ঋজুরেখ চক্রবর্তী



রোমন্থন
❁❁❁❁❁ ইতস্তত বৃষ্টি হয়ে চললে সারাদিন, মাঝেমাঝে মনে হয় হারানো স্মৃতির সঙ্গে দুদণ্ড কথা হোক কর্মহীন অবসরে, হারানো উপহারগুলির সঙ্গে সহসা চকিত উদাসীনতায় কখনও কখনও দেখা হয়ে যাক তাদের করকমলের রূপধরা অনুষঙ্গে, হারানো মিথ্যেগুলি ফিরে আসুক সত্যি হয়ে পুনরায়।

তুমি জান, এইসব জাদু-বাস্তবতা আসলে অতীব আধুনিক উপন্যাসের কৃৎকৌশল ছাড়া কিছু নয়। কাব্যে তাদের প্রতিদিনকার সংসার কালক্রমে সাংসারিক নিয়মেই তেল-মশলা-আনাজের গন্ধে গন্ধে অভ্যস্ত হতে ঘতে অবশেষে ম্লান হয়ে গিয়েছে রূপকথার সবটুকু ঐশ্বর্য হারিয়ে। সারারাত চাঁদের নিহিত হিমে নিষিক্ত হতে হতে শরীরে যে তীব্র শীত নিয়ে ভোরবেলা তোমার হাতের ওপর তার সম্পূর্ণ যৌবন সমর্পণ করে নেতিয়ে পড়ত কমনীয় লাল চেরি, তাকে ভোগ করে প্রেমিকের অহং জাগত না তোমার, বরং এক ভূতে-পাওয়া আতঙ্কের মতো তুমি বুঝে নিতে অভিধানে আবিষ্কার কথাটার যে মানেই দেওয়া থাকুক না কেন, আর কাগজে-কলমে যত মহনীয়ই মনে হোক না কেন তাকে, তোমার যাবতীয় সর্বনাশ অপেক্ষা করে আছে তোমার সাফল্যেরই নিশ্চুপ অনুসারী হবে বলে, তোমার অভিরুচি দিয়ে তুমি শুধু নির্ধারণ করতে পার তুমি তাকে কতটুকু স্বীকৃতি দেবে কি দেবে না।

শেষরাতে বৃষ্টি থেমে গেলে মাঠভাঙা জ্যোৎস্নায় সেই তুমিই কিন্তু আবার খ্যাপার পরশপাথর খোঁজার মতো খুঁজে বেড়াবে তোমার ফেলে রেখে যাওয়া একলা গোলপোস্টটিকে, যার থেকে দশ কিংবা বিশ কিংবা পঁচিশ গজ দূরে বাঁ পায়ের সামনে বল পড়লেই তোমার মনে হত আজ রাতে মৃগয়া হবে আদিগন্ত অপাপবিদ্ধ বনবীথির ওপারে।

তুমি কখন সবচেয়ে বেশি একা, স্মৃতিরা তা ঠিক জানতে পেরে যায়।

মন্তব্যসমূহ

  1. কফিনের শেষ পেরেকের মতোই এ গদ্যের শেষ লাইন। যুথবদ্ধ অথচ কী দারুণভাবে একা!

    উত্তরমুছুন
  2. এক অপার জাদু বাস্তবতা। হিম রুপকথা, খ্যাপার পরশপাথর, প্রেমিকের রক্তিম চেরিস্বাদ, একলা গোলপোস্ট প্রতিটি চিত্রকল্প জাত চিনিয়ে দেয় কবির।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য