বর্ণালী মুখোপাধ্যায়
ভিজিট টু দ্য ব্লাইন্ড স্কুল
আপনি এলে উষ্ণতা আসে ম্যাডাম। না হলে? অফুরান শীত।
ভেবেছিলাম শ্যাওলা-ধরা সিঁড়িগুলো ধরে দোতলায় উঠবেন যখন, আমি ঠিক সামনেই থাকবো আপনার। যেমন থাকে আমার হাতের লাঠি ,আপনার হঠাৎ পিছল লাগলে মুঠোয় চেপে ধরবেন আমার কাঁধের শার্ট। তখন আমার নাক সেই মৌসুমি গন্ধ খুঁজে পাবে। আপনার চুল থেকে আসে গন্ধটা। ম্যাডাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই বাঁদিকের প্রথম ঘর আমার। বেখেয়ালে যেই পা রাখলেন, জানলারা বৃষ্টির ছবি আঁকবে বেশ!! -“আরে!আরে! তোমার বিছানা ভিজে গেল যে" বলে প্রবল হুড়মুড়িয়ে সার্শি বন্ধ করতে গেলেন আপনি আর ভালোবাসারা সোঁদাল হাওয়া হয়ে উঠে এলো বকুল বাগান থেকে।
এ ভাবে সত্যিই একদিন এলেন ধরুন আপনি!!এই ঘর,এই আলনা,সারাদিন টুপটুপ জল পড়া ভেজা বাথরুম---সবটুকু ঘুরে নিলেন অনায়াস তরঙ্গে!আর আমি ভাবছিলাম ,আজও কি তাঁর শাড়ি কোন অলৌকিক রঙ ধরেছে? তাঁর শরীরের কোন এক গোপন খাঁজে আঁকা রয়েছে সে এক আশ্চর্য উল্কি! একদিন খুঁজে নেবো আমি! সেখানে অচেনা গন্ধ! নিদাঘ দুপুরের মতো তীব্র, কস্তুরীর মতো উন্মুখ। নিয়তি জানে, ঐ উল্কিতে লুকিয়ে রয়েছে আমার পাপের উল্লাস ! জীবনে অন্তত একটিবার সেই পাপ আমার অন্ধ চোখে আলো জ্বেলে দেবে।
অন্তত একটিবার সেখানে চোখ রেখে , সাত সাতটি কুহক রং চিনতে পারব আমি!
আপনি সেদিন একটিও দীর্ঘশ্বাস খরচ করবেন না আমার জন্য। আমার সর্বজ্ঞ আঙুলের খাঁজে খাঁজে কি যেন লিখে জানতে চাইবেন--“সব তো আঙুলের ডগায় তোমার! বলো দেখি কি লিখলাম এবার?"
আমার তৈরি মোমবাতি আর বেতের ট্রে সেদিন ছুঁয়েও দেখবেন না আপনি। খেয়ালী স্বরে গুনগুন করবেন-- ‘আলবেলা---সজন আও রে’ হঠাৎ ফিরে বলবেন--“তোমার মায়ের কথা বলো না একটু, শুনি।” দারচিনি গন্ধে পৃথিবী ভরে উঠবে ঠিক সেই মুহূর্তে । বাকি সকলে চলে যাবে,শুধু আপনি বিকেলের অপেক্ষায় রাত অবধি বসে থাকবেন আমাকে ঘিরে। আমি বলবো- ‘আপনি এলে বৃষ্টি আসে। না হলে অফুরান শীত। আঙুলের রঙ নীল হয়ে যায় ম্যাডাম! ছাতের কোণ থেকে দেখুন, সবকটি ঋতুতে জল ঝরে । শুধু আপনি এলেন বলে আজ সেই ফাটল সমকোণিক আলোক স্তম্ভ তৈরি করেছে! আপনি সেটুকু দেখে, ওমা!ম্যাজিক!বলে উন্মুখ হয়ে ওঠেন।
-আপনি এলে বৃষ্টি আসে আবার রোদ ও। এমন কি করে যে হয় ম্যাডাম!!আমি জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে আপনি বলবেন,-- সে ও তো একটা ম্যাজিক!!
আদতে এ সব কিছু হয় না। আমার জমানো অভিমান তীব্র অভিশাপ হয়ে ছুটে যায় আপনার দিকে। কিন্তু ছুঁতেই পারে না আপনাকে। কোনদিনই পারে না।
আজও চারুকলা বিকাশ কেন্দ্রের একতলায় এলেন আপনি। মোমবাতি ও বেতের কাজের খুব তারিফ করলেন। একঝুড়ি আম এক তরফা করুণা হয়ে পড়ে রইলো টেবিলের কোণে।
তবুও ম্যাডাম!শব্দ জমাচ্ছি। পরের ভিজিটে যদি দোতলার অন্ধ আবাসটি দেখতে চান!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন