হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
জানলাপ্রদেশ ও গল্পপাতার বিবরণ
এক
আমাদের তো একটাই কথা। একটাই সুর আমাদের। এলোমেলো হাওয়া বলতে ভিন্ন ভিন্ন গলায় প্রতিদিনের সুর। সাতসকালে এমনসব শুনলে মনে হয় নতুন কিছু শুনিয়ে গেল। বেলা বাড়তেই দেখি পিঠ পুড়ে যায়।
দুই
ভিড়ের থেকে একটা সুরের হাত ধরেই তো চিনেছিলাম
অন্তর্দেশীয় এক গূঢ় জানলাকে। একেবারে সামনের প্রদেশ থেকেই খুলে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম এবার বোধহয় আলোর রাজ্য। একটা দুটো শব্দ লিখতে না লিখতেই অন্ধকার। মনেই হবে না কোনো একদিন খুলেছিলাম।
তিন
এখন বলতেই পারি, কাঁদতেই বেশি ভালো লাগে। পা রেখেছিলাম তো সাতসকালেই। তখন তো কিছুই শুরু হয়নি। সংজ্ঞাও লেখা হয়নি। চিনে ফেলা দিয়েই তো লিখে ফেলা যেত কিছু একটা। অবশ্য তাহলে তো আগামী পরশু তরশু — একদিনও নাকে কান্না সুর চলত না। তার চেয়ে এই ভালো — একদিনে খেয়ে-পরে-নেচে নিয়ে আবার নাকে
কান্নায় ফিরে আসা।
চার
মনে পড়ে বৃষ্টিদিনে একচালায় দুটি মুখ। এর মধ্যে কোনো গূঢ়ার্থ নেই। সোজা দুয়ারে উঠে একটু জল বাতাসা মুখে দিয়েই আবার বেরিয়ে পড়া। গল্প হলে দুদণ্ড দাঁড়াতে হয় বুঝি? দু’একজন গল্পের কথা বলেছিল বটে কিন্তু মুখ কেন গল্পেই খুলতে হবে তা মাথায় ঢোকেনি। আসলে মানুষ পালিয়ে গেলে গল্পটাই বোধহয় পড়ে থাকে।
পাঁচ
কোনোদিন চাইনি গল্প হতে। ভিড়ের উল্টোদিকেই হেঁটে গেছি সবসময়। যোগাযোগ বলতে খোলা জানলাটুকুই। বিন্দু হলেও ওটাই সমগ্র আকাশ। আর কিছুর দরকার হয় না — ছিলও না। দিনান্তে জানলা খুলে জল হাওয়া মাটি — বুকের কাছে বন্ধুর হাত। কোনো কথা নয় — শুধু দুটি হাত যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দেওয়া। ঠিক এখান থেকেই অনেক অনেক দূরে হারিয়ে গেছি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন