হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
( চোদ্দো )
জলরঙের যাবতীয় রঙ সব বহুমুখী, রঙ
ঘুরে ঘুরে যখন পাতায় আসে
তখন সে রঙ তো ছাপ লাগা, কেউ যেন
সবকিছু দেখে নেবে তাই আড়াল
করা রঙ, সকলের আগে পৌঁছোতে হবে তাই রঙ
যেন গলে গিয়ে আরও
হালকা হয়ে গেছে, কোথাও আকাশ ছাইবে
মধ্যদুপুরের রঙ তাই রঙ
ভারি হয়ে.গভীর দাগ কেটে যায় রক্ত
মাংসে, বুনো ওলের মতো নিজের
পৃথিবী চিনিয়ে দেওয়া রঙেরা সব সাদা
পাতায় পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে
আছে, নখ দেখলে বোঝা যাবে তারা সবাই
বিস্ফোরণের অপেক্ষায়,
অসহায় জলের সহজ সংসারে ঘূর্ণির মতো
জল কাটে রঙ, ঝড়ের শক্তিতে
মুখ খুলে দেয় জল, বিশ্বাস রঙের ঘর
হালকা আরও হালকা করে দিতে
পারলে পথঘাট নদীনালা অলিগলি এক হবে না একজন্মে,
সহজ সত্যের
মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পাওয়া ছবির গভীরে যে
সমীকরণ তাতে
যেকোনো বিন্দুই উৎস মোহনার অমোঘ
মিশ্রণ
( পনের )
চারপাশের আলোকোজ্জ্বল জানলা ফুল
সাজানো রাস্তা সোনার গয়না পরা
মাটির পুতুলের সঙ্গে কোনোই যোগ নেই
আমাদের, যদিও এসব
ডালপালাগুলি আমাদের চোখের সামনে দিয়েই
নিয়ে যাওয়া হয়েছে মাঠে,
যেখানে অপেক্ষা করছে পিতামহের আমলের
কিছু পিঁপড়ে, যারা নিজেরা
গা ঢাকা দিয়ে সবকিছু সাজিয়ে দিতে
পারে আমাদের পরিবারের মতো
করে, মাসের পর মাস জল না দেখে দেখে
চামড়ার ওপর পাহাড় প্রমাণ
ময়লা জমে জমে ফেটে গেছে গা আমাদের
মায়েরই মতো, শিল্পীর
ক্যানভাসে যে ধরণের ছবি দেখতে আমরা
অভ্যস্ত অর্থাৎ সুর তাল
ছন্দের সমন্বয়ে হাড়ের খটখটানি এখানে
ঠিক তেমনটা নয়, তবু একটা
কিছু তো থাকবেই তা না হলে ছবিঘরে
ঢুকবে কিভাবে, আমাদেরই
পয়সায় কেনা বিশ্বাসযোগ্য রঙের ঘনত্ব,
এই পথেই হাঁটতে হাঁটতে একদিন
গ্যালারি প্রদর্শনীর হিমশীতল আলোয়
বোনা হয় আমাদের মধ্যবিত্ত ঘরের
মেধার সংস্কৃতি আর তিন দেওয়ালের চোখ
ধাঁধানো আলোর নিচে কাটা
হয়ে যায় পূর্বাপর সিন্দুকের চার চারটে
পায়া
( ষোলো )
সমস্যা থেকে সমাধান পর্যন্ত রাস্তার
চিরকালীন নির্জনতা চামড়ার মতো
সারা শরীর জুড়ে ছড়িয়ে, উষ্ণতা বোঝা
যায় রোমকূপের বাইরের দেশে,
মানুষের নিজস্ব ক্যানভাসে কত ভিন্ন
ভিন্ন আকৃতির রেখা টানা সেই
রাস্তার পরিচয় প্রসঙ্গে, মাথার কোষে
কোষে আলোক বিন্দুর পরিমাণের
অনুপাতের দীর্ঘ ব্যাখ্যা রবিবারের
পাতায় পাতায়, অর্ন্তদেশীয়
জলপ্রদেশের নিথর মুহূর্ত পথিকের
নিজস্ব কথা বিমূর্ততার আবহে
( সতের )
হাতের পৃথিবীর যে সংক্রমিত রেখা তা
পূর্বপুরুষদের হাত ধরে বাহিত
হয়ে গাছের পৃথিবীর শিকড়ে বাসা বাঁধে, এক কণা
ভাত অযুত কণায়
বিভক্ত হয়ে অসংখ্য নিরন্নের সহায় রূপে অবতীর্ণ
হয়েছিল যে অভাবিত
সকালে তার সমীকরণ হাতের পৃথিবীর পাঠ্যে আক্রান্ত
এক বিষন্ন
বিকেলে, একক ঈশ্বরের নির্লজ্জ শাসনের
অঢেল ভাতের আওতায় হেজে
পচে গেছে যাবতীয় গন্ধপুষ্প, তবুও
হঠাৎ কক্ষচ্যুত কোনো সূর্যকণার
অপরিমেয় শক্তিদেশ থেকে উঠে আসা
বিন্দুপ্রাণের কুশলী আঁচের স্পর্শে
বেঁচে আছি বলে মনে হয়
( আঠারো )
নদীশরীরেই পাহারা ছিল সীমান্ত
প্রদেশে, নির্জন দুপুরের বর্ণমালায় অভ্যস্ত
কিছু মুখ বদলের চিন্তায় যারা সরব
হয়নি, নদীতীর ধরে হেঁটে গিয়েছিল
বহু পথ, মাঠে মাঠে যারা ঘুরে ঘুরে
প্রপিতামহের শস্যের ভেতর রেখেছিল
আলোক বিন্দুর সৃষ্টিরহস্য তারাও
নদীজলে হাতে হাতে ভিজেছিল, তবুও
করাল যন্ত্রের ভিতর বিন্দুমাত্র
প্রশ্রয় পায় নি নদীজলের সমর্থকেরা,
বহুতলেই ধরা আছে সুখ এমনই প্রচার
রটেছিল সব ঘরে ঘরে, অভাবেই
ডুবেছিল যাদের পৈত্রিক কুয়ো তারা খুব
দ্রুত পায়ে উঠেছিল সিঁড়ি পথে পথে,
ততক্ষণে নাভিশ্বাস হাট দরজায় বিশ্বাসী
কিছু প্রাচীন দাদুর, এখনও
গৌরবান্বিত অর্ন্তপ্রদেশের মুষ্টিমেয়
টুনটুনির আলোকসজ্জায় সভ্যতার পরিচয়
অদ্ভুত শব্দজাল.....চোদ্দো অর্থাৎ রাত্রি দুটো...আমি কি সঠিক অনুভব করেছি,হরিৎদা
উত্তরমুছুনসুন্দর দাদা।
উত্তরমুছুনএক ঐতিহ্য আর অন্বয়ের ভেতর স্মৃতির অবিরাম প্রবাহকে কবি কবিতায় নিবেদন করেন। একান্ত অভিনিবেশে আত্মগত পর্যটনে কবিতাকে উপলব্ধি করতে হয়। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে এই কথাগুলি:"নদীশরীরেই পাহারা ছিল সীমান্ত প্রদেশে, নির্জন দুপুরের বর্ণমালায় অভ্যস্ত
উত্তরমুছুনকিছু মুখ বদলের চিন্তায় যারা সরব হয়নি, নদীতীর ধরে হেঁটে গিয়েছিল
বহু পথ, মাঠে মাঠে যারা ঘুরে ঘুরে প্রপিতামহের শস্যের ভেতর রেখেছিল
আলোক বিন্দুর সৃষ্টিরহস্য তারাও নদীজলে হাতে হাতে ভিজেছিল,"
বাহ্ কি অপূর্ব লেখাগুলো ! মুগ্ধ হয়ে পড়লাম
উত্তরমুছুন