রুমা বসু
সত্যেরে লও সহজে
প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল মেঘ আর বৃষ্টি দাদুনের বাড়ি এসেছে। দাদুনের বাড়ি এলে ওদের ভারি মজা হয়। সারাদিন পড়াশোনার ঝক্কি থাকেনা। অন্যসময়তো হোমওয়ার্কের ঠেলায় হাসফাস অবস্থা। তাই সামার ভ্যাকেশনের লম্বা ছুটি পড়লেই ওরা দুই ভাইবোন এখানে চলে আসে। দাদুন আর ঠাম্মার আদরে ভালোবাসায় লম্বা ছুটিগুলো কিভাবে কেটে যায় বুঝতেই পারেনা। তবে এবারে ওদের আসার কারণ অন্যান্যবারের থেকে আলাদা। এইবারে পরিবেশ ঝড়ের আগের মুহূর্তের মতো থমথমে। ওদের মুখেও হাসি নেই আগের মতো। দাদুন- ঠাম্মা গম্ভীর, মায়ের মুখও শুকনো। এমনকি ছোট্ট মেঘও বুঝতে পেরেছে কোথাও একটা ছন্দপতন হয়ে গেছে। সেও আর দুষ্টুমি করে বাড়ি মাথায় তোলেনা।
বৃষ্টি জানে বেশ কিছুদিন হয়েগেছে তাদের বাবার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। সবাই এতো চুপচাপ কাউকে সে জিজ্ঞাসাও করতে পারছেনা। আসলে মেঘ বৃষ্টির বাবা একজন আর্মি অফিসার। এর আগেও তাকে বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় যেতে হয়েছে। তাই মাঝেমধ্যে বাবাকে ছেড়ে থাকা ওদের অভ্যাস আছে কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। মা দাদুন ঠাম্মা কেউ কিছু না বললেও আড়াল থেকে ওদের কথা শুনে সে এটুকু বুঝেছে যে ওদের বাবা এখন শত্রু শিবিরে যুদ্ধ বন্দী। তার কোনো সঠিক খবর এখনো পাওয়া যাচ্ছেনা।
ক্লাস ফাইভের ছাত্রী বৃষ্টি এটুকু বুঝতে পারে খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তারা। দুপুরে ভাত খেতে বসে গন্ধরাজ লেবুর টুকরোটা দেখে মনখারাপ হয়ে যায় বৃষ্টির। বাবা গন্ধরাজ লেবু মেখে ভাত খেতে পছন্দ করতেন। একটা চাপা কষ্টে ভাতের দলাটা গলায় আটকে আসছিল তার। ঠাম্মা পাশে বসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। চোখের জলও বড়ো অবাধ্য। টস টস করে গড়িয়ে পড়ে। মেঘ সেই সময় খাওয়া ছেড়ে উঠে দিদির মাথাটা তার ছোট্ট বুকে জড়িয়ে ধরে। চব্বিশ ঘণ্টা মতবিরোধ খুনসুটি হলেও সেই মুহুর্তে ভাইকে বড়ো আপন মনে হয় বৃষ্টির। যার বুকে মাথা রেখে নিঃসংকোচে কাঁদা যায় তার থেকে আপন আর কে হতে পারে।
বিকাল থেকেই কালবৈশাখীর দৌরাত্মে সব লণ্ডভণ্ড অবস্থা। ইলেক্ট্রিসিটিও নেই। কখন কারেন্ট আসবে তাও জানা নেই। আগে হলে এই সময়গুলোতে ওরা দাদুনের কাছে কত্তো মজার মজার গল্প শুনতো। এখন দাদুন আর গল্প শোনায়না। সব সময় টিভিতে নিউজ চ্যানেল খুলে নাহলে ফোনের সামনে বসে থাকে। এইসময় গুলো বৃষ্টির একদম ভালো লাগেনা। অন্ধকারের প্রেক্ষাপটে বাবার ছোটো ছোটো আদর মেশানো প্রশ্রয়, খুনসুটির ছবি গুলো চোখের সামনে ভেসে আসে। কবে ফিরবে বাবা? ছোট্ট মাথায় একরাশ উত্তর বিহীন প্রশ্ন নীরবে ভিড় জমায়। স্বপ্নে দেখে উজ্জ্বল হলুদরঙের ফুলে ভরা বাগানের মধ্যে দিয়ে বাবা হেঁটে আসছে। হঠাৎ খুব জোরে ঝড় এলো। দামাল হাওয়ার দাপটে বৃষ্টি চোখ খুলে রাখতে পারছেনা। ধুলোর দাপটে বাবাকে ঠিকমতো দেখতেও পাচ্ছেনা। বৃষ্টি ডেকে ওঠে, বাবা........ কোথায় তুমি? তুমুল ঝড়ের মধ্যে তার গলার আওয়াজ হারিয়ে যায়। উত্তর আসেনা।
ঘুম ভাঙতেই দরজা খুলে বারান্দায় আসেন মহীতোষবাবু। সূর্যের আলো এখনো ভালো করে ফোটেনি। রোজ ভোরে ওঠা ওনার বরাবরের অভ্যাস। আজ আরো আগে ঘুম ভেঙে গেছে। ঝড়ের তান্ডব এখন শান্ত। একটা অদ্ভুত পাঁশুটে আলোয় চারিদিক ব্যপ্ত। সুন্দর হাওয়া বইছে। চারপাশে কত পাখির ডাক। টুকরো টুকরো মেঘের কোলাজের আড়াল থেকে ঠিক একটা থালার মতো গোল সূর্য বেরিয়ে আসে। অমনি সমস্ত আকাশ জুড়ে যে যেন মুঠো মুঠো আবীর ছড়িয়ে দিল। যেন প্রানের হিল্লোল ছড়িয়ে গেল সমস্ত স্নায়ু কোষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। প্রকৃতির এত রূপ- রস- গন্ধ সঠিকভাবে আস্বাদন করতেইতো সারা জীবন কেটে যায়, তাও কেন এতো হানাহানি! যুদ্ধবাজ মানুষ গুলো কবে একথা বুঝবে! প্রত্যুষের কথা কথা ভেবে রাতের ঘুম চলে গেছে। সে তার একমাত্র সন্তান। একটা একটা করে দিন চলে যাচ্ছে অথচ কোনো দিশা পাওয়া যাচ্ছেনা। আগে ছুটিতে ওরা যখন বাড়িতে আসতো বাড়িটা প্রাণ ফিরে পেতো। এখন বাড়িটা থমথমে হয়ে আছে। প্রতিটি সদস্য একে অপরের কাছে চোখের জল লুকোবার এক খেলায় মেতেছে।
এইভাবেতো আর জীবন চলতে পারেনা। মহীতোষবাবু ভাবেন অন্তত বাচ্চাদুটোর জন্যেও তাকে কিছু করতে হবে। বকুলের কথা মনে পড়ে সেইসময়। বকুল ওনার বন্ধু স্নেহময়ের ছেলে। স্নেহময় আজ আর নেই কিন্তু তার ছেলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থেকে গেছে আজও। বকুলের জীবনেও ঘটে গেছে ভয়ানক বিপর্যয়। কিন্তু বকুল থেমে থাকেনি। ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মেতে আছে নিজের জগৎ আর কর্মকান্ড নিয়ে। মহীতোষবাবু আগে প্রায়ই গেলেও অনেকদিন আর যাওয়া হয়নি। তিনি মনস্থির করেন আর দেরি নয়। আজই যেতে হবে সেখানে।
এতো ভোরে মিসকল দেখে একটু অবাকই হয়েছিল বকুল। এইসময় সাধারণত তাকে কেউ ফোন করেনা। তাই কললিস্টে মহীতোষকাকুর নাম দেখে একটু অবাকই হয় সে। বাবার জীবদ্দশায় উনি প্রায়ই বাড়িতে আসতেন। বকুলও বাবার সঙ্গে ওনার বাড়ি গেছে বহুবার। মহীতোষকাকুর ছেলে প্রত্যুষ ওর খুব ভালো বন্ধু ছিল। ছোটো বেলার অনেক মধুর স্মৃতি আছে প্রত্যুষের সঙ্গে। আর্মি জয়েন করার পরেও যোগাযোগ ছিল বেশ কয়েক বছর। পরে ধীরে ধীরে সময়ের স্রোতে ভেসে গেছে দুজনেই। পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়েছিল একসময়ের প্রানবন্ত সম্পর্ক। কিশোর প্রত্যুষের মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। মুখে চোখে জল দিয়ে প্রথমেই ফোন করে মহীতোষকাকুকে। অনেক কথার শেষে যখন ফোন রাখে তখন চোখের কোনায় জন্ম নিয়েছে মুক্তবিন্দু।
সকাল সকাল জলখাবার খেয়েই মেঘ বৃষ্টি দাদুনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে। আগের দিন দাদুন ওকে বলেছিল একটা সারপ্রাইজ দেবে। আজ মহীতোষবাবু ব্যাগ ভর্তি করে বাজার করেছেন। তরিতরকারি মাছ মাংস প্রচুর পরিমাণে কিনেছেন। সেই সঙ্গে লজেন্স, বিস্কুট, কেক, বেলুন, পেন, পেন্সিল অনেককিছু। বৃষ্টি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা এতো আয়োজন কিসের জন্য। ব্যাগগুলো একটা ভ্যান ডেকে তার উপর তুলে কোথায় যেতে হবে নির্দেশ দিয়ে দাদুন ওদের নিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। সারাটা রাস্তা দাদুনের মুখে কুলুপ। ওদের রিক্সাটা হু হু করে ছুটছে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে। দুপাশে আলো হয়ে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। বাজার থেকে বেশ খানিকটা দূরে বড়ো রাস্তা পেরিয়ে নিরিবিলি জায়গায় কমলারঙের একটা মস্ত বড়ো বাড়ির বাইরে দাঁড়ালো রিক্সাটা।
বাড়ির সামনে জ্বলজ্বল করছে 'আলোর বাসা' নাম। জিনিসপত্র ভর্তি ভ্যানটাও কিছু আগে এসে পৌছে গেছে। ভ্যানওয়ালা ভিতরে চলে যায়। হতভম্ব মেঘ বৃষ্টি দুকদম পিছিয়ে আসে, আগেতো কখনো আসেনি এখানে। ভিতরে একটা বাগানে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। ঠিক তখনই বৃষ্টির চোখে পড়লো দূরে একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে। ঠিক মেঘের বয়সী। তাদের অবাক হয়ে দেখছে। দাদুন ভিতরে ঢুকেই হাঁকডাক শুরু করলেন, -কই গো কোথায় তোমরা?
ঋভু অকালে চলে যাওয়ায় তার স্মৃতিতে আর রিক্তার ইচ্ছায় নিজেদের বসতবাটিতে এই আশ্রম শুরু করেছিলেন বকুল। ' আলোর বাসা' নামটিও ওর স্ত্রী রিক্তার দেওয়া। অনাথ শব্দটিতে তীব্র আপত্তি আছে বকুলের। এরাও ওদেরই সন্তান। ঋভুর স্বল্প জীবনের স্মৃতি ছড়িয়ে আছে এই বাড়ির আনাচে কানাচে। ঋভুকে ছেড়ে রিক্তা যে একমুহূর্তেও থাকতে পারত না।
-আমার আর এখানে থাকতে একটুও ভালো লাগছেনা। চলোনা অন্য কোথাও চলে যাই। রিক্তা প্রায় সবসময়ই একথা বলতো
- কোথায় যাব বলো? এই বাড়ির প্রতিটি কোনায় ঋভু জুড়ে আছে, আমরা কোথাও চলে গেলে ও একা হয়ে যাবে। কষ্ট পাবে। বকুল বোঝানোর চেষ্টা করে যেত প্রতি মুহুর্তে। কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি রিক্তাকে। মাত্র তিন দিনের জ্বরে ঋভুর মা ঋভুর কাছেই চলে যায়।
চোখ বন্ধ করলে আজও তার পাটভাঙা শাড়ির খসখস শব্দ, চুলের তেলের গন্ধ অনুভব করে বকুল। মহীতোষবাবুর হাঁকডাকে চটক ভাঙে বকুলের। বাচ্চা পরিচারক মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশ জনের পরিবার। বকুলের অক্লান্ত পরিশ্রমে আর আন্তরিকতায় আলোর বাসায় আলোর অভাব কখনো হয়নি।
বৃষ্টি অবাক হয়ে দেখলো দাদুনের ডাকাডাকি শুনে অনেকগুলি ছোটো ছোটো বাচ্চা বেরিয়ে আসে। ওদেরই সঙ্গে বেরিয়ে আসেন সৌম্যদর্শন ব্যাক্তি, যাকে দেখলেই সমীহ হয়। দাদুন ওদের সাথে বকুলকাকুর পরিচয় করিয়ে দেন। বকুলকাকু ওদের বাবাকেও চেনেন, বাবার ছোটোবেলার অনেক অজানা মজার মজার গল্প ওরা আজ জানতে পারলো। চোখের পলকে কেটে গেল বেশ কয়েক ঘন্টা। ততক্ষণে ছোটদের হাতে কেক, বিস্কুট, লজেন্স দেওয়া হয়েগেছে। উপহার পেয়ে যেন হাজার রংমশালের আলো ফুটে উঠল নিষ্পাপ মুখগুলোতে। তারপর সারাদিন ধরে অনেক হইচই মজা আর আনন্দ। কেউ লজেন্স খেয়ে খিলখিল করে হাসছে, তো কেউ বেলুন ফাটিয়ে ফেলে কান্না জুড়েছে। কখন যে খেলায় হাসিতে গল্পে সময় কেটে গেল ওরা বুঝতেই পারলনা। এবার খেতে বসার পালা। দাদুন যা যা বাজার করেছেন সেই সবই রান্না হয়েছে। মেঘ বৃষ্টিও সবার সঙ্গে শালপাতার থালায় মাটির ভাঁড়ে জল নিয়ে খেতে বসেছে। এর আগে ওরা কখনো এইভাবে খায়নি। কদিনের সেই দমবন্ধ করা গুমোট পরিবেশ কেটে গেল একলহমায়। কখনো কখনো এক এক পরিস্থিতিতে মানুষের মনে এক এক অনুভূতির জন্ম হয়। এখন যে অনুভূতির জন্ম হলো তা বড়ো পবিত্র। এরই নাম আনন্দ। আজকের দিনটা জীবনে কখনো ভুলবেনা বৃষ্টি। ওর স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে। এই বাচ্চারা জীবনে মা- বাবার আদর পায়নি, পরিবার কি জিনিস জানেনা। এদের তুলনায় সে অনেককিছু পেয়েছে। বৃষ্টির ছোট্ট জীবনটা সোনা হয়ে গেল ওদের স্পর্শে। নতুন জন্ম হলো তার। এইসব ভাবতে ভাবতেই একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল বৃষ্টি। ঘোর কাটলো বকুলকাকুর কথায়।
- মন ঠিক হয়েছে লিটল প্রিন্সেস?
