মধুমিতা রায় চৌধুরী মিত্র
লকডাউনের_আলাপ_বিলাপ
❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄❄
বিকেল বেলায় গা-ধুয়ে, বাসন্তীদি, রোজকার মতন পানের ডিবে আর ফোন নিয়ে বসলো।
রিং হচ্ছে----------
অনেকক্ষন বাজার পর----------
-----------হ্যালো! হ্যালো! হ্যালো! কে''রা ??
------------হ্যালা….কে'লা গদার মা!! তা কি ঘুমাস'স্য নাকি'গা!!!
--------------কে'রা-???? অ'….. বাসুনতি!!!
--------না'রে ,,এই অসময় ঘুমাবো কে'ন! তা কেমনে আসিস সব! আর কি খপর তোদের'লা?? ফুন টুন তো কৈরতে পার'স!!!
--------চইলি যাস'সে লা! জিগাইতে'সিলাম.. কাজ কইরতে যাস'স্য না'কি???
--------না'লো! কে'জাবে?? কেন কি হইলো??
--------না না…. এক্কে'রে জা'ও'নি।
--------জা'মু কি কইরা!!! কি এক জ্ব'র বার হুই'সে জে!!
--------হ্যা'লা…. আ'রের, ওই'ডারে কারোও'না বলে! এই এক'খান পোকা বইলতি পারো, সো'টো'সো'টো পোকা!! তবে কেউ দ্যা'কতি পাবা না।
-------অ'!!!...তাই ব'ল!!
-------হেইডারে
বোই'লবার জ'ন্যি তোমার লম্বর লাগাইলাল। বাড়ির থ্যেইকা কিন্তু বাই'রিও নি।
আইমরাও বা'রোই না আর। কাইল মিনতি, লতারা আআইসিল। বইলা গেসে। ইউনিয়ন জ'বে
বলবা, তবে জাবা। বুইজ'লে!!!!
--------তা'ইলে ত'র অই বউদিদিমণি'র কি দশা হবে 'লা???
--------হে'হে এই'ডা ঠিক কইস। অ'ই… ফেলাট বাড়ির মুকুজ্যি বউ'টার ত!!!
আরে জ'কন কা'জ কৈরতে জাইতাম!! দ্যাকতাম!! সেই এ.সি'র মইধ্যে বইসা, কানে ফোন গুইজ্যা কি হাইসি ...কি হাইসি!!!!
অ'মন.. ফুইলটুসীর মইতন স্যেহারা, এই কা'জ কৈরতে কৈরতে না'জানি কে'মন হই'সে!!!
----------আ'র বৈলতে!!!…. এবার রাইক'লা। দিদি-নম্বর-ওয়ান দেখুম।
---------আ'আই'সা টিক আই'সে রাইকা দিলুম। আ'মুও একটু শান্তি'দের বাড়ি জা'ই! গিয়া বইলা আইসি।
মাঝ
বয়েসী বাসন্তী সকাল থেকে বিকাল মোট আট বাড়িতে ঠিকা কাজ করে। সবই তার বাড়ির
কাছেই। ওদের কাছেই কিছু নতুন বিল্ডিং কমপ্লেক্স হয়েছে। ওরা সব ওই খানেই
যায়। কাজ করে, গল্প করে, কোনো বাঁধা বাড়িতে খেয়ে ঘুমিয়ে বিকেলে সব বাড়ি
ফেরে। ওদের আবার একটা ইউনিয়ন মানে ক্লাব মানে সংগঠন ও আছে। সেখানেই সবাই
ঠিক করে এই করোনার বাজারে মাইনে পুরো নেবে কিন্তু লকডাউনে কাজে যাবে না। আর
কোনো বাড়ি থেকে কাজে না রাখলে বা পুরো মাইনে না দিলে পাড়ার ছেলেদেরকে ডেকে
পাঠাবে।
বাসন্তী ফোন রেখে পান নিয়ে আবার বসলো।
এবার
তার নিজের ফোনটাই বেজে উঠলো এক বাজখাই গান বাজিয়ে। সাথে সাথে সেও কট করে
কাটলো। পান সাজার সময় আজকাল কেউ ডাকাডাকি করলে বিরক্ত হয়।
ফোন আবার বাজলো, সে আবার কাটলো।
এই করে তিন তিন বার কাটার পর ফোন তুললো বিরক্ত হয়ে-------------
-------------হ্যালা! কে'গা! (খুব চিৎকার করে)
------------হ্যালো! বাসন্তীদি!.... কেমন আছো বলো আগে।
--------হ্যালা! হ্যালা! কে'ডা?
---------আমি মুখার্জি বাড়ি থেকে বলছি। ভুলে গেলে নাকি??
-------অঃ!
মুকুজ্যি বৌদি! হ্যা!!!হ্যা!!! আজ সুয্যি কোন দিকি উঠশি গো। সি'নুম না
ক্যান! বলি তুমি এতো মিঠা কইরা কতা কইতে পারো জাইনতুম না???
তা আসি, আসি! কোনোরকমে বাইচ্যা আসি'গো।
---------বলছিলাম
কি তুমি এবার থেকে ভোর ভোর এসে কাজ করে দেবে? এই ধরো সকাল ৫.৩০টার মধ্যে
কাজ করে বেরিয়ে যাবে!! তুমি তো কাছেই থাকো, আর আমাদের বিল্ডিঙে কোনো বাইরের
লোকদের ঢুকতে দিচ্ছে না, তাই তুমি যদি ভোরে এসে কাজ করে দিয়ে যাও তাহলে
কেউ জানতেই পারবে না। আর এখন এতো সকালে কেউ ঘুম থেকেই ওঠে না।
তুমি একটু করে দাওনা'গো।
আমি এই মাস থেকে তোমার মাইনে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে দেব।
করবে তো???
-------- শুইনা রাইখো বৌদিমনি, আইমরাও মানুষ।। ওই'সব টেকার নোভ দ্যাখাইও না!
না হয় একটু গরিব আসি!!
--------আঃ হাঃ, টাকার কথা নয় গো, তুমি একটু ভোর ভোর করে দিলেই হবে।
---------আঃসাঃ বৌদিমনি, কেমনে জে'নো অবাইক হইসি।
তুমি ক্যামনে জা'নি, পাইল্টে গেইলে। আগে' ত, মাইসের ১০ তাইরিখের আইগা মাইনাই পাইতামনা।
আই'জ বলো বেশি টাকা দিবা।
কি সব বৈলতিসো গা।
---------আরে না, গো, আধ ঘণ্টা'র মধ্যে কাজ করে বাড়ি চলে যেও।
----------আ'সাঃ, আইধ, ঘইন্টায়ে, তোমার ওই কড়াই'ডারে মাইজতে পাইরুম!!!
আআর!!!
জেমনটা তুমি আইগা বৈলতে ট্যবিলের নিঃসটা ভাইলো কইরা জারু ডাও, আআর
এক্কেবাইরে খাইটের তইলায়ে শুইয়া পইড়া পোসা মাইরো , তায়েরপর ওই সাবানের
সেরদ্য কইরো না, বাসনগুলানরে পাইসবার কৈড়রা রোগড়াইয়া রোগড়াইয়া মাই'জা
দাও,.....বৈলিকি সওব অই আইধ ঘইন্টায়ে হইবো'তো??
--------- আচ্ছা শোনো শোনো তুমি রাগ করো না। আর এত কিছু করতেও হবে না। শুধু আধ ঘন্টার মধ্যে যা পারো করে দিয়ে যাও।
----------
না'গো বৌদিমনি! আমাদের পেরানটাও না তোমাদের পেরানের মইতন, অনেক দাম আআসে।
তাই আমরাও হক্কলে!!হক্কলে!! মেইলা ঠিক কৈরসি কেউ কা'জে জাম না।
রাইখলাম!!!!
আর পাচুরে পাইঠাদিমক্ষণ। এ'মাইসের টেকাটা দিয়া দিওনে।
---------যাঃ! কেটে দিলো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন