পিয়াংকী



 বর্ষাতি এবং এক হাজার লুৎফুন্নিসা 


মহামতি, 


আপনি জানেন যে এতকালের উপাসনা ভঙ্গ করব এমন উত্তাপ সঞ্চয় করা হয়ে ওঠেনি এখনো। আমার ভিতর এই যে  নীলনীল ফিকে অন্ধকার, বিলুপ্ত কৃষ্ণদ্বাদশী অথবা টিমটিমে লম্ফ ... নিস্তব্ধতা হ্রাস হয়ে এলে এই যাবতীয়ই তো এক নিমেষে পাপ অপরাধ। আপনাকে মহামতি সম্বোধন করার আগে আমার নিরলস ধ্যান,তা কি আপনি দেখেননি ? মেঘ-মাস  এক আশ্চর্য মায়া, জলের ওপর শালুকের বৈভব, নীচে নুড়িপাথরের সাম্রাজ্য, বায়ুভাসা জোনাকিপোকা  অথচ ভেতরে কেমন কেমন  আলেয়া-বিলাস। 


আমি বরাবরই চৌকির নড়বড়ে পায়ার মতো,ভঙ্গুর জাতীয় প্রাণী। নিরন্তর বয়ে চলি এই মর্মে যে একদিন ঐ ব-দ্বীপ আপন হবে। ঘোর এবং  ঘুম থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসবে বনটিয়া। যৌবতী-স্নান সম্পন্ন হলে মেয়েমানুষ-গন্ধে  উথলে উঠবে স্নানঘরের দেয়াল, ঝিলের বক আর অতি অবশ্যই আপনার অন্দরের শ্রাবণঋতু। জানি,এ সবই কান্নার আদিমতম রূপ এ সবই টলটলে স্বপ্ন তবু সিংহদরজা দিয়ে যখন আপনি উন্মুক্ত হয়ে ওঠেন এক দূর্গাসকালের ঘন রোদে,যখন আপনার কণ্ঠের দরবারী কানাড়ায় বৃষ্টি আসে ঝমঝম  যখন দশ আঙুলে সংরক্ষণ করেন আমার মুরারীপুজোর উপাচার আর অন্নভোগ, নিমেষেই এই বিশৃঙ্খল বৃশ্চিক রাশির কন্যা ঐ দীর্ঘ দেহের কোণে ঘুপচিতে আড়াল খোঁজে। মাথায় ফেলে নেয় লজ্জাবস্ত্র  


কতকাল হল, আর ওড়াই না পায়রা। জলের দাগ ঘষে তুলি না। লাউমাচায় ফুল এলে নিমন্ত্রণ করে আসি না পাখপাখালিদের। মুছে যাচ্ছে সব, মহামতি। ঝাপসা হয়ে আসছে আপনার ডান কপালের জরুল, আমার মধ্যযামের আলো।


ঘটমান বর্তমানের হিসেবনিকেশ আপনাকে জানাতে ইচ্ছে করেছে বহুবার। পিছিয়ে এসেছি।  সর্বনাশী ঐ বাঁশির ভেতর লেপ্টে থাকা জলদাগ লিখিয়ে নিয়েছে নক্ষত্রকথা। নিজেকেই অতিক্রম করার কৌশল শিখতে গিয়ে আরও ধনাত্মক হয়েছি প্রতিমুহূর্তে । যিনি  এ পথে আমার হাতদুটো ধরেছেন, পরম সোহাগে লেপে দিয়েছেন কলাপাতার মসৃণতা, তাঁর জন্য সামান্য নিবেদনেই আমি খুশি থেকেছি। তবে আজ এ প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন দীর্ঘকাল রাখিনি যোগাযোগ? কেন আজকের এই 'ধন্যবাদ' জানাইনি আগে?


উত্তর নেই মহামতি। কোনো উত্তর নেই আজ আর। শুধু জেনে রাখুন  এই সামগ্রিক আয়োজন আমাকে আপনার প্রাচীন বর্ষাতির মতো  বিন্নি ধানের খইয়ের মতো , শিয়রে ঘুমের মতো লুৎফুন্নিসা করে রাখবে আজনম... 


                                                                                                               ইতি


                                     একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল 




মন্তব্যসমূহ

  1. গদ্য ও কাব্য হাত ধরেছে পরস্পরের। খুব ভালো।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন
  2. সুন্দর
    -পৃথা চট্টোপাধ্যায়

    উত্তরমুছুন
  3. অনেক অনেক ভালবাসা নিও দিদি

    উত্তরমুছুন
  4. পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক এক নারী চরিত্রের প্রণয়সিক্ত শ্রাবণের ভরন্ত মন মেলে ধরেছ চিঠিতে…অনবদ্য লেখা।

    উত্তরমুছুন
  5. বেশ ভালো লাগলো। দু রকম অনুভূতি পাশাপাশি হল। গদ্য ও পদ্যের। জয়দীপ বাবু যথাযথ বলেছেন।

    - সুবিৎ

    উত্তরমুছুন
  6. খুব সুন্দর। কাব্যিক অনুভব। গদ্য অথচ ঠিক গদ্য নয় আবার কবিতাও নয়। কবিতার উপাদান ঝিলিক দিচ্ছে। ভালো লাগল। (দেবাশিস ঘোষ)

    উত্তরমুছুন
  7. অসামান্য লেখা। গদ্যে একটি ক্ল্যাসিক পত্র কাব্য মনে রয়ে গেল।
    মধুপর্ণা বসু

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য