দেবাশিস ঘোষ
অন্ধকার সংলাপ
এতসব ধাতব চিৎকার! সুস্থিতি কোথাও নেই। নদীর সেই প্রশান্ত গতায়াতেও দূষণের ঘনঘটা। হাওয়ার ওপর দিয়ে চলে যায় মেঘ। চলে যায় শ্রাবণ। ওপারে নক্ষত্রপুঞ্জ মেঘের আয়নায় দেখে নিজেদের মুখচ্ছবি। আমি এক বিন্দু মেঘ। জন্মেছি মেঘের মতো। অনেকে আলোর ঝর্ণা হয়ে জন্মায়। পুড়ে শেষ হলে তারা বাতির গুঁড়োর মতো টুপটাপ ঝরে পড়ে বৃত্তাকারে। আমার তেমন হওয়া হল না। সেটা সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য তাও জানা নেই। মেঘ হয়ে জন্মানোও কম কীসে! অথবা তারাবাতি... কেউ কারোর মতো নয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমারও ডাইনোসরের মতো পিঠে লম্বা লম্বা দাঁড়া আছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমোতে পারি না। দাঁড়াগুলো বেঁকে যায় যন্ত্রণা দেয়। ছোট ছোট দুটো হাত দুর্বল। সমস্ত শক্তি মুখের ভিতর থাকা মোটা জিভ আর খাঁজ খাঁজ দাঁতে। জেগে থাকি সারারাত। অন্ধকার দেখি। অন্ধকারকে ফুঁড়ে ফুঁড়ে আলোকাক্ত করে ছোট বড় এল ই ডি। অন্ধকার কাঁদে। কাঁদে গাছ। ওভারটাইম কাজের চাপে। শ্বাস নিতে পারে না মাটি। তার বুকে টন টন বাড়িঘর।
অন্ধকার কী দিয়ে তৈরি! হয়ত লক্ষ কোটি মৃত তারার অস্তিত্বের ইতিহাস অন্ধকার। সব মৃত্যুরাই অন্ধকারে মিশে থাকে। কিন্তু আমি তাদের ছুঁতে পারি না। মৃতদের খুঁজে ফিরি। পাই না তাদের। শুধু তাদের একটা দুটো কথা দূর থেকে বর্ষাভেজা অস্পষ্ট ভেসে আসে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশকাল স্থায়ী হয় তারা। তাদের সঙ্গে সংযোগ করা যায় না। শুধু একপাক্ষিক বার্তা হয়ে থাকে।
হয়তো এসব কোনও কিছুই নয়। অন্ধকার এক নির্মাণ মাত্র। যে আলোর উল্টোদিকেই নয়। আসলে ফুলের কুঁড়ি যেভাবে ধীরে ধীরে খুলে যায় সেভাবেই অন্ধকার স্তরে স্তরে খুলে যেতে যেতে আলোক। শেষ প্রহরে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর জেগে উঠি। দেখি লেজহীন, পিঠের দাঁড়াহীন একটা দুর্বল মানুষ আলো ছুঁয়ে দেখে। সকাল আসে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন