হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

 


সকালনামায় মেঘলা অংশটুকু 


এক 


ভালো করে দ্যাখো, ঘরটায় একটাও জানলা নেই।  দরজাও নেই মনে হয়, তাহলে তো আলো জ্বলতো। একজন কেউ সাতসকালে বেরিয়ে গেছে, বারান্দায় পায়ের ছাপ। সে এ ঘরের কেউ নয়। তবুও আলো জ্বালতে আগুন তো লাগে। আগুনের শেষ সেই কোন ভোরে। তাছাড়া হাতের তালু তো সেই কোন কাল থেকে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখছে। এমন মেঘলা ক্যানভাসে যে রঙই চাপাও খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসবে।  


দুই  


এই যে হোটেলের কম আলোয় ভাঙা গ্লাস থেকে জল খাচ্ছো ----- এটা আসলে পথ হারিয়ে হঠাৎ করে সন্ধ্যেরাতে কোনো গুহায় ঢুকে পড়া। কেউ তোমায় দ্যাখেনি কিন্তু তবুও তুমি গুহার গভীরে ঢুকে যাচ্ছো। আজন্ম পাহাড় দ্যাখোনি। নদীর জলজ সংলাপে কোনোকালেই অভ্যস্ত নও। এমন একটি শরীর ভাঙা গ্লাসে জল খেয়ে গুহার ভেতর হাঁটছে তো হাঁটছেই। মাটির হাত ছাড়া গুহার অন্যমুখে কোনো আলো নেই।  


তিন 


প্ল্যাটফর্মের চেয়ারে তুমি বই নিয়ে বসে আছো। এটা একটা আলো। তুমি বই চিনলে না, বইয়ের মানুষ চিনলে না, স্টেশনের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। ঝড় এলে তোমার সামনে বইয়ের কোনো আড়াল নেই, হাত বাড়ালেও কোনো সিঁড়ি নেই। স্টেশনের রঙ দেখেও পথ চিনতে পারবে না। এমন আবহাওয়ায় খুব দ্রুত পা চালালে ঝড়ের পাড়া হয়তো পার হয়ে যেতো পারো কিন্তু কোনো মোড় থেকেই মাটির রাস্তা খুঁজে পাবে না।  


চার 


শুধু আজ নয়, কয়েকশো বছর ধরে দেখছি তোমার কথার মধ্যে একটা মেঘ আছে। যদিও মেঘলা হয় এই পর্যন্ত, বৃষ্টি হতে আমি দেখিনি কখনও। অথচ ভূগোলে পাতার পর পাতা এই বৃষ্টি নিয়ে বাক্যের শেষ নেই। কিন্তু এই বৃষ্টি কোথায় হয়, কখন হয় আমি জানি না। অনাবৃষ্টিতে কখনও দেখিনি জলজ পাতা। অথচ প্রতি বছর সিলেবাসে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। 


পাঁচ  


দাঁত আছে, চুল আছে। বয়সটাও এখনও গোড়া থেকে খুব একটা বেশি ওপরে ওঠেনি। কিন্তু তাতে কি উঠোনে জল দাঁড়াবে না ভেবেছো? নাকি পথে নেমে একটানে হেঁটে গেলেই লাল ফিতে এসে গা ছুঁয়ে দেবে? কোনোটাই কিছু নয়। উঠোনে জল দাঁড়াবেই, পায়ে পায়ে সেই জল শুধু ঘর বারান্দা নয়, সারা পাড়ার দুয়ার ভিজিয়ে দেবে। তবুও গুহার ভেতর, পোড়োবাড়ির কোনো কোণে কিছুক্ষণের জন্যে হলেও লুকিয়ে থাকাে। যদিও বাইরে অনেকেই তোমার অপেক্ষায়।

 



মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো লাগল -সমিত মণ্ডল

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো দাদা । অসাধারণ অসাধারণ সব আবিষ্কার

    উত্তরমুছুন
  3. কবিতায় যাদু ঢুকে পড়ছে।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন
  4. ভালো লাগল লেখাগুলি হরিৎদা।

    উত্তরমুছুন
  5. এই কবিতায় হরিৎ মায়াকলমের যাদুস্পর্শ মেলে।

    উত্তরমুছুন
  6. উঠোনে জল দাঁড়াবেই...অসাধারণ।

    উত্তরমুছুন
  7. জীবনচর্যার টুকরো গাথামালা ক্রমেই কবিতার দিকে।যায়, কবিতা অনন্তের দিকেই তো যায়---

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. শমিত মণ্ডল
      জীবনচর্যার টুকরো গাথামালা ক্রমেই কবিতার দিকে যায়।আর কবিতা তো অনন্তের দিকেই যায়।
      (আগের লেখার অস্পষ্টতার জন্য আবার লিখলাম)।

      মুছুন
  8. দুর্দান্ত সব লেখা । মন ভরে গেল দাদা !!

    উত্তরমুছুন
  9. আপনার কবিতায় এক মিস্টিক চেতনা, লেখা পড়তে পড়তে সেই রহস্যময় জীবন দুঃখ মনকে স্পর্শ করলো । খুব ভালো লাগল।
    পৃথা চট্টোপাধ্যায়

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য