রিমলী বিশ্বাস



 বর্ষামঙ্গল


কিছু জলজ উদ্ভিদ সম্বল করে বেরিয়ে পড়েছিলাম সবুজের কাছাকাছি পৌঁছোব বলে। ভরা বর্ষার আকাশ খুব কিছু ভরসা দেয়নি। বরং সম্ভাব্য বিদ্যুৎ সাবধান করেছিল কালো মেঘের ভয় দেখিয়ে। তবুও এগিয়ে গেছি। ওই যেদিন থেকে জেনেছি সবুজ ছুঁলেই কৈশোরে ফেরা যায়, আমার একবগগা মন সমানে বলে গেছে, যেতেই হবে, যতই কাদায় পা ডুবে যাক, বিপজ্জনক ভাবে ভিজে স্পষ্ট হয়ে উঠুক শরীরের ভাঁজ, ওড়না-আঁচল জড়িয়ে হলেও আজই যেতে হবে।  


সেইমতো বর্ষার পাটক্ষেতে নেমে গেছি, নাল ফুল তুলেছি শ্যাওলা জমা দিঘি থেকে, নিঃশ্বাসে সোঁদামাটির ঘ্রাণ ভরে নিয়ে বুকের ভেতরে কলস রেখেছি। এরপর যখন সবুজের কাছাকাছি গেছি, দেখি শরীর থেকে খসে পড়েছে সদ্য ওঠা তিল! আমি চিক্কণ চিবুক পেতে মুখ তুলে তাকিয়েছি একটা চুমুর প্রত্যাশায়। এই বর্ষাও ফিরে গেলে আর যদি সুযোগ না হয়! 


আমার সমস্ত বৃষ্টি ফোঁটার একটাই উপাখ্যান...প্রেম। আমি আমরণ ভালোবাসা লিখে যাব ধূসর মেঘের কালিতে। উসকোখুসকো নয়, বেশ পরিপাটি একটা প্রেম শ্রাবণের জলে ধুয়ে মুছে যত্ন করে তুলে রেখে দেব কুলুঙ্গিতে। তাতে আপতচালের গন্ধ লেগে থাকবে। ভাত ফুটলে উথলে উঠবে যৌবন, কৈশোর পেরিয়ে। কৃষ্ণচূড়ার কথা ভাবতে গিয়ে অবধারিত ভাবে তারই অনুষঙ্গে মনে পড়ে যাবে রাধাচূড়াকে। গন্ধরাজ ফুলের কথা ভাবতে গিয়ে এসে পড়বে শ্বেত-কাঞ্চন। বেলফুলের কথায় তার অনাবিল হাসি মনে পড়ে যাবে আর মেঘের রঙে তার উদাস দু'চোখ! 


আমি মনের গতিপ্রকৃতি বদলাতে এক কাপ দার্জিলিং চা নিয়ে বসবো। চুমুকে ঠোঁট ভিজে এলে প্রথম চুমু সাঁতরে উঠে আসবে চায়ের কাপ থেকে! তিরতিরে সুখে আচ্ছন্ন হতে হতে ভিজে যাব আদিম ব্যথায়! কোথায়, কে কবে লিখেছিল 'মেঘদূত', কে-ই বা 'রাধা-বিরহ'...মনে পড়তে পড়তে ভুলে যাব, ভুলে যেতে যেতে মনে পড়ে যাবে 'প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে, প্রতি অঙ্গ মোর'! আশ্চর্য নয়!  


হ্যাঁ, বর্ষা এমনই! ম্যাজিক্যাল! ফোঁটায় ফোঁটায় নেমে এসে কেবল মাটিকে ভেজায় না, মনের গহীন অরণ্যে জলসিঞ্চন করে! সেখানে কত যে রহস্য! এত এত নাম! এত এত নামে এতরকম আবেগ! উঁহু, বহুগামিতা নয়, এক একটা গমনের লক্ষ্য এক একরকম! আবেগে উদ্দেশ্যে প্রভূত প্রভেদ! 


ফিরে আসি সবুজের খোঁজ প্রসঙ্গে। আসলে কৈশোরেই প্রথম প্রেম এসে ছুঁয়েছিল...নিঃশব্দ চরণে। থৈ থৈ বর্ষায় ডুবে গিয়েছিল দু'টি বিস্ময়াভিভূত প্রাণ! জেনেছিল কাকে বলে অভিসার! দিনটা ছিল বাইশে শ্রাবণ। জীবনের গল্পেই কত যে রূপকথা থাকে! সেদিন থেকে বাইশ মানে শুধুই বিদায়ের করুন রস নয়, আমি বাইশের বৃষ্টিতে দেবদারু আগুন পোহাই।




মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য