অসিত মন্ডল

 নিভৃতবাসের মুহূর্তকথা

################################

১.  মায়াবী বিকেল

মনখারাপী অক্ষর দিয়ে অপেক্ষার নাম রেখেছিলাম শূণ্যতা

এক মায়াবী বিকেল সে নাম মুছে দিল অনায়াসে

কাল রাতে ঘুম আসে নি দুচোখের পাতায় 

টুকরো টুকরো করে আকাশের চাঁদ ছিঁড়েছি সারারাত নিজস্ব ওয়াশরুমে

একটা সুগন্ধি বিকেল আমাকে চেনালো ভালোবাসার দেশ

হলুদ বাসন্তী আদর

পরিষেবা সীমার বাইরে থাকা মুঠোফোনও জীবন্ত হলো

ভালোবাসাও এক পর্যটন
কাছে কিংবা দূরের অনির্দিষ্ট গন্তব্যে 
এজন্য লাগে সুচারু ট্যুর প্ল্যানিং
গুগল সার্চ অগ্রিম বুকিং পরিপাটি প্যাকিং

যাত্রা শুরুর আগে নির্ঘুম উদ্বেগ

এক অতলান্ত বিকেলে আমি পরে নেব ডুবুরির পোশাক
 
 
২.হিম জ্যোৎস্না

হৈমন্তী সন্ধ্যায় বনবাংলোয় জমে ওঠে মৌতাত

টলমল পায়ে নেমে আসে মহুয়ামাতাল আঁধার
    কফি কাপে উথলে ওঠে বনজ আমেজ
সময় ফুরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয় বেপরোয়া নিকোটিন ধোঁয়া

এসব পরিপাটি আয়োজন ফেলে রেখে
মন চলে বনপথ ধরে

থির হয়ে আসে সাঁঝবেলার কুয়াশা
হিমেল হাওয়ায় থরথর কাঁপে কারিপাতা বন 

হাতের মুঠোয় রাখি অকৃপণ চাঁদ

অন্তরমহলে পড়ে কিছু কষ্টের দাগ
এলোমেলো মেঘ হয়ে উড়ে যায়
গোপনে বেড়ে ওঠা ছোট ছোট ব্যথা

শর্ত পূরন হলে পাশ ফিরে শোয় বাংলোর রাত

কি যেন রেখে আসি নিভৃতে গোপনে
জ্যোৎস্নার ঢল নামা হিমেল নৈঃশব্দ্যের কাছে ...

৩.স্থিরচিত্র

নৌকোর খোলে জল, সেঁউতি, খালুই
আধডোবা বাঁশের খুঁটিতে মাছরাঙা চুপ
থির জলে চোখ রাখে মগ্ন মেছোবক

বাবলার ছায়া শুয়ে কাকচক্ষু জলে
সামাজিক দূরত্ব বিধি ভাঙে পাড়াছাড়া বখাটের দল

রোদেলা দুপুর ঝিমোয় নিকোনো উঠোনে
বাতাস দোল খায় পোয়াতি ধানের শিষে

মাথায় লাকড়ি বোঝাই চলে যায় আদিবাসী মেয়ে 

বন্ধ চায়ের দোকানে
মুখ গুঁজে শুয়ে আছে পথের কুকুর 

তেলাকুচো ফল ঠুকরে উড়ে যায় বন টিয়া ঝাঁক

পুকুরের পাড়ে হেলান গাছের ডালে
পালকের জল ঝারে 
হাঁসেদের দল

মুখোশ সরিয়ে রেখে ছবি তোলে ঘরছাড়া মানুষ মানুষী
৪.স্যাংচুয়ারী


চারিদিকে অসম্ভব ধুলোবালি
ইতিউতি ঘোরে ফেরে হিংস্র শ্বাপদ

সামাজিক গেরস্থালি জুড়ে খাদ্য আর খাদকের অভ্যাস -যাপন
আজীবন চুক্তির সুনিপুণ ক্যামোফ্লাজ

থির জলে আঁকিবুকি বাতাসের আলপনা
ডানায় পিছলে যাওয়া মায়াবী আলোয় মগ্ন পানকৌড়ি
অবুঝ ইচ্ছের মত দুধসাদা বকের উড়ন্ত সারি
অকুলীন বুনো ফুল মহার্ঘ হাসি
সুচারু খেজুর পাতায় তিরতিরে কাঁপন
চকিতে চমকে দেওয়া মাছেদের ঘাই

তাপদগ্ধ উপবনে একান্তের মুগ্ধতা উপশম হাওয়া

অন্ধকার গাঢ় হলে ভিজে উত্তাল জৈবিক ঘাসবন

আঙুলে জড়িয়ে যায় বাসনাকুসুম রেণু আদরের ঘ্রাণ 

এসব ভালোবাসা অনুভূতি অনুষঙ্গ সযতনে রাখি

একান্ত গোপন এক স্যাংচুয়ারী তে
 
 
৫.ভ্রমণ সঙ্গী


রুপোলি ফিতের মত পাহাড়িয়া ঝোরা 
মৃত্যুগন্ধী গহিন খাদ 
নগ্ন পাথর বুকে নিয়ে বয়ে চলা
আনমনা নদী

পাথরের স্তুপের ওপাশে
খাপরার চাল নির্জন ঘর 
ধ্যানমগ্ন দেবদূত যেন

পাশে তুমি বাকরুদ্ধ একা
অভিমানে নিবিড় চোখের কাজল 

বাতাসিয়া সংগীত ....
"বুদ্ধং শরণম গচ্ছামি .." 

সেদিনও কোথাও জেনো
মনখারাপের সব রং মুছে দিতে
উথাল পাতাল এক পাগল হাওয়া হয়ে ছিলাম আমি

ভবিতব্য আঁকা ছিল পাথরলিখনে 

দেখা হবে একদিন
শীতের রোদমাখা পাহাড়ী পথের বাঁকে ....

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য