বর্ণালী মুখোপাধ্যায়।
ডাকিনী তন্ত্র।
------------------
এক।
নখদর্পন ।কাদম্বরী।
আজ,
নখদর্পনে দেখছি এক ভাসমান বন্দর।
ভেসে যাচ্ছে আলো।
তোমার চুল উড়ে যায় অলীকবাবু।
উত্তুঙ্গ হাওয়ায় কাঁধ থেকে লুটিয়ে
পড়লো পশমিনার সফেন বাহার।
ধীরে ধীরে কলকাতা আবছায়া
কুয়াশার দ্বীপ হয়ে গেল।
আজ আমার হলদে নখের ডগায়
উছলে উঠেছে জ্যোৎস্না । ।
তরঙ্গিত আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে
দেরাজ টেবল,
ঘর- বারান্দা -সাধের আসন।
এখন
নখদর্পনে কী কৌতুকে গড়িয়ে
নামছে আলোর অক্ষর!
তোমার ভালোবাসার চিঠি,
গড়িয়ে গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে
আমাদের বিছানার চারপাশে।
এসো, অলীকবাবু।
একত্রে নোঙর ফেলি আজ!!
-–-----------
দুই।
বশীকরণ। বিনোদিনী।
বিনোদিনীর পয়জর থেকে নুপুরটি খসে পড়লো।
গড়িয়ে এলো স্টেজের ধারে
অমনি,উত্তাল হলো গোটা কলকাতা!
প্রতি রাতে ,
শুধুমাত্র তার কথা ভেবে
শহরের আলোর রোশনাই!!
দিগন্তে খাটানো হয় চন্দ্রাতপ।
তারায় তারায় জ্বলে ওঠে পেট্রোম্যাক্স।
বিনোদ মঞ্চে এসে দাঁড়ালে
কলকাতা স্থিরচিত্র হয়।
গ্রিণরুমের ধারে, প্রেমিকরা
নামিয়ে রাখে খোলা তরবারি।
কখনো সে আগুন সাজে।
কপোতাক্ষ কোনদিন।
যে কটি পুরুষ আচমন সেরে ঘরে ফিরেছে,
তাদের মুখে শুনেছিলাম
ডাকিনীটির আজব গল্পগাথা।
সাজঘরে বসে বিনোদিনী
পমেটম ঘষে ঘষে তুলছে।
"আমার কথা "সে বলেছে কখনো?
তিন।
উচাটন।সনকা।
আপনি আর খবর নেন না।
কোথায় আছি,কেমন রোদ এসে পড়ে
বিছানার ধারে?
শঙ্খে- প্রবালে- গজ মোতির মালায়
এ বছর বৃষ্টি এলো কিনা?
আপনি ভুলেই গেলেন ।
আমার ডানগালের টোল
আর বিভাজিকায় স্পর্ধিত তিল!
কে ছুঁয়েছে? কেই বা ডুবেছে অতলে---
ময়ূরপঙ্খী ভাসছে বলুন?
খিদে তৃষ্ণায় ভেসেছে আঘাট?
স্বাতী তারা খসেছে শিয়রে?
ফিরে এলে দেখবেন, ঘাটের কিনারে
বাঁধা। আমাদের অলোক সাম্পা
চার।
মারণ । নন্দিনী।
সেই প্রথম আলাপেই বলেছি,
নন্দিনী,আমাকে ছেড়ে দাও।
ওরকম ধানী শাড়ি
ওরম খোলা চুল!
মুদ্রায়।ফুটেছে রক্ত করবী!
কোথায় পাবো বলো,
বরফের ঘরে!
সাত ই পৌষ আসার আগেই
সেবার,
ছেড়ে গেলো কিশোর প্রেমিক।
সেই থেকে,
কবিতা পড়ি না আর।
অতল খোয়াইয়ে শুয়ে থাকি স্থির।
এ এক শব জন্ম বেশ!
অসময়ে কেন এলে তবে!
আঙুল রেখেছো নীল ঠোঁটে!!
ছুঁয়ে দিলে ঠোঁট, চুম্বনে সাড়া দিলে
ভেসে যাই প্লাবনে আবার!
ফিরে যাও নন্দিন।
হিমঘরে, এই বেশ আছি।
----------
পাঁচ। ভানুমতীর কথা।
আমার ভিতর থাকেন
এক বিষাদ যাদুকরী ।
মধ্যরাত্রি বর্ষা এলে
উদ্বাহু খুব নাচে।
সেযে, কতোই কুহক জানে!
আমার যে সব ভয়,
যেমন ধরুন চোরকাঁটা
আর সুপ্ত চোরাবালি,
যেমন ধরুন উৎখাত
বা নিবিড় কোন খনন!!
নারী গভীর জলের মাছ!
সে,অকিঞ্চিৎ ভ্রান্তি মাশুল
মধ্য রাতে গোনে!
উচাটনের মণ্ত্র জপে
মারণ বিষাদ নামায়
এবং
আমায় ঠেলে তোলে!
আমার ভালো থাকার ভেক,
আমার পরিপাটি,
তীব্র ঘৃণায় সরিয়ে দিয়ে
বিষাদ আমায় কাঁদায়।
বড় বেআব্রু ,সেই জল
বৃষ্টি হয়ে নামে। আমি
বেফাঁস কথার ভয়ে
আমি ধরা পড়ার লোভে,
বটের কোটর খুঁজি। বিষাদ
আমার হয়রানিতে ঠা-ঠা-ঠা
খুব হাসে। সেই হাসিতে
রূপকথারা উরুক্কু মাছ হয়।
আমার ঘাট গুলি সব আঘাট
হলে বিষাদ আমায় জড়ায়-
মধুর বড় মধুর ভ্রমে ,ওষ্ঠ
অধর ছুঁয়ে ,বলি -বিষাদ
নদী হবি?বিষাক্ত সেই নদী!
বিষাদ তখন কাঁদে। তারার
আলোয় যাদুকরীর নিখাদ
রাতটি কাটে।
আহা কেউ মন্তব্য করেনি এমন পদ্য পড়ে। কি লিখেছেন। সবই তো মণি মুক্ত। তার মধ্যে বিনোদিনী আর ভানুমতী। দুটি কোহিনূর।
উত্তরমুছুনগতানুগতিক জীবনের বাইরে, অথচ কোথায় যেন রোজনামচায় মিলে যায়, পড়তে পড়তে।
উত্তরমুছুনএইটাই লিখতে চেয়েছিলাম, ডাকিনীরা যুগান্তর পেরিয়েও ঠিক তেমন ই ব্যথার মন্ত্র পড়ে।
মুছুনঅসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
বর্ণ আমি অভিভূত, প্রশংসা করে তোর প্রতিভার বিচার করব না।তোর কলম থেকে এভাবেই মণি মুক্ত ঝরে পড়ুক আর সেগুলো আমরা আমাদের মনের মণিকোঠায় যত্ন করে রেখে দিই।
উত্তরমুছুনপ্রাপ্তি আমার🙏🙏
মুছুনবর্ণ আমি অভিভূত, প্রশংসা করে তোর প্রতিভার বিচার করব না।তোর কলম থেকে এভাবেই মণি মুক্ত ঝরে পড়ুক আর সেগুলো আমরা আমাদের মনের মণিকোঠায় যত্ন করে রেখে দিই।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ,অনবদ্য,অতুলনীয় ...প্রশংসা করার ভাষা খূঁজে পাচ্ছি না।শুধু বলতে চাই যে তোর কবিতা মনকে স্পর্শ করে।
উত্তরমুছুনএ এক গাথা।
উত্তরমুছুন'আমার কথা' র মতোই বুকের মাঝে রেখে দেওয়ার।
নন্দিনীর প্রেমের মতো।সনকার বেদনার মতো।কাদম্বরীর দীর্ঘশ্বাসের মতো।ভানুমতীর সরলতার মতো।
আনত।
সুপর্ণা।
'আমার কথা'র মতোই একান্ত আপন।
উত্তরমুছুননন্দিনীর অমল প্রেমের মতো,সনকার বেদনার মতো, কাদম্বরীর দীর্ঘশ্বাসের মতো,ভানুমতী গহীন ভালোবাসা র মতো।এ এক গাথা কবিতা।
সুপর্ণা।
অনন্য চিন্তা 👌
উত্তরমুছুনদিদি।আমার দেরি হলো পড়তে।সত্যি না পড়লে খুব মিস করতাম।মর্ম দিয়ে লেখা।নারীজন্মের প্রবাহমানতা এভাবেই জ্বলে ওঠে,নিভে যায়।সারল্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে খেলতে তাকে ডাকিনী করে তোলে সকলে মিলে,তার বিষাদ আর ভালোবাসা,গৌরব আর মেধা সবই তখন জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে মিশে যায় শূন্যগর্ভ চেতনা নদীটির জলে।মিশতেই থাকে।
উত্তরমুছুনBarnali, your choice of words and the composition is unique....I haven't seen such marvelous binding of words in many writers in recent years. Proud of you. My favourite is "four", it brings a sad and melancholic impression...wonderful
উত্তরমুছুনআজ দেখলাম। নিঃশব্দ,কারণ শব্দ নেই আজ আমার কাছে। গভীর আনন্দ পেলাম। আপনার মননশীলতাকে শ্রদ্ধা জানাই।
উত্তরমুছুন