বাতিঘর অনলাইন

বার্ডম্যান *** এই ঝিমধরা শুকনো বেলায় উড়ে যেতে ইচ্ছে হয়, সন্তর্পণে বারান্দার গ্রিল গলে হুস করে উড়ে যেতে হয়... জানি, তবু অপেক্ষা করি আরো একবার। উড়ে গেছে রুটিওয়ালি মাসির বর বেহালার মহেশতলায়, নিরঞ্জনের বাবাও  কোনও এক সকালে পুরনো স্মৃতি খুঁড়ে লাল উঠোন থেকেই লক্ষ্মণরেখা মুছে দিয়ে হুস... গোলাপি আলো ছিল সেদিন সাঁতরাগাছির ঝিলে, ওদের হাতের রেশমি রুমাল খুলে যায় প্যারাসুটের মতো, ছেলে, মেয়ে, বউ তাকিয়ে থাকে উপরের দিকে। পালকের মতো নীচে শুধু হিং টিং ছট। ঘাড় উঁচু করে দেখতে পাই বার্ডম্যান। আমিও যাই বারান্দা পেরিয়ে... বালুচরি ডানা... গ্রিল, ট্রিল জড়সড় নীচে, বাতিল লোহা লক্কড়... শেকল বাকলের মতো... ।    

সম্পাদকীয়  #####################  " এইখানে হেমন্তের আসন্ন কুয়াশা রুষ্ট ফণার মতন ..." হৈমন্তী বিকেল। দিনান্তের নিভু নিভু আলো।হিমেল হাওয়ার সাথে ভেসে আসে অনিবার্য জীবনানন্দীয় বেদনাবোধ।চারিদিকে ধূসর বিষন্নতা। ফসল কাটার পর ক্ষতচিহ্ন বুকে নিয়ে একা জেগে থাকে নাড়া কাটা ধানখেত।

 সুরের সুললিত মাধুর্য আর কাব্যের কোমল স্পর্শ কন্ঠে নিয়ে শুচিস্মিতা সিংহ এলেন আলোকবৃত্তে। শ্রোতা হৃদয়ে ছুঁইয়ে দিলেন রাবীন্দ্রিক যাদুকাঠি। আলোকস্নাত বাতিঘর।

  ক্রাইসিস বলে চাপটা সুপ্ত  @@@   পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে পড়াশুনো ছাড়া বাকি সব করব। তার মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পই মুখ্য। বাড়ির সামনে বা ফ্ল্যাটের নিচে , পার্কে খেলাধুলো, হাঁটতে হাঁটতে কথায় কথায় হেসে গড়িয়ে পড়া। অফুরন্ত প্রাণ সম্পদের সেসব কথারা, ফুরোবে না মা না ডাকলে। মোটামুটি ক্লাস সেভেন থেকে টুয়েলভ অবধি এই ধারা। কলেজে পৌঁছলে আড্ডার ধরন বদলায়।

  পার্শিবাগান  ********** বিবরণধর্মিতার কাছে ফিরে আসা ভাল।  আসা ভাল কালো অন্ধকার পিঁড়ির কাছে। ঝুপুস সিঁড়ির বাঁকে। অথবা বেড়ালের ছানাকে ওম দিয়ে ঘিরে রাখে যে গরম ছাইয়ের গাদা, তার কাছে। 

প্রণালী /////   তোমাকে সোহাগ করব , সাবধানে , কবিতা যেমন গোড়ায় কোমল ছন্দ , উদ্দাম মাত্রার ধাক্কা শেষে —

  ব্যক্তিগত///// আমার  সঙ্গে  পাখিদের  যে রকম সখ্য তাকে এক কথায় ‘চর্যাগীতি’ বলা চলে। সন্ধ্যাভাষা, জানি বুঝবে না, যেমন বোঝো না তুমি হরিণের গান।

  নতুন দিন  ######## এই তো ছুঁয়েছে হাত অজানা ভবিষ্যতে আগামীর দিনগুলো কতটা কেমন হবে                                 তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ ; যে অন্ধ তারা খোঁজে রাতের আকাশে           আমি তাকে স্পর্শ করে বলে দিতে পারি

  জলকে জল বলতে শিখি --------------------------- ১ আমি কথা বলছিলাম আমার সঙ্গে ওরা অনেকগুলো মাথায় কথা চালাচালি করছিল

হাত --------------- এই হাত নীরার মুখ ছুঁতে পারে না এই হাত শুধু পীড়া দেয় পীড়া--- অনন্ত যন্ত্রণা  এই হাত অন্ধকার লুফে নেয় আরও গভীর অদ্ভুত জীবনানন্দীয় অন্ধকার                                                               ছুঁড়ে দেয়

  অন্য নারীস্বর ### " I looked at you and you looked at me I longed to speak to you                                  but I didn't. " ------ Vivien Eliot (1888---- 1947).

  খিস্তি // লোকটা রোজ ডিউটি সেরে ফিরে টলোমলো হাতে গ্রিলের গেট খুলে ঢোকে। মুখে ফোয়ারা ছোটে খিস্তির।

  হিমকথা *** না, সেরকম ফলাও করে বলার মত এ বাঁকে কিছুই নেই। দু'একটা নষ্ট কুসুম আর অগভীর কথা চালাচালি।

গল্পকথা ---------------- যতবারই নদীর কাছে যাই ততবারই গাছের কথা মনে পড়ে আমার, যেন চলমান কোন গাছ যে গাছটা দুপুরে আমার চোখে চোখ রেখে ছায়ার কথা বলে, ঠিক সেই গাছটার মতন

মুচমুচে জ্যোৎস্নার নগ্ন চিৎ-সাঁতার ### আমার নিজস্ব সন্ধ্যেবেলাগুলো ঘাঁটা হচ্ছিল  তন্নতন্ন করে ঘটমান উৎপটাং বর্তমান। ঘুমপাড়ানি ক্যালেন্ডারের পাতা।  পাতার শিরাবিন্যাস এবং সুন্দর করে চাপা মশারির কোণ ;

  শীতপ্রস্তাব /// শীতপ্রস্তাব এলে এবছরও  মায়াবী লংকোট আর রঙচটা সোয়েটারগুলো রোদ্দুরে সাজিয়ে রাখি। সোয়েটার বুনে দেওয়া ফুলো ফুলো তরুণী আঙুল কিছু অস্থিচর্ম সার আর বাকি ছাই হয়ে গেছে

  আমি আবার আসবো ০০০০০ আকাশ থেকে একটু সরে যেতে দাও সব খুলে হিসেব উদ্ধার হলে আমি আবার তোমার কাছে আসবো ক্রমশঃ স্পষ্ট রক্তাভ আলো---

  অক্ষর খুঁজি ---------- আমি তৃষ্ণায় অক্ষর খুঁজি জলের গভীরে আমি প্রেম পেতে অক্ষর খুঁজি চাঁদের শরীরে

অতিক্রমণ  ##### আজকাল স্বপ্নে দৌড় আসে।  সময় ডিঙিয়ে যাওয়া ভোর।  নানান রঙের ঘোড়া গুলো উদ্দাম.. চকচকে.. শরীরী বিভঙ্গে  দোলে উড়ন্ত কেশর! আমি স্বপ্ন চড়ে বসি..। 

  শীত আসছে ######### সেই ঝাপসা লোকটা বলেছিল, শীত আসছে, পাতা ঝরবে সারারাত --- এখানে পর্ণমোচী আমলকি, ওখানে রূপসী, রুজমাখা মেপল, এমনই আবর্তন ঋতুকালের।  

 জলজ  @@@ কলম দিয়েই লেখা যায় বুকের পাথর হাপরথলির শিথিলতায় জারি হওয়া রাতের শীর্ণ কাঠ চামচ দিয়ে উষ্ণ শোক হুসহাস গরম, সাদা ধোঁয়া ভোরের ঘোর... 

  ভাসান @@@ (১) বিকল্পের খোঁজে কুয়াশা তৃষ্ণা, নেশা কাটাতে ধারকত্ব উজ্জ্বল রঙিন ছাই। মুখোশে ব্যস্ত শহর.. আরাধ্য পর্দা ফেলে নিকটস্থ রোশনাই ভেসে গেছে সব, ভাসানেরই সম্মানে।

    তোমার আলোর পিছে ### .............................. .............................. .......... প্রতিটি ভাতের দানায় মায়ের ঘামের শিল্প বাবার রাত্রে বাড়ি ফেরা সকল অক্ষরপ্রাপ্তি শিক্ষকের, পূর্বপুরুষের জীবনের ছুঁড়ে ফেলা আনন্দ উৎসব

  ওম  @@@ শীত এলে, ভীষন ইচ্ছা করে ওম পেতে পরিযায়ী পাখির মত দীর্ঘ যাত্রায় 

  ইলিউশান @@@ মনে হয় প্রতি দুর্লভ মুহূর্তে , একা হয়ে যাই। মনে হয়, এই তো কিছুক্ষণ মাত্র,  তারপর সব স্পন্দন দিব‍্যি যাবে ধুয়ে;

  কংসবতী ------------- আড়াআড়ি ছিঁড়ে যাওয়া ছবিটা ধরে হাঁটতে শুরু করলে আপনি পৌঁছে যাবেন একটা বাঁধের ধারে।

  শ্লোগান ####   কখনও কখনও প্রতিটা শরীরকে কুহকের নীলচে গরিমা মনে হয়- প্রতি ছত্রে তার অণুলিখন বাঁধা

 স্নান ও ফ্যান্টাসি ________________ বাথটাবে গড়িয়েছে নদী, মোমবাতি, আপেলের রস  খুলে রাখো ট্যাপকল স্নানের উপরে  সাবানের ফেনা দেখ টের পায় বালুচর, নীল দাগ কামানের

প্রথম পা ফেলার অপেক্ষায় ----------------------------- একদিন বলেছিলাম ফিরে যাব। তারপর থেকে আমি প্রতিদিন ফিরে যাই।

  দেশলাই   ### সাদা তুলো ব্যাগে ভরে এনেছি তারপর ছড়িয়ে দিয়েছি আমারই পায়ের কাছে এবার আকাশ দেখি বাতাস সর সর করে বয়ে যায়   কিছুটা পিছলে কানের কাছে নিন্দা বাক্যের মত সরে সরে বসে  

 নিলয় নন্দীর গুচ্ছকবিতা বেহালা__ জনশ্রুতি, সমুদ্র যা নেয় তা ফিরিয়ে দেয়। আমার দীর্ঘ ছায়া ভেসে গেছে জলে উল্কাফুল, অন্ধ ফুলওয়ালি ডুবে গেছে ঢেউ নিয়ে গেছে অনিচ্ছুক আত্মীয়স্বজন ফেরেনি...

 নিভৃতবাসের মুহূর্তকথা ################################ ১.  মায়াবী বিকেল মনখারাপী অক্ষর দিয়ে অপেক্ষার নাম রেখেছিলাম শূণ্যতা এক মায়াবী বিকেল সে নাম মুছে দিল অনায়াসে কাল রাতে ঘুম আসে নি দুচোখের পাতায়  টুকরো টুকরো করে আকাশের চাঁদ ছিঁড়েছি সারারাত নিজস্ব ওয়াশরুমে

  ডাকিনী তন্ত্র। ------------------ এক। নখদর্পন ।কাদম্বরী। আজ, নখদর্পনে দেখছি এক ভাসমান  বন্দর।  ভেসে যাচ্ছে আলো।  ভেসে যাচ্ছে বিস্ময়। 

  অশোক চক্রবর্তীর গুচ্ছকবিতা ### আজ (১) এ বাড়ীর চৌহদ্দি আছে দেওয়াল আছে ছাদ আছে__ বাড়ীটা রঙহীন বিবর্ণ স‍্যাঁতসেতে।

কালো মাটির রূপকথা ****** আইওয়ার ছোট্ট গাঁ নিউ লিবার্টিতে সকাল হয়েছে। সাড়ে সাতটা বাজে। শীত সবে বিদায় নিয়েছে। মে মাসের শেষদিক। খাতায় কলমে আজ প্রথম বসন্ত - ফার্স্ট ডে অফ স্প্রিং। কিন্তু মিডওয়েস্টের এই গন্ডগ্রামের ওপর ঋতুরাজ এখনো কৃপাদৃষ্টি দেননি। বৃষ্টিভেজা, কনকনে ঠান্ডা সকাল। ভালো করে আলো ফোটেনি।    

                 রঙবৃষ্টি স্রোত            ............................. .................. তুমি কি এখনো সেই অদ্ভূতে আছ ?  হাত বাড়ালেই মেঘ কুয়াশা মাখান ভোর  মাইনাস তিন-চার  পাহাড়ী রাস্তা ধরে দূর থেকে সোয়েটার                     লাল সাদা বৌটুপী ....  আমাদের হোটেলে না ! কাল রাতে ডাইনিং এ ...

একটি নম্র উপহার / কায়ফি আজমি  ভেব না, করুণার দরজাটি খুলো না আমি কিছুক্ষণ ডাকব, তারপর চলে যাব। এই সেই রাস্তা যেখানে একদিন চাঁদ উঠেছিল আমি অন্ধকার রাত কাটাব, তারপর চলে যাব। 

                    ঢাক     সারাবাড়ি জুড়ে গুজগুজ, ফিসফাস ।  ‘সত্যি নাকি ?’ ‘তাহলে এখন উপায় ?’ কী হবে গো ?’ ‘ইস্‌, না এলেই ভাল হতো ।’ ‘এখন সারাবাড়ির লোককে হ্যাপা পোয়াতে হবে ।’ ‘আমাদের সবার টেস্ট করতে হবে ।’ ‘সে তো করতেই হবে । নাহলে বুঝব কীভাবে ?’ ‘সবথেকে বিপদ তন্নির । সে একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছে ।’ ‘কী বলি বল । শহরের মেয়েদের গ্রামে এলে আদিখ্যেতা যেন বেড়ে যায় । নে, এবার ঠ্যালা বোঝ ।’

  আয়না ১      ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাতে গিয়েই খটকা লাগল। কিছুতেই ঠোঁটের আউটলাইন আঁকা যাচ্ছে না। কেবল একটা এবড়োখেবড়ো ব্যাপার। ঠোঁটের মধ্যেটা ঠিকঠাক ভরাট হচ্ছে না, ছেতরে যাচ্ছে। মোট কথা প্রতিদিন দামি লিপস্টিকের নরম মোলায়েম রঙ যেভাবে ঠোঁটে মিশে যায়, সেই বিষয়টা আজ একেবারে উধাও।

  ময়নাতদন্ত   ++++++++++++++++  [এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি রক্তফেনা মাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার; কোনদিন জাগিবে না আর-] চারিদিকে গলা সমান উঁচু পাট। মাঝখানে এক চিলতে পতিত। জমির উত্তর মাথায় খেজুর-বাবলা। উইয়ের ঢিপী। দক্ষিণে বৃষ্টি জমে আশশ্যাওড়া আর কণ্টিকারির ঝোপ। নিচে জল, ছলাত ছল।জলে-কাদায়, মাছিতে- পিঁপড়েয় মাখামাখি হয়ে, আকাশের দিকে মুখটা একটু উঁচু রেখে, দুহাত দুপা দুদিকে ছড়িয়ে চিত হয়ে পড়েছিল দুখিরাম সর্দার। একটা চোখ, একটা কানের লতি, এক গালের অর্ধেক নেই।

যুদ্ধক্ষেত্রে  ######## আর মাত্র ছ'জন! বুলেটের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে!     দৌড়ছি আমি প্রাণপনে দৌড়ছি। ইশ! মুখোশে ঢাকা ঐ লম্বা মতন লোকটা বড় মামা না? হ্যা! ওটা ঠিক বড় মামা! লোকটার মুন্ডুটা ফুড়ে দেব বুলেটে... ছিটকে বেরোবে রক্ত... ঘিলুটা ছেতড়ে পড়ে থাকবে মাটিতে!  

বিয়ের তারিখ ##### পিঁয়াজ ফোড়নের ডাল খেতে বড্ড ভালোবাসে লোকটা।  লোকটা হল গোবিন্দ। বাসন্তীর ঘরের লোক। চিরকালই তার চাহিদা কম। পান্তায় জল ঢেলে গোটা পিঁয়াজ দু' আধখানা করে দিলেই একগাল হাসি। বরং বাসন্তীরই একটু আশঁটে গন্ধ পাতে না থাকলে গলা দিয়ে ভাত নামে না যেন।