যশোধরা রায়চৌধুরী

 পার্শিবাগান 

**********


বিবরণধর্মিতার কাছে ফিরে আসা ভাল।  আসা ভাল কালো অন্ধকার পিঁড়ির কাছে। ঝুপুস সিঁড়ির বাঁকে। অথবা বেড়ালের ছানাকে ওম দিয়ে ঘিরে রাখে যে গরম ছাইয়ের গাদা, তার কাছে। 


আলপনার প্রতিটি আকর্ষ বেরিয়ে যাচ্ছে , ছড়িয়ে যাচ্ছে । বৃত্তাকার অথচ অনন্ত এই পথ পরিক্রমা। ফুলেল লতার মত এগিয়ে যাচ্ছে  চালের গুঁড়োর গোলামাখা ন্যাতা। আঙুল ও ন্যাতার স্পর্শবিন্দু থেকে ঝরে পড়ছে সাদা তরল আর ফুটে উঠছে ফুল। দ্রুত কালো মেঝের ওপর শুকিয়ে উঠছে আলপনা। 


সেই সব লতাপাতার ওপর স্থাপন পাচ্ছে থালা ও বারকোশ। ছড়িয়ে যাচ্ছে যতদূর যেতে পারে। ফল কাটার বারকোশে ফুটে আছে অসংখ্য বাগান। শশা কলা আপেলের ঝাড়। 


বিবরণই শেষ আকরগ্রন্থ। পাথরে পাথরে পা পিছলে যাচ্ছে আর ক্রমশ

তুমি পেছনে চলে যাচ্ছ। 


পেছনের দিকে আছে সুপ্ত বাসনারা, অন্ধ কান্নারা

সুর করে রামায়ণ পড়ার জীবন।

পরিবর্তনের হাতে নিজেকে তুলে দিচ্ছ আর ক্রমশ বিকাশ পাচ্ছে এক দলা তেঁতুল,

ছেঁড়া স্পোর্টস শু, দলা করে রাখা তোয়ালের প্রাচীন অবয়ব। 


এইভাবে একদিন নিজের শৈশবে পৌঁছবে আর তুলে আনব

সস্তা প্রাইভেট বাসের টিকিট গুঁজে রখা শীর্ষেন্দু উই পোকা

প্রেত পুরী থেকে ফিরে এল দুবেণী বাঁধা দিদিভাইরা। 

তাদের চোখে মিঠুন চক্রবর্তীর স্বপ্ন আর দাঁতে ধরা বিনুনির ফিতে

তারা জোরে জোরে গল্প করে লাভারের, উড়ন্ত চুমুর।


তথাপি কারুর কাছে থামা নেই , কোন পিছুটানন আর আগল দিতে পারেনা

কেননা তুমি হাঁটছ। তোমার পা দুটির প্রতি জোড়ে এখন শুষ্ক বালুকাবেলার গান

টান ধরছে চামড়ায়, লবণাক্ত সমস্ত পৃথিবী আজ কেননা সাইক্লোন। 


প্রতিদিন হাপুস হুপুস করে ভাত উঠে যাচ্ছে কাঁচালংকা দিয়ে, 

প্রতিদিন চলে অনন্ত উলবোনা, প্রতিদিন দুর্ভিক্ষ আর সমাজবিপ্লব থেকে প্রজন্ম উঠে এসে পড়ে যাচ্ছে একাকিত্ব আর গাছেজলদেওয়া বারান্দার ছোট্ট খুপরিতে আটক। 


মন্তব্যসমূহ

  1. সমৃদ্ধ হলাম। কি যে চমৎকার একটা লেখা পড়লাম ভাষায় প্রকাশ করা বড় কঠিন। তবে এই পার্শিবাগান ভুলে যাওয়ার নয়। আন্তরিক শ্রদ্ধা ও নমস্কার জানাই

    উত্তরমুছুন
  2. শুরুর তিন লাইনে কবিতাটি পাঠক কে গিলে নিচ্ছে। তারপর শব্দের ঠিক করে দেওয়া পথে জার্নি শুরু হচ্ছে পাঠকের, একার।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য