পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সম্পাদকীয়

ছবি
  বারিষনামা কথা ছিল "বাতিঘর অনলাইন" "বারিষনামা" সংখ্যা  প্রকাশ পাবে যখন আকাশ ঢাকা থাকবে ঘন কালো জলমেঘে।বাতাসে থাকবে বৃষ্টির গন্ধ। ভারী  ব্যাপক বৃষ্টি ঝরবে তোমার আমার বুকের মধ্যে। বিবসনা গাছ গাছালি ভিজে যাবে অকাতরে।মাটির সোঁদা গন্ধে মাতাল হবে অরণ্য। মেঘমল্লার রাগের আলাপে বিস্তারে মাতোয়ারা হবে বন পাহাড়।  আমরা কেউ ঝুলবারান্দা থেকে দেখে নেব কুর্চি ফুলের স্নান। চোখে মুখে বুকে মেখে নেব বৃষ্টি।অদূরে বৃষ্টি মাখবে বাদলদিনের প্রথম কদম ফুল। নদী উঠে আসবে পথে।ভাসিয়ে দিয়ে বলবো,  যা রে কাগজের নৌকো...। আমার মতো তোমার জানালার কাচও আবছায়া হবে। সার্সিতে আছড়ে পড়বে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ও নাছোড়বান্দা বৃষ্টির ফোঁটা। ভিজে যাবে আমাদের ভিতর ও বাহির। বাসস্টপে জল জমবে।এক ছাতায় মাথা রেখে অবলীলায় হেঁটে যাবে প্রেমার্ত ছেলেমেয়েটি।মেঘবালিকাদের কি সে উল্লাস! বৃষ্টি বলে ডাকে আমায় শোনার আগেই লেখা হয়ে যাবে এক পৃথিবী রূপকথা।হয়তো বা হবে না।শুধুই আঁকিবুঁকি।কছের মানুষ দূরে থাকার কারণে, নিয়তি নির্ধারণে চোখের নোনা জলের সাথে মিশে যাবে সমব্যথী এক বৃষ্টিকণা। অনেক দূরে এফ এম এ বাজবে 'রিম ঝিম গিরে শাওন... ...

অদিতি বসুরায়

ছবি
      রুটি  আজকাল রাতে, একটা রুটির স্বপ্ন দেখি  - একটা পোড়া কলঙ্কময় রুটি  তার চেরা পেটে জননীচিহ্ন, ইতস্তত মিথ্যে এবং  সামান্য ভেপে ওঠা পাপ  - সব মিলিয়ে ভারি সুস্বাদু! মিঠে আঁচে, সে তাওয়ার গরমে যখন পড়ে পাড়াময় সুগন্ধ ভাসে -! বাতাসে  ব্যঞ্জনহীন ওই রুটির জন্য, আমি লম্বা পথ হাঁটি  অতর্কিতে আগুনের দেখা পেয়ে, রাধাগন্ধ নামে অঙ্গ বেয়ে।  আটা মাখার আগেই,  চুল্লিটিকে আলিঙ্গনের ইচ্ছে যায়  - মাতামহীদের কিতাব খুলে দেখি,  প্রতিটি খিদের পাশেই একটা সিকি কিংবা আধপোড়া হাতে গড়া রুটি দাঁড়িয়ে থাকে।

সুদীপ চক্রবর্তী

ছবি
   আকাশের লোক তুমি যে পুবের মাঠের কাছে ডেকে এনেছো, সেখানে সবুজ ধানের হাওয়া। সমস্ত আক্ষেপ ডুমুরের গাছ তালের সারিতে, পশ্চিমে একটা বড় ইটভাটা, কাজ চলছে প্রখর গরমে। এখানে মানুষের এত দুঃখ যে গোটা একটা থিসিস লেখা যায়। তবুও সন্ধে নামার মুখে মুরগির ছাল ছাঁট খেয়ে, এই যে ন্যাংটো ছেলেটা নাচতে নাচতে নদীর দিকে গেল, ও জানে উন্নয়ন কাকে বলে? কাকে বলে এগিয়ে চলা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাম না শুনেও, একটা লোক জন্মালো, পুড়ে গেল দেশ থেকে বহু দূরে অজানা নদীর ধারে। শ্রমিকের দেহ পোড়া ধোঁয়া এই আকাশেই,  মিশে যায় মালিকের ধোঁয়ার সঙ্গে। তারপর জোর বৃষ্টি নামে। ভিজে যায় প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকা, ইউনিভার্সিটির ক্লাস থেকে বেরিয়ে, তুমি দেখলে একমাত্র মেঘই শ্রেণীহীন।

সৌম্যজিৎ আচার্য

ছবি
    তরুণ কবির প্রতি কিছু কথা  বসন্তের দিনগুলিতে এক একটা দুপুরে  তুমি এক একরকম কথা শুনবেচ  একদিন শুনবে প্রচুর ভীড়ে  তোমাকে পুরস্কার দেবে সরকার  কী পুরস্কার?   পোস্টম্যানকে ফোন করবে। সে বলবে, আমি একটা জঙ্গলে ঢুকে বসে আছি বিশ বছর এখানে গাছের গায়ে হাজার হাজার  চিঠি উড়িয়ে দিয়েছে কেউ  দাঁড়ান, আগে সবকটা চিঠি তুলি  তারপর বলতে পারব  দপ্তরে ফোন করবে  রিসেপশনিস্ট বলবে,  জানেন, আপনার নামে আমার একটা বিড়াল ছিল আর নেই  পারবেন, ওর মতো একবার মিউ করে উঠতে...  এরপর সচিবকে ফোন করার পালা  ওনার ফোন বিজি থাকবে  তবে ওর এটেডেন্ট তোমাকে জানাবে,   এ জীবন বারবার, দূর কোন জাহাজের ডাক...  জাহাজের খোঁজে তুমি চলে যেও ডকে  যে ডক ফুলের পাপড়ির মত ভেসে আছে জলে  নাম খুলে, পদবি খুলে, আলো খুলে  আতিশয্য খুলে  সবাই যেখান থেকে উঠে যাচ্ছে জাহাজে  এতদূর এসে,  তুমি নাহয়, তাদের নোঙ্গর তুলে দিলে...

শ্যামশ্রী রায় কর্মকার

ছবি
    রেলস্টেশনে লেখা কবিতা কার বাঁশি শুনে ট্রেন রোদ্দুরের সমারোহ ছেড়ে ছান্দোগ্য দিনের দিকে যায় সুগন্ধি গাছের ডাল ছলছল করে ওঠে নদীর পৈঠায় বাতাস ঘোড়ার বেশে খেলা করে অক্ষরের বনে আজ হৃদয় রোপণ উৎসব  মাটি হয়ে শুয়ে থেকো বুক সজল স্নিগ্ধ মাটি না হলে কি বাঁচবে হৃদিগাছ? দ্যাখো তোমাকে সজল দিতে বাঁশি হাতে নিয়েছেন রোগা কালো আদুল ঈশ্বর সস্নেহ সুরটি পেতে ধরেছেন শেকড় তোমার

মীরা মুখোপাধ্যায়

ছবি
    বাতিঘর    অবাক হলাম জেনে সমুদ্রশহর চট্টগ্রামেও বাতিঘর আছে,যার আলো এসে পড়েছে এখানে। আগে এরকম হলে মানুষে মানুষে  মিতে কিংবা বকুল পাতাতো অথবা চোখের বালি... স্মার্ট এডিটর,ভেবেছো কখনও কিছু ! পাঠিয়েছো কোনদিন আমাদের  বাংলার কবোষ্ণ, কোনো লেখা তাকে ! যার বাতিঘর থেকে আলো,সমুদ্রের ফসফরাস ও নোনা হাওয়া পার করে স্পর্শ করছে এপার বাংলাকে

