দীপশেখর চক্রবর্তী
...........................................................................
অবদমিত যৌনতার প্রদেশে বাস করতে করতে বেশ ক্লান্ত লাগে।ঘুমের ভেতর একটা দরজা খুলে যায়।আমি ক্লান্ত শরীরে হাতের ভেতর জাগিয়ে তুলি হাত।আমি জীবনের মধ্যে জাগিয়ে তুলি জীবনের অবশিষ্ট।যে কাঠের ঘোড়াটি গতবার শীতে মেলার ঘূর্ণি থেকে আলাদা হয়ে চিরদিন থেকে গিয়েছে আমার ঘরে তার মাথায় হাত বুলোই।দুপুরের প্রেতের সাথে কথা বলে চলেছে হেমন্তের কাকটি।তাকে আত্মা খেতে দি,খুঁটে খুঁটে খায়।
আমার হাত এগিয়ে যায় নিষিদ্ধ সম্পর্কের দিকে,আমার ঠোঁট এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে বয়ে চলা ঝড়ের দিকে।অবদমিত যৌনতার প্রদেশে তোমাকে দেবী বলে ভাবতে শিখিনি।বন্ধুরা আমার বিশ্বাস উপড়ে ফেলে দিয়েছে আর সেই কাঠের চিতায় তাদের মুখগুলো সাজিয়ে রাখি।আগুন জ্বালাতে পারি না কারণ একশো বছর ধরে আমি শুধু ভিজেছি কাকের মতো।এখন হেমন্ত এসেছে।দুপুরের প্রেতেদের সাথে কথা বলার দিন ঘনিয়ে এলো।
মেয়েদের উন্মুক্ত শরীর আমাকে তত টানে না।বরং তাদের কথার ভেতর থেকে একেকবার এক একটা জ্বলন্ত পাথর ধেয়ে আসে পৃথিবীর দিকে।বায়ুমন্ডলে পুড়তে পুড়তে এগিয়ে আসে।ছোট থেকে আরও ছোট,গভীর থেকে আরও গভীরে।
যেখানে এসে পড়ে সেখানে এক বসতি গড়ে ওঠে
আমার শরীরের ওপরে বসতি।সেখানে আগুনের খেলা দেখানো ছেলেটির পিঠে উল্কি দেখে ঘুম হয়না সমাজপতির যুবতী বউয়ের।
তাদের হৃদয়ের গভীরে যাই।তোমাকে মনে আসে আমার।বাতাবিলেবু গাছ পার হয়ে গেলে তোমার বাড়ি দেখা যেত।উঠোনের কলতলায় এঁটো বাসনের ফাঁকে তোমার দুচোখে দেখা যেত সাপের শীতঘুমকাতরতা।
প্রবল গন্ধে তুমি মোহময়ী রূপ ধরতে তুমি।এমন তোমাকে দেখিনি ইশকুল ফেরত।এমন তোমাকে দেখিনি রান্নাঘরে হাত পুড়োতে।অপেক্ষা করো,অপেক্ষা করো,ছড় আনি।আহা কী মধুর সুরকার আমি আজ এই পৃথিবীর বুকে জন্ম নিলাম।
জন্ম নিলাম তাই মৃত্যুর ভেতর বহুদূর চলে যেতে ইচ্ছে হয়।দুরন্ত পশু হয়ে ঘাড় কামড়ে তোমার নিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় মৃত্যুর গভীরে।তবু এ বাঁশিকে আমি কোথায় লুকোই?
প্রতিটা রন্ধ্র থেকে উঠে আসে মায়ের হাতের রান্নার ঘ্রাণ।ওহো হেমন্তের রাত তুমি পিঠ পেতে দাও,আমি নৃত্য করি,আমি তোমার উন্মুক্ত পিঠে এঁকে দি সেই কল্পনা।ওহ হেমন্তের রাত ফসল পোড়ানো কোন বিকেলে তুমি জানালার ভেতর কি দৃশ্য যে রেখে যাও।
ইশকুলের পাঁচিল টপকে আমরা চলে যেতাম শাদা জামার ওপরে মেয়েদের স্ফিত বুক দেখার আগ্রহে।আমরা পুরোনো বাড়িত বৃদ্ধ দম্পতির অসহায়তা মেনে নিয়ে চুরি করে নিয়ে এসেছিলাম আশ্চর্য সব ফল।এইসব হেমন্তের দুপুরে আমরা রেখে এসেছি আর কোজাগরী চাঁদের ভেতর রেখে এসেছি আরও আরও কলঙ্ক
অবদমিত যৌনতার প্রদেশে বাস করতে বড় ক্লান্ত লাগে।মনে হয় উচ্চমানের বেহালাবাদক আম শুধু ছড় নিয়ে বসে থাকি।মনে হয় আমার শরীরের ভেতর এক জল টলমল করে,উপচে উঠতে চায় অথচ তেমন রাত আর নেই।
যে রাতে আমরা স্বচ্ছাচারির মতো একে একে শহরের সমস্ত আলো ঢিল ছুঁড়ে ভেঙে ফেলেছিলাম।অরণ্য চাও আমার ভেতর?চাও অপদার্থগুলোর মুখোশ টান মেরে খুলে এনে পোড়াই?পোড়ালে আলো হয়?
মাথার কাছে বন্দুক ধরলেও আমার কিছুতে ভয় করে না।আমি জানি সবই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।আমি জানি বন্দুকটা হাতে নিয়ে ওরা নিজেদের রাজা ভাবছে অথচ বুলেটের সাথে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।
ওরা বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।আমিও চাই না তোমার বিশ্বাসঘাতক হতে।বুকের ভেতর একে একে সমস্ত উগ্র গন্ধের গাছ তুমি পুঁতে দিতে পারো।তুমি পারো ইচ্ছেমতো প্রলয়ের ঘন্টাটা বাজিয়ে দিতে
প্রলয়ের ঘন্টা বাজলে প্রেমিকেরা বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে সমস্তটা দেখে নিতে।আমার নেশা ধরে।প্রবল নেশা ধরে তুমি জানো।যেমন জানো তুমি
আমাদের নিষিদ্ধ সম্পর্ক ছিল।জানো তুমি সমস্ত আধুনিকতার মাঝে প্রাগৈতিহাসিক পড়ে আছে আমাদের শীতের কম্বল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন