তারকনাথ মুখোপাধ্যায়



 পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

-------------------------------------


হাজার বছর ধ'রে পৃথিবীর পথে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কখনও দু'জন মানুষের মধ্যে দেখা হয়ে যেতেই পারে, যারা পরস্পরের নাম শুনেছেন, অথচ আলাপের সুযোগ পান নি। কোনো এক উপলক্ষ্য এসে হয়তো ঐ দু'জন মানুষকে হাত ধ'রে মিলিয়ে দেয়। দু'জনের একান্তে মুখোমুখি বসবার অবসরের আয়োজন করে। তখন যার পর নাই রোমাঞ্চ অনুভব করে তারা আর মনে মনে সেই উপলক্ষ্যকে ধন্যবাদ জানায়। ইতিহাসে এরকম অসংখ্য নজির রয়েছে। পাঠক, এখানে আমি এরকমই দু'জন মানুষের কথা বলব, যাঁদের কথা শুনলে আমি নিশ্চিত, তুমিও রোমাঞ্চিত হবে। ঘটনাচক্রে তাঁরা দু'জনেই ছিলেন কবি আর তাঁদের দেখা-হয়েছিল তোমার-আমার অতি প্রিয় কল্লোলিনী তিলোত্তমা, শহর কোলকাতার বুকেই। তাঁদের পরিচয় জানবার জন্য কৌতূহল হচ্ছে তো? তবে বলি শোনো, তাঁদের একজন ছিলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আর অপরজন কবি জীবনানন্দ দাশ।
সময়টা চল্লিশের দশক। একের পর এক ভয়াবহ ঘটনায় সারা পৃথিবীর সঙ্গে এ দেশের পরিস্থিতিও তখন উত্তাল। যদি বলো, কেন? তাহলে প্রথমেই বলব দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথা, যার আঁচ এসে লেগেছিল কোলকাতার বুকেও। জার্মান আর ইটালীর মতো জাপানও তখন কোমর বেঁধে ইংল্যাণ্ড তথা ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করেছে। ঝড়ের গতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একের পর এক ব্রিটিশশাসিত দেশগুলোকে সে দখল করে চলেছে। তাকে বাধা দিতে তাই ব্রিটিশরাও নতুন ক'রে গুটি সাজাল। কোলকাতাকে তারা করল সাউথ-ইস্ট এশিয়ান কম্যাণ্ডের সদর দপ্তর। ব্যস্, আর যায় কোথায়! সারা কোলকাতা জুড়ে গুজব রটে গেল যে, কোলকাতার আর রক্ষে নেই, এবারে ঝাঁকে ঝাঁকে জাপানী বোমারু বিমান এসে হাজারে হাজারে বোমা ফেলে কোলকাতাকে একেবারে চষা জমি বানিয়ে ছাড়বে, সেখানে আর একটা বাড়িও আস্ত থাকবে না। সেই আতঙ্কে দলে দলে মানুষ কোলকাতা ছেড়ে পালাতে আরম্ভ করল। তার মধ্যে ত্রস্ত সাইরেনের ঘন ঘন চিৎকারে শহর জুড়ে নেমে এল বিভীষিকা! এই পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে না হতেই  নতুন এক পরিস্থিতি এসে উত্তপ্ত করে তুলল শহরের আকাশ-বাতাস। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ শক্তিশালী বিস্ফোরণের আকারে ফেটে পড়ল অচিরেই। মহাত্মাগান্ধীর ভারতছাড়ো আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ল দিকে দিকে। মেদিনীপুরে গুলিবিদ্ধ হলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। খবরটা কোলকাতায় রটে যাওয়া মাত্রই খেপে উঠল সেখানকার জনতা। কোলকাতা-ট্রামকোম্পানীর মালিকানা তখন ছিল এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হাতে। একদল ক্ষুব্ধ জনতা একের পর এক ট্রাম পোড়াতে শুরু করল। ওলিতে-গলিতে বিলি হতে থাকল গোপন ইস্তাহার, যাতে লেখা : আর দেরী নেই, দেশ এবারে স্বাধীন হবেই, বন্দে মাতরম্! যার ফলে পুলিশী তৎপরতা আরও বেড়ে গেল। শুরু হল অন্যায় জোরজুলুম আর ধরপাকড়। সেই সঙ্গে লাঠিচার্জ, গোলাগুলি তো আছেই। ঘরে-বাইরে যখন এইরকম অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, তখন কোলকাতার সেন্ট পলস্ কলেজে বি.এ পড়তে পড়তে নিজের পায়ে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখছিলেন এক তরুণ। কারণ, বাড়ির বড়ো ছেলে হিসেবে সংসারের প্রথম দায়ভার তার ওপরই বর্তায়। তাই, ন্যূনতম একটা চাকরীর খুব প্রয়োজন। হ্যাঁ পাঠক, ঠিকই ধরেছ। আমি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কথাই বলছি। কিন্তু, তখনও বি.এ পাশ করেন নি নীরেন্দ্রনাথ, গ্র্যাজুয়েট হন নি। কাজেই তাকে চাকরী দেবে কে? সিভিক গার্ডের চাকরী অবিশ্যি দুর্লভ ছিল না, লাইনে গিয়ে দাঁড়ালেই পাওয়া যেত। কিন্তু, একে তো তাতে ছাত্রজীবনের একেবারে পূর্ণচ্ছেদ পড়ে যাবে, তায় আবার ধুতি-পাঞ্জাবী আর চটি ছেড়ে পরতে হবে উর্দি আর বুট জুতো। যতই ভাবেন, ততই চুপসে যান। এলেম অবিশ্যি একটা ছিল, সেটা কবিতা লেখার। ছেলেবেলা থেকে শব্দে শব্দে মিল দিয়ে পদ্য লিখতে লিখতেই কবিতায় হাতেখড়ি। বিখ্যাত দুই কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র আর সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত ত্রৈমাসিক কবিতা-পত্রিকা ' নিরুক্ত '-তে দু'-একখানা স্বরচিত কবিতা ছাপাও হয়েছিল। এমনকি তার কবিতা ছেপেছে ' দেশ '-এর মতো পত্রিকাও। কিন্তু, তখন সে' গুড়েও বালি! নিরুক্ত-তে গুচ্ছের কবিতা দেওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে ছাপা হয় নি একটাও। বুক ঠুকে একদিন নিরুক্ত-র আপিসে গিয়ে সম্পাদককে সেকথা বলতেই প্রুফ দেখতে দেখতে গম্ভীরমুখে তিনি বললেন :
--- আপনার লেখায় রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বড়ো বেশি।
--- আমার প্রথম লেখাতেও তো রবীন্দ্রনাথের প্রভাব কিছু কম ছিল না--- অপ্রস্তুত নীরেন্দ্রনাথ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন--- সেটা তাহলে ছাপলেন কেন?
--- আপনাকে উৎসাহ দেবার জন্য--- সম্পাদকের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল---  কবিতাটা প'ড়ে বুঝতে পেরেছিলুম, আপনার লেখার হাত আছে। আর সেটা আছে বলেই বলি, যত খুশি রবীন্দ্রনাথ পড়ুন, তাঁর কাছ থেকে যতটা শিখতে পারেন শিখে নিন। কিন্তু, যা-ই লিখুন না কেন, লিখতে হবে একেবারে নিজের মতন ক'রে।
কবিতা লেখার ব্যাপারে নীরেন্দ্রনাথ বরাবরই আত্মাভিমানকে প্রশ্রয় দিতেন। তাই, কীরকমের কবিতা লিখবেন আর কীরকমের কবিতা লিখবেন না, এই বিষয়ে যারা মুরুব্বির চালে কিছু না কিছু পরামর্শ দেবার চেষ্টা করতেন, তাদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতেন তিনি। কিন্তু, সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়া তো দূরস্থ, বরং মনের মধ্যে একেবারে গেঁথে গেল। অন্যদিকে আরেকটা আশঙ্কা তাকে বহুদিন ধ'রে তাড়া করে আসছিল। তার এক দূর সম্পর্কের বেকার জ্যাঠতুতো দাদা মাঝে মধ্যেই তাকে ব্যঙ্গ ক'রে বলতেন :
--- ছেলেবেলায় যারা পদ্য লেখে, বড়ো হয়ে তাদের মুদির দোকানের খাতা লিখতে হয়।
কাজেই, শেষপর্যন্ত চাকরীর অনুসন্ধান, নাকি কবিতায় আত্মানুসন্ধান--- কোন পথকে বেছে নেবেন, এ দু'য়ের দ্বন্দ্বে প'ড়ে তার মানসিক বিভ্রান্তি চরমে পৌঁছোল। পাঠক, আমি শুরুতেই তোমাকে উপলক্ষ্যের কথা বলেছি। শহুরে লোকচক্ষুর অন্তরালে সেই উপলক্ষ্যের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট তখন তৈরী হচ্ছিল। ট্রাম-বাস-ট্যাক্সির ঘূর্ণায়মান চাকার ঘর্ঘর শব্দে ধ্বনিত হচ্ছিল সেই আসন্ন আবির্ভাবেরই দৈববাণী :
জীবন, জীবন-মোহ,
ভাষাহারা বুকে স্বপ্নের বিদ্রোহ---
        মেলাবেন, তিনি মেলাবেন।
সে' বাণী সত্য হল। এক আকস্মিক ঘটনায় নীরেন্দ্রনাথের কবি-জীবনের আজন্ম লালিত চিন্তা-চেতনা ভেঙেচুরে বাঁক নিল নতুন পথে।
নীরেন্দ্রনাথের দুই সহপাঠী বন্ধু ছিলেন নারায়ণচন্দ্র সাহা আর বিমলকুমার ভট্টাচার্য্য। অ্যামহার্স্ট স্ট্রীটে ( বর্তমানে রামমোহন সরণী ) যেখানে সেন্ট পলস্ কলেজ, সেখান থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে রামমোহন স্টুডেন্টস্ হস্টেলে থাকতেন নারায়ণ আর বিমল থাকতেন কাছেই এক মেসবাড়িতে। প্রতিদিন কলেজ ছুটির পর নীরেন্দ্রনাথ স্টুডেন্টস্ হস্টেলে গিয়ে নারায়ণকে সঙ্গে নিয়ে সোজা চলে যেতেন বিমলের মেসবাড়িতে। তারপর মেসবাড়ির একতলার চায়ের দোকান নীলকণ্ঠ ক্যাবিনে কুড়মুড়ে লেড়ো বিস্কুট আর চা সহযোগে জমে উঠত তিনবন্ধুর আড্ডা। একদিন স্টুডেন্টস্ হস্টেলে গিয়ে নারায়ণকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিতে যাবেন, হঠাৎ নীরেন্দ্রনাথের চোখে পড়ল, নারায়ণের বিছানার ওপর একটা বই পড়ে আছে।
--- কী বই রে, নারায়ণ?--- প্রশ্ন করলেন নীরেন্দ্রনাথ।
--- কবিতার বই--- উত্তর দিলেন নারায়ণ--- দু' একটা লেখা আমি পড়েছি, একেবারে অন্য ধরনের লেখা। আমার তো ভালোই লাগল, তোরও মনে হয় খারাপ লাগবে না। যাই হোক, পড়ে দেখতে পারিস, তাতে তো আর ক্ষতি নেই।
নীরেন্দ্রনাথ দেখলেন, বইয়ের নাম ' ধূসর পাণ্ডুলিপি ', কবির নাম ' জীবনানন্দ দাশ '। বইটা তক্ষনই ঝোলায় পুরে নিলেন। তারপর বিমলদের চায়ের দোকানে ঘন্টা দু'য়েক আড্ডা মেরে, বাড়ি ফিরে রাতের খাওয়া-দাওয়ার পাট চুকিয়ে খানিক লেখাপড়া সেরে যখন শুতে যাবেন, তখন তার মনে পড়ল :
--- ঐ যাঃ! কবিতার বইটা তো পড়া হল না!
কাজেই আর দেরী না ক'রে ধূসর পাণ্ডুলিপি খুলে বসলেন তিনি। একবার পড়লেন••• দু'বার পড়লেন••• তিনবার পড়লেন! সারা রাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারলেন না! মনের মধ্যে পাক খেতে থাকল কবিতার লাইন :
আলো-অন্ধকারে যাই--- মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়---- কোন্ এক বোধ কাজ করে!
পরের দিন কলেজে গেলেন। কিন্তু, মিলফোর্ড সাহেব অ্যালসিবিয়াডিসের রণকৌশলের যে বর্ণনা দিলেন, তা মাথায় ঢুকল না। টমাস সাহেব ডকট্রিন অব ম্যালথাস নিয়ে সরস বক্তৃতা দিলেও মন বসাতে পারলেন না তাতে। উদাস চোখে চেয়ে রইলেন জানলার দিকে। কলেজ ছুটির পর নারায়ণ বা বিমল কারও কাছেই গেলেন না। তখন কবিতার পঙক্তির মতোই তার মানসিক অবস্থা : 
সব কাজ তুচ্ছ মনে হয়--- পণ্ড মনে হয়
সব চিন্তা--- প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
     শূন্য মনে হয়!
রাতের জনবিরল অ্যামহার্স্ট স্ট্রীটে উদ্দেশ্যহীন এক অর্ধোন্মাদের মতো ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। একদিন নয়••• দু'দিন নয়••• দিনের পর দিন! ভেতরে কবিতা নিয়ে, কবিতার বিষয়বস্তু নিয়ে, রচনারীতি, ভাষা নিয়ে তার দীর্ঘদিনের যত্নলালিত ভাবনা, সব ভেঙেচুরে তোলপাড় হতে থাকল। জীবনানন্দের কবিতা যে নীরেন্দ্রনাথ আগে পড়েন নি, তা নয়। ' কবিতা ' পত্রিকায় পড়েছেন, ' নিরুক্ত ' পত্রিকায় পড়েছেন। কিন্তু, খুব যে একটা ভালো লেগেছে, তা নয়; বরং তার চেয়ে অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে -র মতো সেই সময়কার বিখ্যাত আধুনিক কবিদের অনেক কবিতাই ভালো লেগেছে তার। জীবনানন্দের কবিতা তার কাছে বড়ো কঠিন আর জটিল মনে হত। বুঝে উঠতে পারতেন না, কবি কী বলতে চান। তার কারণ, জীবনানন্দের কবিতার অন্তর্নিহিত ভাবনার মর্মমূলে ঢোকা তার পক্ষে তখন সম্ভব হয় নি। ধূসর পাণ্ডুলিপি পড়বার সময় তার বোধের ওপর থেকে সেই না-বোঝার পর্দাটা আশ্চর্যজনকভাবে খসে পড়ল। নতুন ক'রে তিনি আবিষ্কার করলেন জীবনানন্দকে। বুঝতে পারলেন, জীবনানন্দের কবিতার স্বাদ আর সৌরভ একেবারেই অন্যরকমের। বিস্মিত হলেন কবির অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা দেখেও। চারপাশের ছোটোখাটো অকিঞ্চিৎকর দৃশ্যও যে কবিতা হয়ে উঠতে পারে, তা জীবনানন্দের কাছেই শিখলেন নীরেন্দ্রনাথ। সেই সঙ্গে ভেতরে কেমন একটা বিশ্বাস, কেমন একটা তাগিদ যেন অনুভব করলেন আর তার ফলেই লিখে ফেললেন গুটিকয় কবিতা। তারপর ডাকযোগে সেগুলোকে পাঠিয়ে দিলেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। কেবল মাত্র দুটো কবিতা পাঠালেন নিরুক্ত-তে। নিরুক্ত-র নতুন সংখ্যায় সে' দুটোর একটা ছাপাও হল। কিন্তু, সেই সঙ্গে এল সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের চিঠি, যাতে লেখা : দু'-চারদিনের মধ্যে দেখা করো। জরুরী কথা আছে। ঘনিষ্ঠতার সূত্রে ততদিনে সম্বোধনটা ' আপনি ' থেকে ' তুমি '-তে পৌঁছেছে, বলাই বাহুল্য। যাই হোক, নীরেন্দ্রনাথ আর দেরী না ক'রে সেই দিনই হাজির হলেন নিরুক্ত-র আপিসে। তাকে দেখা মাত্রই সঞ্জয়বাবু অভিভাবকসুলভ গম্ভীর মেজাজে জিজ্ঞাসা করলেন : 
--- নীরেন, রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নিয়ে এর আগে একদিন তোমাকে আমি কী বলেছিলুম, মনে পড়ে?
--- কেন মনে পড়বে না, দাদা?--- ভয়ে ভয়ে ঈষৎ ঢোক গিললেন নীরেন্দ্রনাথ--- রবীন্দ্রনাথের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে বলেছিলেন।
--- ব'লে ভালো করি নি--- আগের মতোই গম্ভীর মেজাজে বললেন সঞ্জয়বাবু--- আসলে তখন বুঝতে পারি নি যে, রবীন্দ্রনাথকে ছেড়ে তুমি ফের আরেকজনের পাল্লায় গিয়ে পড়বে।
নীরেন্দ্রনাথের জীবনানন্দ-প্রীতি যে সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের মতো দক্ষ সম্পাদকের চোখকে ফাঁকি দিতে পারে নি, তিনি যে তার কবিতা প'ড়ে অনায়াসেই সেটা ধ'রে ফেলেছেন, তা তাঁর কথার সুর শুনেই বুঝতে পারলেন নীরেন্দ্রনাথ। তিনি আমতা আমতা ক'রে বন্ধুর কাছ থেকে ধূসর পাণ্ডুলিপি নিয়ে পড়ার কথাই কেবল বললেন। ধূসর পাণ্ডুলিপির পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি যে জীবনানন্দের বরিশালের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছেন আর কবি যে সে' চিঠির উত্তরও দিয়েছেন, সেসব প্রসঙ্গ ভয়ে আর উত্থাপন করলেন না। সঞ্জয়বাবু খানিক চুপ ক'রে থেকে তাকে বললেন :
--- কী জান, জীবনবাবুর ভাষা আদ্যন্ত তাঁর নিজের তৈরী করা ভাষা। ঐ ভাষার মধ্যে আছে একটা মায়াবী জাদু। ওর মধ্যে ঢোকা যায়, কিন্তু ঢুকলে আর বেরিয়ে আসা যায় না। অনেকেই ওর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন নি। ওরই মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সুতরাং, এই যে তুমি জীবনানন্দের মতো লিখতে শুরু করেছ, এই অভ্যেসটা তোমাকে ছাড়তে হবে।
অন্য কেউ বললে আলাদা কথা। কিন্তু, তার সঞ্জয়দার কথা চট ক'রে ফেলতে পারতেন না নীরেন্দ্রনাথ। কারণ, তিনি ছিলেন তার কাছে একাধারে বন্ধু, দার্শনিক, আবার পথপ্রদর্শকও ( Friend, Philosopher & Guide )। কাজেই নীরেন্দ্রনাথের ভেতরে আবার শুরু হল তোলপাড়। বাইরে তখন নতুন ক'রে কলকাতা শহরের বুকেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। দুর্ভিক্ষের জেরে সেখানকার জনজীবনের স্বাভাবিক চেহারাটাই গেছে বদলে : 
ঠিক মানুষের মতো
কিংবা ঠিক নয়,
যেন তার ব্যঙ্গচিত্র বিদ্রূপ-বিকৃত!
তবু তারা নড়ে চড়ে, কথা বলে, আর
জঞ্জালের মত জমে রাস্তায় রাস্তায়!
উচ্ছিষ্টের আস্তাকুঁড়ে ব'সে ব'সে ধোঁকে
আর ফ্যান চায়!
দেখে চোখে জল আসে নীরেন্দ্রনাথের। অসহায়, অশান্ত মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কিন্তু, তার তখন লাচার অবস্থা! শিরে সংক্রান্তির মতো বি.এ ফাইনাল পরীক্ষা একেবারে দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়তে শুরু করেছে! এই কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে গেল। বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নীরেন্দ্রনাথ ততদিনে মায়ের ইচ্ছায় অ্যাটর্নিশিপ পড়া শুরু করেছেন, ভর্তি হয়েছে রিপন ল' কলেজে। সেই সঙ্গে হাতখরচ চালানোর জন্য খবরের কাগজের কাজ তো রয়েছেই। বি.এ পড়তে পড়তেই এই কাজে হাত পাকিয়েছিলেন আর তা না করেও বা উপায় কী?  যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই চাকরীর বাজারে মন্দা দেখা দিল, একের পর এক ব্যাঙ্কে লালবাতি জ্বলতে শুরু করল, স্বতন্ত্র পাকিস্তানের দাবিকে কেন্দ্র ক'রে শহরের আনাচে-কানাচে শুরু হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, খুনোখুনি, লুঠতরাজ! খবরের কাগজগুলোরও কোনো স্থিরতা নেই। কিছুদিন চলতে না চলতেই একটা বন্ধ হয়ে গিয়ে গজিয়ে ওঠে আরেকটা। নয় নয় ক'রে তিন-তিনটে খবরের কাগজে কাজ করার পর সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের সুপারিশে নীরেন্দ্রনাথ যোগ দিলেন ' স্বরাজ ' পত্রিকায়। ক্রিক রো-তে স্বরাজ-এর আপিস থেকে হাঁটাপথে পাঁচ-দশ মিনিট দূরত্বে ছিল পূর্বাশা-র আপিস। ' নিরুক্ত ' ছাড়া সঞ্জয়বাবু ' পূর্বাশা ' পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। স্বরাজ-এ ঢোকার আগে নীরেন্দ্রনাথ তাই মাঝে-মধ্যেই পূর্বাশা-য় উঁকি দিয়ে যেতেন। একদিন তেমনটা করতে গিয়েই সঞ্জয়বাবুর মুখে শুনলেন, স্বরাজ-এর রবিবারের সংখ্যার সাহিত্য বিভাগ সম্পাদনার কাজে যোগ দিয়েছেন কবি জীবনানন্দ। জীবনানন্দ নামটা শুনেই চমকে উঠলেন নীরেন্দ্রনাথ। কবির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য মনে মনে অধীর হয়ে উঠলেন। অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!
১৯৪৭ সালের ২রা ফ্রেব্রুয়ারী সকালবেলা স্বরাজ-এর আপিসে ঢোকার খানিকবাদেই নিউজ-এডিটর তথা বিখ্যাত নাট্যাভিনেতা গঙ্গাপদ বসু উপস্থিত সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন কবি জীবনানন্দ দাশের। নীরেন্দ্রনাথ সেই প্রথম দেখলেন জীবনানন্দকে। জীবনানন্দও দেখলেন নীরেন্দ্রনাথকে। কেবল দেখলেন বললে ভুল হবে, নীরেন্দ্রনাথের ভাষায়--- খরদৃষ্টিতে তাকালেন। ঐরকম তাকানোর অবিশ্যি কারণও ছিল। বি.এ পরীক্ষা দেবার পরে-পরেই নীরেন্দ্রনাথ তার দুই বন্ধু ননী ভৌমিক আর গিরিশংকর দাশকে নিয়ে স্রেফ বিখ্যাত কবিদের সঙ্গে গা-ঘেঁষাঘেঁষি ক'রে নিজেদের কবিতাও ছাপার অক্ষরে পাঠককুলের কাছে পৌঁছে দেবার বাসনায় ' শেষ ট্রেন ' নামে ছোটো একখানা কবিতা-সংকলন বের করেছিলেন। তার জন্য চিঠিতে জীবনানন্দের কাছে কবিতার আবদার জানালে তিনি তাদের বঞ্চিত করেন নি। তা ছাড়াও নীরেন্দ্রনাথ মাঝে-মধ্যে কবিকে চিঠি লিখতেন আর প্রতিবারই কবি তার উত্তর দিতেন। পূর্বাশা-র কোনো এক সংখ্যায় নীরেন্দ্রনাথ কোনো এক অনতিখ্যাত কবির কবিতার বইয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে ' জীবনানন্দের আত্মঘাতী ক্লান্তি থেকে মুক্ত ' ইত্যাদি মন্তব্য করেছিলেন। তাতে জীবনানন্দ অসন্তুষ্ট হয়ে সে' লেখার কড়া সমালোচনা ক'রে পূর্বাশা-র দপ্তরে এক দীর্ঘ চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবশতঃ নীরেন্দ্রনাথ অবিশ্যি সে' চিঠির কোনো উত্তর দেন নি। হয়তো এসব কারণেই নীরেন্দ্রনাথের নাম কবি ভোলেন নি আর তাই গঙ্গাপদ বসুর মুখে নীরেন্দ্রনাথের নাম শোনামাত্রই তিনি তার দিকে অমন ক'রে তাকিয়ে ছিলেন। যাই হোক, নীরেন্দ্রনাথ কিন্তু জীবনানন্দকে দেখে প্রচণ্ড রকমের ধাক্কা খেলেন। কারণ, ধূসর পাণ্ডুলিপি পড়ার পরে কবির একটা ছবি তার মনের মধ্যে আঁকা হয়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলেন, তিনি একটু রোগাপাতলা মানুষ হবেন আর তাঁর দৃষ্টি হবে স্বপ্নাতুর। কিন্তু, বাস্তবে দেখলেন ঠিক তার উলটো। চোখ দুটো অবশ্যই চমক লাগার মতো, তবে কিঞ্চিৎ অস্বস্তিকরও। স্বপ্নাবিষ্ট তো নয়ই, বরং ধারালো চোখ। যখন কারও দিকে তাকাচ্ছিলেন, নীরেন্দ্রনাথের মনে হচ্ছিল, যেন তার বাইরের চেহারাই কেবল দেখছেন না, তার মনের ভেতরটাও দেখে নিচ্ছেন আর পড়ে নিচ্ছেন তার চিন্তাভাবনাগুলোকে। মজার ব্যাপার হল, নীরেন্দ্রনাথ আর তার সহকর্মী-কবিবন্ধু শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় যতই জীবনানন্দকে বলেন, তারা তাঁর ভক্ত পাঠক, ততই তাঁর চোয়াল আরও শক্ত হতে থাকে, মুখে কিছু বলেন না, কেবল ডাইনে-বাঁয়ে মাথা নাড়তে থাকেন। তাতে নীরেন্দ্রনাথের মনে হল, কথাটা তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না। অগত্যা তিনি আর থাকতে না পেরে স্মৃতি থেকে ধূসর পাণ্ডুলিপি-র শেষ কবিতার আগের কবিতা ' মৃত্যুর আগে ' মুখস্থ বলতে শুরু করে দিলেন :
আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়,
দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল
কুয়াশার•••
কিন্তু, প্রথম দুই স্তবক শেষ ক'রে সবে যখন তৃতীয় স্তবক শোনাতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই কবি বললেন :
--- থামুন, থামুন•••
তারপর খানিকক্ষণ দুই বন্ধুর দিকে নির্বাক তাকিয়ে থেকে একেবারে আচমকা হো হো ক'রে হেসে উঠলেন। সে' এমনই দমকা হাসি, অর্গলমুক্ত হয়ে দমকে দমকে বেরিয়ে আসার আগে পর্যন্ত তাঁর মুখে-চোখে যার বিন্দুমাত্র আভাস পাওয়ার উপায় ছিল না।
এই ঘটনার কয়েকদিন বাদে এক দুপুরবেলায় বার্তা বিভাগে ঢুকে নীরেন্দ্রনাথের হাতে একটা পুরোনো খবরের কাগজে মোড়া প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে জীবনানন্দ অতি দ্রুত আবার নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। মোড়ক খুলে নীরেন্দ্রনাথ দেখলেন, ভেতরে রয়েছে ডি.এম.লাইব্রেরী থেকে ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত এক কপি ধূসর পাণ্ডুলিপি। তার ফ্লাই লিফের ওপরে লেখা : শ্রীনীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রীতিভাজনেষু। তলায় তার স্বাক্ষর আর তারিখ : ৭.২.৪৭। নীরেন্দ্রনাথ তো রীতিমতো অভিভূত! অগ্রজ কবির ভালোবাসা মিশ্রিত উপহারকে চিরকালের জন্য সযত্নে তুলে রাখলেন তিনি।
জীবনানন্দকে কাছ থেকে যতই দেখেন, ততই অভিভূত হন নীরেন্দ্রনাথ। অমন রাশভারি চেহারার আড়ালে যেন লুকিয়ে আছে সহজ সরল এক আনন্দময় শিশু, অথচ--- মনে মনে ভাবেন নীরেন্দ্রনাথ--- ' শনিবারের চিঠি ' তাঁকে নিয়ে কত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই না করে : তিনি গণ্ডারের মতোই রসিক, হাসি-ঠাট্টা বরদাস্ত করিতে পারেন না, ঘরে খিল লাগাইয়া থাকেন••• ইত্যাদি, ইত্যাদি। কেবল তা-ই নয়, যাঁরা আধুনিক তকমা আঁটা অগ্রণী কবি, তাঁরাও তাঁর কবি-প্রতিভা নিয়ে নিরঙ্কুশ প্রশংসার পরিবর্তে সংশয় প্রকাশ করেন। বিষয়গুলো সঞ্জয় ভট্টাচার্যের মতো পীড়া দেয় নীরেন্দ্রনাথকেও। কবির জন্য তার দুঃখ হয়। তার মনে হয়, নেহাতই সংসারের দায়ভার সামলাতে মানুষটা মামুলি খবরের কাগজের আপিসে চাকরি নিয়েছে, নইলে এই কাজ কি তাঁর জন্য? যদি কবিতা লেখাই হত তাঁর একমাত্র কাজ, অন্য কোনো কাজ তাঁকে না করতে হত, তবে সেটাই হত তাঁর পক্ষে সবচেয়ে স্বস্তির ব্যাপার! কিন্তু, নিবিষ্টচিত্ত ঐ আত্মমগ্ন স্পর্শকাতর মানুষটা সেই স্বস্তি পেলেন কৈ? অসভ্য ফেউয়ের দল, যার মধ্যে অনেকেই আবার তাঁর সহকর্মী, ফাঁক পেলেই আড়ালে-আবডালে তাঁর পেছনে লাগত, নির্মম টিটকারি-টিপ্পনীর খোঁচায় উত্তক্ত করে তুলত তাঁকে। তিনি নীরবে সব সয়ে যেতেন, মুখে কিছু বলতেন না। সত্যি বললে, স্বরাজ-এ এসেও তাঁর রাহুর দশা কাটে নি। কাজেই যখনই খুব অস্বস্তি বোধ করতেন, তখনই চলে যেতেন নীরেন্দ্রনাথের কাছে। বিশেষ ক'রে যে সপ্তাহে নীরেন্দ্রনাথের দুপুরের শিফটে ডিউটি থাকত, বিকেল চারটে নাগাদ নিজের টেবিল ছেড়ে সরাসরি তার কাছে এসে বলতেন :
--- চলুন, বেরিয়ে পড়া যাক।
কাজ থাকলেও কবির আহ্বানকে উপেক্ষা করতে পারতেন না নীরেন্দ্রনাথ। দু'জনে বেরিয়ে পড়তেন। ক্রিক রো ধ'রে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতেন ওয়েলিংটন স্কোয়ার। তারপর ভেতরের রাস্তা দিয়ে পার্ক পেরিয়ে ওয়েলিংটন স্ট্রীট। সেখান থেকে ট্রাম রাস্তা পেরিয়ে আরও খানিক হেঁটে বাঁ-দিকে পূর্বাশা-র আপিস। সারাটা পথ কথা বলতেন। বরিশালের কথা। বাংলার ভূপ্রকৃতি আর গাছপালার কথা। নদীর কথা। পাখির কথা। মানুষের কথা। কবিতার কথা। কথা আর ফুরোতে চাইত না। ভাবখানা এমন যেন জেলখানায় অনেকক্ষণ বন্দি ছিলেন। পূর্বাশা-র আপিসে ব'সে কথা বলতে বলতে কোনো কোনোদিন সন্ধে হয়ে যেত। তারপর যখন কথা শেষ হত, তখন সঞ্জয়বাবু নীরেন্দ্রনাথকে বলতেন :
--- যাও নীরেন, ওঁকে বালিগঞ্জের বাসে তুলে দিয়ে এসো।
দুঃখের বিষয় এই যে, জীবনানন্দের এই মধুর সঙ্গ নীরেন্দ্রনাথে ভাগ্যে জোটে নি বেশীদিন। কারণ, স্বরাজ-এর আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ায় জীবনানন্দের সঙ্গ হারাবেন জেনেও সেখানকার কাজে ইস্তফা দিলেন নীরেন্দ্রনাথ। কিছুদিন বাদে জীবনানন্দও তাই করলেন। কিন্তু, ইতিহাসের পাতায় দু'জনের সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত চিরদিনের জন্য অক্ষয়, অমর হয়ে রইল।
পাঠক, তুমি একবার সেই মুহূর্তটা চোখ বুজে কল্পনা করার চেষ্টা করো। ভালো ক'রে দ্যাখো, ঐ-যে দু'জনে হেঁটে যাচ্ছেন। রাস্তাটা এঁকে-বেঁকে হারিয়ে যাচ্ছে অনন্তে দিকে। শহর জুড়ে সন্ধে নামছে। আকাশের বুকে একটা দু'টো ক'রে ফুটে উঠছে নক্ষত্র। তারাও চুপটি ক'রে শুনছে ওঁদের কথা, দেখছে বাংলা কবিতার বর্তমান আর ভাবী--- দুই নক্ষত্রকে!

# তথ্যসূত্র : জীবনানন্দ দাশ/ প্রভাতকুমার দাশ, নীরবিন্দু/ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আধুনিক বাংলা কবিতা/ বুদ্ধদেব বসু ( সম্পাদিত )



মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য