সোমা দত্ত

 


 তুকতাক ~ 


আরতি হয় পাষাণপ্রতিমার, আমি যুপকাঠে কলিজা রেখে দেখি,

অলক্ষ্যে বেড়ে উঠেছো বুনো লতার মতন;

প্রদীপের শিখার মত ভয় ও ভালোবাসা পাশাপাশি– 

পৃথিবী অনুক্ষণ তোমার দখলে আসে–

ভূখন্ডে লাবণ্য দাও, মার্জিত শিশুশাখা ঘাসফুল ছুঁয়ে শিখে নেয় খাদ্যের প্রবণতা

সেও কি তোমার মতোই নিয়ন্ত্রণ হারাবে তবে?

জন্ম দেবে তান্ডব, জন্ম দেবে অসম্ভব এক শিব! 

তুমি জানো উপবাস কাকে বলে, 

তুমি জানো নিষ্ঠার বেলপাতা, ত্রিভুজ চক্রে উপাসনা

যাকে দ্রোহ ভাবো সে দ্রবণ স্নেহের ভিতরে বাড়ে, ছোঁয়াচে রোগের মত– 

চরণামৃতে, গঞ্জিকায়, কলকে-আগুনে

তোমার লোহার ঘরে ছিদ্র মেপে রাখে

বুনো সাপ। 



হ্যান্ডকাফড্ ~ 


যাকিছু অ-জড় 

অ-বোধ

অ-শ্লীল 

যাকিছু অসার, 

অমিল

অসুখ 

তার চৌষট্টিকলায় ষোল আনা দখল রেখে 

ফাতনায় গেঁথেছ রুপোলি চাঁদা 

ঘন অমাবস্যা, 

মেঘের ছুতোয়, জোনাকির চোখে চোখ রেখে সেজবাতি জ্বালাও

ফিনফিনে সন্ধ্যা থেকে দু টুকরো পাপড়ি ছিড়ে 

ভৌতিক গল্পের আদিম ক্রীড়ায় তাকে চিবিয়ে নেবে 

ইলাস্টিক করে তুলবে চামড়ার স্তন

দাঁতের ধারালো আগা থেকে টপটপ করে ঝরবে

আমার মাসোহারা 



ও সাম কুছ আজীব থি ~ 


ঠিক সাড়ে পাঁচটায় তোমাকে পৌঁছতে হবে

তুখোড় বর্ষা, অনবনত আর্দ্রতা–

তোমার পায়ের প্রতিটি ছাপ ও সেকথা জানে

রাস্তায় মিছিল, প্রতিবাদ,

দাঙ্গার আগুনের তুষ– 

শনি মন্দিরের কাঁসর, অমাবস্যা পূজা

সব তুচ্ছ হয়ে গুঁড়িয়ে পড়ছে স্টেশনে, রেললাইনে– 

গিরিশ পার্কে মেট্রো লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা, ট্রেন বন্ধ

তুমি দেখতে পাচ্ছ ঘুরপথ, দেখতে পাচ্ছ যোগ চিহ্ন

তোমার সামনে ফলন্ত গমক্ষেত, মসৃণ বেতফল। 

দেখতে পাচ্ছ পাহাড়ি ঝর্ণা, নাকে আসছে বুনো মাটির গন্ধ, 

এবং তারপর ঠিক পাঁচটা বাজতেই তুমি পৌঁছে গেছ

দেখতে পাচ্ছ বৃষ্টি পড়ছিল 

তোমার কাছে ছাতা নেই, বর্ষাতি কেনা হয়নি, সদ্য কেনা শার্টটাও ভিজে গেল–



অর্গ্যাজম ~ 


এ জীবন বহুগামী, অনন্তের সুখ মহুয়াফলের মতো।

বৃষ্টি পড়বে পড়ুক, জল জমলে ভাসুক।

তীব্রতা অনাথ 

তার ছাদ নেই, চাঁদ নেই, পিট সিগার নেই, বব ডিলান নেই, বিটোফেন নেই । 

তার শুধু ঝুরঝুরে বৃষ্টির গন্ধ

ধারালো ক্ষুরের মতো সেও দাড়ি কাটে, গলা কাটে, ফিটকিরি চাপা দেয়।

ডালে-ভাতে মজে, রাতে তারি, চুলে সাদা ফুল, মাদলের নাচ 

সব চায়, সব খায়, সব দেখে।

হাইমেন ছিঁড়ে প্রেমের ভিতরে দানা বাঁধে কঙ্কাল–

জল ভাঙে, আতুর হয়, প্লাবন আসে।

সমস্ত ফুরায় তবু  রয়ে যায় আজীবন–

তার গন্ধ নেই, যৌবন নেই, কন্ডোম নেই

শুধু বায়োলজি আছে ।




মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো লাগলো। চমৎকার লেখা।
    - রাজদীপ ভট্টাচার্য

    উত্তরমুছুন
  2. ভালো লাগল ।
    পৃথা চট্টোপাধ্যায়

    উত্তরমুছুন
  3. প্রথম কবিতার দ্বিতীয় লাইন "কলিজা" ঐশ্বর্য্য রাই এর অসাধারণ পারফরম্যান্স কেন যে মনে ভেসে উঠলো--

    সব কবিতা কোন না কোন আমার ব্যক্তিগত চেনা চিত্রকল্প হাজির করেছে। এইটাই আমার বিশেষ প্রাপ্তি।
    বিমল গোস্বামী।

    উত্তরমুছুন
  4. চারটি কবিতাই সুন্দর। অদ্ভুত ভাবে মুগ্ধ হলাম এক আর তিন নং কবিতা পড়ে। শব্দের মায়াকাজলের সঙ্গে মিশেছে তন্ত্রের বিভূতি। তুকতাক দারুণ।

    উত্তরমুছুন
  5. অসাধারণ সব জীবনানুভূতির মালা গেঁথে তৈরি হয়েছে কাব্যমাল্য।

    উত্তরমুছুন
  6. মন্ত্রমুগ্ধের মতো
    গুণমুগ্ধ মন

    একনিষ্ঠ হয়ে
    একান্তে নিমজ্জিত হলাম
    আপনার স্তবক পংক্তির সাথে

    কিছু বলার মত
    প্রশংসা করার মতো
    শব্দ নেই তুনীরে আমার

    আরো লিখবেন
    ভালো থাকবেন

    উত্তরমুছুন
  7. খু ভালো লাগল সব কটিই।

    উত্তরমুছুন
  8. মন্ত্রমুগ্ধ। ৪টি কবিতাই মনে থাকবে বহুকাল।
    . চন্দ্রনাথ শেঠ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য