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ছবি
  সকালনামায় মেঘলা অংশটুকু  এক   ভালো করে দ্যাখো, ঘরটায় একটাও জানলা নেই।  দরজাও নেই মনে হয়, তাহলে তো আলো জ্বলতো। একজন কেউ সাতসকালে বেরিয়ে গেছে, বারান্দায় পায়ের ছাপ। সে এ ঘরের কেউ নয়। তবুও আলো জ্বালতে আগুন তো লাগে। আগুনের শেষ সেই কোন ভোরে। তাছাড়া হাতের তালু তো সেই কোন কাল থেকে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখছে। এমন মেঘলা ক্যানভাসে যে রঙই চাপাও খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসবে।   দুই   এই যে হোটেলের কম আলোয় ভাঙা গ্লাস থেকে জল খাচ্ছো ----- এটা আসলে পথ হারিয়ে হঠাৎ করে সন্ধ্যেরাতে কোনো গুহায় ঢুকে পড়া। কেউ তোমায় দ্যাখেনি কিন্তু তবুও তুমি গুহার গভীরে ঢুকে যাচ্ছো। আজন্ম পাহাড় দ্যাখোনি। নদীর জলজ সংলাপে কোনোকালেই অভ্যস্ত নও। এমন একটি শরীর ভাঙা গ্লাসে জল খেয়ে গুহার ভেতর হাঁটছে তো হাঁটছেই। মাটির হাত ছাড়া গুহার অন্যমুখে কোনো আলো নেই।   তিন  প্ল্যাটফর্মের চেয়ারে তুমি বই নিয়ে বসে আছো। এটা একটা আলো। তুমি বই চিনলে না, বইয়ের মানুষ চিনলে না, স্টেশনের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। ঝড় এলে তোমার সামনে বইয়ের কোনো আড়াল নেই, হাত বাড়ালেও কোনো সিঁড়ি নেই। স্টেশনের রঙ দেখেও পথ ...

সজ্জ্বল দত্ত 

ছবি
    উত্তরাধুনিক... কুয়াশা সরিয়ে রৌদ্র মাখিয়ে  মেঘমাখা ঠোঁট আলোয় ভাসিয়ে  তোমাকে আঁকবো । - দোলাচলে দুলি  চিবুক পেরিয়ে আরো নীচে তুলি  গলায় ছোট্ট তিল , কী অর্থ ?  হয়ত সুরেলা ক্লাসিক হয়ত ।  স্পর্শ নামছে , ও: রে বৃন্ত !  ত্রিকাল স্তব্ধ ইলোরাশিল্প !  ঠাটের তীব্র মধ্যমে তুমি  ঈষৎবক্র সমতলভূমি  ঝালায় ' বাহার ' নাভির বিন্দু  সভ্যতা ফেলে ছুটছে সিন্ধু ।  কখন পথে যে সাজানো তোরণ  রঙের আঁচড়ে স্বর্গগোপন !  অবাধ ভ্রমণ উরুর সন্ধি  শিল্পীকথন - জবানবন্দী :  অনন্ত এই ' তুমি 'র সফর  প্রস্তর.. থেকে সভ্যযাপন  ছবি তোলপাড় ফ্রেমের দোলনে  রক্ত.. রক্ত.. পতনধারণে  ভেতর ফুটছে দু'চোখ জ্বলছে  ঠোঁটে জিভে শুষে হৃদয় উপচে  তোমাকে আঁকবো                       --- আগাম দেবো ?

শীলা বিশ্বাস

ছবি
    শ্রাবণ শামিয়ানা ১  এই যে প্রেমের স্ফুটনাঙ্কে অবিরাম বেজে চলেছে শ্রাবণ শামিয়ানা  এই যে বালিশের নীচে গুমরে থাকা স্বপ্ন শাদিয়ানা  কীভাবে লিখি বলো তোমায় বৃষ্টি  ২  ঘুমন্ত তোমার মুখের কাছে শ্রাবণের জল্লেখ, অভাব ঘরের খুদ  লহু ও লোহা চুর বিছিয়ে রাখে অনিদ্রিত বাষ্প বুদবুদ কীভাবে লিখি বলো  তোমায় বৃষ্টি  ৩  জলের দাগ মুছে দিচ্ছে জল স্মৃতির ভিতর জল পুড়ে যায় , পোড়ায়  বৃষ্টি তবু অঝোর চঞ্চল নিজেকে অনাবৃত করে এখন লিখতে বলো  কীভাবে লিখি বলো  তোমায় বৃষ্টি  ৪  জলের দাগ বরাবর হেঁটে যাওয়া অতীত খণ্ড দৃশ্যের ভিতর টুপ শব্দের চমক  চায়ের কাপ,প্রত্নকেটলির ধোঁয়া ওঠা ভেজা বিকেল ভুলের কদম,খোঁপার বৃষ্টিবিলাস, গমক  কীভাবে লিখি বলো তোমায় বৃষ্টি  ৫  শ্রাবণ আর বৃষ্টি একটা ছাতার নীচে ফুটে থাকে মিল্কি মাশরুম  এই যে নৃত্যের হরিণ ও পাগল ঝোরা জেগে ওঠে সবুজ পাতায় মনের হালুম  এভাবেই লিখি বলো তোমায় বৃষ্টি 

