নন্দিতা কুণ্ডু (মিত্র)


রাবাংলার রূপে আর পেলিং-এর প্রেমে মুগ্ধ

*************************************

    ছোট্ট একটা রাজ্য সিকিম। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আর কতদুর। মাত্র এক রাতের ট্রেন জার্নি। কিন্তু হিমালয়ের কোলে শুয়ে থাকা এই শান্ত রাজ্যের চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা উষ্ণ হাতছানি। কাঞ্চনজঙ্ঘা, চাবাগান, মোনাস্ট্রী, রঙিন পাখি এছাড়া প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্য তো আছেই-সব মিলিয়ে মন ভালো করে দেওয়ার জায়গা হল সিকিম। ছোটো রাজ্য হলেও সিকিমে দেখার জায়গা প্রচুর। কাশ্মীর বা হিমাচলের থেকে এর সৌন্দর্য কোনও অংশে কম নয়। পাহাড়ের কোলে থাকা ছবির মতো সাজানো গ্রামগুলোকে 

অবলীলায় ইউরোপের বিলাসবহুল ট্র্যাভেল ডেসটিনেশনের সাথে তুলনা করা যায়। পাহাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে হটাৎ নেমে আসা খাদ শরীরে এক অদ্ভুত শিরশিরানি জাগায়। আবার এই পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে-বাঁকেই হতাৎ করে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা আকুলভাবে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে আছে সূর্যের উষ্ণ চুম্বনের কামনায়। সিকিমের সৌন্দর্য একেক অঞ্চলে একেকরকম। গ্যাংটকের উপছে পড়া ভিড় থেকে সরে এসে কয়েকদিনের শীতকালীন ছুটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা বেছে নিয়েছিলাম রাবাংলা, নামচি আর পেলিংকে। ৫-৬ দিনের একটি সুন্দর সফরসূচী তৈরি করে কটা দিন জীবনের ছকটাকে বদলে দিতে নির্দিষ্ট দিনে বেরিয়ে পড়লাম।           

আমাদের এই সফর শুরু হয়েছিল রাবাংলা দিয়ে। নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে আগে থেকে ঠিক করে রাখা পেম্পা ভাইয়ার গাড়িতে আমরা ছজন রওনা দিলাম রাবাংলার উদ্দেশ্যে। এনজিপি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২০কিমি। দুপুর দুপুর রাবাংলা পৌঁছে গেলাম। বেশ নিরিবিলি এই পাহাড়ি শহর। প্রায় ৬৮০০ ফুট উচ্চতায় মৈনাম পাহাড়ের পায়ের তলায় শান্ত, আদুরে বিড়ালের মতো চুপটি করে শুয়ে আছে রাবাংলা। এর চারিদিকে পাহাড়শৃঙ্গ। ট্রেকিং-এ যারা অভ্যস্ত তারা প্রায় ৫-৬ ঘণ্টার ট্রেকিং করে আসে ১০৫৬০ ফুট উচ্চতায় মৈনাম পাহাড়চূড়া থেকে। 

রাবাংলার মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বুদ্ধপার্ক। এর আরেকনাম তথাগত সাল। প্রায় ১৩০ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি ঘিরে এক অপূর্বসুন্দর পার্ক গড়ে উঠেছে যার ব্যাকগ্রাউন্ডে রয়েছে দিগন্তবিস্তৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার গিরিশৃঙ্গ। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পার্ক। পার্কের বুদ্ধমূর্তির স্থাপত্য দেখে এমন চমকিত হলাম যে সারাশরীর জুড়ে এক অনাবিল আনন্দের তরঙ্গ বয়ে গেল। চারিদিকের বিস্ময়কর প্রকৃতির কমনীয়তা ও ঐশ্বরিক ভূমির মধ্যে তথাগতর দেবদুতোপম মূর্তির সামনে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করলাম; 

“শান্তির বারি সেচন করিতে

এসেছিলে ধরাধামে,

হে তথাগত দাও গো শরণ 

তোমার ওই পদতলে”।

তাঁর শান্তসমাহিত পবিত্র রূপের গাম্ভীর্যতা ও নির্যাস সারাশরীরে মেখে নিলাম যার মাধুর্য আজও মনের গভীরে বিরাজ করছে। 

বিকেলে গেলাম রাবাংলা থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে অবস্থিত রালং মোনাস্ট্রীতে। এখানে প্রায় ৫০০ জন বৌদ্ধ সন্যাসী বসবাস করতে পারেন। এখানকার দোতলাসমান বৌদ্ধমূর্তির মাথার পিছনদিক থেকে একপ্রকার নীলাভ জ্যোতি বেরোয়। কাছেই আছে ওল্ড রালং মোনাস্ট্রী। এটি অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও ইতিহাসের ছোঁয়া আছে। বিকেলে লামা-শিশুদের






ফুটবল খেলা দেখতে দেখতেই বুদ্ধমূর্তি দর্শন করে নিলাম। এরপর আমাদের ড্রাইভার পেম্পা ভাইয়াকে একটি নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে বললাম। এই জায়গার খোঁজ পেয়েছিলাম ফেসবুক থেকে। পেম্পা ভাইয়া লোকাল লোক হয়েও সেই জায়গার নাম পর্যন্ত শোনেনি। একটি পাহাড়ের অগ্রভাগ কিছুটা অংশ বেরিয়ে এসেছে। দূর থেকে অনেকটা জাহাজের আদল মনে হওয়ার জন্য স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে ‘টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট’। খুব সুন্দর জায়গাটা। পেম্পা ভাইয়া তো আমাকে একেবারে কলম্বাসের আসনে বসিয়ে দিল এত সুন্দর একটা জায়গার সন্ধান দেওয়ার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে, জ্যাক-রোজের স্টাইলে ফটোসেশন শেষ করে ফিরে এলাম হোটেলে। আমাদের হোটেলটি বুদ্ধপার্কের কাছেই হওয়াতে রাতের লাইটের আলোতেও বুদ্ধমূর্তির অপূর্বশোভা দেখা যাচ্ছিল। 

পরদিন সকালবেলায় হোটেলের বারান্দায় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতেই বরফঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন করে নিলাম। পান্ডিম, কাবরু, কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয়ের বরফে ঢাকা এই পর্বত শিখরগুলি এই শহরটার প্রতিবেশী। ব্রেকফাস্ট সেরে রাবাংলার আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য প্রস্তুত হলাম। প্রথমেই আমাদের গন্তব্য নামচি। ‘নামচি’ শব্দের অর্থ আকাশছোঁয়া। প্রায় ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নামচির পথেই পড়বে টেমি-টি গার্ডেন। এটি সিকিমের একমাত্র চাবাগান। সূর্যের সোনালী আলোয় পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে বিস্তৃত ঘন সবুজ চাবাগান তার সৌন্দর্যের ডালি উজার করেই আমাদের স্বাগত জানালো। যেদিকে তাকাই সেদিকেই চাগাছের ঝোপের সবুজ গালিচা। এই ঝোপের মধ্যে দিয়েই চলে গেছে পাকদণ্ডী পথ। পথ বেয়ে পীঠে টুকরি নিয়ে রয়েছে চাবাগান কর্মীদের আনাগোনা। নির্মেঘ আকাশ থাকলে এখান থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা ও তার সঙ্গী-সাথীদের। সবুজ চাবাগান ও নীল আকাশের বুকে হেলান দেওয়া সাদা বরফের পাহাড় দেখেই চোখ জুড়িয়ে যায়। একটু নীচের দিকে নেমে চা ফ্যাক্টরির কাজকর্ম দেখে এলাম। বেশ কিছু চায়ের প্যাকেটও কেনা হল। রাস্তার ওপরেও চায়ের দোকান কাম রেস্তোরাঁ আছে। এই চাবাগানে ইচ্ছে করলে রাতও কাটানো যায়। থাকার একমাত্র জায়গা চেরি রিসোর্ট। 

টেমি-টি গার্ডেন থেকে প্রায় দশ মিনিটের দূরত্বে পৌঁছে গেলাম সিরডি সাঁইবাবার মন্দির। এটি সিকিমের প্রথম সাঁই মন্দির। মন্দিরে ঢুকতে কোনও প্রবেশমুল্য লাগে না। রাস্তার ধারে রয়েছে নানাধরনের নিরামিষের দোকান। তবে নামচির মূল আকর্ষণ চারধাম যার আরেকনাম সিদ্ধেশ্বরধাম। এখানে আছে শিবের বিশাল মূর্তি। অনেকটা এলাকা জুড়ে বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ ছাড়াও চারধামের রেপ্লিকা আছে। এগুলি হল পুরীর জগন্নাথ মন্দির, বদ্রিনাথের মন্দির, দ্বারকার মন্দির আর রামেশ্বরমের মন্দির। ঘণ্টা দুয়েক লাগল সবকিছু ভালভাবে ঘুরে দেখতে। ফেরার পথে দেখে নিলাম বাইচুং স্টেডিয়াম। আমাদের দুদিন রাবাংলায় থাকার সময় শেষ।

 

এবার গন্তব্য পেলিং। শুভ্রশৃঙ্গরাজি আর স্বর্ণমুকুট শোভিত কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে হলে আপনাকে অন্তত একবার পেলিং আসতেই হবে। এটি পশ্চিম সিকিমের অতি পরিচিত হিল স্টেশন। ৬৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পেলিংকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে-আপার, মিডিল ও লোয়ার পেলিং। আসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পেলিং-এর আশেপাশে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। পাগলকরা ঝর্ণা, নদী, কমলালেবুর বাগান, পাহাড়ঘেরা লেক, প্রাচীন বৌদ্ধ মোনাস্ট্রী, ব্রিজ-এই সবই পেলিং-এর দ্রষ্টব্য। রাবাংলা থেকে পেলিং যাওয়ার পথেই দেখে নিলাম পেমিয়াংশে মোনাস্ট্রী। খাড়াই রাস্তার পাশে প্রেয়ার ফ্ল্যাগের সারি। তিব্বতি কারুকার্যময় তিনতলা বিশাল মোনাস্ট্রীতে রয়েছে মিউজিয়াম। ভিতরে আছে গুরু পদ্মসম্ভাবা বা রিনপোচের মূর্তি। মূল উপাসনা-গৃহ নিচে। আমরা যখন পৌঁছাই তখন ওখানে গুরুগম্ভীর পরিবেশে চলছে আরাধনা। বৌদ্ধ লামারা সারিবদ্ধভাবে বসে ধর্মীয় গ্রন্থপাঠ করছেন। সেইসঙ্গে বাদ্যযন্ত্রে চলছে তিব্বতি সুরমূর্ছনা। ঐতিহ্যবাহী এই মোনাস্ট্রীতে রয়েছে হাজারো সংগ্রহ- পুঁথিপত্র, ফ্রেস্কো, তিব্বতি ভাস্কর্য, ছবি ইত্যাদি। কাছেই কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রেক্ষাপটে রয়েছে সিকিমের প্রাচীন রাজধানী বা চোগিয়াল রাজপ্রাসাদের ধংসস্তুপ যার পোশাকি নাম রাবদান্তসে রুইনস যা বর্তমানে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া দ্বারা সংরক্ষিত। এরপর আমরা চললাম সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন সাঙ্গাচোলিং মোনাস্ট্রীতে। এর অবস্থান মনকাড়া পাহাড়ি নিসর্গে, ৯০০০ ফুট উচ্চতায়।

 

পরেরদিন গেলাম পেলিং-এর সাইটসিইং-এ। পেলিং-এর কিছুটা নীচেই দরাপ ভিলেজ। এখানে ধাপে ধাপে চাষ হচ্ছে। দরাপ থেকে আরও ৬কিমি গিয়ে প্রথমেই দেখা হল সুন্দরী রিম্বি ঝর্ণার সাথে। মাঝারি উচ্চতার ঝর্ণাটি যেন রেশমি মখমলের মতো ঝরে পড়ছে। মুক্ত ঝিরিঝিরি বাতাস আর ঝর্ণার কলতান মিলেমিশে এক অদ্ভুত জলতরঙ্গের সৃষ্টি করছে। নিচে তৈরি হয়েছে একটি কুণ্ডের মতো। রিম্বি ঝর্ণা থেকেই উৎপত্তি রিম্বিখোলা নদীর। এই নদীতে গড়ে উঠেছে ‘রিম্বি হাইডেল প্রোজেক্ট’। রিম্বি নদীকে সঙ্গে করে কিছুটা এগোলেই ‘রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন’। এটি সিকিমের একমাত্র কমলালেবুর বাগান। টিকিট কেটে সুন্দর সাজানো গোছানো বাগানে প্রবেশ করতে হয়। নানারকম ফুলগাছের পাশাপাশি রয়েছে অনেক কমলালেবুর গাছ। বেশ কিছুটা নেমে গেলেই পড়বে রিম্বি নদী। খরস্রোতা রিম্বি নদী ছোটবড় নানা প্রস্তরখণ্ডের মধ্যে দিয়ে কলকল করে বয়ে যাচ্ছে। নদীর ধারে বেশ কিছু দোকানে আনারস ও কমলালেবুর রস বিক্রি হতে দেখলাম। 

আমাদের পরের গন্তব্য কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস। এটি পেলিং-এর একটি অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। চারিদিকে ঘন সবুজ পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে অনেক উঁচু থেকে সশব্দে ঝরে পড়ছে দুগ্ধ ফেনিত জলধারা। এর দুটি ভাগ। একটি ভাগ রাস্তার ওপর থেকেই দেখা যায় যা নদীর আকারে রাস্তার ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে আরও নিচে। টিকিট কেটে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলেই দেখা যাবে আরেকটি




জলধারা বড় বড় পাথরখণ্ণ্ডের ওপরে সশব্দে আছড়ে পড়ছে আর চারিদিকে জল ছিটে বাষ্পের আকার ধারণ করছে। সেই বাষ্পের ওপর সূর্যকিরণ পড়ে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের মতে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোনও গ্লেসিয়ার থেকে এর উৎপত্তি। উৎসাহী পর্যটকগণ এখানে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও করতে পারেন। রাস্তার একপাশে রয়েছে প্রচুর খাবারের দোকান। কফি, মোমো খেয়ে আমরা চললাম পরের গন্তব্য খেচিপেরি লেকের উদ্যেশ্যে।
 

খেচিপেরি লেক পেলিং-এর আরেক বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। সিকিমের মানুষদের কাছে খুবই পবিত্র এই লেক পাহাড়ঘেরা। গেট থেকে টিকিট কেটে দুপাশের জঙ্গলাকীর্ণ রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম লেকের কাছে। স্থানীয়দের মতে এই লেকের জলে কোনও কিছু কামনা করে পয়সা ফেললে তা নাকি পূরণ হয়। তাই এঁকে ‘wishing lake’ বা ‘ইচ্ছাপূরণের লেক’ও বলা হয়। লেকের চারিপাশে হাওয়ায় উড়ছে বৌদ্ধমন্ত্র সম্বলিত নানারঙের লুংদার। কথিত আছে এই লেকের জলে পাতা পড়লেই পাখিরা তা ঠোঁটে করে নিয়ে চলে যায়। আশ্চর্যের বিষয় এই যে লেকের চারিদিকে প্রচুর গাছপালা থাকলেও জলে কিন্তু একটা পাতাও দেখতে পাইনি। লেকে প্রচুর মাছ আছে। এক প্যাকেট করে মুড়ি আর সয়াবিন কিনে ওদের খেতে দিলাম। লেকের কাছেই আছে এক মোনাস্ট্রী।

পেলিং-এর আরেক দ্রষ্টব্য হল সিংসোর ব্রিজ। এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম এই সাসপেনশন ব্রিজ। ঝুলন্ত সেতু দিয়ে দুলতে দুলতে ওপারে চলে যাওয়া যায়। অনেকটা নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী। ব্রিজের ওপর থেকে নিচে তাকালে মাথা ঘুরে যায়। খাদ এতোটাই গভীর যে এখান থেকে পাথর ফেললে তা পৌঁছাতে নাকি ৮ সেকেন্ড সময় লাগে। 

এরপর আমরা প্রায় বিকেল বিকেল পৌঁছে গেলাম পেলিং-এর নবতম সংযোজন পেলিং স্কাইওয়াক-এ। এটি ভারতের প্রথম স্কাইওয়াক। টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম। প্রথমে স্বচ্ছ কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটতে বেশ ভয়ভয় করলেও মজার লাগছিল। মোটা কাঁচের নিচ দিয়ে রাস্তা, খাদ সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বেশ অন্যরকম অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা হল। অনেকটা উঁচু হওয়ার কারণে এখানে মেঘের আনাগোনা খুব বেশী। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বলে মাত্র একটুখানির জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পেয়েছিলাম। আর এখানে আছে চেনরিজেগের ১৩৭ ফুট উঁচু মূর্তি। সিঁড়ি ভেঙে একদম মূর্তির কাছে পৌঁছানো যায়। হটাৎই প্রকৃতির মুখভার হয়ে এল। মেঘবালিকারা ঘিরে ধরতেই বুঝতে পারলাম বিকেলের আলো শেষ হয়ে আসছে। অতএব আমাদের আজকের মতো সাইটসিয়িং-এর ইতি ঘটল এখানেই। 

পেলিং-এ আমাদের ‘অদ্যই শেষ রজনী’। শেষ রজনীর আড্ডাটাও বেশ ভালোই হল। পূর্ণিমার মায়াবী আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে চরাচর। কাছের ও দূরের পাহাড়, তাদের গায়ে তারার মতো জ্বলতে থাকা মিটিমিটি আলো, পাহাড়ের গায়ে ওড়নার মতো জড়িয়ে থাকা মেঘ-এই সবকিছুই মনের নিভৃতকোনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকল। পরের দিন একদম সকাল সকাল চলে গেলাম ‘পেলিং হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে’। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

এবার ফেরার পালা। শহরের কোলাহল, দূষণ থেকে বহুদূর প্রকৃতির শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশে কয়েকদিন কাটিয়ে, বুকভরা অক্সিজেন নিয়ে, নতুন বছরে আরও নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্র নিয়ে ফিরে চললাম যে যার যার জায়গায়।

কিভাবে যাবেনঃ শেয়ার গাড়ি থাকলেও ব্যাক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই ভাল, এতে সময় সাশ্রয় হয়। এনজিপি থেকে রাবাংলার দূরত্ব প্রায় ১২০ কিমি আর পেলিং-এর দূরত্ব প্রায় ১৩৪ কিমি। আর রাবাংলা থেকে পেলিং-এর দূরত্ব প্রায় ৪৯ কিমি।

কোথায় থাকবেনঃ আপার, মিডিল ও লোয়ার পেলিং-এ বিভিন্ন দামের ও মানের হোটেল ও হোমস্টে আছে।   

  













 

 

   

 











মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য