মৌসুমী ঘোষ
এক যে ছিল জাদুকরী
(এক)
সবুজ পালকের ফেদারস্টিকটা পরশনাথের নাকের ডগার কাছে এনে শ্রেষ্ঠা বলল, বলতো দাদু এটা কী রঙের?
সন্ধের পর পরশনাথ চোখে সঠিক রঙের ঠাহর করতে পারেন না। তবু অভ্যাসবশত বললেন, সবুজ।
শ্রেষ্ঠা নিজের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলল, ‘আবরা কা ডাবরা, গিলি গিলি গে’। তারপর পরশনাথের চোখের সামনে আবার ফেদারস্টিকটা এনে বলল, এবার বলতো দাদু, এর রঙ কী?
এবার পরশনাথ লাল-পালকের ফেদারস্টিকটা স্পষ্ট দেখতে পেলেন। ফোকলা গালে হেসে বললেন, লাল, দিদিভাই, লাল।
প্রতিদিনের মতো ম্যাজিক-পর্ব শেষ ভেবে পরশনাথ টিভির খবরে মন দিলেন। কিন্তু না, আজ আর শ্রেষ্ঠা তার জাদু-ঝুলিতে ফেদারস্টিকটা ভরে নিয়ে চলে গেল না। বরং তা থেকে একটা কালো ছোটো প্লাস্টিকের থালা বার করে তাতে চারটে কয়েন রেখে বলল, বলতো দাদু, এতে ক’টা কয়েন আছে?
পরশনাথ এমনই থতমত খেলেন যে একবার থালাটা, একবার শ্রেষ্ঠার মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে গুনতে লাগলেন, এক, দুই, তিন, চারটে… তবে দিদিভাই এটা আবার কোন জাদুর খেলা?
শ্রেষ্ঠা মুচকি হেসে বলল, আজ থেকে জাদুকুমারী শ্রেষ্ঠা তোমাদের নতুন জাদু দেখাবে। বলেই নিজের দু’হাত বারে বারে উল্টে দাদুকে দেখাল, ঐ চারটে কয়েন ছাড়া তার দু’হাতে আর কোনো কয়েন নেই। ততক্ষণে ছোটোপিসি আর রান্নারপিসি পরশনাথের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
শ্রেষ্ঠা সবার চোখে চোখ বোলাতে বোলাতে থালাটা হাত বদল করল ও মুখে বলতে লাগল, ‘আবরা-কা-ডাবরা, গিলি-গিলি-গে।’ এরপর শ্রেষ্ঠা বাঁহাতের ম্যাজিক থালাটা ডান হাতে ওল্টাল, আর ছ-ছ’টা চোখের সামনে আশ্চর্যজনক ভাবে বাম হাতে রাখা থালার চারটে কয়েন ডানহাতের তেলোতে এসে আটটা হয়ে গেল। পরশনাথের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে শ্রেষ্ঠা বলল, ক’টা আছে গোনোতো দাদু। রান্নারপিসিতো হাঁ করে দু’কানে দু’হাত চাপা দিল।
এভাবে খেলা যখন বেশ জমে উঠেছে, কোথা থেকে ছোটকা এসে শ্রেষ্ঠার মাথার উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে ম্যাজিক থালাটা নিয়ে নিল। ব্যস, অমনি শ্রেষ্ঠা হাঁউমাঁউ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল ছোটকার উপর। ছোটোপিসিও সঙ্গে সঙ্গে তেড়ে গেল ছোটকার দিকে। বলল, মেয়েটা সবে আজকেই মেলা থেকে ওটা কিনে এনেছে, ওকে তুই ওটা দিয়ে দে, ছোড়দা। খানিকক্ষণ তিনজনের লম্ফঝম্ফের পর পরশনাথ ‘তবে রে’ বলে লাঠি তুলে ছোটোছেলের দিকে তেড়ে গেলেন। অমনি ছোটকা কয়েন-থালা ফেলে, দে চম্পট। রান্নারপিসি, ছোটোপিসি, শ্রেষ্ঠা সবাই মিলে তখন চারিদিকে গড়িয়ে যাওয়া কয়েন তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মজার কথা হল, অল্প সময়ের মধ্যে কয়েনগুলো পাওয়া গেলেও ম্যাজিক থালা কিছুতেই পাওয়া গেল না।
(দুই)
ম্যাজিক-থালা পাওয়া যাচ্ছে না বলে শ্রেষ্ঠা তো কেঁদে কেটে একসা। শ্রেষ্ঠাকে থামাতে রান্নারপিসি শ্রেষ্ঠার খেলনার ব্যাগ হাতড়ে একটা রান্নাবাটি খেলার থালা এনে দিল। শ্রেষ্ঠা রেগেমেগে সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। মা ঠাকুরের বাসনের গোছ থেকে একটা থালা এনে দিতে শ্রেষ্ঠা কাঁদতে কাঁদতে বলল, না না, এ থালা সে থালা নয়। ওটা ‘ম্যাজিক-থালা’।
পিসি হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বলল, দাঁড়া না পেয়ে যাবি। আর রাতে না পাওয়া গেলেও সকালে তো পেয়েই যাবি। দাদু কোলে টেনে শ্রেষ্ঠাকে জাদুকর ভোজরাজের কণ্যা ও রাজা বিক্রমাদিত্যের স্ত্রী ভানুমতির জাদুর খেলার গল্প বলতে বলতে আপাতত ভুলিয়ে দিলেন থালা হারানোর শোক।
রাতে শ্রেষ্ঠাকে একা খাটে শুয়ে থাকতে দেখে বাবা গালে ঠোনা মেরে বললেন, চাঁদে এখনো গ্রহণ লেগে আছে দেখছি! শ্রেষ্ঠা বাবার হাত ঝামটা মেরে সরিয়ে দিয়ে খাটের এককোণায় গিয়ে মটকা মেরে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল, মেলায় জাদু বিক্রেতাটা যে ডিমের বা তাসের বা ছক্কার জাদুগুলো দেখাচ্ছিল — সেসবগুলো একদিন না একদিন শিখে নেবে। তখন তার জাদুর ঝুলি থেকে সে একের পর এক জাদু বার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে। মাইকে অ্যানাউস হবে, ‘আনন্দ সংবাদ, আনন্দ সংবাদ, আজ শহরে জাদুকুমারী শ্রেষ্ঠার ম্যাজিক শো। সীমিত আসন। আমাদের প্রচার গাড়ি থেকে অতি সত্বর প্রবেশ পত্র সংগ্রহ করুন।’
ছোটোপিসি যখন মেলা থেকে কয়েনের জাদুটা কিনে দিয়েছিল, তখন থেকেই শ্রেষ্ঠা ভেবে রেখেছে, মায়ের কাছ থেকে ছক্কার খেলাটা, ছোটকার কাছ থেকে তাসের খেলাটা। আর বাবা যদি কোন সময় কাছে ডেকে বলে, কী জাদুকুমারী তোমার ঝুলিতে কতগুলো খেলা লুকিয়ে রেখেছো? তখন বাবার কাছে ডিমের বা বলের খেলাটা আবদার করবে।
কিন্তু শুরুতেই বাঁধ সাধল ছোটকা। কোথায় যে হাপিশ হয়ে গেল ম্যাজিক-থালাটা! কোথায় যেতে পারে — টিভির শোকেসের তলা, ডিভানের তলা, খাবার টেবিলের তলা, দাদুর ইজিচেয়ারের তলা, সব সব তো দেখা হল, কোত্থা-ও নেই! ঠিক তখনই শ্রেষ্ঠা দেখতে পেল সামনে প্রচুর দর্শক, শ্রেষ্ঠা স্টেজে দাঁড়িয়ে ঝুলি থেকে বার করছে কালো প্লাস্টিকের থালাটা। ঐতো ওটাইতো সেই হারিয়ে যাওয়া থালা, ইয়েপ্পি…
(তিন)
রাত তখন অনেক। পরশনাথের আবার রাতে ঘন ঘন বাথরুম যাবার অভ্যাস। বাথরুম থেকে ফিরে মশারির একটা কোণা খুলে নিলেন পরশনাথ। ততক্ষণে জয়শ্রী খাটের কোণায় বসে মিটিমিটি হাসছে। দরজার ছিটকিনিটা ভালোমতো দেওয়া আছে কিনা একবার হাত দিয়ে দেখে নিলেন পরশনাথ। জয়শ্রীর চোখের আর হাতের ইশারায়, পরশনাথ হ্যাঙ্গারের দিকে এগিয়ে পাঞ্জাবীটার সাইট পকেট হাতড়ে ছোটোকালো ম্যাজিক থালাটা বার করে খাটের কোণায় রাখলেন।
—জয়শ্রী তুমি এটা কী করলে? তোমারই তো নাতনি। কী কাঁদাটাই না কেঁদেছে সারা সন্ধে। জয়শ্রী প্রতিবারের মতো অহংকারের হাসিটা হাসল ‘হো হো’ করে। তুমি হাসছ? অথচ আমি এটা কীকরে যে দিদিভাইকে ফেরৎ দেব তাই ভাবছি। জয়শ্রী কিছু না বলেই হাসতে হাসতে মিলিয়ে গেল।
জয়শ্রী চলে যাবার রেশটা কাটিয়ে, বেড সুইচ টিপে আলোটা জ্বালালেন পরশনাথ। দেরাজের চাবিটা বিছানার গদির তলা থেকে নিয়ে একটা পাল্লা খুলে টাকার বাক্সটা নিলেন। বাক্স থেকে একমুঠো কয়েন নিয়ে বাবু হয়ে খাটে বসলেন। দু’হাঁটুর সামনে কয়েন ক’টা রেখে থালাটা হাতের তেলোতে নিলেন। ধীরে ধীরে থালাটা উল্টে-পাল্টে দেখতে লাগলেন। একসময় থালার তলার দিকের একপাশে চোরা কয়েন হোলটা খুঁজে পেলেন পরশনাথ।
কয়েন লুকানোর আসল খেলাটা পরিষ্কার হতেই পরশনাথ বহুক্ষণ ধরে বিভিন্ন সাইজের কয়েন ঢুকিয়ে নিরীক্ষণ করলেন হোলটা। শেষে এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, নতুন পাঁচ টাকার কয়েন, নতুন এক বা দুটাকার কয়েন, আর আধুলি, চারটে করে অনায়াসে ঢুকে যাচ্ছে হোলটায়। কিন্তু পুরোনো পাঁচ টাকার কয়েন, পুরোনো এক-দুটাকার কয়েন, নতুন দশ টাকার কয়েন নৈব নৈব চ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্ব শেষ হলে পরশনাথ কয়েনগুলো জড়ো করে আবার দেরাজ খুলে বাক্সে রেখে দিলেন। তারপর কালো ম্যাজিক থালাটা আবার পাঞ্জাবীর সাইড পকেটে রেখে দিলেন।
দ্বিতীয়বার বাথরুম সেরে মশারির খুঁটটা টাঙিয়ে শুয়ে পড়লেন। রাত আর বেশী বাকি নেই। স্ত্রী জয়শ্রী মারা গেছে তা প্রায় বছর পাঁচেক। তারপর থেকে রাতে ঘুম ভেঙে গেলেই পরশনাথ আজকের সময় থেকে পিছনে হাঁটতে শুরু করেন। কখনো বিয়ের দিন, কখনো সন্তানদের যেদিন যেদিন জন্ম দিল জয়শ্রী, সেসব দিনের দিকে। আরো কত কত দিনের দিকে একা একা হেঁটে চলেন পরশনাথ।
বালিশের পাশেই রাখা বোতলটা থেকে এক ঢোঁক জল খেয়ে পাশ ফিরলেন পরশনাথ।
তখন তার সবে জয়শ্রীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। শহরে ম্যাজিক দেখাতে আসবেন জাদুশ্রেয়সী ডি পুষ্পা। সেটাই রিক্সায় চেপে ক্লাবের ছেলেরা বার বার ঘোষণা করছে পাড়ার এগলি ওগলিতে। কমবয়সী নতুন বউ জয়শ্রী বায়না ধরল — ম্যাজিক দেখতে যাবে। নিউ ব্যারাকপুরে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ত এই পুষ্পা দাঁ ওরফে ডি পুষ্পা, জয়শ্রীর সঙ্গে। সুতরাং যেতে তো হবেই। টিকিটের মূল্য মধ্যবিত্তের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
তবু দু’টো টিকিট কেটে পরশ্নাথ আর জয়শ্রী, দু’জনে সেদিন ম্যাজিক দেখতে গেল জ্ঞান মঞ্চে। ‘ফেদার ফ্যানটাসি’, ‘হংকং মিস্ট্রি’, ‘পেপার ক্যাবিনেট’ নামে উল্লেখযোগ্য খেলাগুলো দেখানোর পর, জাদুকরী দর্শকাসন থেকে কয়েকজনকে মঞ্চে ডেকে নিলেন। জয়শ্রী যাবে বলে হাত তোলায় ওকেও জাদুকরীর লোকেরা মঞ্চে নিয়ে গেল। মঞ্চে তখন আহুত দর্শকরা বোর্ডে জাদুকরীকে অঙ্ক দিচ্ছেন আর তিনি চোখ বাঁধা অবস্থাতেই বলে দিচ্ছেন। সবাই বোকা হয়ে ফিরে আসছে একে একে। কিন্তু জয়শ্রী যে সমস্ত অঙ্ক দিল তা কিন্তু চট করে জাদুশ্রেয়সী করে দিলেন না। জয়শ্রীও মুচকি হাসতে লাগল। জাদুকরী ঠোঁট উল্টে বললেন, খুব শক্ত। আমি ওর মতো অত ভালো নই অঙ্কে। দর্শকাসন থেকে ‘কেয়াবাত’, ‘গুড’ এমন ধ্বনি আসতে লাগল। ব্যাপারটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না অবশ্য। পুষ্পা দেবী শুরু করলেন ‘কথার তুবড়ি’। আর তার সঙ্গে নিমেষেই করে দিলেন অঙ্কগুলো। জয়শ্রীর মুখের হাসি তখন মিলিয়ে গেল। স্টেজ থেকে নেমে এল জয়শ্রী। পাশে বসে পরশনাথের কানে আস্তে করে বললেন, ব্যাপারটা কীভাবে কথার খেলায় সামলালো দেখলে? গল্প-উপন্যাসে পড়েছি, একে বলে ‘প্যাটর’। এটাই ম্যাজিশিয়ানদের প্রধান অবলম্বন। স্টেজে তখন ‘মিরাকল বাক্স’ খেলাটি শেষ হয়ে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ চলছে। ধীরে ধীরে জাতীয় পতাকা নেমে এল, জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠল।
বাড়ি এসে অনেক জিজ্ঞেস করার পর জয়শ্রী শুধু এটুকুই বলেছিল, ছোটোবেলায় সেও নাকি বেনারস বেড়াতে গিয়ে এক মাদারির কাছে কয়েকটি হাতসাফাই-এর খেলা শিখেছিল। না, আর তার মুখ দিয়ে ম্যাজিক নিয়ে কখনো কোনো কথা বার করতে পারেনি পরশনাথ।
জয়শ্রী মারা যাবার পর মাঝে মাঝে রাতে পরশনাথকে দেখা দিয়েছে বইকি। তাবলে, ভর সন্ধেবেলায় অতগুলো মানুষের মধ্যে থেকে থালাটা তুলে নিয়ে রাখবে তো রাখলো পরশনাথের পাঞ্জাবীর পকেটে? আজ এতদিন পর আবার জয়শ্রীর সেই অট্টহাসি, থালা লুকানোর ম্যাজিক, অবাক করল পরশনাথকে। সারারাত বিছানায় এদিক ওদিক করতে করতে ভাবল জয়শ্রী মারা যাবার পর বাড়ির আর কেউ কখনো বলেনি, তারা জয়শ্রীকে দেখেছে। তবে কি নিজের অজান্তেই স্কিজোফ্রেনিক হয়ে যাচ্ছে সে!
(চার)
রাতে ভালো ঘুম না হওয়ায় ভোরের দিকে জোর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পরশনাথ। গভীর ঘুম ভাঙল নাতনি শ্রেষ্ঠার দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে।
—যাচ্ছি দিদিভাই যাচ্ছি, রোশো। বুড়ো হয়েছি। আর তাড়াহুড়ো করতে পারি?
বালিশের পাশ থেকে চশমা নিয়ে চোখে লাগালেন। খাট থেকে নেমে লুঙ্গির আলগা বাঁধনটা আবার কষে বেঁধে দরজার ছিটকিনি খুললেন। নাতনির তো আর তর সইছে না। ‘দাদু ও দাদু’ বলে চেঁচিয়েই চলেছে।
দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল শ্রেষ্ঠা। লাফাতে লাফাতে দাদুর চোখের সামনে থালাটা ধরে বলল, এই দেখ এই দেখ, আমার ম্যাজিক থালা।
শ্রেষ্ঠার হাতে থালাটা দেখে সত্যিই অবাক হলেন পরশনাথ। এত অবাক যে কিছু বলতে পারলেন না। এমনকি দরজার পাশে রাখা পাঞ্জাবীর পকেটটাও চেক করার কথা ভাবতে পারলেন না।
শ্রেষ্ঠা দাদুকে নাড়িয়ে দিয়ে বলল, কোথায় ছিল বলতো? আমার জাদু ঝুলিতে। ইয়েপ্পি, ম্যাজিক-থালা পেয়ে গেছি, বলতে বলতে শ্রেষ্ঠা চলে গেল পিসির ঘরের দিকে।
পরশনাথ নিজেকে সামলে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেখলেন, পকেট খালি। ঘুমের রেশ তখনও পুরোপুরি যায়নি। সামনে তাকাতেই দেরাজের আয়নার কাচের ওপাশে ঝলমলে স্টেজটা দেখলেন। সেখানে জাদুকরী ডি পুষ্পা চকমকে ড্রেস পরে জাদুখেলা দেখাচ্ছে দর্শকদের। কিন্তু পাশে ওটা কে? জয়শ্রীর মতোই দেখতে, কিন্তু জয়শ্রী নয় — দিদিভাই। সবাই বলে, শ্রেষ্ঠাকে নাকি বসানো ওর ঠাকুমার মতো দেখতে। ঠাকুমার মারা যাবার পর হয়েছিল কিনা! তবে কি জয়শ্রীই এসেছে শ্রেষ্ঠার রূপ ধরে!
স্টেজে তখন জাদুকরীর ‘টেম্পল অফ বেনারস’ খেলা শুরু হয়ে গেছে। যেখানে বারানসীর মন্দিরে একটি মেয়েকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে একদল দস্যু মন্দিরের দেওয়াল ভেদ করে চারিদিক থেকে শাণিত তরবারি নিয়ে প্রবেশ করল। ঠিক তখনি মসীহা হয়ে জাদুকরীর আবির্ভাব। পরশনাথ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন, মসীহা ডি পুষ্পাকে আর পাশে দাঁড়ানো ছোট্ট মেয়ে শ্রেষ্ঠাকেও।
****************
সেদিনের কাগজ তখনও এসে পৌঁছায়নি। তাই পরশনাথ চায়ের কাপ হাতে টেবিল থেকে তুলে নিলেন গত দিনের পড়া কাগজটা। সেই খবরটাই আবার পড়া শুরু করলেন যেটা গতকাল কম করে বার তিনেক পড়েছেন। “আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও হাজার হাজার মানুষ ভারতের প্রথম পেশাদার মহিলা জাদুকর ডি পুষ্পার জাদু দেখে মুগ্ধবিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে যেতেন। ১৪ই জুলাই, ২০২০, সেই জাদুকরী চিরতরে বিদায় নিলেন এই পৃথিবীর মায়ামঞ্চ থেকে… "
শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি!
উত্তরমুছুনশ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি!!
উত্তরমুছুনশ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি!!
উত্তরমুছুন