সোমা কুশারী



 বায়সজন্ম


-বেশ করব ছাদে বাসন মাজব! ছাদ কী  তোদের কেনা?

-এটা ফ্লাট বাড়ি, বস্তি নয়, বুঝলে! 

-কী আমরা বস্তির লোক? মেরে মুখ ভেঙে দেবো!

-এ্যাই এ্যাই! একদম বাজে কথা বলবে না! সারা ছাদে মাছের আঁশ এঁটোকাটা ছড়িয়ে রাখো নোংরা ইতর কোথাকার!

-ইঃ! কত পরিস্কারী সব! আমার ভায়ের ফ্লাট! মাগনা থাকি না বুঝলি! ।হারামজাদি মাগির দল!

-এই! এই! অন্তরা চলে এসো! দেবৌদি নীচে চলুন! এ একেবারে জঘন্য মহিলা একে বলে টলে কিচ্ছু হবে না!

-হ্যা! হ্যা! পালা পালা সব! যত্তসব! বেশ করব ছাদে বাসন ধোবো মাছ ধোবো! 


তরতরিয়ে এক পাঁজা বাসন নিয়ে  ছ 'তলা থেকে নেমে আসে বীনা, পাঁচতলায় লিফটের দরজাটা হড়াস করে খুলে ভেজা হাতে তিন নম্বর বাটনটা ছুঁয়েই মনে মনে হিসেব করে নেয় এবার এসে মাছকটা ধুয়ে ফেলবে, নিজেদের ফ্লাটে ঢোকার আগে শতচ্ছিন্ন আধখাওয়া হাওয়াই চপ্পল জোড়া দরজার গোড়ায় খুলে রেখে চেপে চেপে পা দুটো দরজা সই একফালি কাপড়টায় মুছে নেয় ।তারপর লক ঘুরিয়ে দরজা খোলে, অনান্য ফ্লাটের মতো এ ফ্লাটের গোড়ায় সুদৃশ্য পাপোশ নেই। ঘরের প্রতিটি আসবাব কিন্তু মহার্ঘ্য।  দামী পালিশের জিনিসগুলো প্রতিদিন ঘন্টা দুয়েক ধরে  ডলে ডলে মোছে বীনা, ম্যাজানাইন ফ্লোরের জন্যও বরাদ্দ ঝাড়া তিনটি ঘন্টা! বাথরুম থেকে বেসিন টিভি টপ থেকে এজমালি পদ্মখাট, ভায়ের ঘরের হাল ফ্যাশানের ডিভান থেকে ঝকঝকে সোফাসেট বাগড়ু  কাজের সুদৃশ্য পর্দা কোথাও একফোঁটা ধূলো নেই। সব চকচকে! চমৎকার! শুধু একদলা মাংসহীন উমড়িঝুমড়ি চুলের বীনা-ই বড় বেমানান। 


   পাঁচবোনের পর যখন তুষার জন্মালো বাবা মায়ের কী আহ্লাদ! কী আহ্লাদ! বংশের প্রদীপ বলে কথা। বাবা পুলিশের কনস্টেবল ছিলো মাইনে সামান্য, উপড়ি অবশ্য কম নয়! ঠাকুমা দাদু এককাপড়ে ওপারবাংলা থেকে এলেও বুদ্ধি করে শহরের একটেরে এই বড় জলা জমিটা বুকে করে আগলে রেখেছিলো। বহু কষ্টে ধরে করে বাবাই পাট্টা বার করেছিল জেঠু আর কাকা অবশ্য আরো সরেস শহরের পেটের ভেতর বেশ কায়দা করে খানিকটা জমিতে উদ্বাস্তু কলোনি গড়ে উঠতেই  আলাদা ঘর বেঁধেছিল। বাপ অমিয় ধাড়া, দাদুর তৈরি দুখানা প্লাষ্টারবিহীন ঘর আর সেই দূরে কলঘর হাগাখানা নিয়ে দিব্যি সুখেই ছিলো। কথায় কথায় শোনাতো কলার ঝাড়, বেগুন লঙ্কার খেত আর সিম উচ্ছের জঙ্গল থেকে রোজ কতগুলো টাকা খাই খরচ বেচে যায় সে চিন্তা কেউ করে? 


পাঁচ মেয়ে বীনা মীনা কণা মনা আর আন্নাকালী কীভাবে যে তড়বড় করে বেড়ে উঠছে ব্যারাক থেকে মাস গেলে ফিরে অমিয় ধাড়ার মাথায় কোনোকালেই ঢুকত না, বরং দুর্বল পিনপিনে ছেলেটাকে আড়াইপো করে রোজ গরুর খাঁটি  দুধ খাইয়ে ডিমটা মাছটার আলাদা জোগান করেও কেমন যেন পুঁইআকড়া চেহারা হচ্ছে দেখলেই বাপের বুক ফাটতো... রাতে তাই আশালতার কাঠির মতো বুকে কী যেন খুঁজতে খুঁজতে অমিয় ধাড়ার আক্ষেপ উঠলেই এক ঝটকায় তা খারিজ হয়ে যেত...

-মরণ মিনসে! ফলের চিন্তায় মোলো! গাছে কী সারটা দেয়েছো শুনি? ঐ তো ছ'ছটা বেচে বর্তে আছে আরো চারটে তো আঁতুড়েই গেছে... তা কোন পথ্যি জুটেছে কপালে যে ছেলে তোমার পালোয়ান হবে?

-না মানে... এই তো রোজগার বোঝো তো সব... 

-নাও নাও! কাজ সারো! সারাদিন খেটেখুটে আর রাতদুপুরে  নৈবেদ্য সাজাতে ভালো লাগে না বাপু! 


পাশাপাশি ঘরে বাপ মায়ের এমন মধুর আলাপ যে উনিশ কুড়ির বীনার বুকে কী ঝড় তুলতো তা সেই শুধু জানে... মীনা কণা মনা ও যেহেতু পিঠোপিঠি তা এ রসে তারাও কী আর বঞ্চিত ছিলো? তাই আবার হয় নাকি? বীনা মীনার লেখাপড়া ঐ ক্লাস ফোরের পর আর  না এগোলেও কণা মনা  তখনও ইস্কুল যায় বছর দুয়েক করে এক এক ক্লাসে বিশ্রাম নিতে নিতে বলতে নেই নাইনে  দুজনেই থিতু হয়েছিল তা তারা তো এ নিয়ে ফিসফিস গুজগুজ করবেই। পাড়ার তপুদা হিরুদারা কবে আর নাইনে উঠলে হুড়কো না দিয়ে ছেড়েছে? তাই কণা মনার  দস্তুর মতো আশিক জুটেছে  আন্নাকালী এখন সবে ক্লাস ফোর আর বোনদের চোখের তারা বাপের আদরের দুলাল মাণিক পড়ে মোটে ক্লাস টুয়ে। 


তা এই করতে করতে আরো বছর ছয়েক কাটলো। অমিয় ধাড়া ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন পার করায় মনা কণা মায় আন্নাকালীর পর্যন্ত  নিজের চেষ্টায় হিল্লে হলো... কাঠমিস্ত্রী মন্টু  কলের কাজ জানা হিরু আর পাড়ার মোড়ের চপ ভাজিয়ে সুবোধ অমিয় ধাড়ার জামাই পদে সসম্মানে চেপে বসল। 

এতদিনে অমিয় ধাড়ার মনে হলো মীনাটার বিয়ে দিতে হবে! তা বাপু বীনার দিকে যে কেন চোখ গেল না তা কে  জানে! অনেক দেখে ঠেকে সেই কাটোয়ায় এক দোজ বরেতে মীনার গতি হলো। শুধু বীনার কথাই  উঠলো না! উঠলেই হলো? চিরটাকাল সংসারের ঊনকোটি কাজ যে সামলায় সেই ইজের বেলা থেকে মায়ের গোটা সাতবার আঁতুড় তোলে, বালতি বালতি কাপড় কাচে, রাঁধে বাড়ে, বাসন মাজে, কলার ঝাড় বেগুন চারার যত্ন করে তার বিয়ে দিলে চলে? ইল্লি আর কী! 


তা বীনার চেহারা যতই কাঠি হোক মুখে মেচেতার দাগ ফুটুক বুক পাছা কোমড়ে  ছিটেফোঁটা মাংস না থাক... মনটা? বড় আশা সে বুকে! ঐ যে অঞ্জন চৌধুরীর সিনেমায় ঝুপ করে নায়কের এত্তো বড়ো গাড়ি এসে দাঁড়ায় শীলা মজুমদারের বাড়ির সামনে... বীনাদের বাড়িতেও তো এখন টিভি এসেছে! 



  অমিয় ধাড়া মরার আগেই মাণিক লোকাল পার্টি অফিসে বসতে শুরু করেছিল, কম চুলের রোগা গাল চোপড়া মাণিক ছোটো থেকে দুধ ঘি খেয়েছি বলে চেহারাটা না খুললেও বুদ্ধিটা বেশ খুলেছিল। তা সে ভাঙিয়ে প্যারাটিচারে ঢুকে যেতে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। মায়ের সরকারী পেনশনেই কষ্টে সৃষ্টে সংসার চালাচ্ছিলো মাণিক। নাঃ! নিজের মাসমাইনেতে হাত দেবে এই হাড়হাভাতেদের জন্যে অত বোকা ছেলে মাণিক ধাড়া নয়। তারপর তো রাজনীতির চাকা ঘুরল মাণিক পার্টি অফিসে বসাটা ছাড়লো না শুধু পার্টি অফিসের ঠিকানাটা বদলে নিলো। 


এতদিনে বীনাদের শহরটা বড় হচ্ছিলো, জমি হাঙ্গরেরা সব কিছু গিলে নিচ্ছিল মাণিক আবার প্রমাণ করলো সে বুদ্ধিমান। অমিয় ধাড়ার কলাবাগান বেগুন লঙ্কার ঝাড় সাফ হয়ে রাতারাতি ছ'তলা উঠলো। আশালতা কোনোদিন আশা করেনি ঐ দু কামরার স্যাঁতস্যেঁতে বাড়ি ছেড়ে এমন প্রাসাদে বাস করতে আসবে! আর বীণা তো একেবারে আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়ল। তবে মীনা কণা মনা মায় আন্নাকালীরা অতো বোকা নয়! মাণিকের কাছ থেকে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ আদায় করতে চেষ্টার কসুর করলো না। ভাবা যায় ঐ জলাজমির দাম এককোটি? সঙ্গে থ্রি বি এইচ কে ফ্লাট! দু লাখ করে অন্তত দেবে না? মাণিক মুখ বুজে রইল। থানা পুলিশ পার্টি অফিস সব ঘুরে ঘেঁটে চার বোন সেই মাণিকের সাথেই আপোষে বসল। মা আর বড় দিদিকে দেখতে হবে এই যুক্তিতে চারবোনকে এক এক লাখ করে ঠেকিয়ে মাণিক ফ্লাটে উঠে এলো।



   আর সেই কালেই মাণিক মা আর বড় বোনকে কড়া নির্দেশ দিলো ঘরের ও সব দামী আসবাবে বসা শোয়া মোটে চলবে না, ফ্লাটের ঐ ঝকঝকে বাথরুমে কাপড় কাচা বাসন মাজা তো ভুলে ও নয়! তা বীনার চিরকাল কুয়োর জলে কাজ করা অভ্যেস তা এই কটা সিঁড়ি ভেঙে ছাদে গিয়ে কাজ করা আর এমন কী? আর তাতেই যত গন্ডগোল! সারাদিন ছাদের কল আটকে বীনা মাজছে কাচছে ধুচ্ছে... অন্য আবাসিকরা তাতেই ক্ষেপে বোম! 



   আজও বীনা একগাদা চুনো মাছ ঘসে ঘসে ধুচ্ছিলো, চারতলার পবিত্রবাবু ছাদ জুড়ে মরসুমী ফুলের গাছ লাগিয়েছেন, বীনার মাছের আঁশের লোভে কাকেদের সে কী উৎপাত! ফুলের টবে লাফিয়ে উঠে কুঁড়ি নষ্ট করে চারা ভেঙে লন্ডভন্ড কান্ড! আর যাবে কোথায়? লেগে গেল শুম্ভ নিশুম্ভের লড়াই! বিপত্নীক পবিত্রবাবু আয়কর বিভাগের বড় পোস্টে ছিলেন সৌখিন উদার মানুষ তিনি কী আর চিরটাকাল সকলের দাসী খাটা রগচটা বীনার মুখের সাথে পারেন? পবিত্রবাবু যত চ্যাঁচান... 


-আমার এত দামী চারা... কিচেনে মাছ ধুতে পারেন না? 

বীনা তত মুখ ছোটায়... 

- ঐ তো চাড্ডি  রঙিন ফুলের গাছ! তাও যদি পুজোর কাজে লাগতো! তাতেই এত চেল্লানি? বলি কাক কী আমি পুষিছি? 

-ইডিয়েট একটা! 

-কী ইংরিজি গালাগালি! এত সাহস! 

-আপনাকে পুলিশে দেওয়া দরকার! অসভ্য মহিলা! 

-আর আপনাকে? মেরে হাড় ভেঙে দেওয়া উচিত। 



আশালতা ছেলের হুকুমে বাজার করাটা বহাল রেখেছিলেন, চোখে ছানি পড়া ইস্তক হাঁটা চলা করতে অসুবিধা হতো তবে বাজার করা তো তার চিরকালের অভ্যেস তাই আন্দাজে ঠিক চালিয়ে নিতেন। সেই ধাড়াবাবুর কাল থেকেই  বেলা বারোটা নাগাদ পড়তি বাজারে গিয়ে একটু নরম মাছ পোকা লাগা দাগী আলু বেছেই তিনি দিন কাটিয়েছেন ছেলের আমলেও তাই বহাল রইল। তা সেই বাজার করে ফেরার সময় ঘটল বিপত্তি! এক ধর্মের ষাঁড়ের গুঁতোয় আশালতা অজ্ঞান হয়ে পড়লেন... দিন পনেরো যমে মানুষে লড়াইয়ের পর আশা লতাটি মুড়োলো। এই প্রথম ঝগড়ুটি মুখরা বীনা কেমন যেন নিভে গেল! মনের কোনে ভয় ঢুকলো মাণিক যদি তাড়িয়ে দেয় এবার, তার কী হবে? 


মাণিক অবশ্য অত বোকা নয়, বিনে পয়সার এমন পয় পরিস্কার ঝি কাম রাঁধুনী কোথায় মিলবে? তার উপর বাপের পেনশন এবার অবিবাহিত বোনের নামেই উঠবে সরকারী নিয়মের ঘাঁতঘোত মাণিক ধাড়া ভালোই জানে! 

বীনা কিন্তু কেমন চুপচাপ হয়ে পড়লো। না ঝগড়া না গালাগালি... আগে আগে ছাদে কেউ ভালো  জামা কাপড় মেললেই হিংসেয় বীনার বুক পুড়তো বিশেষত ভালো শাড়ি রঙিন ম্যাক্সি ছিরি ছাঁদের ব্লাউজ দেখলেই এদিক ওদিক দেখে নিয়ে গায়ে গলিয়ে বসে থাকতো। রক্তিম ব্যানার্জীর নতুন বৌমার বেনারসী মেলা ছিলো  আশ্বিনের রোদে তাই নাকি লুকিয়ে পড়ে বসেছিল বীনা! সে কী অশান্তি! ব্যানার্জীর বৌ যত চেঁচায় ছেলের বৌ যত কাঁদে বীনা তত বলে... 

-একবারটি গায়ে ফেললে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয় শুনি? আমার বিয়েতে আমি এমনি একটা শাড়ি কিনবো তাই দেখছিলাম... 


সেই বীনা আজকাল ছাদের এককোনে চুপচাপ বাসন ধোয়, মাছ কুটে ঝাঁটা আর জল দিয়ে ভালো করে ছাদ পরিস্কার করে, এমনকি পবিত্রবাবুর ফুল গাছের গোড়া খুঁচিয়ে ঝরা পাতা ফেলে টিপটপ রাখে। 



