সৌমী আচার্য্য
ভাসানে
"এ মা,নেতাই কলো একুনি মেলায় যাপে।দশটা টাকা দে না। .....এ মা।"
"কোতায় পাবো শুনি।তোর বাপে ঘরে ট্যাকা পুঁতে থুয়ে গেচে।"
"ক্যান আমি দ্যাকলাম তো, যাবার কালে তোরে দিলো বাবা ......টাকা।"
"হ্যাঁ সেই টাকায় এই পাঁচদিন ধরে তোমার পিণ্ডি দিচ্চি দেকতেছো না।মরোগে মেলায় গিয়ে।হাভাতে হাগরে চিমরে মুক নিয়ে দাঁড়াগে যা পয়সা জুটপে অনেক।ভিখারি কুথাকার"
"তুই পয়সা দিবি না তো।ঠিক আছে।তোর বাড়ি আর আসপো না মরতি।"
সারা এলাকার ঠাকুর জোড়ো হয়েছে এক জায়গায়।আলোয় আলো হয়ে আছে ঝিলের পাড়।অস্থায়ী মঞ্চে কয়েক শো মানুষ জড়ো হয়ে ভাসান দেখছে মগ্ন হয়ে।ঝিলের ধারে বসেছে মেলা।হরেক মাল,হরেক দাম।অনেক গন্ধ,অনেক আওয়াজ।
"আপনাদের সামনে এখন নিরঞ্জনে এগিয়ে আসছে ষষ্ঠীতলা আমরা সবাই ক্লাবের প্রতিমা।মাতৃমুখ সাবেকিয়ানায় অপূর্ব সুন্দর।বলো বলো দুর্গা মাঈকি জয়।আসছে বছর আবার হবে।"........
"দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি দেখ ফির হোতা হ্যায় ক্যায়া"........
"ঐ চন্নন, ইদিকে নেমি আয়।চল জিল্যাপি খাই।"
"আমার খিদে নাই।তুই যা"
"আরে বাবা টাকা দিছে।আয় না।আমি খাওয়াপো।"
"তুই যা আমি এহানে থাকপো।"
"মরগা।"
মায়ের বির্সজনে হাজার মানুষের আনন্দ খুশি,নিমেষে বদলে গেলো আর্ত রবে।পনেরো হাত দুর্গামুর্তি গড়ে চমক দিয়েছিলো আমডাঙা স্পোর্টিং ক্লাব,সেই ঠাকুর বিসর্জনের সময় টাল সামলাতে না পেরে অস্থায়ী মঞ্চের উপর আছড়ে পড়লো।হুড়মুড় করে মঞ্চ ভেঙে পড়লো জলে।দেখতে দেখতে তলিয়ে গেলো প্রচুর মানুষ।
"এ বাপ,বাপ রে।কোতায় গেলি বাপ।ও নেতাই আমার চন্নন কোনে গেলো রে।তোর সাথে মেলায় গেলো যে।ও বাপ ....."
"ও তো মাচান থিকে নামতেই চেলো না মাসি।আমি কি করবো।জিল্যাপি খেতি গেলো না।"
"ও বাপ....চন্ননরে।"
পুলিশের ব্যারিকেট সরিয়ে ঝিলের কাছে পৌঁছতে পারেনা চন্দনের মা।হাকুলি বিকুলি করে শুধু এদিক ওদিক ছুটে চলে।জল থেকে উঠছে একেকটা নিথর দেহ ,উঠছে হাহাকার।যারা কোনো রকমে বেঁচে গেছে তারাও সম্বিত ফিরে পায় না।
"ও বাবু ,আমারে যাতি দাও গো,আমার ছেলে ছ্যালো গো ওখানে।ও বাবু আমার একডাই ছেলে,বাবু গো...."
"কত বয়স ছেলের?"
"এই চোতে নয় হবে গো ,ও বাবু আমারে যাতি দাও"
"তিনটে বাচ্চা পাওয়া গেছে,ঐদিকে শোয়ানো দেখ,তোরটা আছে নাকি"
পুলিশের কনস্টেবল নির্লিপ্ত ভাবে বলে চলে যায়।চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসে চন্দনের মার।নিতাই,নিতাই এর বাড়ির লোক ও পেছন পেছন ছুটে যেতে নেয় চন্দনের মার ।পুলিশ যেতে দেয় না।আলো আঁধারে রাখা রক্ত ,কাদায় মাখা একরত্তি সব শরীর।হাতড়াতে থাকে চন্দনের মা।
"এ আমার চন্নন না গো।ও চন্ননের বাপ তোমার আর ঢাক বাজাতি হবে নানে।বাড়ি আসো গো।আমার চন্ননরে খুঁজি দাও।এ আমার ছেলে নয় গো।আমার চন্ননরে দেখতি গুপালের মতো গো।ও বাপ আমার।তোর হাসি মুখ দেকা বাপ।"
"তকন যে কলা হাগরে,চিমরে মুক"
চমকে তাকায় চন্দনের মা।বুকের কাছে হাঁটু নিয়ে কাদা মেখে বসে আছে হাফপ্যান্ট আর ছেঁড়া গেঞ্জি পরা চন্দন।পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পরে ছেলের বুকে মা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন