রাজদীপ ভট্টাচার্য

 
রাতের কবিতাগুচ্ছ
★ (১)
ট্রেনে কাটা পড়া লাশ দেখলে আমি অদ্ভুত ভয় পাই। প্রথমে কয়েক পা পিছিয়ে আসি। তারপর ঘুরপথে আড়চোখে উৎসাহী ভিড়কে দূরে ঠেলে পার হই। অথচ, আমার স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে দ্বিখণ্ডিত দেহ। আমি তাকাতে চাই না। তবু মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে কারা আমাকে দেখায়। আমি স্তম্ভিত চোখে দেখি শুয়ে আছি পাথর শয্যায়। মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে গার্লস স্কুল ছুটির ভিড়। আচারের শালপাতা চেটে নেওয়ার পরেও ফেলে দেওয়ার কষ্ট বুকে চেপে দেখি আমার ভার্চুয়াল বন্ধুরা একমনে শোকবার্তা লিখছে আমার কপালে।



★ (২)
মাঝে মাঝে অকারণ দেরি হয়ে যায়। গভীর রাত। ভাত ঠান্ডা হয়ে চিমসে হতে থাকে। আসলে সবকিছু তো আমাদের হাতে থাকে না; কিছু জিনিস মাথায় থাকে, পায়ে কিংবা দুই পায়ের ফাঁকেও থাকে। আর ওই সব দুরূহ কোন থেকে ভেসে আসা ইনস্যুইং মেশানো ফ্রিকিক আপনিই মাথা খুঁজে নেয়। শুধু ছুঁইয়ে জালে জড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা। আর এমন কঠিন মুহূর্তে আমাদের মহার্ঘ্য হাত ওই তবলা বাজানো ছাড়া আর কিছুই করে উঠতে পারে না।


 ★ (৩)
কোনো কোনো রাতে ঘুম আসতে চায় না কিছুতেই। অসম্ভব স্বপ্নের পিছনে দৌড়োতে থাকি। বাঁ পা ডান পা করতে করতে নিখুঁত থ্রু বাড়াই। দর্শকরাও মাঠে নেমে আসে। শৈশবের হেডস্যার লাঠি হাতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন। তাঁর বাজখাঁই গলার স্বর মাইক্রোফোনে সাউন্ড টেস্টিং করতে থাকে একটানা। মা ভাত বেড়ে তাড়া দেয়, সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। ফুলি পিসি আজ দুপুরে ইশারায় একবার ছাদে ডেকেছিল। হঠাৎ মনে হয় ঠাকুমার আমসত্ত্ব কি বিকেলে ছাদ থেকে আনা হয়েছে! এক পা এক পা করে উঠে যাই স্পাইরাল সিঁড়ি বেয়ে। উঠতেই থাকি। যতক্ষণ না কুয়াশা নেমে আসে চেতনা পেরিয়ে।


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য