সুচরিতা চক্রবর্তী


নির্বাসন ও নন্দিনী
রাজা: শুনতে পাচ্ছো?
নন্দিনী : পাচ্ছিইইই।রাজা।কিন্তু রাজা তুমি পথে নেমেছ কেন? তুমি কি জানো না রাজা এক ভয়ানক মারী আজ নগরের পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তার করাল গ্রাস থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না।না না। রাজা তুমি ফিরে যাও।
রাজা: সে কি নন্দা! আমি যে এত দিন পর তোমার ডাক শুনে আমার ধ্বজার দণ্ড ভেঙে,জীর্ণ কেতন ছিঁড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছি।তুমি যে কথা দিয়েছিলে আমার প্রলয়পথে জ্বলন্ত দীপশিখার মতন আমার সঙ্গে যাবে?সেই তুমিই আজ দুয়ার বন্ধ করে গেছো নিরাপদের নির্বাসনে?
নন্দিনী: হ্যাঁ,হ্যাঁ রাজা আমরা সবাই আজ নিরাপদের নির্বাসনে। গৃহবন্দী মানুষ আমাদের সকল শক্তি দিয়ে অন্তরীণ থেকে লড়ছি এক অজানা শত্রুর সাথে।আজ আমরা সকলে রুদ্ধ। বন্দী।অন্তরীণ।
রাজা: রঞ্জন কোথায় নন্দিন?কিশোর ফাগুলাল গোকুল চন্দ্রা?
নন্দিনী: জানি নে রাজা।আমি আমি কিচ্ছু  জানিনে।
গোকুলদের পল্লীতে মড়ক লেগেছে শুনে রঞ্জন গেছিল সেবা করতে।আমার রঞ্জন বীর আমার।তার চূড়ায় নীলকন্ঠের পালক পরাতে আমি পারিনি।ওরা আমাকে তার কাছে যেতে দেয়নি।আমার রক্তকরবীর মঞ্জরী আমার হাতেই শুকিয়ে গেছে রাজা।....    কিশোর বিশু কোথায় জানিনা।ফাগুলালের দল খিদের জ্বালা সইতে না পেরে দুয়ার খুলে পথে নেমে গেছে।আমাকে বলে গেছে মরি...তবু ফিরব না।
রাজা: চন্দ্রা কোথায়?নন্দিন?
নন্দিনী: সে গেছে সর্দারের কাছে কাঁদাকাটি করতে।সর্দারের ওপর তার অগাধ বিশ্বাস।
রাজা: কিন্তু নন্দিন সকলে এই দ্বার বন্ধ করে আর কতদিন?ফসল না ফললে,কারখানার চাকা না ঘুরলে সকল কিছু স্তব্ধ করে বসে থাকলে এরপর তো নিশ্চিত অনাহারে মৃত্যু।সে আমি সইব কেমন করে?আমি চললাম নন্দা।তুমি দরজা দাও ঘরের।
নন্দিনী: কোথায় যাবে রাজা?
রাজা: সকলে মিলে কাজ করতে হবে।একলা ফাগুলালের কাজ নয়।সেই মারী দৈত্যের সঙ্গে আর ক্ষুধার  সঙ্গে আমার লড়াই।
নন্দিনী: জিততে পারবে?
রাজা: মরতে তো পারব। এতদিনে মরবার  অর্থ দেখতে পেয়েছি।বেঁচেছি।
নন্দিনী: তাহলে পরো রাজা তোমার শিরস্ত্রাণ।সাজিয়ে দিই তোমায় রণসাজে।চলো আমিও বেরোই তোমার সাথে  চরম প্রাণের সন্ধানে।

রাজা: চলো।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য