পিয়াংকী মুখার্জী

পুরুষ যখন পিতা ****


আদরবাক্সে চুমু জমাতে জমাতে যে রাজকন্যা প্রতিটা  সকালে হাঁটতো রাজার আঙ্গুল ছুঁয়ে , পাঠ্যবইয়ের পাতাগুলো সুর করে করে লক্ষ্মীর পাঁচালীর মতো মুখস্থ করতো একমাত্র  যার বাহবা কুড়োবে বলে সেই সবজান্তা লোকটা শুনশান দুপুরে রাজ্যপাট ফেলে রেখে মেঘের বাড়িতে গেলো নিমন্ত্রণ খেতে , পথ চিনে আর ফিরতে পারলো না ...

মেয়েটা সেদিন থেকে একা হাঁটে , ব্যস্ত শহরের বিধ্বস্ত রাস্তাতে ও কারোর হাত ধরে না আর ,
 ঘুঙুর খুলে ওর পায়ে আলতা , নূপুর পরিয়ে  " নতুনবাড়ি  " পাঠিয়েছে সমাজ ! 

একজন রাশভারী ভদ্রলোক , নতুনবাড়িতে সবাই যাকে দেখলেই ঢোক গিলতে গিয়ে লালা মাখায় জিভে , যার টাইমটেবিল পূর্ব রেলওয়ের মতোই সাঁটানো থাকে স্টেশনঘরের ডাইনিং হলে সেই মহারাজা ঘোলাটে চোখে পুছতাছ করেন আজকাল সদ্যবৌ এর  মন বারান্দা নিয়ে , প্রণাম করতে গেলে যিনি বলেন , " আটমাসের পেট নিয়ে নিচু হতে নেই " অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটা তাকিয়ে থাকে পালকহীন পলকে !

নিরীহ বিকেলগুলোকে মুখরোচক জলখাবারহীন অভ্যেস করবার আয়োজন করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে মেয়েটা যখন , ঠিক তখনই সন্ধের টিফিনে কাঁসার বাটিতে ছানামুড়ি মেখে গোল্লা পাকিয়ে মুখে ঠুসে দিয়ে তিনি বলে ওঠেন , " তাড়াতাড়ি গেল্ বেশি করে চিনি মিশিয়েছি , দেখ্ ভালো খেতে হয়েছে রে , আগে দরজাটা বন্ধ কর্ , তোদের  মা দেখলে লংকাকান্ড বাঁধাবে "

 ই টিভি নিউজ  দিয়ে রাতের রুটি তরকারি মেখে খাবার সময় যে মানুষটার তদারকি করতো সারা বিশ্ব , তটস্থ থাকতো তৎসম শব্দের বানান নিয়ে , এখন সে-ই নাকি ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটির সিনেমা চ্যানেল ঘুরিয়ে দিয়ে বলে , " খবর মানেই লাল রক্ত , আর ভাল্লাগে  না ,তার থেকে বরং তোদের বয়সের দিকে দৌড় লাগাই , নিয়ে যাবি আমায় ?  "

মেয়েটা এখন রাক্ষুসে দুপুরে ভয় চিবিয়ে খায় , ওই জমকালো লোকটার  ঘামে ভেজা পিঠের ঘামাচি মারে , শিশুর মতো কান পেতে শোনে সেই জলজ শব্দ , আর সেই শর্তানুসারে সাপ-লুডু খেলতে খেলতে চেঁচিয়ে বলে ,  "  বড্ড চিটিং করেছো  তুমি , আমি দশটার বেশি পাকাচুল তুলবোই না " 

খাদ্যতালিকার শেষেও  জায়গা না পাওয়া গরুর দুধের সাথে মেয়েটার কিছুদিন হলো বন্ধুত্ব হয়েছে । প্রেগনেন্সির প্রথম মাসেই  এক গ্লাস গরম দুধ মুখের সামনে এনে তিনিই তো  বলেছিলেন , " মা হতে গেলে প্রথমদিন থেকেই শক্ত হতে হয় , নইলে যন্ত্রণা সহ্য করার শক্তির জোগান দেবে কে ? একটা আস্ত-জীবন-মাতৃত্ব অপেক্ষা করছে তোর জন্য , তাকিয়ে দেখ ওই যে একটা আলোর বিন্দু  "

ও মাথা নিচু করে , 
ন'মাসের পেটে এখন পৃথিবী  দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আগামীর নব-শৈশব ।

মেয়েটা আজকাল ভালোবাসার বাজারে নিজেহাতে পাল্লা পাল্লা আদর কেনে ,  তারপর সম্পত্তির মতো আগলে বুকের বাঁদিকের লকারে আলগোছে তাদের শুইয়ে দিয়ে চাবিটা ছুঁড়ে দেয় মারিয়ানার খাতে !

শ্বশুর নামক পুরুষরা এভাবেই বাবা হয়ে ওঠেন বারবার !


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য