চন্দ্রাণী বসু



রোদ্দুর

ছোট্ট রোদ্দুরের মুখে মেঘের ছায়া। দু চোখে বৃষ্টির ধারা। 

কি সাংঘাতিক ! ব্রেকিং নিউস হয়ে.... বাতাসে ভর করে এই খবরটাই চার্চের মাঠ টপকে গোটা চার্চ ঘুরে পৌঁছে গেল ফাদারের ঘরে।
- সে কি ? 
ফাদারেরও চোখে, কন্ঠে বিষ্ময়। রোদ্দুরের আসল নাম যে কি তা এতদিনে সবাই ভুলেই গেছে। ছোট্ট মেয়েটা রোদ্দুর এর মত খিলখিলিয়ে হাসে....তাই সবাই তাকে রোদ্দুর বলেই ডাকে। 
হুমম ! তাই তো ! সেই রোদ্দুর কাঁদছে। কারণ জানা নেই। সবাই কান্না থামাবার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সকল চেষ্টাই বিফলে গেল। ইতিমধ্যেই হন্ত - দন্ত হয়ে ফাদার এসে হাজির। তাঁকে দেখেই বৃষ্টির প্রাবল্য গেল বেড়ে। 
ত্রিশ বছর শিশুদের সাথে সাথে থাকার অভিজ্ঞতায় ফাদার মূহুর্তেই বুঝে ফেললেন...অকাল বৃষ্টির কারণ নিশ্চয়ই তিনিই। যেখানে ভালোবাসা সেখানেই অভিমান ! 
সকলকে সরিয়ে দিয়েই মাথায় স্নেহের পরশ দিতেই... ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল... সাথে হতভাগা কারণ ও গেল জানা। 
ফাদার চার্চের স্কুলের সব বাচ্চাকে শিখিয়েছিলেন নানা ধরণের নৈতিকতা। শিশুরা মেনে চলত। একটি সাথে নিয়মও ছিল...কেউ কোনো ভুল করলে একটি ঘরে ঢুকে ঈশ্বরের কাছে ভুল স্বীকার করলেই সব মাফ। রোদ্দুরের সব বন্ধুরা যেত। ছোট্টো রোদ্দুর কিছুতেই খুঁজেই পেত না ওই ঘরে ঢোকার কোনো কারণ। তার সাথে না কারো ঝগড়া হয়, না সে কোনো কাউকে আঘাত করে, মিথ্যে বলে।  কিন্তু সেদিন গোলমালটা ঘটল...যখন রোদ্দুরের এক বন্ধু এসে বলল..... তার সাথে প্রায়ই ঈশ্বরের দেখা হয় ওই ঘরে। বাকি বন্ধুরাও তাতে সায় দিল। .....ব্যাস...অকাল - বর্ষণ শুরু। 
ফাদারই বলেছিলেন..... নিয়ম মেনে চললে ঈশ্বর কাছে থাকবেন ....অথচ নিয়ম ভেঙে ওরাই ঈশ্বরকে আগে দেখে নিল ?  ছোট্ট প্রাণে এ ব্যাথা সইল না আর ! তাই রোদ্দুরের.... মেঘলা আকাশ, অকালবর্ষণ ।
ফাদার সব শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন। যারা এই কাজটি করেছিল তাদের মৃদু বকাও দিলেন। তারপর কাছে টেনে নিয়ে রোদ্দুরকে বললেন  ...... মাই অ্যাঞ্জেল  ওরা ঈশ্বরের কাছে যায়.... ঈশ্বরকে দেখতে....ঈশ্বর ঠিক একদিন নিজে আসবে তোমার কাছে দেখা দিতে। 

চার্চের ছোট বাচ্চারা এতক্ষণ মন দিয়ে তাদের রোদ্দুর দিদির গল্প শুনছিল।
 ফাদার গল্প বলা শেষ করে বাচ্চাদের  বললেন, এবার চল..তার সমাধিতে আমরা ফুল সাজাই, প্রার্থনা করি ....সে বড় তাড়াতাড়িই ঈশ্বরের কাছে চলে গেছে....মাত্র তেরো বছর বয়সে । এই চার্চেই এক ভয়ঙ্কর অগ্নিকান্ড ঘটেছিল। বড়রা অনেকেই এখনো জানো সে ঘটনা। পাঁচজন বাঁচিয়ে দিয়ে সে আর ফিরে আসে নি।

আজ ফাদারের চোখেও অকালবর্ষণ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য