প্রকাশ চন্দ্র মন্ডল
গঙ্গোত্রীর গোমুখ
গুহা-কিভাবে বর্ণনা করব? আদৌ বর্ণনা করা কি যায়? কারণ,শব্দ এখনও যেন নিঃশব্দ হয়ে যায়।প্রকৃতি যেন
এখানে নিঃস্তব্ধতাকেই বেশি প্রশ্রয় দেয়,আর মাঝে মাঝে বরফের
চাঙড় ভেঙে পড়ার শব্দ,পাথর ভেঙে পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে
সেই নিঃস্তব্ধতা শব্দকে খুঁজে নেয়। ভাগীরথী শৃঙ্গের নীচে গোরুর মুখের মত মুখ দিয়ে
অবিরাম জলের ধারা নেমে আসছে খাত বেয়ে যে খাতের চড়াই ধরে পৌঁছতে হয় গঙ্গোত্রী থেকে
গোমুখ ।
গঙ্গোত্রীর
গঙ্গা মায়ের মন্দিরে প্রণাম করে (-২℃) তাপমাত্রায় কাঁপতে কাঁপতে যাত্রা শুরু করলাম ‘সুদর্শন পর্বতশৃঙ্গ’কে সঙ্গে নিয়ে। গঙ্গার পাড় বরাবর হাঁটতে হাঁটতে আমাদের প্রথম গন্তব্য
ভুজবাসা (13কি.মি.) যেখানে আমাদের প্রথম রাত্রিযাপন। পথে পড়ে
চিরবাসা- নামটা কি সুন্দর!গঙ্গোত্রী থেকে চিরবাসা- প্রায় 9 কি.মি.রাস্তা
।প্রত্যেক বাঁকেই যেন চমক অপেক্ষা করে আছে । প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার আদর্শ
জায়গা । এখানে মানুষ নয় , প্রকৃতিই দাপটে তার রাজত্ব
সামলাচ্ছে । মাঝে মাঝে ঝুর ঝুর করে মাটি ঝরে পড়ছে ,কোথাও বা বোল্ডার গড়িয়ে পড়ছে ।এই সব সামলেই সাবধানে হাঁটা। চারিদিকে শুধুই
পাহাড় , পাহাড়ের ওপারে পাহাড় ,এপারে
পাহাড় । হাঁটতে হাঁটতে কখন যেন পাহাড় নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় ।সবসময় পাশে পাশে
থাকবে মা গঙ্গা অভিভাবকের মত ।সরু পায়ে হাঁটা রাস্তা ।তারই মধ্যে মাঝে মাঝে এক
একদল খচ্চর এসে উপস্থিত । তাদেরকে জায়গা দিতে গিয়ে ভয় লেগে যায় । কারণ – একদিকে খাড়া পাহাড় , অন্যপাশে গভীর নদীখাত । হাঁটতে
হাঁটতে একবারও কিন্তু ক্লান্তি আসে না , কারণ – প্রকৃতি যেন নিজের হাতে সাজিয়েছে পাহাড়গুলো ।কোনোটা সবুজে ঢাকা ,কোনোটা সাদা বরফাবৃত , কোনোটা ন্যাড়া ।
চিরবাসা – একটা ছোট বিশ্রামের জায়গা।‘চিরবাসা’ নামের উৎপত্তি চির বা পাইন গাছ থেকে। ছোট্ট উপত্যাকা জুড়ে শুধুই পাইন গাছ
। একটু চা , আলুপরোটা , Maggie ছাড়া
বিশেষ কিছুই এখানে মেলে না । অল্প সময়ের বিশ্রাম , কারণ –
বেশিসময় মানেই ভুজবাসা পৌছতে রাত হয়ে যাবে ।চিরবাসা থেকে সঙ্গ নেয়
ভাগীরথী 1,2,3 পর্বতশৃঙ্গগুলো ।আবার নির্দিষ্ট ছন্দে এগিয়ে
চলা। তাড়াহুড়ো নেই আবার একদম ঢিমেতালেও নয়।অদ্ভুত সুন্দর ছন্দে প্রকৃতির কোলের
মধ্যে এগিয়ে চলা । মাঝে মাঝে দু-একজন আগন্তুকের সাথে সাক্ষাৎ হবে , যাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে ভুজবাসা আর বেশি দেরি নেই । আর ঘন্টা
তিনেক । যাইহোক ভুজবাসা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা এবং পৌঁছেই GMVN এর আতিথেয়তা সত্যিই মুগ্ধ করে দেয় ।এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ওরা যে কি
সুন্দর হাসিমুখে আপনার প্রতিটি দরকারে আপনার পাশে । গরম জল চাইলে প্রায় সাথে সাথে
আপনি পেয়ে যাবেন , কারণ – তখন আপনি -7℃ বা -5℃ এর মধ্যে ।
পরের দিন ভোরবেলা গোমুখের
উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম ।ট্রেক করতে হবে 6 কি.মি.।পুরো রাস্তাতেই সঙ্গ দেবে বরফ সাদা
শিবলিঙ্গ পর্বতশৃঙ্গ।প্রথমেই গঙ্গার পাড় পরিবর্তন করতে হবে , অর্থাৎ ভুজবাসা’র ওপারে যেতে হবে । শুনতে কি সহজ !
অথচ এই পাড় পরিবর্তন করা যেমন কষ্টকর , সময়সাপেক্ষ তেমনই আদিম
সময়ের মত মানুষের শ্রমনির্ভর । মানুষ তার পেশীশক্তি খাটিয়ে ঝুলন্ত ট্রলি’তে করে 4 জন করে
টেনে টেনে পার করছে । অন্যপারে পৌঁছে আপনাকেও দড়ি টেনে 4 জন’কে পার করে দিয়ে তবে আপনি এগোতে পারবেন । এভাবে গঙ্গার ওপারে পৌঁছতেই সময়
লেগে যায় প্রায় 3 ঘন্টা । এটাও এক অন্যধরনের অভিজ্ঞতা ।“
মানুষ মানুষের জন্য”-এটাই এই নির্জন জায়গায়
মনে করিয়ে দেয় ।এবার গঙ্গার বা দিকের পাড় ধরে এগোতে হবে
। রাস্তা বলে বিশেষ কিছুই নেই । বড় বড় বোল্ডার পড়ে আছে , সেগুলোকে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে এগোতে হবে ।হাওয়া বইছে , তবে শুষ্ক এবং ঠান্ডা । গাছপালাহীন , মনুষ্যহীন রুখাসুখা জায়গা , যা দেখে শীতল মরু’র দেশ লাদাখের কথা মনে আসে ।এভাবে ঘন্টা তিনেক পথ চলার পর আমাদের সামনে দৃশ্যমান হল সেই বহু আকাঙ্খিত গোমুখ গুহা , যেখানে গঙ্গা’র বিশ্বদর্শন শুরু । দেখে সারা শরীরে যেন শিহরণ খেলে যায় । এক অন্য ধরনের অনুভূতি শরীরকে গ্রাস করে নেয় । কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখি ।কিন্তু সাবধান ! আলগা বরফের চাঙড় যখন তখন খসে পড়ছে।চুপচাপ বসে প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি’কে উপভোগ করতে ইচ্ছা করে। প্রকৃতি এখানে আমাদের প্রতি হঠাৎ করেই বিরূপ হল, শুরু হল landslide ।যেন প্রকৃতিই বলে দিলো ‘এবার আমাদের ফিরতে হবে’।Mt ভাগীরথী’র পাদদেশের ঐ সৃষ্টিশীল গুহা’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা ফিরতে শুরু করলাম।
। রাস্তা বলে বিশেষ কিছুই নেই । বড় বড় বোল্ডার পড়ে আছে , সেগুলোকে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে এগোতে হবে ।হাওয়া বইছে , তবে শুষ্ক এবং ঠান্ডা । গাছপালাহীন , মনুষ্যহীন রুখাসুখা জায়গা , যা দেখে শীতল মরু’র দেশ লাদাখের কথা মনে আসে ।এভাবে ঘন্টা তিনেক পথ চলার পর আমাদের সামনে দৃশ্যমান হল সেই বহু আকাঙ্খিত গোমুখ গুহা , যেখানে গঙ্গা’র বিশ্বদর্শন শুরু । দেখে সারা শরীরে যেন শিহরণ খেলে যায় । এক অন্য ধরনের অনুভূতি শরীরকে গ্রাস করে নেয় । কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখি ।কিন্তু সাবধান ! আলগা বরফের চাঙড় যখন তখন খসে পড়ছে।চুপচাপ বসে প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি’কে উপভোগ করতে ইচ্ছা করে। প্রকৃতি এখানে আমাদের প্রতি হঠাৎ করেই বিরূপ হল, শুরু হল landslide ।যেন প্রকৃতিই বলে দিলো ‘এবার আমাদের ফিরতে হবে’।Mt ভাগীরথী’র পাদদেশের ঐ সৃষ্টিশীল গুহা’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা ফিরতে শুরু করলাম।
দ্বিতীয় রাত্রে আমরা ভুজবাসাতেই কাটালাম tent-এ।রাত যখন প্রায় দু’টো বাজে তখন ঘুম ভেঙে বাইরে বেরোলাম। চমকে উঠলাম চারপাশের নিস্তব্ধতায় আর পরিষ্কার তারা ঝলমলে আকাশ
দেখে। চারিদিকের পাহাড়গুলো যেন আরও বড় হয়ে গেছে আর দানবের মত যেন গিলতে আসছে। ভোর
পাঁচটার সময় tent-এর বাইরে
বেরিয়ে দেখলাম মেরুপর্বতের মাথায় সোনালী আভা ছড়িয়ে দিনের প্রথম সূর্যের আলো আর
পাশেই বিরাজমান চাঁদ। অন্যরকমের দৃশ্য। যা দেখে রবি ঠাকুরের একটি গানের লাইনই
প্রথম মনে এসেছিল, “পান করে রবি শশী----”।
এক দূষণহীন পৃথিবীতে দু’দিন কাটিয়ে এবার ফেরার পথে যাত্রা শুরু। ফেরাটা
তাড়াতাড়িই হয়।সকালে বেরিয়ে বিকালে’র মধ্যে গঙ্গা মাইয়ার
মন্দিরে প্রণাম সেরে গঙ্গোত্রীতে প্রবেশ করলাম জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে।
কখন
যাবেন: মে-অক্টোবর ।তবে অক্টোবর মাসই উপযুক্ত সময় ।
খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনখুব খুব সুন্দর।
উত্তরমুছুন