- একটু হেসে ও উত্তর দিল। হ্যাঁ, খুব ভালো কাটলো আজকের দিনটা।
খুব আন্তরিক ভাবে বকুলকাকু বললেন - দেখো, কষ্ট পাওয়া- বিশেষ করে আপনজনের বিচ্ছেদে পাওয়া কষ্টও জীবনের একটা অঙ্গ। এই জীবনে আরো আঘাত, আকাঙ্ক্ষিত বস্তু না পাওয়ার যন্ত্রণা বহুবার আসবে। তাই এই সত্যিটা তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করাই ভালো। হয়তো এই কষ্টগুলোই আমাদের আরো পরিণত করে।
এসো তোমাকে আজ একটা মন্ত্র শিখিয়ে দিই। দুঃখ- কষ্ট জয় করার মন্ত্র। যখন খুব কষ্ট হবে তখন এই মন্ত্রটা বলবে। রবি ঠাকুরের কবিতা। সারাজীবন সঙ্গে রেখো।
- কোন কবিতা কাকু?
দরাজ কন্ঠস্বরে বকুলকাকু আবৃত্তি করলেন-
" বিধির সঙ্গে বিবাদ করে/
নিজের পায়েই কুড়ুল মারো,
দোহাই তবে এ কার্যটা যত শীঘ্র পার সারো।
খুব খানিকটা কেঁদে কেটে
অশ্রু ঢেলে ঘড়া ঘড়া/
মনের সঙ্গে একরকমে করে নে ভাই,বোঝাপড়া।.........
মনেরে তাই কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে"
এই কবিতা বৃষ্টি আগে কখনো শোনেনি। ধীরে ধীরে মনের পাষাণ ভার যেন হালকা হয়ে যাচ্ছিল। ধরা গলায় বকুলকাকুকে বললো, আমি মনে রাখবো।
নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া চলতে থাকে অহরহ। বৃষ্টি মনে মনে ঠিক করে বড়ো হয়ে সে এই পরিবারের আপনজন হয়ে ফিরে আসবে। পড়ন্ত সন্ধ্যায় একটা সারাদিন উড়তে উড়তে জমা হয় মনের মনিকোঠায়। বাবার ফিরে আসা বা না আসা তার জীবনে অবশ্যই প্রভাব ফেলবে তবু জীবনতো থেমে থাকবেনা। সবুজ মাঠে বল ঠেলতে ঠেলতে মেঘ হয়তো একদিন এগিয়ে যাবে অনেকদূরে কোনো গোলপোস্টের খোঁজে। তার আর ফিরে দেখার অবকাশ থাকবেনা।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ইছামতীর বুকের আছে। নীলচে কালো সুতোয় বোনা আকাশে তখন সন্ধ্যাতারার উঁকিঝুকি। ওর আত্মায় মিশে যেতে থাকে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন। বুক ভরে শ্বাস নেয় বৃষ্টি। আকাশে অযুত নক্ষত্রমন্ডলীর উজ্জ্বল প্রকাশ। দিগন্তঘেরা সবুজ গাছগাছালিতে অন্ধকারের প্রলেপ লেগেছে। বাতাসে মুক্তির গন্ধ।
যখন সে আবার আলোর বাসায় ফিরবে তখন বকুলকাকুর চুলেও পাক ধরবে, চশমার কাঁচ আরো একটু মোটা হবে কিন্তু তার দরাজ কন্ঠস্বর আর ঝকমকে হাসি একই থাকবে সে বিষয়ে বৃষ্টি নিশ্চিত। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার বেশ অনেকটা গাঢ় হয়েছে। দূর থেকে ভেসে আসা আজানের সুরের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে মঙ্গলশঙ্খ ধ্বনি। পেঁজা মেঘের আড়াল থেকে দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয়ার চাঁদ। পথের ধারের নাম না জানা জংলী ফুলের তীব্র বনজ গন্ধের সঙ্গে খুনসুটি জুড়েছে হুল্লোড়ে হাওয়া। সন্ধ্যায় পাখিরা নীড়ে ফিরছে। বৃষ্টির আত্মায় অনুরণন তোলে -
" ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে"।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন