত দম্ভ কীসের কে জানে!
ভাঙা চিলেকোঠা ঘরে
নোনা ধরা দেওয়ালের গায়ে
সুভাষ , গ্যে ভারা আর ববডিলানের ছবি
পাশাপাশি সেঁটে ,
চুপ করে চেয়ে থাকে
স্মিত বিশ্বাসে।


কলের গান
✴✴✴✴✴
হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা ওগো
আর বাঁশি বাজায়ো না
আমরা অকূলে যাবোনা আর।
গেরস্তের খুদকুঁড়ো খুটে
টিঁকে যাবো আরো কিছুকাল।
বরং তোমার মাইক কেড়ে নিয়ে
দুইহাতে জুঁইমালা বেঁধে
শরীর হাতড়ে দেখে নেবো
সূক্ষ্ণ কাপড় আছে কিনা
মিথ্যে মাখানো দুটো ঠোঁটে
চুমু খেয়ে বলে উঠবো,
“সন্ধ্যে হল, বাপী বাড়ি যা তো।”

         
আবর্ত
✴✴✴✴✴
রত্নাকর ভেবেছিল একদিন 

চুরিফুরি, খুনটুন, মিথ্যে কথা ছেড়ে,
রামায়ণে মন দেবে খুব।
ভোট এলো,যাত্রার সিজন ফিরে এল।
রত্নাকর ডাক পেলো ফের; 

অভিনয়, ছলনা ও রাহাজানি দিয়ে 
দশরথ গালিচা বোনালো।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য