দেবাশিস ঘোষ

ছবি
    জেমস জয়েসের মেয়েরা   জেমস জয়েসের মেয়েরা আমাদের পাড়াতেই থাকত ফর্সা ফর্সা রোগা রোগা জয়েসের মেয়েরা তাদের মুখচোখে তারাদের আলো  তাদের কথায় লাফিয়ে উঠত স্বচ্ছ কাঁচের মতো ঝর্ণা জয়েসের মেয়েদের সঙ্গে আমাদের দেখা হত ক্বচিৎ কখনো তাদের পরনে থাকত পরিস্কার সাদা কোনো স্কার্ট দু'একটা কথা হত কি রে তুই সেদিন ঘুড়ি ওড়াতে কোথায় যাচ্ছিলিস? জয়েসের ইউলিসিস পড়া নেই বলে কথা বেশিদূর এগোত না আর জেমস জয়েসের মনে টেনশন ছিল কিনা ঠিক জানা নেই এইসব জংলী ছেলেপেলে, কাদাঘাটা খালি-পা ছেলেপেলে বিপজ্জনক নয় এটুকু নিশ্চয় তিনি বুঝতেন বলে  মেয়েদের মাঝে মাঝে খুলে দিতেন খুটো জেমস জয়েস কাঠের চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়তেন সকাল বেলায় তখন মেয়েরা থাকত ঘরের ভিতর জয়েসের ছেলেরা পাজামা পরত আর ফর্সা গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি কাঁধে বেড় দিয়ে পৈতে দেখা যেত তার কথা হত কিছু কিছু তার সঙ্গেও প্রধানত দেশকাল ইত্যাদি বিষয়ে শীতের সকালবেলা জেমস জয়েস গায়ে সর্ষে তেল মেখে  রোদ্দুর চাতালে বসে খবর কাগজ জয়েসের রোগা মেয়েটি তখনও ঘরে কী করত কে জানে! আমাদের পাড়াটায় তিনজন জেমস জয়েস  তাদের মেয়েরা ...

শমিত মণ্ডল

ছবি
   একটি যুদ্ধ-বিরোধী কবিতা   মফস্বলী-গসিপের মতো জেগে আছে ধুলোমাটির পথ। এই পথ তাকিয়ে আছে রোদজ্বলা আকাশের দিকে। কখনো বাঁশবাগানের  ছায়া পড়েছে তার কোনো বাঁকে।   মানুষ-জীবনের নিহিত সৌন্দর্যের কথা ভাবতে ভাবতে হাসিমুখে  চলেছে আমাদের সুহাস। ওকে চিনে রাখো--- সুহাস এখনও থাকে পুবপাড়ায়।আর বেশিদিন তো সে ওখানে থাকবে না। এই পথ ডাক দিয়েছে তাকে। আজ হয়তো নয়, কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই সে বেরিয়ে পড়বে পথে।  শীতের মাঠে, রুক্ষ বাতাসে সে হাঁটবে একমনে।বন্ধ দোকানের বারান্দায় কুপির আলো জ্বেলে তাসুড়েরা খেলছে তাস।  তাদের চোখেমুখে রাজ্যজয়ের বিকট উল্লাস। সুহাস তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবে না! অনন্তের পথ বন্ধুহীন।  এক টুকরো বৃষ্টিমেঘ এখন সঙ্গী হলো তার। আর একটু এগোলেই খেয়াঘাট।দ্রুত হাঁটছে আমাদের সুহাস।    পাখি ডাকছে।জেগে আছে তরুলতা।

রাজদীপ ভট্টাচার্য

ছবি
  কৃষি ও শিল্প কৃষি আমাদের বর্তমান  শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ  তুমি আলের উপর দিয়ে  পাখির মতো দুটি হাত  দু'পাশে মেলে দিয়ে হাঁটছ,  অনভ্যাসবশত দৌড়তে পারছ না,  অথচ লকলকে সবুজ ধানের ডগারা  তোমাকে হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে আমরা আপাতত কৃষিকাজে আছি এভাবেই উড়তে উড়তে একদিন  ধান পেকে হলুদ হয়ে যায়  পাঁজা পাঁজা ধানের আঁটি ভেসে চলে যায় ধানকলের দিকে তারপর আমি দূর থেকে দেখি চিমনির গলগলে ধোঁয়া  দেখি তোমার দূরগামী এরোপ্লেন  তখন আমরা মেসেঞ্জারে কথা বলি কৃষি আমাদের বর্তমান শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ  তখনও তুমি সোনালী ছবি আঁকো আমি পেরেক ঠুকে দেওয়ালে টাঙাই কৃষকের লোহু ধানে দুধ আনে  নিজের বুকে নিজেই পেরেক ঠুকি ঠকঠক ঠকঠক করে শব্দ হয়  

রবীন বসু

ছবি
    শ্রাবণশ্লোক শ্রাবণের বৃষ্টিধারায় অক্ষরেরা ভিজে কাক। আমার সমূহ বিষাদ জড়ো হল দরজায় অভ্যন্তরে ঘন মেঘ, বজ্রগর্ভ অভিমান জমে তুমুল কলহ নিয়ে দুইটি চড়ুই রামগিরি পর্বতের দিকে ডানা মেলে দিল ঘাড় নিচু করে কালিদাস বর্ষার শ্লোক লিখছেন। হতভম্ভ আমি চেয়ে দেখি শ্রাবণ-সরস্বতী, এইমাত্র ভিজেকাপড় থেকে যাবতীয় শ্লোক নিঙড়ে নিলেন।

কৌশিক চক্রবর্ত্তী

ছবি
    ভোরের চেহারা ও পদ্মফুলের অবিন্যস্ত পাপড়ি ভোর হচ্ছে। কেটে গেল একটা গোটা রাত। রোজই রাত যায়, ভোর আসে। পূবের আকাশে ঠিক এমন করেই চকচক করে ওঠে রোদের প্রথম প্রমাণ। আজ আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে প্রত্যক্ষ করলাম প্রতিবিম্ব পরিবর্তনের প্রতিটি কোণ। এই চকচকে আকাশ এক প্রথাগত আশ্রয়। প্রতিটা ভোর কেমন অনায়াসে গিলে নেয় সহস্র নক্ষত্রের সাবলীল অস্তিত্ব। আজ ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে দেখলাম নিজের চেহারা। দেখলাম অসংযত অন্ধকার কিভাবে ফিরিয়ে দেয় অঙ্গীকারবদ্ধ আকাশের পরিপাটি সাধের সংসার। কিছু অন্ধকার সীমাবদ্ধ। ভোরের আলোর দিকে পাশ ফিরলে ধীরে ধীরে কার্যকরী হয় যাবতীয় শিলমোহর। সময়ে অসময়ে নিজের দিকে আরও একটা বিছানা প্রস্তুত করে বাড়িয়ে দিই হাত। রাত্রি নামে বিপর্যয়হীন। ভোরের চেহারা আর পদ্মফুলের অবিন্যস্ত পাপড়ির কথা আমি সবার আগে লিখি কবিতায়।

পৃথা চট্টোপাধ্যায়

ছবি
  জলজন্ম কথা ১ তুমি জানো,আমি জানি,শহরের আর কেউ জানে কি সেকথা ? সোঁদাল নিবিড় জলে ডুবে যায় তিল,ঠোঁট সব কথকতা ছুঁয়ে থাকে শরীরের নিরন্তর ভাপ যেন সাগরের ঢেউ শ্রাবণের অগোছালো দিনে তোমাকেই কাছে চায় কেউ টেনে রাখে মশারির খুঁট কোনো উর্বশীর চোখ এ শহরে অলিখিত ঘোরে এক আশ্চর্য মুখোশ ২ পরম জলের টানে নেমে যাই দিকশূন্যহীন চারিদিকে সাগরের লাল ঢেউ উথালি পাথাল , সূর্য ধোয়া আলো তবু মনে হয় সব অন্ধকার ! জলের ক্ষুধার্ত পোকা, কিলবিল করে ; নিঃশব্দ রাতের কাছে বন্ধক রেখেছে কথা শরীরের সব অহঙ্কার। স্তনবৃন্তে জেগে থাকে মিহিন মল্লার রাগ রাগিনীর সুখ...সাগরের দুধ ফেনা, গুহামুখে মুক্তো ঢেলে হারায় উন্মুখ ! বিমোহিত পঙক্তিমালা হাতে নিয়ে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে নারী, বরসভা ভেঙে যায়, চলে যায় সভাসদ; তার চোখে জল জাদুকরী ৩ কবিতা আসে না কাছে চুপ করে বসে থাকি জলের কিনারে শুধু মনে হয় এভাবেই সন্ধ্যা হোক যুবতীর চক্রাকার শোক আজ খুব ঝোড়ো হাওয়া জীবন উদ্দাম খুলে রাখি ব্যথা টানটান অন্ধ করে দাও আজ গভীর চোখের ওই ঘোর শঙ্খচূড়ের রতি জাপটে ধরেছে ফের মোহ নিশিগন্ধা ফুটেছিল জানে তুমুল শরীর তোলপাড় জলজন্ম হোক বারবার  

অমিত চক্রবর্তী

ছবি
    সবচেয়ে বেশি লিরিক, সবচেয়ে বেশি প্যারাডক্সে ঠাসা  সকালের আলোর কথা আমি আগেও লিখেছি তোমায়, এ অঞ্চলে সূর্য আসে তড়িঘড়ি, খানিকটা শান্তিজল, খানিকটা প্যাস্টেলরঙে মুহূর্তটা সাজছে এখন সবচেয়ে বেশি লিরিক, সবচেয়ে বেশি প্যারাডক্সে ঠাসা। আমাদের রাত্রি ছিল নড়বড়ে, টলমলে ডিঙি নৌকোয় সারাটা সন্ধ্যে আমরা দুর্যোগ, আমরা ঘাত প্রতিঘাতের কথা শুনে আসছিলাম, ঘড়িটা পিছিয়ে পড়ছিল বারবার, টানটান থাকা সত্ত্বেও আমাদের কলারে এখনো কুঁচকানো দাগ, আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় এলোমেলো ভাঁজ।                      নদী কিংবা বুনো ঘোড়া, ছবি আঁকছি এখন দুজনেই, দুজনেই ভাবছি, একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছি সুনয়নী, জানই তো আমি একটু ভবঘুরে গোছের, ভুল শব্দে দিন শুরু করা অভ্যেস, প্রতিজ্ঞাকে বলি ভর্ৎসনা, যন্ত্রণাকে বিভাজন, এখন মেটাফিজিক্যাল নিশ্চুপ দুজনে, ক্ষমা চাইবার সময় হয়তো, বৃহত্তর স্বার্থে আমরা এবার প্রশ্ন ঢালা বন্ধ রাখব ফ্যাকাশে কমেন্টবক্সে।  

ভাস্কর গুপ্ত

ছবি
   দুটি প্যান্টুম ৷৷ ১।।  যে ডেকেছে নদীর ওপাশে সে তো ডাকে মূক ইশারাতে জ্যোৎস্না খেলছে এইপাশে ঐ পাড়ে যাব তার সাথে। সে তো ডাকে মূক ইশারাতে শুধু যার স্বপ্নে যাওয়া আসা ঐ পাড়ে যাব তার সাথে চোখ ছুঁয়ে থাক ভালোবাসা। শুধু যার স্বপ্নে যাওয়া আসা সে থাকুক ঘুমের গভীরে চোখ ছুঁয়ে থাক ভালোবাসা বৃষ্টি হবে আলো মেঘ ছিঁড়ে। সে থাকুক ঘুমের গভীরে জাগরণ কেড়ে নেবে তাকে বৃষ্টি হবে আলো মেঘ ছিঁড়ে স্বপ্ন মেখে যাব তার ডাকে। ৷।২।।  ডাক দিলে প্রিয় ডাকনামে ভুল রঙে এঁকেছ কী ছবি? ঝরাপাতা দেব তাই হাতে গোপনে থাকুক বাকি সবই। ভুল রঙে এঁকেছ কী ছবি? সেই  ছায়া ভোরের আকাশে গোপনে থাকুক বাকি সবই গান ভাসে মেঘলা বাতাসে। সেই ছায়া ভোরের আকাশে তারই রঙ মেঘ  মাখে গায় গান ভাসে মেঘলা বাতাসে সুর হারা সুর খুঁজে পায়। তারই রঙ মেঘ মাখে গায় সেও  পায় জলের ঠিকানা সুরহারা সুর খুঁজে পায় গোপন ব্যথারা পায় ডানা।

মৌসুমী রায়

ছবি
    সুপারনোভা আমাকে বাবা প্রথম আকাশ দেখতে শিখিয়েছিল। আমার নরম হাতটা শক্ত করে বাবার পোক্ত হাতে ধরা থাকতো। পিছলে পড়বার কোন অবকাশ ছিলোনা। শুকতারা,ধ্রুবতারা,সপ্তর্ষিমন্ডল। স্ট্রীটলাইটের মিটমিটে আলোয় তখন তারাদের সকলকে আলাদা ভাবে চেনা যেতো। এখন আমার আকাশের পরিধি অনেক বড় হলেও বাবার দুর্বল হাত থরথর করে কাঁপে।  বয়সের সঙ্গে খানাখন্দ বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।  চলতে গেলেই পিছলে যাই বারেবারে। রাস্তার ঝলমলে আলোয় আকাশটা নিকষ অন্ধকার। তারারা হারিয়ে গেছে রূপকথার মত। এমন কোন মানুষ আর নেই যার হাত ধরে আকাশের নীচে চোখ বুজে হেঁটে যেতে পারি। সেদিনের আকাশটাও আসলে হয়তো নেই। হয়তো বা তারারাও...

মঞ্জরী গোস্বামী

ছবি
    কলহান্তরিতা    ১  এই সামান্য ছায়াটুকু তুমি চাইলেই দিতে পারো কবে থেকে চেয়ে গেছি হিসেব রাখি না  মেসোজোয়িক নাকি সিনোজোয়িক....ছাড়ো আপাতত শরীর ধারণ করো হেমলাইন, পারফিউম মুঠোফোন গলে আসা নরম তাড়না....  ২  একদিন সব ফেলে চুপ করে চলে যাব জানি, এটুকু অভিমান যথেষ্ট  নয় খিদের সংসারে কচুরিপানার নীচে বেকুব পড়ে আছেন আমার অগ্রজ এত যে হরিধ্বনি, স্মৃতিলেপ , পারলৌকিক শূন্যে  মিলিয়ে যায়....বলে যায় শূন্যতে বাঁধো ঘরদোর, বিকিকিনি , আত্মশ্লাঘার শমীগাছ সব নস্যাৎ ওই ফাটলের নয়নতারায়

মৃণালেন্দু দাশ

ছবি
    শঙ্খ লাগা আকন্দ পাতার নিচে বৃষ্টি জল ছুঁই ছুঁই ডাঙা ,ঘাড় কাত করে দেখি , দাঁড়াশের শঙ্খ মুদ্রা --- আমারও  ইচ্ছে  তোমাকে জড়িয়ে ধরি পারিনা , একটা ভয় হাত চেপে ধরে -- হাওয়ায় ভাঙে শীষ , গান উড়ে যায় রাত্রি অনেক, মেঘের বড্ড দাপট --- তোমাকে আজ দেখাবই‌ , শঙ্খ লাগা কায়দা কানুন দেখো, তারপর নিশ্চিন্তে পার হয়ে যাচ্ছো সাতসমুদ্র তেরো নদী ।

সুবিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

ছবি
    বিপ্লব বাড়ি আছ !   ধর তোমাকে একটা ম্যাপ দেওয়া হল আর এমন একটা জায়গা দেখাতে বলা হল যা সেই ম্যাপের বাইরে।  কী করবে? মাথার চুল ছিঁড়তে বসবে ,  একটা একটা করে ?  তুমি বড় এলাকার একটা ম্যাপ চাইতে পার,   একে বলে করুণা ভিক্ষা।  বা নিজেই এঁকে নিতে পার প্রয়োজনীয় বাড়তি আংশ। এই প্রয়োজনীয় বাড়তি আংশ এঁকে নেওয়াকেই বলে ... ' বিপ্লব '!   " বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক "!                      যদিও সে আর বেঁচে নেই।   অনেকটা " লং লিভ দা কিং "!                 অ্যান্ড কিং ইস নো মোর এর মত।

সুস্মিতা গোস্বামী সরকার

ছবি
    তৃষা    চেনা  গেছে  মদির মেঘের সবটুকু,হাড়ে  মজ্জায়। ফোঁপড়া শূন্য সাঁতার আর গর্জন তর্জন..বৃষ্টি কতটুকু আর?   জানে সে যে চড়ে সেই যানে,অমিত আবেগে.. উড়াল অভিযানে!  সামান্য শীতল  পেতে তবু পড়ে থাকে  অবুঝ প্রান্তর, মেলে দেয় হাভাতে অসুখ,পিপাসার  শুখা সরা খান!  একটুকু জলে শুষে নেবে এক আজল আকন্ঠ পান!  মেঘের গহন বেয়ে  পতন বিদ্যুৎ আর সামান্য  ছাঁটের উড়ালে   ক্ষয়ে যায়, পুড়ে যায় রোজকার  সাথি,তাল সারি বন...মিতালি শেকড়! তবুও আবার চাতক.. আবার ফটিক যেচে যাওয়া.......

কুশল মৈত্র

ছবি
    অচেনা জ্যোৎস্নার স্বর ভিতরখানি ক্রমশ ভেঙে চলেছে  মাঝবয়সী লুকোচুরি      নিষিদ্ধ চাঁদ  সুদূরে মায়াবী আলো  গড়িয়ে পড়ছে       বেলাশেষের রোদ  শূন্যে ভাসমান      নির্জনে একা  বিষাদ, বিহ্বল      উন্মাদ চারিদিক ছায়াময় দুঃস্বপ্নের অবসাদ!  মৃত গোধূলি প্রত্নস্মৃতি অবেলা -  সব ভুলের অঙ্ক কষা হয়নি এখনও  আদিগন্ত অন্তহীন রোদ  কুহক মোমবাতি জ্বেলে প্রিয় মুখ  অপেক্ষা, শুধুই অপেক্ষা  অরণ্যের গভীরে যে জ্যোৎস্না  তা শুধু রয়ে যায় অচেনা -  বর্ণহীন শোক এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে  সাদা বকেরা নগ্ন ছায়ার মুখোমুখি  আয়নার প্রতিবিম্বে বেলা পড়ে থাকে  শুধু ছায়া - সে ও আমি!

নূপুর গোস্বামী

ছবি
    টিকটিকি ও..  শেষরাতে  খামার বাড়িতে বৃষ্টি  হলো প্রচন্ড শব্দে।  আমার নিস্তব্ধ ঘরে দুটি টিকটিকি  দুবার  ডেকেই  হাঁপিয়ে দেওয়াল বেয়ে সরসর  এগিয়ে চুপ।   ওরা জানে এ ঘরে একটি ক্ষীন- কায়া মেয়ে থাকে।  সে ওদের গৃহস্থালি ও প্রেম   সম্পর্কে  টুকটাক লেখে এবং ছন্দ উপমা যমক সহ গীতবিতানের প্রিয় কয়েকটি শব্দের শৃঙ্খল নিয়ে ও!   গতকাল গোধূলি লগ্ন থেকে আদুরী টিয়াপাখি চেয়েছি কীর্ণপাখির বাসায় ডিমে তা দেবে বলে!  এ কারণে আমার প্রেমিক বিষন্ন। ও চায় সমস্ত জীবনভর  আমি একটি জলজ্যান্ত  কবিতা সমগ্র হয়ে ভিন্ন স্বরগ্রামে রচিত হই ভিন্ন ঋতুভেদে সকলের মুখোমুখি দাঁড়াই ।

সোমনাথ বেনিয়া

ছবি
    ১৩নং কবিতা পাড়া বাই লেন   দিনের শেষে সব একাকার একথা জানে বিকেলের গুপ্তসংহিতা  তবুও প্রহরের ভিতর পাঁজরের অদম‍্য চলাচল জাগায় অহংকার  মেঠো বাউলের একতারায় স্বপ্নের নিপাট বুনোন ঐশী পরিবেশ ঘিরে  প্রচ্ছন্ন ঢেউয়ের পাশে মনখারাপের শিরদাঁড়া চুপিসারে এসে দাঁড়ায়  এসব হয়তো কোনো শিল্পীর ক‍্যানভাসে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টির কথা বলে  তারপর গন্তব্য ঠিক হলে ডাকটিকিটে ধূসর ব‍্যক্তিগত প্রযত্ন পড়ে থাকে  কে এসে গ্রহণ করবে যাবতীয় কাল্পনিক সত্তার অগ্নিময় কষ্টমালা  ঋতুর প্রতিঘাত নিয়ে গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে যাবে সহজ অনুশীলন হতে  মনে হতেই পারে অসুখ শুরু হলে গাছের ডালে এসে বসবে পাখি  ঠোঁটে তার কোনো পরিত্যক্ত স্বরলিপির গুনগুন অনাদরের মৌমাছি হবে  ঘুমের রকমফের দেখে রাতের নক্ষত্র বিমর্ষের ধারাপাত লিখবে সুখে  ভিতরে ক্ষরণ হলে আগামীর কাছে দৌড়ে যাবে চেতনার ঊহ‍্য যতিচিহ্ন  হৃদয়কে জিজ্ঞাসা করে এক ফ্রেমে হাসিমুখে বসে থাকে মনের অভিন্ন