নিলয় নন্দী

  

ভ্যানগগের মিতা

 

ডায়েরির প্রতিটি পাতায় সূর্যমুখীর ক্ষেত, হলুদ আঁকিবুঁকি। শরীরে হঠাৎ সূর্যোদয়। পাশের ক্ষেতে মেয়েরা মেটে আলু কুড়োচ্ছে। সেই আলুর খোসা রোদের গায়ে ডলে দিয়েছে কেউ। বাদামী পোড়া দাগ স্তনে, জঙ্ঘায়, নখের আঁচড়ে। ওরা কেউ ভিনসেণ্টকে চেনে না। চেনে লোভ, কাম, বিষগদ্যের ধার। ওদের বুকের ভিতর মেঘ নামে, কিউমুলোনিম্বাস। ওই যে দূরে অর্ধেক নদী, তার গায়ে আরো অর্ধেক এক মানুষ, ক্যানভাসে নীল হলুদ ব্রাশস্ট্রোক, আবহে আইয়েলোর পিয়ানো, ওকে ওরা চেনেনা। আলো কমে এলে মেঘ পাতে বিষণ্ণতা ফাঁদ, যেন কেউ এসে ধরা দেবে। কানের পাশে লেপ্টে আছে ভিজে চুল। কাজল চোখে অধরা ইউটোপিয়া। উপত্যকায় দুলছে ক্যানভাস, কানের লতিতে দুরন্ত ঘূর্ণি। নদীর বাকি অর্ধেক, বৃষ্টি। এলো বুঝি? ভিনসেণ্ট চেনে মেয়েটিকে?... হয়তো আধেক চেনা। তাই তো নদী আঁকে, বৃষ্টি আঁকে না। ডাকবাক্সে থিও'র চিঠি এসে পড়ে আছে সপ্তাহভর। ডাচ মুদ্রা ছড়িয়ে ঘরময়। অভাবের ক্ষতে অয়েল ড্রপলেট। শিখীপাখা মেয়ে, কোন দেশে থাকো? কি নাম তোমার? চই চই?... এত বৃষ্টি যে ঘর ভেসে গেছে। দৌড়ে বেরিয়ে আসছে হাঁসের দল। চই চই... চই চই...। ক্যানভাস অভাব চেনে না, ওড়না চেনে। চেনে মেঘমল্লার, পরিযায়ী ছটফট বা প্রসবকাতরতা। ভ্যানগগ কোনদিন কবিতা লেখেননি। জয় কি ছবি এঁকেছেন কখনো? ট্রেসিং পেপার ফুঁড়ে জয়ের মেঘবালিকা যখন জুড়ে বসে ভ্যানগগ ক্যানভাস, তখনই তুমি সঙ্গী বদলাও। ও বাউল, তোমার একতারা বেয়ে ওঠে লাউডগা কামফুল। বৃষ্টির ফোঁটা যেন নাকছাবি। আমিও ঝাঁপ খুলে বসি। ভ্যানগগ বেচি। কে নেবে গো, স্টারি নাইটস? অ্যাই মেয়ে, নেবে? তোমার হলুদ ছাতা মেলে দিয়ে চলে গেছো সেই কবে! গমক্ষেত পুড়ে আংরা হয়ে গেছে। কা কা ডেকে চলে বায়স অবতার। ক্যানভাস ভিজে যায়... 


একটা ইশারা রেখে যেতে পারতে, ভিনসেণ্ট। বাঁ কানের থেকে মুষলধারে রক্ত পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে থিওর বাসর, ভিজে যাচ্ছে গ্যাব্রিয়েলার বাড়ি। আমরা তো ওদের চিনি না। তোমাকেও চিনিনি মিতা। আবছায়া বৃষ্টির মধ্যে তুমি হারিয়ে যাচ্ছ।বাউলসখা, ঝিঙেফুল, ঢেউ আর ঢেউ... 


শুকোতে দেওয়া তেলরঙ ক্লিপ খুলে উড়ে যাচ্ছে। মিলিয়ে যাচ্ছে অর্ধেক মানুষ। আমি তারাভরা রাত বেচছি অথচ আকাশে আর একটিও তারা নেই...

"নহী আয়ে, নহী আয়ে 

কেশরিয়া বালমা হামার

অংগনা বড়া সুনসান... " 


অঝোর বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে রাত।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য