নিলয় নন্দী

 নিলয় নন্দীর গুচ্ছকবিতা

বেহালা__

জনশ্রুতি, সমুদ্র যা নেয় তা ফিরিয়ে দেয়।

আমার দীর্ঘ ছায়া ভেসে গেছে জলে
উল্কাফুল, অন্ধ ফুলওয়ালি ডুবে গেছে
ঢেউ নিয়ে গেছে অনিচ্ছুক আত্মীয়স্বজন
ফেরেনি...

বালিয়াড়ি জুড়ে ইজিচেয়ার পেতে রেখে গেছে
বাহুতে উল্কি আঁকা বেহালাবাদক
আমি তার মুঠো খুলে শ্লীল ও অশ্লীল সারেগামা
ভাসিয়ে দিয়েছি নীলে, নীল যার ডাকনাম
ফেরেনি এখনো...

যারা ফিরে গেছে পরিপাটি সমুদ্রস্নান সেরে
তারা ডুবতে শেখেনি আজও

এখনো গোধূলি হলে সমুদ্র ফিরিয়ে দেয় বেহালা।


ঘুম___

যারা ঘুমন্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে 

আমি তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিই।

কলমীলতা ভিড় করে চোখে। তারারন্ধ্র শালুক। স্বপ্নের রং সবুজ হয়ে এলে তারা ছুটে বেড়ায় ঘাসফড়িঙ আর ইকিরমিকির চামচিকির পিছনে। আদরের নৌকো আর দাঁড়কল্পদ্রুম। উমিয়াম লেকের ধারে চা, কুয়াশা আর রূপালী নেলপালিশে শুরু হয় পৌষালী দিন। এ সবই কষ্টকল্পনা। দিন বলতে আমি সফর বুঝি, তুমি গৃহস্থালি...

আমাকে ঘুমন্ত দেখে
তোমারও কি ঘুমোতে ইচ্ছে করে খুব!


জোয়ার __

নদীর বুক চিরে হেঁটে আসছি।

ওপারে পাখিডাঙা। বটের ঝুরিতে লেডিবার্ড।
ছই থাক বা না থাক, নৌকা নিয়তি।

জনপদ জলে থৈথৈ
"আমাকে পানকৌড়ি দেখাও" ক্রমাগত ডুব
শাপলা শরীরে রাখো সর্বস্ব নদী জোয়ার অবধি
জানি, ভেসে গেলে...

কিছুই ফুরোয়নি এখনও
আবার জোয়ার এলে চকমকি জ্বালিয়ে রাখি জলে।


কুয়াশাগ্রাম_

এখানে থামার কথা ছিল না
তবু চোখে মেঘ নেমে এলে কৃষ্ণচূড়ার কাছে
থেমে যায় বাষ্প ইঞ্জিন। দেহ রাখে রাধা।
প্লাটফর্ম সাদা হয়ে আছে। স্বপ্ন আরো বেশি সাদা।
ভোররাতের চাঁদ গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে মিশে আছে...

মুখের যে পাশ চুম্বন মাখেনি আজও সেখানে অন্ধকারের বসতভিটে। নাম মনে নেই।
মায়াজাল কেটে হুইসল বাজে, হিমবর্ণা মুখ
হারিয়ে যায় জমাট কুয়াশায়...
সাদা অন্ধকার আর বাদামী ইঞ্জিন ধস ধস ধস
মাটিও বাদামী কেটে নিয়ে যায় কাছেই কোলিয়ারি
চাঁদের গায়ে তবু লেগে থাকে মধু ভিনদেশী
তোমাকে কি কুসুম বলে ডেকেছি কখনো, রাধে?

ষ্টেশনের নাম কুয়াশাগ্রাম। কুসুম কামিন।
প্রেত পোড়ানো রাতে কৃষ্ণচূড়া তবু রক্ত মেখে থাকে।


যা বলার বলে গেল ঢেউ__

চাঁদ সরে গেলে জল ভেঙে উঠে আসে প্রতিবেশী চোখ একা এক নির্জন দ্বীপ যৌন দংশনে ছিঁড়ে খায় নির্ঘুম প্রহর আপাত নিস্পৃহ সময় বাঁচে বালি আর বালির কামড়ে ভাসানের ঢাক নুলিয়া পাড়ায় সর্পিল গন্ধ চেনে যোনি বা সহবাস নীল রক্ত নীল ঘাম নীল সাইরেন বেজে যায় শিয়রে সমন বাতাস শুষেছে রাত তিনটের সমুদ্র গর্জন শোঁ শোঁ আলাপচারিতায় রংচটা রোদের খোলস মরা কচ্ছপ জেলিফিশ লাল কাঁকড়ার শরীরে পুনর্জন্ম পাবে বলে জন্মপোশাক ছেড়ে আরামকেদারা ছিপ ফাৎনা মাছের নেশায় তুমিও অবাক হও!

মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় খিদের শহর...
































মন্তব্যসমূহ

  1. জল,নদী,সমুদ্র,ঘুম,স্বপ্ন,আকাঙ্ক্ষা,নিস্পৃতা,শরীরী আববেগ, এসবের হাত ধরে শব্দজাদুর এক অনুভূতিময় মায়াজগগতের সফরে নিয়ে চলে এই কবিতাগুচ্ছ। ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  2. কি বলব। আপনিও আসিতদার মতো যুবরাজের রেকর্ডটা আরেকটু হলে ব্রেক করে দিচ্ছিলেন।

    উত্তরমুছুন
  3. বাহুতে উল্কি আঁকা বেহালাবাদক, ওপারে পাখিডাঙা, বটের ঝুরিতে লেডিবার্ড, নৌকা নিয়তি এসব কৌণিকতা শুধু একজন শক্তিশালী কবির পক্ষে লেখা সম্ভব। আমি আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকি নিলয়ের প্রতিটি লেখার দিকে। এমন স্তরে থাকলে পাঠকের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়। ফলে নেমে আসার আর জায়গা নেই।

    উত্তরমুছুন
  4. চমৎকার সেট। প্রতিটি অংশ অনবদ্য।

    উত্তরমুছুন
  5. কুয়াশাগ্রাম বেশি ভালো লাগলো। সবকটিই সুন্দর। পরিচিত শব্দবন্ধের ব্যবহার প্রবণতা কবিতার বাঁধন আলগা করে দিচ্ছে না তো!

    উত্তরমুছুন
  6. তোমার লেখা অনবদ্য, সত্যিই।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য