   কানাঘুসো অনেক দিনই শোনা যাচ্ছিলো মাণিক এবার বিয়ে করবে, তা মাঘের শুরুতেই বৌ  এলো ডাটোমটো গোলগাল চেহারার পূর্ণিমা, মাণিকের যোগ্য সহধর্মিনী মানতেই হবে। এসেই সে বীনাকে উঠতে বসতে ভাতের খোঁটা দিতে শুরু করলো। বীনাকে  দিয়ে এককাজ দশবার করিয়ে পাঁজা পাঁজা বাসন মাজিয়ে কী যে সুখ হতো মাণিকের বৌয়ের ভগাই জানে! বীনার মনের মধ্যে কোথাও যেন ক্ষীন আশা ছিলো ভাই বিয়ে করার আগে তার একটা ব্যবস্থা করবে... বোনেদের মতো তার ও একটা নিজের ঘর হবে। মনে মনে অনেক বার সে ভেবেছে একজন নিজের মানুষ হবে তার! হোক না খুব গরীব না হয় ভ্যান-ই চালাবে রিক্সা টানবে তবু লোকটাকে নিয়ে সে সুখী হবে। 


  সেদিন পূর্ণিমা দুপুরে খেতে দিতে গিয়ে বীনার ভাতের থালার দিকে তাকিয়ে অপূর্ব এক মুখভঙ্গি করে মাণিককে যেই বলেছে... 

-বাবা গো! তোমার দিদির যা খাঁই এক কিলো চাল একাই মেরে দিতে পারে! 

রাগে দুঃখে বীনার পুরোনো স্বভাব জেগে উঠল... 

-কী ভাতের খোঁটা দাও? এ বাড়ি যা কাজ করি তাতে...

বীনাকে অমন তেড়েফুঁড়ে উঠতে দেখে মাণিক চেঁচিয়ে উঠল... 

-তাই যা না! দেখ না এই কাজে কত দাম পাস! মরতে আমার ঘাড়ে পড়ে আছিস কেন? 

-দে! না  আমার বিয়ে দে! দেখ এ বাড়ি পরে থাকি কিনা! 

পূর্ণিমা সুর করে হেসে ওঠে... 


- আহা! কত শখ! এই ঘাটের মড়ার আবার বিয়ে হবে! বিয়ে! 

মাণিক আর পূর্ণিমার অট্টহাসিতে বীনার দুচোখ ফেটে জল এলো... ঝগড়ুটি বীনা  জীবনে বোধহয় এই প্রথমবার হু হু করে কেঁদে ফেললো! 


সেদিন অনেক রাতে  সবাই ঘুমালে বীনা একা  ছাদে উঠে এলো। জলের ট্যাঙ্কের পাশে বসে বহুক্ষণ কাঁদল... নিজের দড়ি দড়ি হাত পা শুকনো বুকে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবলো ভগবান কেন এমন একচোখো? এ শরীরে খানিকটা মাংস দিলে কী ক্ষতি হতো?  সত্যিই তো এমন শকুনে খাওয়া পুঁয়ে পাওয়া চেহারা দেখে কোনো পুরুষ মানুষের মন গলবে? দুপুরে ভাত ফেলে উঠে যাওয়ার পর পূর্ণিমার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গাল পাড়া বার বার কানে বাজতে লাগলো... 

-মাগির বড় রস! পুরুষ লাগবে পুরুষ! নইলে গতর শুকোচ্ছে না! 


বীনা টের পায় সত্যিই তার গতরে বড় তাড়স... বুকের ভেতর ভীষন তেষ্টা... শেষবারের মতো ছাদের কল থেকে উবু হয়ে বসে পেট ভরে জল খেল বীনা... 


তারপর? রাত চড়া পাখির মতো  কার্ণিশে উঠে আকাশে উড়াল  দিলো...




মন্তব্যসমূহ

  1. খুব ভালো লাগল, কষ্টটা বুকে বিঁধে রইল

    উত্তরমুছুন
  2. ছবির মত পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি যেন সবটা।বীণাকে।বীণাদের সবাইকে।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভালো লাগলো সোমা।

    উত্তরমুছুন
  4. বীণার জন্য কষ্ট লাগছে।

    উত্তরমুছুন
  5. খুব ভালো লেখা। কিন্তু ভালো লাগলো বলতে পারি না। কষ্ট।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন
  6. চলে যাওয়ার গল্প হোক বা বাস্তব, মুচড়ে ওঠে বুক। কলম চলতে থাকুক সোমা দি। শুভেচ্ছা রইল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য