প্রকাশ মণ্ডল

                                        

 

জমজমাট জঙ্গলমহল

ঢাঙ্গিকুসুম,কেতকি লেক ,গড়রাসিনি-নামগুলোই যথেষ্ট মোহাচ্ছন্ন করে তোলার জন্য এবং ইচ্ছা করে আজই যেন বেরিয়ে পড়ি নদী জঙ্গল ঝর্ণা পাহাড়ের দেশেখড়গপুর পার হয়ে মুম্বাই রোড ধরে কিছুটা এগিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরতে হবে ঝাড়গ্রাম পৌঁছাতে গেলে লোধাশুলির জঙ্গল ভেদ করে কালো পিচের রাস্তা এঁকে-বেঁকে ছবি আঁকে-প্রতিটা বাঁকই যেন অতুলনীয়শহুরে জীবনের ছোঁয়া দেখা যায় মাঝে মাঝে গজিয়ে ওঠা রিসর্টগুলোতে

       ঝাড়গ্রাম শহরে পৌঁছে প্রথমেই গন্তব্য-বিখ্যাত ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী যা তৈরী হয়েছিল ১৫৯২খ্রি রাজা সর্বেশ্বর সিং চৌহান -এর দ্বারা


এরপর রাজবাড়িরই নির্মিত প্রাচীন সাবিত্রী মন্দির যেখানে আজও নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়মিত পূজার্চনা হয়তারপর বিখ্যাত কনকদুর্গা মন্দির-খুবই সুন্দরচারপাশে জঙ্গল, পিছনে নদী-নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে বিখ্যাত প্রাচীন মন্দিরপ্রাচীন মন্দির আজ ভগ্নপ্রায়, পাশেই গড়ে উঠেছে বর্তমানের কারুকার্যে ভরা কনকদুর্গা মন্দিরমন্দির কমিটি যথেষ্ট দক্ষতার সাথে চারপাশের গাছগাছালি মন্দির চত্বর কে সুন্দর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেমন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়া যায় ডুলুং নদীর কাছেবর্ষায় ভরা যৌবনা নদী-খরস্রোতাভাবতে অবাক লাগে শীতে এই নদীই ক্ষীণস্রোতা হয়ে পরে-কোথাও বা জলহীন


               এরপর চিলকিগড রাজবাড়ী-এখন অনেকটা জায়গার উপর রাজবাড়ীটি কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ এর অভাব বাড়ির পরতে পরতেএভাবে অতীত কে দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম-একসময়ের বিখ্যাত 
(কুখ্যাত ) মাওবাদীদের ডেরা বেলপাহাড়িযদিও সে অধ্যায় আজ ইতিহাসের পাতায়মফস্বল বেলপাহাড়ি আজ অতীত ইতিহাসকে গা ঝাড়া দিয়ে যেন নতুন পরিচিতি পেতে আগ্রহীপাড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে ঢা‌ঙ্গিকুসুমগায়ের লোকেরা পৌঁছে দেবে পাহাড়ী ঝরনার ধারে,কারণ-এখনও ঢাঙ্গিকুসুমের কোন মাইলফলক নেই বর্ষায় ভরা‌ যৌবনের ঢাঙ্গিকুসুমের লাল ঘোলাটে জল পাহাড়ের গা বেয়েখাতের মধ‍্য দিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছেএরপরের গন্তব্য কেতকী  লেককেতকী লেক উটিলেকের কথা মনে করিয়ে দেয় চারপাশের পাহাড় আর সবুজের মাঝে শান্ত স্নিগ্ধ লেক‌‌ মনকে প্রশান্ত করে দেয়এরপর বর্ষায় পুষ্ট ঘাগরা ঝর্না, তারাফেনি ড‍্যাম,খানদারানি লেক মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলেএখানে গড়রাসিনি পাহাড়ের জন্য দু লাইন না লিখলে পাহাড়ের প্রতি অন‍্যায় হবেস্থানীয় মানুষের কাছে খুবই পবিত্র এই পাহাড়পাহাড়ের নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত গাড়ি গেলেও বাকি পথ নিজের পা কেই ভরসা করতে হয়অনেকটা চড়াই-এর পর একদম উপরে মহাদেবের মন্দিরসেখানেই স্থানীয়রা ভক্তিভরে পূজা করেপাহাড়ের চূড়া থেকে আশেপাশের পুরো অঞ্চলই 360° দেখা যায়

‍           বেলপাহাড়ি, কাকড়াঝোড়ের আশেপাশে সবই প্রায় একফসলি জমি এবং বেশিরভাগই বর্ষার বৃষ্টির উপর নির্ভরশীলসেজন্য বর্ষার এই সময়েও বিকালে গ্রামের পুকুরগুলো ভরে আছে মেয়েদের কলতানেদিনের শেষে মাঠের কাজ সেরে কেউ বা স্নান করছে, কেউ বা পাড় থেকে জলে নামবে বা কেউ স্নান করে ঘরের পথে-এটাই তাদের সময়ের দৈনন্দিন জীবনের ছবিযদিও এই দলে ছেলেদের দেখামেলা ভাররাজা যায় রাজা আসে-তাতে বেলপাহাড়ি বা কাকড়াঝোড়ের কি?তাদের এই দুর্দশা কোনমতেই ঘোচে নাএখনও পরতে পরতে জড়িয়ে আছে অভাব, দারিদ্র্য, ,অশিক্ষা -তবুও এর মধ্যে উকি দিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের অস্পষ্ট রূপালী রেখামনে হয় এখান থেকেও ঘুরে দাড়াতে পারে বেলপাহাড়ি, কাকরাঝোড়,ঝাড়গ্রামপ্রচুর সম্ভাবনাময় বেলপাহাড়ি



শুধু দরকার একটু জাগিয়ে তোলারঘন গাছ-গাছালির সবুজের সাথে পাখির কল-কাকলি, উচুঁ-নীচু পাহাড়ি পথ , ঝরনার ঝর ঝর শব্দ, লেকের টলটলে জলে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখা-এককথায় প্রকৃতি কে  আকন্ঠ পান করতে গেলে ঝাড়গ্রাম-এর বিকল্প মেলা ভারআরও একটি কথা না বললেই নয় তা হলো জঙ্গলমহলের মহিলাদের সৃজনশীলতা শিল্পবোধমাটির বাড়ির দেওয়ালগুলো তাদের হাতে আকা বিভিন্ন চিত্রে সজ্জিত যেন শিল্পীর আকা এক একটি  ক‍্যানভাস                        

          এর পরের গন্তব্য-বাকুড়ার ঝিলিমিলিএকদম জঙ্গলের মাঝে রিমিল রিসর্টের গাছবাড়িতে একটানা ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা গা ছমছমে একটা রাত কাটানো-‘এই বুঝি বুনো দাতালের উদয় হবে জঙ্গল ফুড়েঝিলিমিলির গাছ বাড়ির অভিজ্ঞতা এককথায় অসাধারন




           সবশেষে একটু ব‍্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কথা বলি


অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে আর সুতানের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হু হু করে গাড়ি চালাচ্ছি, চারিদিক সুনসান,- অভিজ্ঞতা ভাষার অতীত এবং আজীবনের সম্পদ।।   











মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোমা দত্ত

সব্যসাচী মজুমদার

সৌম্যজিৎ আচার্য