পল্লব গাঙ্গুলি
অবরুদ্ধ জ্যোৎস্না @@@
------------------------------ -
ফাল্গুন
চাঁদ ছুঁয়ে শব্দরা চিরকাল নৈঃশব্দ্যের নিবিড় নিঃশ্বাস বুনে রাখে। রঙ ঢেলে
ঢেলে সে ফাল্গুন চাঁদেরা যুগের পর যুগ ধরে দিয়ে যায় না- বলা সব কথার
আঁকিবুকি! গাঢ় গাঢ় সে বাঙ্ময় নৈঃশব্দ্য আলোর ব্রতকথা লিখে রাখে চিরকাল!
সে-সব জ্যোৎস্নার ভিতর ভেজা আঁচলের প্রতিশ্রুতি থাকে জনমভর! সে- জ্যোৎস্না
গায়ে মেখে মেটে পথ, একাকী নদী, লাজুক সন্ধ্যা চুপকথা সব গল্প বিছিয়ে রাখে
ইতিউতি। তাই ফাল্গুন জ্যোৎস্না নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই!
কিন্তু মাঘী পূর্ণিমা? তার কুয়াশারঙে যেন এক অবগুন্ঠিত যৌনতার
মাখামাখি! ঘোমটা খুললেই ভেসে যাওয়া চরাচরের হাতছানি! আলোয় আলোয় ভিজে ওঠে
বন্ধ দরজার ভেতরবাড়ি! জ্যোৎস্না সেখানে উপছে পড়ে! অথচ সে-বন্ধ খামে যত্ন
করে দূরের ঠিকানা লেখে না কেউ! চাঁদ গলে গলে নামে দামাল মহীরূহের জঙ্ঘা
বেয়ে! কিন্তু মাঝবনের বাউল রঙের হাঁটা পথ শুনশান অপেক্ষা করে; কোন এক ঝড়ের
জন্য।
নরম
জ্যোৎস্নার আদরে কতদিন পাতা ঝরেনি সে বনপথে! ঝরাপাতায় এলোমেলো ঘূর্ণি
লাগেনি ঝড়কে আমন্ত্রণ করে! কতদিন জ্যোৎস্না-রঙ গায়ে মাখতে সে পথ হাঁটেনি
কোন বনপাগল! অতৃপ্ত যৌনতার এই অগোছালো পাণ্ডুলিপি ছুঁয়ে দেখে মাঘী
পূণিমার বিষণ্ণ চাঁদ!
"ঘরেও নহে পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে", তেমন এক বাউণ্ডুলে অবশ্য বলেছিল --
"আজ ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে চল পলায়ে যাই।
দূর দেশে যাবো রে বাসা বানাবো রে,
থাকবো দু'জনে এক সাথে,... "
কিন্তু ফাগুনী পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় বড্ড বেশি সুখের গন্ধ
যে! মাঘী চাঁদের বিষণ্ণতা অনিকেতের হাসি নিয়ে খোলা আকাশের নীচেই স্বপ্ন
বোনে! ' বাসা' বাড়ির ঘেরাটোপে তার স্বপ্নেরা মরতে থাকে ক্রমাগত! তাহলে?
রসিক বলে মাদলের শব্দ নাকি জ্যোৎস্নারঙের গল্প ধরতে পারে
বুকের মাঝে! তো, সে রসিকও তো মজেছে শুধু সুরের চোরা ডুবে! তার দ্রিম দ্রিমে
শব্দেরা জাগে। তালে ছন্দে গল্প লেখে স্বপ্নকথায়! সুরে সুরে ধরতে গিয়ে সে
সুরকেই একসময় ভালোবেসে ফেলে! সুরকথা আর কবিতার আলোমাখা পথকেই ভালোবেসে
ফেলে! জীবনকে আর লুকোনো জ্যোৎস্নাকে যতটা ভালোবাসে, তার থেকে অনেক বেশি!
জীবন এদিকে লুটোপুটি খায়। অভিমান লুকিয়ে রাখে গোপন অক্ষরে। তাই
জ্যেৎস্নার রঙেরঙে সেই বিষণ্ণ যৌনতা শুধু আলোই এঁকে চলে স্বপ্নের সিঁড়ি
বেয়ে। জীবনের গোপন নিঃশ্বাস কিন্তু অধরাই রয়ে যায়!
কবি অবশ্য বলেন কিছুটা, তবে অন্য ভাঙচুরে।---
"রাতে-রাতে হেঁটে-হেঁটে নক্ষত্রের সনে
তারে আমি পাই নাই; কোনো এক মানুষীর মনে
কোনো এক মানুষের তরে
যে-জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে
নক্ষত্রের চেয়ে আরো নিঃশব্দ আসনে
কোনো এক মানুষের তরে এক মানুষীর মনে।"
ঠিক এখান থেকেই মাঘী পূর্ণিমার চাঁদ বিষণ্ণ হেঁটে হেঁটে একদিন পৌঁছে
যায় ছোট্ট দিঘির ধারে! গালে হাত রেখে ক্লান্ত নিঃশ্বাস অপলক চেয়ে থাকে
শান্ত জলে। জলে তখন নার্সিসাসের ঘরবাড়ি!
"সে কোন জলের মতো ঘুরে ঘুরে একা একা কথা কয়/ অবসাদ নাই তার?/নাই তার শান্তির সময়?"
ওদিকে ভোরের স্বপ্নে দেখা হয়ে যায় শিল্পীর সঙ্গে! মগ্নচৈতন্যের
মাদকতা তখন সারা গায়ে আদর হয়ে জড়িয়ে রয়েছে জ্যোৎস্নার। গহন ডুবে
জ্যোৎস্না তখনো মজে রয়েছে ফিগুউরেস শহরের লগ্ন এক বুনো দিঘিতে। জলে সে
নিবিষ্ট দেখে নতুন এক কল্পছায়া! আত্মরতি তখন ভাঙচুরে ভাঙচুরে নতুন খোঁজের
নেশায় মজেছে! আমির আড়ালে আরও এক আমির খোঁজে সে বিভোর!
প্রতিবিম্বে রাজহাঁসের লম্বা গলায় তখন হাতির শুঁড়ের ছায়াকল্প! গাছের ছায়ায় হাতি-পায়ের মায়াবী প্রতিভাস!
অবদমিত
যৌনতা তখন অন্য সৃষ্টির খোঁজে নেশাতুর ওড়ে! সৃষ্টির ইচ্ছায় পাগলা হাতির
মত্ততা নিয়ে! জলে জলে রাজহাঁস ভেসে বেড়ায়! আত্মপ্রেমে মশগুল হয়ে নিজেকে
দেখে সে ফিরে ফিরে। আবার অবচেতন থেকে গহনডুবে তুলে আনে সৃষ্টির নতুন
নির্যাস! মেটামরফোসিস! মেটামরফোসিস! মেটামরফোসিস তখন আত্মরতির কোণায়
কোণায়!
"নদীর ভেতরে যেন উচ্চ এক নদী স্নান করে।
তিতাসের স্বচ্ছ জলে প্রক্ষালনে নেমেছে তিতাসই।
নিজের শাপলা লয়ে নেমে নদী নদীর ভেতরে
ঠাট্টা বা বিদ্রুপ নেই, শ্যেনচক্ষু, নেই চারণের বালি।’"
কবিতাংশ -ঋণঃ জীবনানন্দ দাশ ও আল মাহমুদ
গান লিরিক্সঃ ভূমি ব্যান্ড
পড়লাম। অপূর্ব লাগলো।
উত্তরমুছুনপড়লাম। অপূর্ব লাগলো।
উত্তরমুছুনপড়লাম। অপূর্ব লাগলো।
উত্তরমুছুনপ্রকৃতির রঙে যাপনচিত্র সাজিয়ে জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার অনুভবী কাব্যিক অভিব্যক্তি...
উত্তরমুছুনঅনবদ্য 🌹
Valo laglo tomar ei pratibedan. valobasa.
উত্তরমুছুনআশ্চর্য কথা বুনে যাওয়া।পড়ার পর চুপ করে যেতে হয় আবার পড়তে হয় এবং আবারো পড়ার সাধ হয়।
উত্তরমুছুন